অজিত দেবনাথ
পরিত্রাণ
রোদের তাপে আমার শরীর ঝলসে যাচ্ছে
হাত-পা পুড়ে যাচ্ছে অমল রোদ্দুরে
এই দ্যাখো আমি, কেমন অচেনা বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,
ঝোপের আড়ালে---
আমার প্রতিটি লোমকূপে গ্রীষ্মের খরতাপ
তবুও আমি ছুটে যাচ্ছি অমিত আভার নির্মোক টানে....
বৃষ্টির বিস্তৃত ছোঁয়ায় আমি কী অবলীলায় ভিজে যাচ্ছি
ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে
চাঁদের আলোর মতো সর্বাঙ্গে ঝরে পড়ছে
মুখের মলিন বাতাস যেন হঠাৎ অতিথি সেজে উঠেছে
নিঃশব্দ বিদায়ের অনিবার্য সংকেত
হঠাৎ দেখি নিশ্চিত অন্ধকার আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে গলির ভেতরে
নিশ্বাসপ্রশ্বাস জুড়ে আকুলি বিকুলি
শিরায় শিরায় ভাঙচুর
ঘুমের দেশে এত তোলপাড়
এগিয়ে চলেছি উদাসীন এক আমি
ছিপছিপে ছায়ার ভেতরে আধখানা চাঁদ
কী অসাধারণ মুগ্ধতায় ডেকে নিয়ে যায় অচেনা বাগানের অলিন্দে।
অক্ষরের চোখে জল
অরণ্যের ভিতরে মৃত চিৎকার
প্রবাহিত রাতের কত বিড়ম্বনা
নিঝুম, নিস্তব্ধতার অকাল বোধন
ঘুমিয়ে পড়া বৃক্ষের আর্তনাদ
চিতার আগুনে সৎকার হয়নি
মৃতদেহ
স্মৃতির নিষ্ফল দমক
পাহাড়ের গায়ে রক্তের দাগ
আদিগন্ত নখের বিক্ষত আঁচড়
আহত অক্ষরের চোখে দু' ফোঁটা জল
অদূরে এক ধ্যানমগ্ন নির্বিকার মূর্তি
বোধের নিরাকার বেদিতে প্রবুদ্ধের মালসাভোগ
দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে চোখের অন্ধকার দৃঢ় হয়
ভেঙে যায় জাগরণকথা
অন্তহীন বাতাসের বিদীর্ণ সংলাপে
কুয়াশা গাঢ় হলে আঁচলে ঢাকে সূর্য
বুকের ভিতরে নেমে আসে সন্ধ্যাতারার অবলোকন।
🍂
আড়ষ্ট ঘুম
পাহাড় গড়িয়ে নেমে আসে সমতলে
চোখে অশ্রুর সমারোহ
আহত পাথরের বুকে অন্তহীন চিৎকার
কাগজের নৌকায় মোড়ানো একটা শবদেহ
রক্ত আর অনাবিল ঘামের শর্তহীন ইচ্ছাপত্র
ভূর্জপত্রের ওপর বহুদিনের জমানো অভিমান
কিন্তু শোকপ্রস্তাবের কোনো দরপত্র নেই
ব্যথার পারদ যেন নির্জন ফেরিঘাট
মাঝিহীন নৌকার নির্বাক চাহনি
সময়ের অবরোহে ভেসে যায় অপ্রস্তুত চোখের জল
চিনে নিতে পারিনি খসে পড়া তারার বিলম্বিত সংলাপ
মেঘের চাতালে জমে থাকে উষ্ণ ইচ্ছের গোপন সইসাবুদ
অভিসারের জলে হয়তো কিছু স্মৃতি জেগে থাকে
হাতের উপর হাত রেখে নেমে আসে অন্ধকার
অলৌকিক বাঁশির সুর ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে
মোহিনী আড়ালের পিছনে একাকী সপ্তর্ষি
জোৎস্নার আদুল বৈরাগ্যে ভাঙে আড়ষ্ট ঘুম।
নিরাপদ আশ্রয়
হাঁটতে হাঁটতে এতদূরই চলে এল
পাটভাঙা ছায়া
যদি একবার ঘুরে আসা যায় ঘুমের দেশ
আরেকটু দূর এগিয়ে গেলে দেখা যায় ভাঙা টিনের চালায় একফালি রোদ উদোম হয়ে বসে আছে
নিরাপদ আশ্রয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সামান্য অবকাশ
দু -একজন পথচলতি মানুষ যদিও বা হেঁটে যায় নির্জন পথ ধরে
কিন্তু কেউই মুখ তুলে তাকায় না
আটচালার চূড়ায়
নিঃসঙ্গ রোদের খুব দুঃখ হয়
দূরে দোতলা বাড়ির কার্নিশে আজও সেই ব্যাকুল বীণা বেজে ওঠে
নষ্টজীবনের উদাসী গান বালুকণার বিন্দু হয়ে ঝরে
আকাশের বুকে এক ঝাঁক মেঘ হাঁটুমুড়ে বসে আছে
নীচে আকণ্ঠ তৃষ্ণায় জড়ানো ভিখিরি কাঙাল
রোদের পিঠে পা রেখে হয়তো নেমে আসে মেঘ
0 Comments