গুচ্ছ কবিতা
অমিত কুমার রায়
দুর্গন্ধ
কর্তা গিন্নি দুজনেই নাকে রুমাল দিয়ে
এদিক ওদিক কি খুঁজছে!
ছোট নাতনি জিজ্ঞেস করল
তোমরা কি খুঁজছো?
ব্যাঙ পচেছে? ইঁদুর পচা?
আবার এদিক ওদিক খুঁজছে
কর্তা গিন্নি
ছোটনাতি প্রশ্ন করল কি খুঁজছো?
টিকটিকি মরেছে নাকে গন্ধ পাচ্ছো?
নাতি নাতনি কোরাস প্রশ্ন করে
কুমড়ো পচলো?
উঁু হু এ নিশ্চয়ই ডিম পচেছে!
তাইতো কুমড়ো ডিম না নয়!
দাদু ঠাম্মি তোমরা তবে কি খুলছো?
দাদু ঠাম্মি ঘরে না খুঁজে বাগানে খোঁজে!
বাগান থেকে পুকুর ধারে
নদীর পারে খোঁজে
সেই রুমালে নাক টিকে রাখা!
পথের লোকে প্রশ্ন করে
জলে মাছ পচেছে নাকে রুমাল?
রুই কাতলা
মৃগেল বোয়াল পচলো বুঝি?
পাগলা সমীর হা হা করে হাসে
আলু পচেছে আলু পচেছে!! হি হি হি.......
ঘাড় দুলিয়ে কত্তা বলে না না না
গিন্নি কালা সে তো শুনতেই পেল না!
পাগলা সমীর হা হা হি হি করে বলল
বুঝে গেছি বুঝে গেছি কি পচেছে!
গন্ধ পাচ্ছো, খুঁজে পাচ্ছ না অন্ধ কত্তা?
ইতরের দেশ পচেছে
লোভ আপেল কাম কলা হিংসা ড্রাগন ফল পচেছে
এ তো গন্ধ না গন্ধ না, দুর্গন্ধ হি হি হি!!
২ যখন ফুলন
অন্ধকারে অহংকারে পাহাড় গুড়া করে,
ঠেলতে থাকে বাহুর জোরে।
নড়ছে কি এতোটুকু পাথর?
সাময়িক দু একটা চাঁই ধসে পড়ে!
অমাবস্যার কৃষ্ণপক্ষে চাঁদ কোথায়?
পক্ষ ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণিমা আসবেই।
চাঁদের হাসির বাঁধ ভাঙবে,
ফিরতে পারো নিভা আলোর বন্যায়।
আমার ছানি পড়া চোখ কুয়াশা দেখেছে
বিবেককে অন্ধকারে বন্দি করেছে মন,
হত্যাকারী অত্যাচারী লোভ আমার বন্ধুত্ব দাবি করে;
বুঝতে পেরে সরে দাঁড়াই।
নিভা, তুমি চোখ চারিয়ে সতর্ক হও
অন্ধকারে অক্টোপাস হাত মেলে,
নিভা, তোমাকে ত্রিনয়নী হতে হবে
তোমার মধ্যেই জ্যোতি আলো জ্বলছে।
যত কুসংস্কারের পাহাড় ভাইরাস ছড়ায়।
যতই সাঁতার জানো ঘূর্ণি জলের নিচে টানছে,
নিভা, তোমাকে ভাল সাঁতারু হতেই হবে।
অন্ধকারে অদৃশ্য পেঁচা শকুন ডাকছে
মনুষ্যত্বের ভোরকে গিলে খাবে!
