জ্বলদর্চি

গুচ্ছকবিতা ২/সঞ্চিত হৃদয়ে../.কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছকবিতা ২
সঞ্চিত হৃদয়ে...
কমলিকা ভট্টাচার্য 


 সকাল থেকে যায়...

তুমি বললে, সকালটা হয়ে উঠে এত সুন্দর
ফেলে রেখে কাজ মনটা খোঁজে ,তোমার মনে বন্দর।

আমিতো চাই শুধু, তোমাতেই মজে থাকতে
আদরমাখা এই সকালটাকে  আরেকটু ধরে রাখতে।

হৃদয়ের উৎসুক শব্দগুলো সবার চোখের আড়ালে,
প্রেমকাব্য হয়ে উঠবে গড়ে তুমি হাত বাড়ালে।

তুমি বললে,সকাল আলোয় করে উঠে ঝলমল
লজ্জা রাঙা সুরে বাজে আমার পায়ের মল।
 
আমার চোখে নাচন জাগে, জানি না কোন সে ছোঁয়ায়?
তুমি এই সাত সকালে বোধহয় ভাবছো আমায় !


শিশির ভেজা এই সকালে মন যে তোমায় চায়
তুমি বললে একবার, সকাল থেকে যায়।


 অদেখা সাক্ষী


কেউ কি দেখছে তাকে
শুধু আমি ছাড়া,
শিশিরের জলে সবে সে স্নান
সেরেছে...
পায়ের নিচে ভিজে ঘাসের স্পর্শে
যেন তার প্রথম অনুভব,
এবার সূর্য তাকে ছোঁবে,
গাছের ডালে বসা ঐ পাখিটিও কি ওকে দেখছে?
না না, শিকারি চোখ লক্ষ্যস্থির,
হিংস্রতার ফাঁদে বন্দী পৃথিবী।

কুচলে দিয়ে চলে গেল গাড়ি
রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ল তার স্বপ্ন,
আমি দেখছি, বয়ে যাচ্ছে রক্ত নদী
বেদনায় পুড়ে খাঁ খাঁ করছে বাতাস।
কেউ কি দেখছে তাকে আমি ছাড়া?
না না, কে আর দেখবে ওদের?
পথ ভুলে গিয়েছে সবাই,
আমি তো শুধু অক্ষর শ্রমিক ছন্নছাড়া!

বাতাসের মাঝে ভাসছে তার কষ্ট,
আঁধারের গভীরে মিলিয়ে যায় তার হাসি,
রাতের অন্ধকারে চোখের জল
মিশে যায় নিঃসঙ্গতার গভীরে,
কেউ কি দেখে, কেউ কি শোনে?
নাকি এ পৃথিবী নির্বিকার,
নিঃস্বার্থ চোখে কেবল তাকিয়ে থাকে দূর আকাশ?
আমি দেখি—
আমার কলমে আঁকা তার শেষ আর্তনাদ,
আমার একা মন তার শেষ সাক্ষী।

তবুও, হয়তো সূর্যের আলোয়
কেউ একদিন তাকে দেখবে,
হয়তো সেই পাখিটিও বুঝবে
তার অদৃশ্য স্পর্শের সুর,
আর আমি
ছন্নছাড়া কবিতা হয়ে
হারিয়ে যাব তারই পথে।

🍂


 মনে পড়লেই...

মনে পড়লেই ঠোঁটে জাগে একলা পাগল হাসি,
মনে পড়লেই বুকের মাঝে শ্বাসরুদ্ধ উদাসি।

মনে পড়লেই আপন মনেই বলে ফেলা কত কথা,
মনে পড়লেই শূন্যতায় ডুবিয়ে দেয় অব্যক্ত ব্যথা।

মনে পড়লেই চোখের কোণে টলটলিয়ে ওঠে জল,
মনে পড়লেই খুঁজে দেখা থিতিয়ে পড়া অতল।
 
মনে পড়লেই চোখের পাতায় ভেসে ওঠে তার ছবি,
মনে পড়লেই তখনই তো কলম ধরেন কবি।


 কাল কি হবে?_

কাল কি হবে...
কি আবার হবে?
সূর্য উঠবে, ছায়া পড়বে, মেঘে ঢেকে যাবে আকাশ,
অথবা ঝড়ের গর্জনে কাঁপবে নিঃস্তব্ধ সকাল...
হয়ত বাতাসে ঝড়ের গন্ধ, আকাশে সিঁদুরের ছোঁয়া,
মেঘের কান্না নামে ঝমঝমিয়ে...
জানিনা, কিছুই জানা নেই।

আগে থেকে জেনে জেনে,
গ্রহ নক্ষত্রের চালের হিসাব মিলিয়ে
আঙ্গুলের হাল বেহাল,
আফসোস, যদি দশের জায়গায় বিশ হতো...
হয়ত মরণটাও পিছু হটতো।

তবু ভাবো, কাল নতুন কিছু হবে।
একঘেঁয়ে জীবনটা একটু বদলে যাবে,
নতুন কিছু শিখবো হয়ত,
কিন্তু না,
সময় আর ভবিষ্যতের চমকপ্রদ স্বভাব
আমাদের ধাতে সয় না।

জন্মের মুহূর্তেই রিজার্ভ করা গন্তব্যের টিকিট
পথে বাঁক তো রয়েই গেছে,
জানি, সে টিকিট কখনও বাতিল হবে না 
তাই বুক পকেটে রেখে বারবার দেখি,
জুজু বুড়ি হয়ে বাঁচি..
পিছনে ছায়া তাড়া করে
সেই এক প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে:
"কাল কি হবে?"

কাল কি হবে বলেই কি
আজ ভালোবাসতে পারবে না আমাকে?

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments