দোসর
পুলককান্তি কর
-এত চুপচাপ বসে আছিস কেন রে ঝুমি? ঝুমির পাশের চেয়ারটায় বসতে বসতে প্রশ্ন করল সায়নী।
-এমনি। তোর কী খবর?
-আমার খবর তো ভালোই। কিন্তু তোর কিছু একটা হয়েছে। তোর তো যখন তখন মুড খারাপ হয় না!
-না রে! সত্যি কিছু হয়নি।
-আমাকেও তুই বলবি না বুঝি? এই না বলিস ‘তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!’
-কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না রে সানি।
-কেন রে? অরণি’র সাথে সমস্যা হয়েছে কিছু?
-ওর সাথে সমস্যা কি হবে বল? বোবার সাথে লড়া যায়? সব কিছুতেই চুপ। একটু ঝগড়াঝাঁটি করলেও তো বোঝা যায় কোথাও প্রাণ আছে, কোথাও সে আছে।
-অরণি তো এরকমই ঝুমি! মুডি। চুপচাপ। নির্জন।
-কিন্তু এতটা নির্জন হলে তো বোঝাই যায় না - সে ইহজগতে আছে না নেই। কখন কোন জগতে থাকে, বুঝতে না পারলে ওর সাথে চলব কি করে?
-এই তিনবছর চালালিই বা কি করে ঝুমি?
-দ্যাখ আমি জানি, ও মুডি। চেষ্টা করি ওর মুড বুঝে চলতে, সেই মতো আমি চুপও করে থাকি। বহুদিন এমন হয়েছে – আমরা হয়তো গঙ্গার পাড়ে গেছি বা নন্দনে, ওর মুখে একটাও কথা নেই। ঘন্টা দুয়েক হয়তো সঙ্গে থাকল - চা ফা খেল, আমি দু-একবার কিছু বলতে গেলে হুঁ হাঁ করে জবাব দিল -সাতটা, সাড়ে সাতটা বাজলে, নিজে থেকেই বলল - ‘চল, এবার উঠি।’
-উঠে কি যে যার পথ ধরিস?
-না, না। সে সব দায়িত্ব কর্তব্যবোধ ওর আছে। আমাকে আমার মেসে পৌঁছে দিয়ে বাড়ী ফেরে সে। কিন্তু যাবার পথে বাসে বা ট্যাক্সিতে কোনও কথা নেই।
-এইসব বিকেলে ডেটিং এ যাবার প্রস্তাব কে দেয়? তুই?
-কখনও ওই যাবার কথা বলে। দু-একদিন আমিও বলেছি। যেই বলুক না কেন, ঘটনা একই।
-সবসময়েই কি ও চুপচাপ? নাকি প্রগলভও হয় কখনও কখনও?
-ওই মুডের ব্যাপার। মাসের মধ্যে দশদিন হয়তো এতখানি প্রগলভ থাকে যে মনে হয় এ আবার কোন অরণি? এতটাই বাচাল, নাকি এতটাই আন্তরিক – যাই বল্।
-তা এর মধ্যে কী এমন ঘটল যে তোর বাত্তি বুজে গেল?
-জানিস তো, কাল অরণি এই ফ্ল্যাটে এসেছিল। আমি চাকরী পাবার পর প্রায় দেড়বছর হল এই ফ্ল্যাটে এসেছি। একটা দিনের জন্যও সে আসেনি এখানে। কাল হঠাৎ দুপুরে ফোন করে বলল, ঝুমি তুই বাড়ী আছিস? আমি ‘হ্যাঁ’ বলতেই বলল, দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি।
-দাঁড়া দাঁড়া। তুই বললি, ও একদিনও আসেনি এখানে। তুই কি কখনও ওকে এখানে আসতে ডেকেছিলি!
-ফর্মালি হয়তো ডাকিনি; তবে আসতে চাইলে মানা করারও তো কিছু ছিল না!
-তা বললে কি হয়? তুই একা মেয়ে থাকিস। ও আসতে চাইলে তুই ভাবতে পারিস ও সুযোগ নিতে চাইছে!
-সানি, তিনবছর ওর সাথে কোর্টশিপ চলছে। আমি কি মনে মনে চাইনা, ও সুযোগ নিক?
