জ্বলদর্চি

কীসের আবাহন কীসের বিসর্জন! /ঋত্বিক ত্রিপাঠী

কীসের আবাহন কীসের বিসর্জন! 

ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

'দুগ্গা দুগ্গা' বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়ায় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন—"মা-কে বিদায় করে জলে ফেলে একমাত্র বাঙালি পারল দুঃখে না ভেসে আনন্দের কোলাকুলিতে মাততে। মাথায় থাকল হিমালয়, বাঙালি চাইল তাই দুর্গা দুগ্গা হয়ে গেল।" এবারের পুজোর প্রাসঙ্গিকতা ও নিয়তি এখানেই। হিমালয় সমান দুর্নীতি ঠেকাতে, সমাজকে শুদ্ধিকরণ করে আসল দেবদেবী পূজার লক্ষ্যে এক শ্রেণি রাস্তায় বসে আছে। আর অধিকাংশ মানুষ মাটির প্রতিমার আবাহন বিসর্জন নিয়ে মাতোয়ারা।  
 
খুন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতিতে সারা দেশ শ্মশানে পরিণত হয়েছে। এখনও আমরা গান লিখব! কবিতা লিখব! বাঁশিতে সুর দেব! মাটির মূর্তির আবাহন বিসর্জন নিয়ে উন্মাদ হব! বিসর্জন দিয়ে উল্লাস করে বলব— শুভ! শুভ বিজয়া! আসছে বছর আবার হবে।
শান্তির জন্য বাণী না অস্ত্র জরুরি! সাপ ফণা তুলেছে আর আমরা অহিংস বাণী ছড়াচ্ছি! মা-বোনের ধর্ষণ হচ্ছে। আমরা শিরোনাম পড়ছি। পুজোর অনুদান বাড়ছে। কর্মক্ষেত্র নির্মাণের চাইতে ভাতা গুরুত্ব পাচ্ছে। দিনের শেষে গান লিখছি। আসলে 'সময়' লিখছে মূর্খের স্তুতি।

 বর্তমান, সবচেয়ে জরুরি—সময়োপযোগী আইনের আবাহন ও আইনের দীর্ঘসূত্রী-র রীতি বিসর্জন। দেশের আইনকে নতুন করে লেখা হোক। যাতে অপরাধমূলক কাজ করে কোনও নেতামন্ত্রী, ধনবান কিংবা প্রভাবশালী মানুষ যাতে না আইনের ফাঁক দিয়ে পালাতে পারে। 

কবিতা-গল্প-গান-নাচ, মোমবাতি মিছিল, পথযাত্রা, মিটিং, রঙ্গরসিকতা অনেক হল। আসুন, এবার নতুন আইন লেখার জন্য গণবিপ্লব করি। নইলে সাধারণ মানুষ নিজের মতো আইন গড়ে নেবে। তাতে জনপ্রতিনিধিরাও ছাড় পাবেন না। এটা যেন জনপ্রতিনিধিদের মাথায় থাকে। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতাকে মাথায় রেখে আগামীদিনে সন্তান হারানো বাবামা —খুনী-ধর্ষককের পাশাপাশি খুনী-ধর্ষকের প্রশ্রয়দাতা জনপ্রতিনিধিকেও হত্যা করবে। আত্মরক্ষার্থে খুন—খুন না। আত্মজ তো আত্মা থেকেই জন্ম নেয়। কলমের ধারালো অগ্রভাগ দিয়েই সন্তান হারানো বাবামা লিখবেন নতুন আইন। সম্প্রতি ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গণধোলাইয়ে অভিযুক্তকে পিটিয়ে মারার ঘটনা প্রমাণ করে দেশের আইন আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। 

সমালোচক নিকল বলেছিলেন, একই ঘটনায় ট্রাজেডি ও কমেডি থাকে। সারা বছর ধরেই আছে ধর্মীয় উৎসব। আচ্ছা, যাঁরা ধর্মীয় উৎসবে বিশ্বাসী নন, যাঁরা নাস্তিক, যাঁরা জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক চর্চাকে একমাত্র ভাবেন, সরকার কি তাঁদের জন্য ভাবেন! আর গণতন্ত্রের অজুহাতে বছর বছর ভোট উৎসব। উৎসব মানেই বিপুল অর্থ অপচয়। তারপর দলবদল। নতুন দল ক্ষমতায় এলে খুন ধর্ষণ কমে! উৎসবের দুই অভিমুখ। উল্লাস ও হাহাকার। সমাজ শুদ্ধিকরণের নামে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে অহিংস ও সহিংস রীতি! অধিকাংশ মানুষের এত অশিক্ষা নিয়ে আর যাই হোক গণতন্ত্রের নামে দেশ চালানো—সেরা রঙ্গ বটে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে দলতন্ত্রের পায়ে নত হওয়া দেশ আর কবে স্বাধীন হবে! আর কতকাল সংস্কারহীন ধর্মকে অলৌকিকত্বে মোড়কে ভোটের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করা হবে!

সময় বলবে কোনটা ঠিক— এ কথা বলে রাষ্ট্র মাটির প্রতিমার পায়ে অজ্ঞানতা নিয়ে পড়ে থাকলে দেশেরই সামগ্রিক ক্ষতি। কারণ দেবদেবী তো আর  দেশ চালান না!

🍂

Post a Comment

0 Comments