জ্বলদর্চি

নীলার কিছু কথা কবিতায়.../পর্ব ৫/কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 

নীলার কিছু কথা কবিতায়...
পর্ব ৫
কমলিকা ভট্টাচার্য 

নীলার চিঠি 

কতদিন তোমার সাথে গল্প করিনি আকাশ,
তুমি বলেছিলে, "খালি কিছুদিন,"
দেখো, বারান্দায় রোদ ঘুরে গেছে,
হয়ত এখন তোমার দালানে দাঁড়িয়ে,
আমি একলা, কত পুড়লাম বাতাসের হাতে চিঠি পাঠিয়েছি বারবার, 
এসো না,
আমার বারান্দার ছায়ায় বসে গল্প করব।
মনে আছে তোমার সেই পেয়ারা গাছের কথা?
সব ফল শেষ, অপেক্ষায় নতুন ফুলের,
ঠিক যেমন আমি আছি তোমার ফেরার অপেক্ষায়।

বৃষ্টির ফোঁটা আকাশের বুকে লুকিয়েছে,
তোমার বর্ষারানীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা দিলে না!
মিথ্যে অভিমানে মাধবীলতা শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ঠিক
তোমার ভালোবাসার মতোই,
শিউলি ফুলের গাছটা এখন অনেক বড় হয়েছে।

তুমি এলে, সরোজ নিজে হাতে মালা গেঁথে দেবে,
আমার রাধা নামটাও তো পছন্দ,
না হয় সেই নামেই ডেকো আমাকে।
কিন্তু ফিরে এসো, আর দেরি করোনা,
হিমের হাওয়ায় শীতল হবে তোমার কমল,
তখন পারবে কি মৃত্যুর সাথে লড়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে?

নীলার কবিতা তোমাকে পাঠানো চিঠি,
একটাও পাওনি কি? পেলে জবাব দিও।
কতদিন ডাকোনি, "রানী, রানী, রানী!"
যদি এমন হয় ডাকলেও সে না ফেরে,
যদি হারিয়ে যায় সে, না ফেরার দেশে...


মরীচিকা নাকি  সত্যি আছো তুমি?

মনের মরুভূমিতে মরীচিকার মত তুমি আছো  
তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে  
দুহাত ভরে তুলে পান করব ভাবি  
দুহাত গলে ঝরে যায় বালি  
রঙিন ফুলে চোখে স্বপ্ন  
কাঁটায় বিঁধছে হৃদপিণ্ড  
জানি না সেখানেই কি থাকে মন?  

মরিচিকার পেছনে দৌড়াই সারাক্ষণ  
অন্তহীন মরুভূমির মাঝে  
যেখানে নীরব নদীর জলের আহ্বান  
বালির উপর রোদ্দুরের মায়া  
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, মনে দ্বিধা  
মরিচিকা কি শুধুই বিভ্রম, না কোনো পরম সুখ?  
মরিচিকা নাকি সত্যি আছো তুমি  
সত্য মিথ্যার এ খেলা, এক চিরন্তন সুখানুভূতির আকাঙ্ক্ষা।

নির্বাসন

এভাবে ডেকোনা আমায়, ডুকরে কাঁদি আমি,  
চোখে সংসারী বাঁধ, জলকে আটকে,  
ভিতরে ভিতরে বন্যা, হাবু ডুবু খাচ্ছি,  
নোনা জল তীরে আছড়ে ফেলে চলে গেল কোথায়,  
কাদা মেখে পড়ে আছি নির্বাসিত আমি।

এভাবে ডেকো না আমায়, গলা শুকিয়ে ওঠে,  
খাঁ খাঁ করছে মাঠ, পোড়া ঘাসের ডগা,  
চোখের আয়ত্তে নেই কোন সবুজ,  
এ নয় কোনো ধান কেটে নিয়ে যাওয়া ক্ষেত,  
যে ফিরে আসবে কেউ,  
কিম্বা আল বেয়ে পৌঁছে যাব কোন এক মাটির গ্রামে,  
শুধু কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে গাছ,  
আর এক নির্বাসিত আমি।

উমনো ঝুমনো নয় খেয়ে ছিল পিঠেপুলি,  
কিন্তু আমি কি দোষ করেছি?  
কেনো এ নির্বাসন?  
ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল দুজনের,  
মনের ঝরনা মিলে জলপ্রপাত হওয়ার ছিল দুজনের,  
আকাশে ঘর বাঁধার ছিল দুজনের,  
তবে কেনো একা আমি আজ নির্বাসনে।

সকাল থেকে রাত,  
কোথা থেকে ভেসে আসছে ডাক,  
দিশাহারা আমি চৌরাস্তায়,  
কোন পথে পাব আমি তোমায়,  
তোমার বলা কথা ফিসফিসিয়ে আমার মাথা খায়,  
এ কোন নির্বাসনে পাঠালে আমায়...


গোপন কথা

খুঁজছি একটা ঠিকানা
কোথায় লুকাবো আমার গোপন কথা
মনটা আর নিরাপদ নয়
একটু গোপন গন্ধ পেলেই
চুপি চুপি খবর করে চোখকে,
চোখগুলো যেন গুপ্তচর,
গোপন পাতা ওল্টায় নিঃশব্দে 
হঠাৎ ঝড়ের রাতে ভাঙে সব
না হয় দুঃখে সুখে ভাসবে জলে
না হয় প্রেমের কথা বলবে সে নিজের ছলে,
চাহুনি এমন
গোপন থাকেনা কিছুই আর গোপন বলে।

খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ালে
মেঘেরা আজকাল বেশ সন্দেহপ্রবণ,
ওদের কাছে কিছু বলা ঠিক হবে কিনা
ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যে নামে।

জোনাকি আলো মিশে যায় অন্ধকারে,
চাঁদটাও কখন যেন লুকিয়ে পড়ে গাছের আড়ালে।
কিছু চুপিচুপি রাত কথা বলে বাতাসের কানে,
কিছু অসমাপ্ত ব্যথা ফিসফিসিয়ে ভাসে ঝিনুকের প্রাণে।
হাত বাড়িয়ে দেখি—আকাশও রুদ্ধ।
গোপন কথারা শুধু ছটফট করে,
অন্তহীন রাতের আলিঙ্গনে।

মনের ভেতর প্রতিটি দাগ আজ অসহায়,
গোপন কথারা জানে না, কোথায় মেলে আশ্রয়।
অজানা ইচ্ছে আর অচেনা ব্যথার টানাপোড়েনে,
সবই ধীরে ধীরে গোপন থেকে যায় সময়ের আঁচলে।

তবুও খুঁজছি আমি, সেই আশ্রয় খোঁজার পথ—
যেখানে গোপন কথারা থাকবে শান্ত, নিঃশব্দ,নিরাপদ
নির্জন সাগরের ঢেউয়ের মতো গোপনে,
যেখানে কেউ শুনবে না,
শুধু নিভৃত নির্জনে বয়ে যাবে
অসমাপ্ত কিছু অভিমান
কেউ জানবে না, শুধু একান্তে হারিয়ে যাবে আমার গোপন কথা সন্ধ্যার সুরে।

Post a Comment

0 Comments