-যা হোক, তারপর বল।
🍂
-ও আসবে বলে আমি হালকা করে টেবিল ফেবিল একটু গুছিয়ে নাইটিটা বদলে নিলাম। ওই যে আমার একটা পিঙ্ক কালারের পালাজোঁ আছে – ওটার উপর অ্যাশ অ্যাশ একটা টপ পরে নিলাম। কপালে একটা ছোট টিপ দিতে দিতেই ডোর বেল বাজলো। দরজা খুলে দেখি অরণি দাঁড়িয়ে আছে। একটা জিন্সের উপর হালকা হলুদ স্ট্রাইপ পাঞ্জাবী পরা। দেখেই বলল, - ‘কী শ্যাম্পু মেখেছিস আজ?’
-কেন?
-ভাবছি এটা শ্যাম্পুর গন্ধ না তোর গন্ধ! সারাটা ঘর ভরিয়ে রেখেছিস যে!
-‘এই কিছুক্ষণ আগেই স্নান করলাম তো। দেখছো না, এখনও চুলে তোয়ালে জড়ানো।‘ জানিস তো সানি, ও হঠাৎ এসে ঝটকা দিয়ে মাথার তোয়ালেটা খুলে দিল। দিয়েই বলল, দ্যাখ – ‘তোর চুলগুলোকে স্বাধীন করে দিলাম। দ্যাখ, চুলগুলো কেমন ঝাঁপিয়ে পড়ল তোর পিঠে! যেন এতক্ষণ এর জন্যই উতলা হয়ে ছিল!’
-তারপর? সায়নী কৌতুহল সামলাতে পারলো না।
-তারপর খানিকক্ষণ আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল। বলল, ‘জানিস ঝুমি, তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। একটুখানি আমার বুকে আসবি?’
-তুই কি বললি?
-দ্যাখ, মনে মনে আমি কী এর প্রতীক্ষা করিনি? তবু তুই জানিস জীবনে এই অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। আগে ও টুকটাক হাত ফাত ধরত, কিন্তু কখনও বুকে জড়িয়ে ধরেনি। আমি চুপ করে রইলাম। ও আবার একবার আমার সম্মতি চাইল। তখন আমি আস্তে আস্তে ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাতেই ও উঠে এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে। কোনও হুড়োহুড়িও নেই, বলপ্রয়োগ নেই – ভীষণ শান্ত অথচ সমাহিত। একটু পরে আমাকে বলল চোখটা বন্ধ কর। আমি বন্ধ করতেই আলতো করে চুমু খেল দুটো চোখে।
-তারপর?
-তারপর ওই অবস্থাতেই গুনগুন করে গাইল - ‘এ শুধু আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় হৃদি দিয়ে অনুভব’। আমাকে বলল, ‘জানিস গানটা?’ আমি বললাম, ‘চেনা চেনা তো লাগছে!’
- কিন্তু কোন গানটা বলতো দেখি?
আমি চুপ করে রইলাম।
-এটা তো ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ গানটারে! এটা বলতে পারলি না ঝুমি! যেন আফসোস ঝরে পড়ল সায়নীর গলায়।
-সানি ওটা কি ক্যুইজ খেলার সময়? নাকি আমি এত রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি?
-স্যরি! মাঝ পথে বাধা দিলাম। বল তুই।
-জানিস তো, ও ওটা নিয়ে কিছু মাইন্ড করল বলে তখনই মনে হল না। চুলের গোছা হাতে নিয়ে অনেকক্ষন গন্ধ শুঁকল। এবার একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমাকে। তারপরে এসে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল।
-ব্যস? সায়নির গলায় হতাশা।
-এখানেই শেষ নয় সানি। এরপর একদৃষ্টে আবার আমাকে দেখতে লাগলো। আমার খানিকটা আনন্দ যেমন হচ্ছিল তেমনি অস্বস্তিও হচ্ছিল কিছুটা। বললাম, ‘কী দেখছো?’ কী বলল জানিস?
-বলল, তোর ভেতরের কঙ্কালটা দেখছি। একটা মহিলা করোটি, অক্ষিকোটর, নাকের পাটা। তার নীচে দাঁতের সারি, চিবুক।
-এই কথা বলল?
-হ্যাঁ। তার খানিকক্ষণ বাদে আমাকে বলল, ‘ঝুমি তুই তো ফিলোজফির মেয়ে, বেদান্ত দর্শণ নিশ্চই পড়েছিস। বল তো, বেদান্তে মৃত্যুকে কিভাবে বর্ণনা করেছে?’
-তুই বললি?
-কী বলব? ও সব পড়েছি, পরীক্ষা দিয়েছি। অত কি মনে আছে?
-অরণি কী বলল?
-ও একটা শ্লোক আওড়ে স্থুল শরীর, সূক্ষ্ম শরীর – কী সব বলল - আমার মাথাতেও ঢুকলো না। একটু বাদে উঠে চলে গেল।
-তুই বসতে বললি না?
