পর্ব ৫
সঞ্চিত হৃদয়ে ...
কমলিকা ভট্টাচার্য
বড় হয়ে গেছি আমি
সন্ধ্যের হাওয়ায় ভেসে আসছে ছাতিম ফুলের গন্ধ
সারিবদ্ধ নারকোল গাছের মাথা
যেন সাজানো ফুলদানীর ফুল
আকাশ দীঘিতে ভাসমান চাঁদ
মেঘেতে উঠছে ছলকানো
ঢেউ
গোধূলির আঁচলে লুকিয়েছে আলো
যেন ছোট্ট একটা মেয়ে
রাতের অন্ধকার তাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়
আজ থেকে তার খেলা বন্ধ
মুক্ত ঘরে লেগেছে ভয়ের তালা
বাইরে খেলছে বাবলু এখনও
তবু তার যাওয়া হয়েছে মানা
রাতারাতি উঠেছে লিঙ্গ ভেদের পাঁচিল
মুখে মুখে তর্কের বকুনিতে
আঙুল চাপা ঠোঁটের ইশারা
ঢোক গিলে নেওয়া প্রশ্ন
পেটের যন্ত্রণা
কেউ যেন জানে না
চোখের কাজলের রঙ
লাগিয়ে আকাশের নীলে
ঝরাতে হয় বৃষ্টি খালি ভিতরে ভিতরে
টান টান করে বাঁধা বিনুনী
একের উপর এক নিয়মের বাঁধুনী
সব চাহনি বলে যায়
বড় হয়ে গেছ তুমি ...
শুধু ঐ ছাতিমের গন্ধ
সারি বাঁধা নারিকেল গাছ
আজও জানতে চায়
খেলতে যাবেনা মামণি?
মাথা নিচু করে নরম সুরে বলি
বড় হয়ে গেছি আমি ...
আমি আমি গান
সুখ পেতে গিয়ে কুড়িয়েছি শুধু অসুখ
অসুখ কি শুধু শরীরের
দম্ভের যত্নে কোণঠাসা মন।
জীবনে 'আমি আমি'
একটা খুব প্রিয় গান
শব্দ সুর তাল ছন্দ সব নিজের করেই বাঁধা।
অজান্তে কোন শব্দ তীর বিদ্ধ করেছে কার মন
সেই খবরে কি দরকার
নিজের গানেই মুগ্ধ
জীবন কবে বেসুর হয়েছে সে খেয়াল করে কি লাভ?
বাজনদারের বাজনায় জমজমাট আসর।
আমার গানের তালে যারা তাল মেলাতে পারিনি তাদের আমি বাতিল করেছি
আদ্দিকালের বদ্যির বাক্সে
ভরা খালি সংস্কার
আমি আমি গান একটি জনপ্রিয় গান।
আমার খুব প্রিয়,জানি তোমারও ,
কিন্তু কি বোকা সেই লোকগুলো আজও যারা
কাঁদে সর্ম্পক হারিয়ে গেলে
গানের ছন্দপতন হলেও
তবু
আজও ছন্দ মেলাতে চায় জীবনে।
আমি আমি এই রকম আধুনিক গান তারা বোঝেনা।
এখনও মান্ধাতার আমলের কাঁদুনে সুরে অভ্যস্ত ...
🍂
ফিরতেই হবে
আমি তো তোমায়
বলেই ছিলাম আগে,
আমার চোখের দৃষ্টি ছাড়িয়ে কোথায় তুমি যাবে?
সাময়িক সময়ের উল্লাসে
বারবার গিয়েছ তুমি ভেসে
আরো চাওয়ার সুখ সুখ অসুখে
মন ভরেছে বিষে হাহুতাশ চোখে মুখে।
সেদিনও তোমার চোখের কালিতে ভরেছি আমার অন্তর
ছন ছন ভাঙ্গার শব্দে ঝরেছি
খাতার উপর।
সেদিনও তোমার মনের বিষাদে বেজেছি বেসুরো তানে
রিম ঝিম সুরে তবুও খাতা ভরেছি মধুর গানে।
রাতের গভীরে
কবিতা আজও জানো কেন জেগে আছে?
দিনের শেষে কবি, তোমাকে যে ফিরতেই হবে তারই প্রেমের কাছে ...
হেমন্তের মনখারাপ
রোদ আছে, আছে বৃষ্টি,
আছে হাওয়া, আছে মাটি।
আছে সব কিছু পাওয়া,
অঢেল সময় হারিয়ে যাওয়া।
তবু কেন একঘেঁয়ে—
মন যেন কাকে চেয়ে
হয় উদাসীন,
মন-মোচড়ানো সুরে বাজে ভায়োলিন।
তীব্র অনুভূতির পেলবতা,
তোমাকে জড়িয়ে মনলতা
পেতে চায় সাত মন সুখ।
রাতভোর জ্বরে খোঁজে তোমারই মুখ।
জানি না, কে তুমি—
হেমন্তের কুয়াশায় ঢেকেছ মুখ।
তুমি কি সেই শিশির ভেজা
ঘাসে পা ডোবানো কোমলতা?
তুমি কি হঠাৎ পাওয়া খুশি,
কাজ শেষের একরাশ স্বস্তি?
নাকি তুমি সে, যার সাথে
কারণে-অকারণে কথা বলতে ইচ্ছা করে
সব ভালো লাগা, আনন্দ,
কষ্ট-কান্না ভাগ করে নিতে ইচ্ছা করে।
যেমন কাল রাতে, অনেক জ্বরে
তোমার কথাই মনে হচ্ছিল।
একবার বলবে কিছু একটা আদর করে
আমার সব যন্ত্রণা খিলখিলিয়ে উঠবে হেসে।
তোমাকে দুহাতে জড়াতে গেলেই তুমি হারিয়ে যাবে
হেমন্তের সকালের রোদে
চিকমিক করে উঠবে আমার গাল,
হারিয়ে যাওয়ার আগে শিশিরের শেষ শ্বাস...
আমার দখল নেবে আবার মনখারাপ।
0 Comments