পাহাড়ি পথে
পাতালের গর্তের অন্ধকারে ফুলন ছিল,
ধর্ষণ করেছিল বাইশ কি তারও বেশি
একে একে জবাব দিয়েছিল বুলেটে ফুলন
সময়ের ধৈর্য্য ঘড়ির কাঁটা
ঘুরে চলে
তখন তারপর ফুলনদেবী আলোয় ফিরেছিল
নাটকের দৃশ্য বদল করে।
🍂
আরও পড়ুন 👇
৩ লিমেরিক
ষাঁড়াষাঁড়ির বাড়াবাড়ি ভাঙলো রাতের ঘুম
বাঁধের ওপর নৃত্য করে চাঁদনী রাতে ধুম।
অদ্ভুতুড়ে শব্দ উঠে
গোটা বাঁধ পড়লো লুটে
ভূত-পেত্নী খাচ্ছে তখন মুরগি ঠোঁটে চুম।
বাঁধভাঙ্গা জল বন্যা হয়ে ছুটছে এয়ার গাড়ি
মেছো ভূতে জাল ফেলছে মেছনি ধরে হাড়ি।
সব মাছের নেইতো মুড়ো
কামড়ে খেলো মেছো খুড়ো,
মেছনি রেগে খুলেই ফেলে মেছোর দেওয়া শাড়ি!
মেছো ভূতে মাছ ধরছে গেছো ভূতের নজর
ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে তার করছে গজর গজর!
গেছো পেত্নীর নাকে রুমাল
সহ্য হয় না গন্ধ বোয়াল
বমি করে হাজার লিটার এমন আছে খবর।
মেছো ভূতের ঠ্যাং লম্বা ভূতছা ধরে বায়না
শিঙির ঝোল মুখে দেবে নইলে যাবে চায়না।
শিঙির জন্যে গিন্নি বসে
পেতনি শিঙি রাঁধবে কষে
একটা মাছও মেছো ভূতের জালের ধারে যায় না!
স্রোত ভূতে ফতনা ডোবায় এবং তোলে
ভূতের বিবি তাই না দেখে হেসে গেল গলে।
খিঁচে ছিপে তুলতে গিয়ে
চোখে কাটা বিঁধে কি এ
যন্ত্রণাতে ছটফটিয়ে গেল পটল বাড়ির চলে।
পঞ্চভূতের মারপিটেতে হল নিম্নচাপ
বর্ষা জলে বন্যা এলো কাতলা ভূতের লাফ।
শোল বোয়ালের নেই তো দেখা
রাঘববোয়াল ধরছে একা
ফেটি জালে পড়ছে দেখে ঢোড়া কেউটে সাপ!
দৃষ্টি মেলে দেখছি যখন ছন্ন-ছাড়া বৃষ্টি
ঘরের ভেতর পত্নী কোথায় পেত্নী রাঁধে ফিস টি!
ভয়ে আমার ভিরমি লাগে
চোখ দুটো তার জ্বলছে রাগে
রান্না কি সব হবে দেইনি কেনো লিস্টি।
সন্ধ্যেবেলা ঝড় বৃষ্টি পথে নেই আলো
কৈ শোল চরছে পথে মন্দ নয় ভালো।
ধরে টোরে ব্যাগে পুরে
হাঁটছি যখন গানের সুরে,
মাছ চাইছে খনা গলায় কুচকুচে ভূত কালো!
চোয়াল দেখায় বোয়াল ভূতের কাকা
বাস করে সে নাম যেন কি জলঢাকা!
লেজের মত লম্বা ঠ্যাঙে
হাজার দশেক ধরে ব্যাঙে
পাচার করে চায়না জাপান ওসাকা।
বাদামী ভূত বাদাম খেয়ে গেল চলে হেগে
বাদাম চুন্নি তাই না দেখে বেজায় গেল রেগে!