-বললাম তো। ‘দুপুরবেলা এসেছো, একটু কোল্ড ড্রিঙ্কস্ খেয়ে যাও, চাও খেতে পারো।‘ শুনলো না -বলল কী সব কাজ আছে।
-কেন এসেছিল জানতে চাইলি না?
-বেরোবার সময় বললাম, কিন্তু তেমন কিছু উত্তর করলো না। বলল ‘তোকে দেখতে এসেছিলাম।‘ বল সানি, আজ যদি ও এরকম করে - ওকে নিয়ে ভবিষ্যতে চলবে কী করে?
-ও তো এরকমই। তোর আজকে নতুন করে খারাপ লাগছে কেন?
-জানিস সানি, এতদিন ওর আর আমার মাঝে ওর মুডটুকু ছিল। হঠাৎ করে কাল থেকে কেন জানিনা মাঝখানে এসে আমার নারীত্ব দাঁড়িয়ে পড়েছে।
-তোর কথা সঙ্গত ঝুমি। তবে কি জানিস - অরণি’র মধ্যে কোথাও একটা তারাপদ’র ছায়া রয়েছে।
-তারাপদ কে?
-আরে রবিঠাকুরের অতিথি গল্প পড়েছিস না? আমাদের সময়ে সিলেবাসে ছিল তো!
-ওঃ। ভুলে গেছি। তা তারাপদ কেমন ছিল? মানে তারাপদর ছায়া বলতে...
-তারাপদ ছিল বোহেমিয়ান টাইপ। ওকে জাগতিক কিছু দিয়ে বাঁধা যেত না। আজ যাত্রার দলে তো কাল অন্য কোথাও। অরণিও এমনই। কবি মানুষ তো। ওকে বাঁধা খুব শক্ত। এরা সুন্দরতা ভালোবাসে -কিন্তু কোনও সুন্দরই এদের বাঁধতে পারে না। সব সময়েই হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনও খানে।
-কিন্তু সানি, কখনও কখনও যে দেখি অরণি আমাদের মতোই খেতে ভালোবাসে - শপিং করতে ভালোবাসে, সিনেমা দেখতে ভালোবাসে - ক্রিকেট খেলা দেখতে পাগল - তাকে কিভাবে বলব, সে জাগতিক বিষয়ে আগ্রহী নয়?
-ওগুলো অনেকটা আইওয়াশ রে ঝুমি! মানুষের শরীর নিয়েছে যখন, তখন মানুষিক কিছু বেসিক ইনস্টিংক্ট তো থাকবে।
-অরণি নিজেই বলে, ও সুন্দরের পূজারী। ওর খুব প্রিয় হচ্ছে চাঁদ, মেঘ, চোখ। কাল সে আমার চোখ ছুঁয়েছে - তবু তার পরেই সে আমার মুখে কঙ্কাল দেখেছে। সানি, আমার মুখ কি সুন্দর নয়? এর সাথে কোনওভাবে কঙ্কাল মেলে কী?
-ব্যাপারটা বোধ হয় তেমন নয় রে ঝুমি। ও তোকে কাল দেখে হঠাৎ করে মোহগ্রস্ত হয়ে গেছে। হাজার হোক সদ্যস্নাতা যুবতী, চুল খোলা - সে তো কবির চোখে রমনীয় হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু এরপরে সে নিজেকে শাসন করেছে এই ভেবে যে সে কেন মোহগ্রস্ত হল। নারীর সুন্দরতা তো কেবল হাড়ের উপর মাংস আর মেদের সুবিন্যস্ত প্রকাশ। ঈশ্বর তার উপরে সুন্দর ত্বক দিয়ে শুধু মানুষকে প্রলুব্ধ করেন। দেখছিস না, এরপরে সে বেদান্ত দর্শণে পৌঁছে গেছে মৃত্যুর সংজ্ঞা খুঁজতে।
-কী করব সানি! এ কি ঘর বাঁধার লোক?
-অরণি তোকে কি কখনও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে?
-না।
-তবে তুই বিয়ের কথা ভাবছিস কেন?
-একটা ছেলে তিনবছর ধরে আমার সাথে ঘুরছে, সিনেমা যাচ্ছে - রেষ্টুরেন্টে খাচ্ছে - আমি কি ধরে নেবো না সে আমার সাথে স্থায়ী কোনও সম্পর্ক চায়? সবচেয়ে বড় কথা, ওর অন্য কোনও বান্ধবীও নেই।
-তা ঠিক! তবে আমার মনে হয়, অরণি নিজে বিয়ে করা সম্পর্কে ততটা উৎসাহী নয়। ঝুমি তুই সরাসরি ওকে জিজ্ঞাসা কর। তোর ছাব্বিস-সাতাস বয়স হয়ে গেল কিন্তু!
