জ্বলদর্চি

নীলার কিছু কথা কবিতায়../পর্ব ৪/কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা

নীলার কিছু কথা কবিতায়..
পর্ব ৪
কমলিকা ভট্টাচার্য

নীলার মন

নীলার মন,প্রেমের বাসা
বিলিয়ে খুশি পূর্ণ আশা
অন্তরে টেনে সবার রঙ 
ভালোবাসার খোঁজে সারাক্ষণ।
কিন্তু আদৌ কি সে পায় কেউ?

ভালোবাসা শুনলেই তোমাদের ভ্রুকুটি
কঠিন পাহাড়ের চূড়া
মুখের উপর বালিয়াড়ি 
ঠোঁটের বাঁধ যেন মুহূর্তে ভাঙে—
তোমাদের কথার বন্যায়
ভেসে যায় তার চোখ।

সে তো হিসাব করে, মেপে ঝুকে
ভালোবাসতে জানে না।
ভালোবাসা কি হৃদয়ের  ব্লাউজ?
যেখানে  বড় ছোট মাপ দেখে,
ম্যাচিং করে বানাতে হয়?

নীলা বলে, "আমি তাকে ভালোবাসি ,
অনায়াসে কাঁধে যার
রেখে দিয়ে সব ভার—
আমি কাঁদি হাসি।"


 অজানা কবি মন

চিরকালই কবিরা বাউন্ডুলে,
কপাট খোলা জানলার মত তাদের হৃদয়
চোর আসে, চুরি করে নিয়ে যায় সুখ
ছত্রাকার লণ্ডভণ্ড ঘর, ভাঙাচোরা স্বপ্ন..
পড়ে থাকা এঁটো, কুড়িয়ে
খাচ্ছে দু'টো একটা পিঁপড়ে
চায়ের কাপের দাগ শুকিয়ে
গাঢ়, 
অগোছালো পাতাগুলো জীবনের মতো,
তবু কেউ গুছিয়ে নিয়েছে সবকিছু...

চোখের লেজার পড়ে,সবার গুটানো মন
মন কাঁদে, ছিটানো কাদা মেখে,
জমা জল, গাড়ির চাকা ঘুরে যায়,
তবু খুশি কেউতো গন্তব্যে পৌঁছে যায়
মন হাসে, মৌনতা ঠোঁটে,
সয়ে সয়ে পলি মাটি হয় এঁটেল
তবু গড়ে দেওয়া কিছু বেবাক মূর্তি,অস্তিত্বের সংগ্রামে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।



 তার জিজ্ঞাসা
 
সে জিজ্ঞেস করল,  
"কিসের তোর এত কষ্ট?"  
আমি বললাম,  
"যার জিজ্ঞেস করার কথা ছিল,  
সে তো জিগালো না—  
সে কষ্ট কি কম?"

সে বলল,  
"না বললে মুখ ফুটে  
সে কি হাত গুণে জানবে?"  
আমি বললাম,  
"তাই তো আমি দিন গুনি,  
যেদিন সে মনের ভাষা পড়বে।"

সে বলল,  
"এ বড় অন্যায় চাওয়া!"  
আমি হেসে বললাম,  
"তাহলে আর কিসের চাওয়া?"

সে বলল,  
"জটিল বিষয়।"  
আমি বললাম,  
"কিন্তু সরল হৃদয়।"

সে বলল,  
"বড় কঠিন তোদের বোঝা।"  
আমি বললাম,  
"বোঝা নই, সাথী হই।" 

সে বলল,  
"কি যে তোরা চাস?"  
আমি বললাম,  
"জানি বলা বাহুল্য—  
একটু নরম সুর,  
এক চিমটে মূল্য।"

সে বলল,  
"এইটুকু ব্যস?"  
আমি বললাম,  
"হ্যাঁ, কিন্তু তোরা পুরুষ! 
এইটুকুও কি দিতে চাস?

জীবনের কাছাকাছি

যত সময় পার হয়ে যাচ্ছে
জীবনটা তত কাছে আসছে
আঁকড়ে ধরছে আমাকে
বোঝাপড়ার জীবন 
মায়ায় মাখানো এখন
একটা চেনা ডাক, অথচ হাজারো মুখ
সবাই তৃষ্ণার্ত সবাই পিপাসু 
সবারই হারিয়ে গেছে কিছু
ভালোবাসা ভরা একটা সান্নিধ্য ?
স্মৃতির ঝোলা বিষাদের ভারে ক্ষুণ্ণ
তিলে তিলে বড় করা গাছগুলো জানিনা ছায়া দেয়না কেন
বোঝাপড়ার যত্নে 
হয়ে গেছে কি অযত্ন?
সময়ের সাথে সাথে 
জীবনটা আসছে কাছে
নিরাশা ভরা শব্দগুলো বাঁধানো পাতার গণ্ডি ছড়িয়ে
বাস্তব সেজে সামনে দাঁড়িয়ে 
নিজেকে মনে হচ্ছে
রূপকথার গল্পের সুখী রাজপুত্র
একটা স্ট্যাচু, দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া করার নেই কি কিছু?
আমি তো নিঃস্ব হয়ে বিলিয়ে দিতে পারি ভালোবাসা
হতে পারি হয়ত কারুর বাঁচার আশা
হতে পারি জীবনের এবড়ো খেবড়ো পথের শক শোষক
আমার যতই কষ্ট হোক
সবকিছু সামলে নেব আমি
শুধু একবার বলো 
আমাকে সামলে নেবে তুমি....

Post a Comment

0 Comments