জ্বলদর্চি

নীলার কিছু কথা কবিতায়...পর্ব :অন্তিম /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 
***********
নীলার কিছু কথা কবিতায়...
পর্ব :অন্তিম
কমলিকা ভট্টাচার্য 
*********************
 
নীলা কাঁদলে

নীলা কাঁদলে, আকাশের বুকে জমে রাগ বজ্রের,
চাঁদ ঢেকে যায় কালো মেঘ রাক্ষসের চোখে।
তারারা উল্কা হতে চায়, দিকভ্রান্তের মতো,
বাতাস গম্ভীর হয়ে ভাবে, ঝড় হবে কি সে এ রাতে?

গাছেরা বসে মাথায় হাত দিয়ে অবুঝ হতাশায়
পাখিরা ফিসফিসিয়ে বলে কথা দিশেহারা ভাষায়।
নদী পড়ে উপচে ,গ্রাম ভাসায় বুকের জলে,
ধসে পাহাড় ঝরনায় বয়ে চলে।

সমুদ্র একরাশ যন্ত্রণাতে মাথা খোটে তটে 
সূর্য ,গ্রহণে ঢাকা পড়ে, আলো মিশে যায় আঁধার রাতে।
বালিশ বলে, "আর কত ভেজাবি আমায় ?"
পথ বলে, "ঠিকানাটা দে, ধরে আনি তাকে।"
নীলা বলে তোরা আর কত ভালোবাসবি আমাকে...


 সে এসেছিল


সে এসেছিল শরতের নীলিমা ঢাকা রাতে,
চাঁদের আলোয় লুকিয়ে রাখা এক ফাঁকে।
আকাশের চূড়ায় ভাসতে ভাসতে এল সে..
ট্রেনের ঝমঝম শব্দে 
যেন হারিয়ে যাওয়া পথের ডাকে সাড়া দিলাম,
পুলিশের প্রহরার ভাঙা ছন্দে
মিশে গেল অঝোর ধারা কথার।

পোশাকী পরিচয়ের পাথরের জালে,
মুক্তির গান গাইতে মন বলে দিল সব কথা।
আমাদের প্রেমের রূপকথা
লিখতেই হবে!
তার দ্বিধা ভরা কণ্ঠে ফুটে উঠল
মনের এক গভীর কবিতার ছায়া,
যেন চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্না ধোয়া।

দিনে, রাতে, আলো-আঁধারে,
লতার ফাঁদে পাতা জড়িয়ে
আমরা মিশে গেলাম কবিতার শরীরে।
কখন শীত পার হয়ে গ্রীষ্মের দ্বার পেরোয়
জানি না!
শুধু অনুভব করি আমাদের গল্পের কবিতা,
যেন চির বসন্তের ঘ্রাণে মিশে গেল আমাদের দুটি প্রাণ,
ভালোবাসায় বাঁধা এক অনন্ত বন্ধনে।

তারপর একদিন, বৃষ্টি ঝরা রাতে,
বর্ষারানী ছুঁয়ে দিল ঠোঁট, যেন স্বপ্নের এক দিগন্ত জুড়ে কল্পনার রঙীন ঝড়।
মন লাগেনা কাজে,
সারাদিন খালি তারই বাঁশি বাজে।
কিন্তু সে যে
থাকে দূর, অনেক দূর, স্বপ্নেরও ওপারে...
ছোঁয়া যাবে না কখনও, তবু ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষায় জ্বলে আছে হৃদয়।
তবু কষ্ট পেতেই হবে সত্যি ভালোবাসাতে,
সে কথা বলে গেল বর্ষা একদিন প্রভাতে।

🍂


 সে ফেরেনি

দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ,
একে একে ফিরে গেল সবাই,
মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল পাখিদের ঝাঁক,
দিনের হাওয়া ফিরে গেল সমুদ্রের বুকে।
বিকেল ফিরে গেল সন্ধ্যার আঁচলে 
কাজ সেরে শ্রমিকের দল
হাত পা ধুয়ে বাসায় ফিরল,
ঘরে বিশ্রামের অপেক্ষা ওদের
আর আমার পিপাসু চোখ, শুধু তার অপেক্ষায়।

দূরের ঠিকানা, গুগুলেরও অজানা,
মেঘেরা ফিরে গেল আকাশে,
কিন্তু আমার আকাশ ফিরল না...
কি জানি কেন?

হয়ত কবিতার আবদার,
মামার বাড়ির অধিকার পায়নি,
ফিরে যাচ্ছে কবিতা নিজের খোঁজে,
আমার হৃদয় খুঁজছে অনন্ত শূন্যতার মাপকাঠি।

অপেক্ষা কেবল সময়ের গহ্বরে বিলীন হলো,
আমার অপেক্ষার মৃত্যুর কথা—
আমি কাউকে বলিনি...



নিজের কাছেই যাচ্ছি ফিরে


মন ভালো নেই আজ,
নিজের কাছেই ফিরতে ইচ্ছে বড়।
ভালোবেসে করেছি বড় অন্যায় 
পারলে ক্ষমা কোরো,
ক্ষমা করতে যদি না পারো, ঘৃণায় মুক্ত কোরো।

মাটি চাপা দিলাম ভালোবাসাকে,
মায়ার নৌকোর নোঙর খুলে দিলাম,
ভেজা অভিমান গনগনে তাপে শুকিয়ে নিলাম,
চাওয়া গুলো কুচি কুচি করে ছিঁড়ে উড়িয়ে দিলাম।
বেওয়ারিশ মনটাকে চুল্লীতে পোড়ালাম,
ভস্মতেও  যেন কান্নার কোনো ছায়া না থাকে।
বাইরের আমি বেশ মানানসই এবার 
সব ঠিকঠাক, সব ঠিকঠাক, সব জায়গায়।

তবু মন ভালো নেই আজ,
নিজের কাছেই নিজে ফিরে যাচ্ছি তাই।
কাউকে দিতে হবে না আর জবাবদিহি,
কারুর অবহেলা থেকে অনেক দূরে
খুঁজে দেখবো নিজেকে নিভৃতে..

চোখ মেলে অন্তর দৃষ্টির
আমি দেখছি
এক আমি মিশে আছি ভীড়ে,
আর এক আমি দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা সেতুর ওপারে—
চুপচাপ, সেই আমি, নিজেকেই খুঁজে ফিরছি..

Post a Comment

0 Comments