-আচ্ছা তাই যদি হয় ও ফিজিক্সে এম.এস.সি পড়ে এম.বি.এ করতে এলো কেন? আমরা সবাই তো ওখানেই পরিচিত হয়েছি। তুই এম.বি.এ পড়লি কেন সানি? চাকরী পাবি বলেই না? ও যদি সংসার না চায়, কবিতা লিখেই তো কাটাতে পারতো! এম.বি.এ করার দরকার কী পড়লো?
-সব কিছুকে এত সহজ ভাবে বিচার করা ঠিক নয় ঝুমি! হয়ত পারিবারিক প্রেশার ছিল। বা হয়ত নিজে কি করবে বুঝতে না পেরে সামনে যা পাচ্ছে তাতেই ঢুকে পড়েছে। এমন অনেক পসিবিলিটি থাকতে পারে।
-আমি কোনও কিছু মেলাতে পারছি নারে সানি। যে ছেলে নারীকে জড়িয়ে ধরেও মোহমুক্তির জন্য মনকে শাসন করে, সে শার্ট কিনতে গেলে ব্রান্ডেড লিনেনই খোঁজে কেন? বাইক চালাতে হলে এনফিল্ডই কেন তাকে খুঁজতে হয়? সেখানে কি মোহ নেই?
-আমাদের সাধারণ দৃষ্টিতে তো আছে বলেই মনে হয়।
-তোর অসাধারণের দৃষ্টিতে কেমন মনে হয় শুনি?
-হয়তো বা এগুলো জড় বস্তু বলে সে মনে করে এদের মায়া কাটানো সোজা।
-সানি, আমার কেমন যেন আজ মনে হচ্ছে তুই অরণি’র প্রতিনিধি হয়ে এসে আজ দাঁড়িয়েছিস এখানে। ওকে ডিফেন্ড করছিস!
-ওকে কেন ডিফেন্ড করব ঝুমি? আমি তোকে সহজ ব্যাপারটা বোঝাতে চাইছি। আমি তোর বন্ধু।
-কী করব তাহলে বল? আমি নিজে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেব?
-দে। যদি না বলে তো মিটেই গেল।
-যদি হ্যাঁ বলে?
-তাতেও ভেবে দেখার ব্যাপার আছে। তুই নিজে কি মনে করিস? বিয়ে করে নিবি ঝুমি?
-হ্যাঁ। আমি ওকে ভালোবাসি। আজ তিনবছর ধরে ওর সাথে মেলামেশা করেছি তো এই জন্যই।
-তাহলে আর মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন? আর ভাবছিসই বা কেন – ভবিষ্যতে চলবে কী করে?
-আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি নারে সানি। আমার খুব কান্না পাচ্ছে।
অনেক্ষণ চুপচাপ রইল দুজনেই। সায়নি বলল, ‘ঝুমি কফি খাবি?’
-তুই বোস, আমি করে আনি।
-না, না, তুই বোস। আমি করে আনছি।
একটু পরে কফি খেতে খেতে সায়নি জিজ্ঞসা করল, ঝুমি অরণি’র আগে কোনও অ্যাফেয়ার ট্যাফেয়ার ছিল কিনা জানিস?
-হ্যাঁ। ওই বলেছে, দুটো অ্যাফেয়ার ছিল।
-অ্যাফেয়ার গুলো কেন ভেঙেছে তোকে বলেছে কিছু?
-ও তো নিজেই বলে ওর যা মুড, ওর বাবা-মা’র সাথেই ঠিকঠাক মিলিয়ে থাকতে পারে না। বাইরের মেয়ে থাকবে কী করে?
-তুই সব জেনেশুনে তবে প্রেমে পড়লি কেন?
-তুই তো সাহিত্যের মেয়ে সানি! তোর মুখে এই কথা? প্রেম কি লজিক মানে? প্রেম হয়ে যায়।
-তুই অরণি’র সম্বন্ধে আর কিছু জানিস?
-হ্যাঁ। ও আমাদের এম.বি.এ পড়ার সময় কাউকে বিয়ে করেছিল। তিনদিনের বেশী সেই বিয়ে টেকেনি।
-তুই জানিস এটা? জিজ্ঞেস করিস নি, কেন বিয়েটা টেকেনি?