বাচ্চা-কাচ্চা সঙ্গে করে
বাপের বাড়ি পড়লো সরে
বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে বাদাম খায় মেগে।
রেলের চাকায় পাম্প দিচ্ছে লোহা ভূতের নাতি,
প্রেমে পড়লো পেত্নী হ'তে ইস্পাতের পাতি।
বিয়ের রাতের খানাপিনা
মেনু সবই খাঁটি চিনা
ব্যাং আরশোলা মশা ভাজা দারুণ খাদ্য সাথী।
মালাই চাকি যাচ্ছে ক্ষয়ে কুঁড়ে ভূতের বাবার
ডিম আখরোট পচা আপেল কলা কচু খাবার।
হাজার বিশেক টাকা ঢেলে
আনলো ওষুধ বোকা ছেলে
পুঁচকে নাতি চড়তে কোলে
ব্যামো হলো সাবাড়।
ভূত-পেত্নীর নাতনী গেল খাটিয়া থেকে পড়ে
চিল চেচানি চেঁচায় ছানা পা গেছে তার ছোড়ে।
কপালেতে আলতো চোটে
মা নিশি তার পটকা ফোটে
দুই চ্যাঁচানোর আগুন জ্বলে প্যাঁচা ভূতের গড়ে।
বন্যা এলো গেছো পেত্নী গাছেই থাকে চড়ে
না খেয়ে তার তিরিশ কেজি কমলো ওজন গড়ে।
পিপাসাতে ফাটছে গলা
কতোই খাবে পচা কলা
মুসম্বি আপেল নাশপাতি সবেই পচন ধরে!
৪ শরৎ এখন
শরৎ হেসে মেঘের দেশে
ছুট লাগায়
বৃষ্টি নেমে যায়না থেমে
বান ভাসায়।
প্রাণ ভাসে নদী গ্রাসে
চাষের ফসল
স্বপ্ন পাখি মুদছে আঁখি
নুনের জল!
কাশের ফুলে দুইটি কুলে
হাসছিল,
ঢাকের মাথায় দুলতো কোথায়
আজ জলে!
লুটোয় বানে স্রোতের টানে
যায় তলে।।
জলের প্রবেশ ভিজে আবেশ
ঘরের মেঝে
খাবার জল রসাতল
কে দেয় কে যে!
পাকা বাড়ি দামি গাড়ি
জলের তলে
বালির বাঁধ ডোবার সাধ
শরৎ এলে!
রাঙা জলের রাঙা আঁখি
দাঁত দেখায়
খাওয়া দাওয়া পড়াশোনা
সব বিদায়!
পুজোর জামা দিচ্ছে হামা
কিনবে কেডা?
উনিশ নয়ে মরছি ভয়ে
ভাবনা যে টা!
সবজি ফসল ধানের আঁচল
ডুবে হায়
সবজি বাজার আগুন আকার
হতাশায়।
৫ সেলফি তুলে
বান আসে পানা ভাসে
ঘোরে রে
মজা করে বাঁধ ধরে
নাচে রে!
কত জল কল কল
বহে রে
ঘরবাড়ি ডোবে ভারী
কাতারে!
ছুটে চলে নদী জলে
মাঠেরে
তারপরে ডাক পাড়ে
ঘাটে রে!
ছেলেগুলো জালগুলো
পাতে রে
মাছ পড়ে তর তরে
ফাঁদে রে!
বোকা রাখী দিয়ে ফাঁকি
কি করে?
সেলফিতে মন দিতে
মজে রে!
জলছবি হল ছবি
পড়তে
পারে নাকি স্রোত মুখী
ধরতে?
ভেসে যায় অজানায়
হায়রে,
সাবধানে মন প্রাণে
থাকে রে
সেলফির ফাঁদে পা দিস না
শোন রে
কত রাখী ভুল করে
তাই রে।
৬ বেপরোয়া
যাচ্ছো কোথায়?
পড়তে বিজ্ঞান।
রাস্তায় চলার
আছে তোমার দিক-জ্ঞান?
আছে আছে ঠিক।
এদিক ওদিক
ফেলছো তো পা?
বড়ই রসিক!
বাঁ দিক ধরে হাটো।
বুদ্ধি তোমার খাটো!
ডান দিকে ডান পা
চলতে ভারি ডাঁটো!
ডান দিক ধরে চলবে
বিপদ আলো জ্বলবে!
এদিক ও দিক বিগড়ে পথে
পটল সোজা তুলবে!
জেব্রা ক্রসিং মানো?
ওসব নিয়ম বুনো!
হেলমেটটা কোথায়?
লাগবে না তো কোনো!
নামটা তোমার?
বেপরোয়া!
মরণ টিকিট কাটা?
বুক পকেটে সাঁটা!
1 Comments
অমিত কুমার রায়ের লিমেরিকগুলি ভালো লাগল।
ReplyDelete