-দ্যাখ সানি, আমি নিজে এই বিষয়টা নিয়ে বেশী খোঁচাখুঁচি করিনি। এমন একটা ব্যাপার - ও নিজে থেকে যা বলেছে তাই শুনে নিয়েছি।
-ও কী বলেছে?
-ও বলেছে বিয়ের তৃতীয় দিনে ওই মেয়েটি এসে বলল ও সেপারেশন চায়। তাই দিয়ে দিয়েছে।
-তুই জিজ্ঞাসা করিসনি, মেয়েটা কেন মুক্তি চায়?
-না।
-তুই জেনেশুনে একটা বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করতে রাজী হলি ঝুমি?
-কেন? লোকে ডিভোর্সি বিয়ে করে না?
-না তা নয়! তোর কাছে ভার্জিনিটি ম্যাটার করে না? যদিও শব্দটা মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য হয়! বিশেষ করে তুই নিজে যখন ভার্জিন।
-ম্যাটার করে না বললে মিথ্যে হবে। ফ্রেশ হলে তো ভালোই হ’ত। তবে আমি যখন ওর প্রেমে পড়েছি তখন তো এসব জেনেই পড়েছি। তাই এই ব্যাপারটা মাথায় রাখিনি সানি।
-ঝুমি তুই কখনও জিজ্ঞাসা তো করতে পারতিস ও ভার্জিন কিনা?
-করব ভাবি, তবে লজ্জা পাই। বিয়ের পরেই না হয় জিজ্ঞেস করব। এখন এসব জানলে যদি খারাপ লাগে!
-ও মা! তুই সমস্যা থেকে পালাতে চাস ঝুমি? খারাপ লাগলে তার ফয়সালা তো এখনই করে নেওয়া উচিৎ যাতে পরে এই নিয়ে মন কষাকষি না হয়।
-সে আমি পারবো না রে সানি। আমি ওকে হারাতে ভয় পাই।
-ঝুমি, তুই জানিস কার সাথে ওর বিয়ে হয়েছিল?
-অরণি বলেছিল মেয়েটি নাকি আমাদের সাথেই এম.বি.এ পড়তো। তবে অনুরোধ করেছিল নামটা জিগ্যেস না করতে।
-তুইও জিজ্ঞেস করিসনি?
-কেন করব বল? যে নিজে আমায় তার গোপন কথা বলছে এবং অনুরোধ করছে নামটা গোপন রাখতে, তার কথা আমার সম্মান করা উচিৎ।
-ঠিক কথা। অরণি’র প্রতিও আমার সম্মান বেড়ে গেল এই জন্য। অ্যাটলিস্ট মেয়েটার বিশ্বাসের মর্যাদা সে রেখেছে।
-মেয়েটির বিশ্বাস মানে?
-মেয়েটি ওকে বলেছিল ওদের বিয়ের কথা যেন পাঁচকান না হয়, তবে ওর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে যাবে। ওর ভালো বিয়ে হবে না, এইসব আর কি?
-তুই জানলি কি করে সানি? তোর সাথে অরণি’র বেশী মেলামেশা তো দেখিনি কখনও!
-আমি জানি, কারণ ওই মেয়েটা আমি।
-বলিস কী রে? কীভাবে? কবে?’ ঝুমির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
-যখন আমরা সবে সবে ভর্ত্তি হয়েছি তখনকার কথা। এই ধর তার মাসখানেকের মধ্যেই।
-কি করে?
-একদিন আমি ওই কলেজের বাঁ দিকটায় যেখানেএকটা বেদী মতো আছে না, সেখানে বসেছিলাম। দেখলাম, একটা রোগা পাতলা ছেলে জিনস্ আর ফতুয়া পরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই বলল, ‘শ্যাম্পু দিয়ে ফাঁপিয়ে যদি চুল খোলা রাখো, তবে তোমার এমন সুন্দর চোখ দুটো মার খায়। এভাবে এসো না’।
-কে ছেলেটি? অরণি?
-হ্যাঁ। অমনি আমার মনে হল - আচ্ছা করে দিই ঝাড় ছেলেটিকে। নির্ঘাত মেয়ে দেখে ছুঁকছুঁকানি, কথা বলার ফন্দি! কিছু বলতে যাওয়ার আগেই বলল, মোবাইলে একটা সেল্ফি তুলে দ্যাখো না কেমন লাগছে! আমি দেখলাম কথাটা তো সত্যি। তুই তো দেখেছিস আমার কত চুল ছিল। চুল গুলো ফুলে থাকায় সত্যি সত্যি চোখটা প্রমিনেন্ট লাগছিল না। তখন ও আবার বলল, ‘জানো তো - আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’।
-মানে? ঝুমি জিজ্ঞাসা করল।
-আমিও তাই জিজ্ঞাসা করলাম ওকে। অরণি বলল, ‘হরিণের মাংস সুস্বাদু। এই কারণেই হরিণকে শিকারীরা মারে।
-‘তার সাথে আমার কী মিল?’
-মিল এই যে, তোমার এত সুন্দর ফিগার, এত সুন্দর চুল, এজন্যই সবাই একসাথে চোখ দুটো দ্যাখে না!
-ঠিক বলেছে তো সানি! সত্যি সত্যি, তোর চোখ দুটো দারুণ রে! এত উজ্জ্বল, এত গভীর - আজ প্রথম দেখলাম। তা তুই কি বললি?
-আমি বললাম – ‘কী করতে বলো আমাকে?’
-তুমি চুল ছেড়ে আসবে না। যদি চুল ছাড়ো, তবে চোখে গাঢ় করে কাজল দেবে। দুটো পাতাতেই দেবে। আর আই ল্যাশগুলোতেও একটু ব্রাশ বুলিয়ে নেবে।
-যাই বল্ সানি, অরণি’র কিন্তু এই সেন্সগুলো দারুণ। ও আমাকেও সাজার ব্যাপারে দারুণ গাইড করে। ঝুমি বলল।
-হ্যাঁ, তা ঠিক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ও নিজে ‘ভালো চোখ’ ভীষণ ভালোবাসে। ওই অঙ্গটার সঠিক প্রকাশ যাতে হয়, এ বিষয়ে ওর অগাধ জ্ঞান।
- তারপর কি হলো?
-আমাদের বন্ধুত্ব হলো। বন্ধুত্ব গাঢ়ও হল। জানতাম, ও কবিতা লেখে। আমিও সাহিত্যের মেয়ে। আমাদের গল্প আড্ডার সিংহভাগ কবিতা গল্পতেই ফুরোতো। কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে একটা চিরকূট দিল, তাতে লেখা –
মাল্লা বাঁধো নাও, সাগর দেব পাড়ি
ফুল সেজে নাও গায়ে, আগুন রঙের শাড়ি...
পড়ে আমিও লিখে দিলাম-
স্বপ্ন সাজিয়ে চলে যেতে চাই
তোমার কাছেই
যদি চাও
জোয়ারেই তরী ছেড়ে দিতে চাই
তোমার হাতেই
যদি বাও...
-বাঃ। তারপর?
-ব্যাস। তখন অরণি একাই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতো। পুরোনো দিনের দোতলা বাড়ী। দোতলায় বাড়ীওয়ালাদের ব্যবস্থা। তবে ওনারা প্রায় সময়ই থাকতেন না। দক্ষিণ কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট আছে ওঁদের, ওখানেই ওঁদের বেশীরভাগ সময় কাটতো। আমি বাড়ীতে কলেজের এক্সকারসান বলে এসে উঠলাম অরণির ঘরে। সেদিন আমডাঙার কালীবাড়ীতে গিয়ে মালাবদল করে নিলাম। অরণি একটা মঙ্গলসূত্র বানিয়ে এনেছিল। যদিও সেটা বাঙালী কালচার নয়, তবু পরে নিলাম। আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। কোনও সাক্ষী নেই, কোনও বান্ধব নেই - শুধু দুজনে মুখোমুখি, গভীর সুখে সুখি...
-তা সে সুখ টিকলো না কেন?
-মন্দির থেকে আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেল। বাইরে খেয়ে টেয়ে বাড়ী এলাম সন্ধ্যেবেলা। সেদিন আকাশে ছিল শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ। অরণি’র বাড়ীর ছাদে ওঠার সিঁড়িটা দোতলার ভেতর হয়ে যেত না। দুটো চেয়ার নিয়ে উঠে গেলাম ছাদে। চাঁদের চৌষট্টি কলা নিয়ে কাব্য হল, গান হল - রাতও কেটে গেল। ভোর রাতে ছাদ থেকে আমাকে পাঁজাকোলা করে অরণি ঘরে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিল। আমার তখন বুক ধুকপুক। এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসছে। অরণি এসে আমার পাশে বসল। একদৃষ্টে আমার দিকে তাকাল অনেকক্ষণ। আলতো করে আমার চুলে বিলি কেটে দিল। চোখের পাতায় হাত বুলিয়ে আদর করল। তারপর গায়ে একটা চাদর চাপিয়ে দিয়ে বলল, শুয়ে পড়ো। ভোর হয়ে এসেছে।
-তুই কিছু বললি না?
-কী বলব?
-তারপর?
-সকালে উঠে দেখলাম, ও দুজনের জন্য চা বানিয়েছে। বাজার করেছে। জল খাবারের জন্য পাঁউরুটি সেঁকে রেখেছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে বাটার আর গোলমরিচও লাগিয়ে দিল।
-দুপুরের খাওয়া? সেদিনও হোটেলে নাকি?
-জিজ্ঞাসা করল, রান্না পারি কিনা! নইলে রান্না করতেও সে পিছুপা ছিল না। যাইহোক আমি রান্না-বাড়ী করলাম, ও আমাকে সাহায্য করল। দুপুরে টুকটাক গল্প।
-আর রাতে? আবার কি চাঁদকেলি হল?
-ও জিজ্ঞাসা করল, আমি ছাদে যাব কিনা। আমি ‘না’ বলতে ও উঠে ছাদে চলে গেল একা। আমি বিছানা পত্র করে শুয়ে পড়লাম। দেখলাম রাত দুটো-আড়াইটে নাগাদ চুপি চুপি এসে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। একটু ছুঁয়েও দেখল না। দু-মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো অঝোরে।
-তুই তো জেগে ছিলি। তুই এগিয়ে গেলি না কেন সানি?
-কী জানি, কী মনে হল! আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম আমাদের এ বিয়ে টিকবে না। সকালে উঠে বললাম আমার কথা। ও দেখলাম এককথায় রাজী হয়ে গেল।
-রাজী হওয়া হই’র কি আছে? তোদের তো রেজিস্ট্রি করে বিয়ে নয় যে আইন-আদালত যেতে হবে?
-হ্যাঁ, সে এক বাঁচোয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রির জন্য অরণি যদিও অ্যাপ্লিকেশন করেই রেখেছিল - আমাদের আর ডেট আসা পর্যন্ত তর সয় নি। তবে ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য। ভাগ্যিস রেজিস্ট্রিটা হয়নি!
-তুই এমন সিদ্ধান্ত নিলি কেন সানি? তুই কি ভেবেছিলি ও ‘গে’ বা ‘ইমপোটেন্ট’?
-দ্যাখ ও ‘গে’ নয়, সেটা বোঝাই যায়। তবে তখন পরেরটার ব্যাপারে আমার ডাউট হয়নি এমন নয়। তবে ওটাই যে একমাত্র কারণ ছিল, তা বলব না।
-হ্যাঁ। সেক্ষেত্রে তোর সিদ্ধান্তটা একটু বেশী তাড়াতাড়ি নেওয়া হয়ে গেছে বলে মনে হয়। তোর আরও সময় দেওয়া উচিৎ ছিল।
-ঝুমি, আমি বলছিই তো - ওটা আমার ছেড়ে আসার বড় কারণ নয়। অনেকসময় আমরা আমাদের বিবাহিত বন্ধুদের থেকেই শুনে থাকি, - অনেক হাজব্যান্ড সাময়িক একটা ভয় পায় এইসব ব্যাপারে। সময় দিলে এবং চিকিৎসা করালে এসব ঠিকও হয়ে যায়। সুতরাং ওই বিষয়ে আমি খুব ওরিড ছিলাম না। আমার যেটা হয়েছিল সেটা রাগ নাকি অভিমান - আমি এখনও ডিফাইন করতে পারি না। তুই একটুখানি আগে নারীত্বের কথা বলছিলি না? সেই নারীত্ব এসে আমাকে লাঞ্ছিত করেছিল সেইদিন।
-একথা বলছিস কেন সানি? দুটো তো মাত্র রাত ছিল তোদের কমন!
-আসলে তখন তোর নিশ্চই মনে আছে - আমাদের ক্লাশের বেশীর ভাগ মেয়েই আমার সৌন্দর্যের কারণে আমাকে ঈর্ষা করত। প্রায় সব ছেলেরা আমার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকতো। সেখানে অরণি, যে নিজেকে সুন্দরের পূজারী বলে দাবী করতো - সে আমাকে উপেক্ষা করে ছুঁয়েও দেখল না? আমার এত সুন্দর শরীর – তাকে আবিষ্কার করার ইচ্ছেটুকু তার হল না! এতটা নির্জনে এতটা সঙ্গোপনে থেকেও! তখন বোধ হয়, এই রাগটা, এই অভিমানটাই আমাকে তাতিয়ে তুলছিল যা ওর থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে।
-তোর কী মনে হয় সানি? তুই কি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলি?
-না রে ঝুমি। এখনও আমি মনে করি সরে এসে ঠিক করেছি। দ্যাখ আমি সাধারণ মেয়ে। আমি সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখি, সন্তান চাই, ঘরকন্না সাজাতে চাই। এমন বৈরাগী কবিদের সাথে মাঝে গল্প করা যায়, সাহিত্যের চর্চা করা যায়, ঘর করা যায় না। আমি যদি জেদ করে থেকে যেতাম কিছুদিন, তখন হয়তো ওকে শরীরে পেতাম, মনে পেতাম না কোনও দিন।
-সানি তুই তো তবু ওর মনের খোরাক দিতে পারতিস। ও যেসব আলোচনা করতে চায়, তুই তাতে সায় দিতে পারতিস। আমি তো তাও বুঝি না রে!
-ওটা কিছু ম্যাটার করে না ঝুমি! তুই তো তিনবছর ওই ভাবেই চালালি। ও যদি মনে করে ওতেই ধরা দেবে। মনে না করলে হাজার কবিতা পড়েও তার মন পাবি না।
-জানিস সানি, অরণি কিন্তু কোনওদিন তোর কথা বলে না। হয়ত তুই চলে গেছিস বলে প্রবল অভিমান নিয়ে বসে আছে।
-দ্যাখ ঝুমি, অরণিকে আমিও ভালোবাসতাম। হয়তো এখনও বাসি, এখনও মিস করি। কিন্তু ওই যে বললাম - আমার এই জীবন একটাই। এই সেন্টিমেন্ট দিয়ে সারা জীবন আমি কাটাতে পারতাম না। সবসময় এই লাড্ডু আমি মুখে পুরতাম যে অরণি আমার, কিন্তু আমি জানি ও আমার না। ও কারুর না। ও কারুর হতে পারে না।
-মানুষের তো বদলও হয় সানি!
-গতকাল তোর সাথে যা করেছে, তাতে কি মনে হয় ও বদলেছে? ও জীবনে বদলাবে না ঝুমি। ও যদি বদলায়, ওর মুড চলে যাবে, ওর সৃষ্টি চলে যাবে। এমন লোককে ধরার চেষ্টা তুইও করিস না ঝুমি। তুই কষ্ট পাবি।
-তুই তো জানিস সানি, তোদের মধ্যে কোনও রিলেশনই হয়নি, তবে এতক্ষণ ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন করছিলি কেন?
-ওটা একটা নিছক মহিলা কৌতুহল। ওটা কিছু না।
-তুই যে আমায় বললি বিয়ের প্রস্তাব দিতে, কী করব? দেব?
-দে।
-যদি না বলে দেয়?
-তবে তুই বেঁচে গেলি ঝুমি। ক’দিন হয়তো কষ্ট হবে। সারাজীবন পেয়েও না পাওয়ার থেকে ওটা ভালো রে।
-আমি ওকে ছেড়ে থাকতে পারবো না রে সানি। আমার তোর মতো স্ট্যামিনা নেই।
-দিনের পর দিন ও যদি তোকে ছুঁয়েও না দেখে, সইতে পারবি তো?
-ভাববো, সে তো কাছেই আছে। একই ঘরে নিশ্বাস তো নিই দুজনে!
-যদি কালকের মতো তোকে মাঝপথে বিব্রত করে?
-ভাববো, ওটা ওর স্বভাব।
-যদি তোকে ছেড়ে চলে যায় তারাপদের মতো?
-আমি অপেক্ষা করব। মাস। বছর। কোনও না কোনও দিন তো ফিরবে! মনে তো পড়বে তার, কেউ আছে প্রতীক্ষায়!
-তাহলে মর তুই!
-কিন্তু সানি, সত্যি সত্যি যদি ও আমাকে ‘না’ করে দেয়?
হঠাৎ করে সায়নী এসে জড়িয়ে ধরল ঝুমিকে। ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল – ‘দূর বোকা! যে সত্যিকারের ভালোবাসে, তাকে বিমুখ করতে ঈশ্বরও ভয় পায়। দেখিস ও ‘না’ বলবে না তোকে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল সায়নীর একেবারে অন্তস্থল থেকে। হঠাৎ একটা চোরা ঈর্ষা এসে ছুঁয়ে দিল ওর মন। ও কেন ঝুমির মতো এত সরল হল না? ও কেন সরল মনে সঁপতে পারলো না ওর ভালোবাসা? নিজেকে মৃত হরিণীর মতো মনে হ’ল তার – যে ব্যাধের শরের সামনে শুধু ছুটেই চলেছে দিনভর -মাসভর....
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments