ইস্কুল ফিস্কুল
পর্ব -২৬
সৌমেন রায়
চিত্র – অসিত কুমার সেনাপতি।
অমৃত কুম্ভের সন্ধানে
আগের পর্বে শুনেছেন কেমন করে কিছু ‘লড়াই ক্ষ্যাপা’ শিক্ষক শিক্ষার প্রদীপটি অনির্বাণ রেখেছেন। এই পর্বে দেখব কিছু ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা এখনো বিদ্যালয়ের মরা গাঙে অমৃতকুম্ভের সন্ধান করে। এই সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর স্বর্গীয় বন্দিশে মলিন শ্রেণীকক্ষ গুলি হৃদয়ের রঙে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। প্রতিদিন শরতের শিউলি, বর্ষার হাসনুহানা ঝরে পড়ে। কখনও বসন্ত বাতাস বয়ে যায়। কখনও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ক্ষণিকার উদ্ভাসে।
এক্ষেত্রেও উদাহরণ প্রচুর এবং স্বভাবতই জানা কথার থেকে না-জানা কথা বহুগুণ বেশি। একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। ক্লাস এইটের ছাত্রী অমৃতা। ভাই পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে। হঠাৎ করে ভাই একদিন অসুস্থ বোধ করে। প্রাথমিক কিছু শুশ্রুসার পর তাকে বলা হয় তুমি ভাইকে নিয়ে বাড়ি চলে যাও। সে তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয় স্যার আমি টিফিনে বাড়িতে ভাইকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসবো। আরো তিনটি ক্লাস আছে। বেশিরভাগ যখন ছুটি পেলে বাঁচে তখন সে কেন ফিরে আসতে চায় স্কুলে? অমৃতকুম্ভের সন্ধান পেয়েছে নিশ্চয়।
সপ্তমের সুমনা মনসা পূজো দিয়ে ডুরি নিয়ে এসেছে স্যারের জন্য। পড়াশোনা তেমন কিছু করেনা। অর্থাৎ শিক্ষকদের কাছে খুব বেশি বিষয়গত লাভ তার নেই। তাও কেন নিয়ে আসে ডুরি? ছাত্রের হার্ট অপারেশনের আগে শিক্ষক কেন পুজো দেন মন্দিরে ( ডুরির বা পুজোর কার্যকারিতা এখানে বিবেচ্য নয়)?শ্রদ্ধা ভালোবাসার নিবিড় বন্ধন কোথাও তো আছে। স্কুল আসার পথে হেনাকে সাপে কামড়াল। কিছুতেই অভিভাবকরা হসপিটালে নিয়ে যাবেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষ,শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে প্রবল বচসা চলছে। চরমতম হুমকির মাঝেই সুহানা সুলতানা ভিড় থেকে বলে ওঠে, ‘তোমরা ঝগড়া বন্ধ কর। আগে হসপিটালে নিয়ে চলো’। অভিভাবকরা বিপরীত চাইছেন। তাহলে কোথায় শিখল? স্কুলেই নিশ্চয়। জাহানারা কেন স্যারের মায়ের পূজার জন্য ফুল তুলে দিত প্রতিদিন? ভাগ্যশ্রী ভট্টাচার্যের বিয়েতে শিউলি খাতুন সর্বদা কি করে কনের পাশটিতে স্থান পায়?মানুন বা না মানুন সমাজের অন্তর সাম্প্রদায়িকতার লাভাতে ভর্তি! কোথায় পেল সম্প্রীতির পাঠ? পরিবারের অবদান আছে তো বটেই, সঙ্গে আছে স্কুল। সেই শিক্ষার জোরে অসুস্থ ফিরদৌসীকে সবল সুনামি কোলে করে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। নিজেও বসে পড়ে পাশে।প্রাক্তন ছাত্র রহমতের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ পোস্ট দেখে এক শিক্ষক তাকে ডাকলেন সোশ্যাল মিডিয়াতেই। আশ্চর্য কান্ড ! কত দিন আগে পাস করা ছাত্র এক ডাকে হাজির! এই ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকার কথা বলতে এক কথায় মেনে নিল। মিথ্যে কথা বলার দুদিন পর স্যারকে ডেকে ক্ষমা কেন চায় সাহেব? অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়ার মত কোমল মনোভূমিটি তৈরিতে শিক্ষকের ভূমিকা আছে নিশ্চয়ই । সমাজ সাহেব, রহমতদের এমন সরল থাকতে দেবে কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু এই যে সারল্য, সম্প্রীতির বীজ স্কুলে বপন করে দেওয়া হয় সে বীজ কি এক্কেবারে নষ্ট হয়ে যাবে? মনে হয় না।
একদিন এক অভিভাবক এক শিক্ষককে ফোন করছেন, স্যার মেয়েটা খুব ফ্রাস্টেটেড হয়ে আছে। কারো কথা শুনছে না। আপনি একটু বাড়িতে আসুন। আপনার কথা শুনবে। কোন ভরসা থেকে স্কুলের শিক্ষককে ডেকে পাঠান অভিভাবক? কোন ভালোবাসা থেকে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে ছুটির মধ্যে ছুটে যান প্রাক্তন ছাত্রীর কাছে? কোন শ্রদ্ধা থেকে ছাত্রী এতদিন আগের শিক্ষকের কথা শুনে বিশ্বাস ফিরে পায়? প্রাক্তন ছাত্রী বি এড এর প্র্যাকটিস টিচিং করতে এসে বলে যায়, স্যার এখনো কোনো সমস্যায় পড়লে মনে হয় আপনি পাশে আছেন। আপনাকে কোন সমস্যা জানানোর দরকার হয়নি । কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা ভরসা পাই। কোথা থেকে পায় ? কোন ভরসায় প্রাক্তন ছাত্র জিজ্ঞেস করে স্যার রিসার্চের টপিক কি চয়েস করব? কোন শ্রদ্ধায় রিসার্চ পেপার বেরোলে শিক্ষককে ফোন করে দশ বছর আগে বেরিয়ে যাওয়া ছাত্র? ওরা কি জানে না যে স্কুলের শিক্ষক বহুদিন এডভান্স স্টাডি থেকে দূরে। নিশ্চয়ই জানে। তবু ---। শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়ে কি করে মনে পড়ে যায় শিক্ষকের কথা,উপহার বয়ে আনে পাঁচ বছর আগের প্রাক্তন ছাত্র? জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেডিকেলে সফল হওয়ার রেজাল্ট দেখে প্রথম ফোনটা ছাত্র মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষককে কেন করে? স্কুলের শিক্ষক এই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোন কাজে আসেনি। কোথাও গভীর অনুরাগ, কোথাও গভীর যোগ সূত্র নিশ্চয় আছে। স্কুলেই অমৃতকুম্ভের সন্ধান সে পেয়েছিল নিশ্চয়। আলো (তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ) নিজের তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্র পরস্পর পরস্পরকে পুষ্ট করে এগিয়ে যেতে পারে শূন্য মাধ্যমে। সেই রকমই প্রতিবছর শিক্ষক দিবসে বহু শিক্ষক এবং বহুকাল আগের শিক্ষার্থী (বর্তমানেরও)পরস্পরকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় পুষ্ট করে। একবার এক ছাত্রী এক শিক্ষককে ফোন করল, উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইল, স্যার কীটনাশক আসিড না ক্ষার? কেন রে? স্যার, দাদা কোল্ড ড্রিঙ্কস ভেবে কীটনাশক খেয়ে নিয়েছে। কি খেলে প্রশমিত হবে? পদার্থবিজ্ঞান পড়া সে শিক্ষক রসায়নও পড়াতেন। নিজের বিপদ অগ্রাহ্য করে কেমিক্যাল ক্লাসে নিয়ে গিয়ে বিক্রিয়া দেখাতেন (ল্যাবরেটরি ছিল না)। বর্তমানে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার উচ্চনিনাদ থেকে প্রায় আত্মগোপন করে থাকা সেই ‘এলেবেলে’ শিক্ষককে চরম বিপদের সময় ছাত্রীর মনে পড়ে কি করে?
একবার এক শিক্ষক অরুণ বলে একটি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন স্বাধীনতা দিবসে কোনদিন আসিস না কেন রে? অরুণ বলে, স্যার রাজনীতির পতাকা তোলা আমার ভালো লাগেনা। অবাক স্যার জিজ্ঞাসা করেন রাজনীতি পতাকা কেন বলছিস?অরুণ বলে ওতো আমাদের পাড়াতেও তোলা হয়। গণিত শিক্ষক অরুণকে নিয়ে বসেন। রাজনীতির পতাকা আর স্বাধীন সার্বভৌম ভারতবর্ষের পতাকার পার্থক্য বোঝাতে। শ্রী অরবিন্দ কথিত ‘দেশ’ মূর্ত হয়ে ওঠে দুটি হৃদয়ে। এক ছাত্র অঙ্কুর এক বিজ্ঞান শিক্ষককে জনান্তিকে জিজ্ঞাসা করল স্যার, গান্ধীজীর নামে বিভিন্ন রকম খারাপ কথা শোনা যায়। এগুলো কি ঠিক? শিক্ষক বললেন ইতিহাসের ম্যাডামকে জিজ্ঞেস কর। ম্যাডামকে ভয় লাগে স্যার। বিজ্ঞানের শিক্ষক গান্ধীজি সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান নিয়েই ছাত্রের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসলেন। ‘রক্ত মাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত আঁখি’ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখল ইতিহাস শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে প্রবেশ করছে জীবনের মধ্যে।
এক শিক্ষক প্রভিশনাল ক্লাসে মাঝে মাঝে ছাত্র-ছাত্রীদের লিখতে দেন স্কুলের ,পরিবারের ভালো-মন্দ, পাওয়া -না পাওয়া। নামহীন লেখা জমা দেয় স্টুডেন্টরা। সেগুলোর ডকুমেন্টেশন করেন। সাধ্যের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করেন। তা যে সর্বদাই মানসিক বা পড়াশোনা সংক্রান্ত হয় তা নয়। কখনো কখনো জাগতিকও হয় । একবার এক মেয়ে লিখেছিল তার ঝুল ফ্রক পরার শখ।কিন্তু বাবা কিনে দেয়নি। যদিও নামহীন, তবু হাতের লেখাটি বিলক্ষণ চেনা ছিল শিক্ষকের। সেবার তার ঝুল ফ্রকের ব্যবস্থা হয়েছিল। ছোট ছোট সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয় এমন আত্মজনের গোষ্ঠীকেই তো পরিবার বলে নাকি?
এক বাবা অভিযোগ নিয়ে আসে এক শিক্ষকের কাছে, ছেলে তার বিষয়ের টিউশন কিছুতেই পড়তে চায় না। টিউশন না পড়লে রেজাল্ট হবে কি করে? কৌতূহলে ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করেন শিক্ষক, সবাই পড়ে তোর সমস্যা কি? স্যার, টিউশন গেলে সময় নষ্ট হয়। ক্লাসে পড়া বুঝতে আমার সমস্যা হয়না। মাঝে মাঝে আপনি যে নূতন নূতন সমস্যা দেন ওগুলো আমার খুব ভালো লাগে। আশার বাষ্পে চোখ দুটি ভরে উঠে শিক্ষকের!অভিভাবকের মনে হয় কোথাও ‘গভীর গোপন’ কিছু একটা আছে।
প্রতি ক্লাসে প্রতিবছর কিছু ম্লান মুখ, উজ্জ্বল চোখের ছেলেমেয়ে স্কুলে আসে।ডাগর নয়ন মেলে এরা স্কুলের সিন্ধু সেঁচে মুক্তা তুলে আনে।উপযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে এদের মনের সংযোগ ঘটে। একজনের হৃদয় বার্তা অন্যজন পড়তে পারে। মঙ্গল আলোকে ভরে উঠে শ্রেণী কক্ষ। হতমান মন অমৃত কুম্ভের আভাসে জাগরিত হয়।পরস্পরের হাতে হাত রেখে যাত্রা করে আলোকের পথে । বিস্মৃত হয় যাবতীয় অবহেলা,অসম্মান,না পাওয়া। অনতিক্রম্য বাধা সহজ হয়ে উঠে। সবুজ মনের গ্রন্থিটি উন্মোচিত করে তাকে প্রবাহিত দেখার অনাবিল আনন্দ প্রাপ্তি ঘটে। সে এক স্বর্গীয় সুখ।
শেষকথা – শেষ পাতে দুটো আশার কথা শুনে বোধহয় আপনাদের ভালো লাগছে। বিশ্বাস করুন আমরা এমন আশার কথাগুলোই শোনাতে চাই। তবু হতাশার কথা বলি কেন? কারণ আমাদের সমস্যা, আমাদের অসুবিধা সর্বদাই কতগুলো বাঁধা গতের বুলি আউড়ে চেপে দেওয়া হয়। IISER kolkata তে একটি সেমিনারে এক জাপানি বিজ্ঞানী ভূমিকম্প প্রতিরোধ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলছিলেন ভারতীয় সমাজ দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে তারা কিভাবে সমস্যার প্রতিরোধ করা যায় সে কথা ভাবতে অভ্যস্ত নয়। তারা ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে কিভাবে ছেলেকে স্কুলে ছাড়তে যাবে, তারপর কিভাবে অন্য কাজ ম্যানেজ করবে এইসব ভাবতে থাকে। এই লেখাগুলি শিক্ষাক্ষেত্রের ভূমি স্তরের সমস্যা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য । যাতে সময় থাকতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অন্যথায় ১০ থেকে ২০% এফিসিয়েন্সি নিয়ে আমাদের যে স্কুল ব্যবস্থা চলছে সেই ব্যবস্থায় খুশি থাকতে হবে। ছিটকে ছাটকে বেরিয়ে যাওয়া দু’চারটে সাফল্য নিয়ে চিৎকার করে বলতে হবে, নিজেদেরকে জাহির করতে হবে।গ্রাম ও মফস্বলের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত বাড়ির প্রতিভাগুলি অকালে হারিয়ে যাবে।কারণ এখনও বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় গুলিই তাদের ভরসা। শিক্ষার বৃহত্তর উদ্দেশ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলি একত্রিত করে বলা যায় যে শিক্ষা আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে আসে। একটি স্কুল আসা এবং একটি না আসা ছাত্র-ছাত্রীকে দেখলে সে পার্থক্য স্পষ্ট হয়। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে পরিবর্তিত আচরণের নাগরিক সংখ্যায় কমে যাবে। যা সমাজের পক্ষে সমূহ ক্ষতি।যদি বলেন ত্রিশ বছর আগেও শিক্ষা ব্যবস্থা এমনই নড়বড়ে ছিল। তাহলে বুঝতে হবে আমরা সমস্যা অস্বীকার করে স্থবিরতা স্বীকার করে নিচ্ছি।
বিকল্প ব্যবস্থা, বিকল্প শিক্ষার চেষ্টা অনেকেই করে যাচ্ছেন। সেগুলি আমাদের আশার আলো। যদিও সে সব সংস্থার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ সামাজিক কারণে আগ্রহ ক্রমশ কমছে। তাছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা সমগ্র ব্যবস্থার ভার বহনে কখনো সক্ষম নয়। ইতালির বারবিয়ানা স্কুল এবং জাপানের তোত্তচানের স্কুলের কথা পড়ে মনটা অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে ওঠে। কিন্তু দুঃখের কথা দুটি স্কুলই উঠে গেছে। সুতরাং বিকল্প ব্যবস্থা সমাধান নয়,সহায়ক। মূল ব্যবস্থাটি সংশোধনে এগিয়ে আসতেই হবে সংশ্লিষ্ট সকলকে। শিক্ষাক্ষেত্রের অনভিপ্রেত অধোগতির বৃহত্তর কারণ দ্রুত ঘটে চলা সামাজিক পরিবর্তনের ঝড়। ঝড়ের দাপটে শিক্ষার পানসি টালমাটাল। মানুষ বেশি শেখে বইয়ের বাইরের সমাজ থেকে। ঊনবিংশ শতকে নবজাগরিত বঙ্গ সমাজ আবার বন্ধ্যা খাতে বইতে শুরু করছে কিনা সমাজতত্ত্ববিদ বা ঐতিহাসিকরা বলতে পারবেন। তবে গতিটি যে অমোঘ ও অনিবার্য তা অভিজ্ঞতা থেকে অনুভূত হচ্ছে। সেই কারণেই হয়ত কালের গতি কথাটি একাধিকবার বলা হয়ে গেছে। আরেকটি কারণ বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অবহেলা করে সকলকে একই জুতোতে (উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতিকরণের প্রথাগত শিক্ষা ) পা গলাতে বাধ্য করা। দু চারজন ছাড়া জুতো কারো পায়ে ফিট করে না।
আমার কথা ফুরোল। নটে গাছটি মুড়োচ্ছে। ছাগল, রাখাল পারস্পরিক দোষারোপ না করে আসুন হাতে হাত রেখে কাজ করি। অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য লড়াই করাই জীবের ধর্ম।
পরিশেষে যারা অসীম ধৈর্য্য সহকারে এতগুলি পর্ব ধরে আগডুম বাগডুম কথাগুলি পড়েছেন তারা আমার প্রণাম নেবেন। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি স্নেহ থাকলে তবেই এমন ‘অকাজের’ কথকতা পড়া যায়। প্রতিটি পর্বের উপযুক্ত চিত্র অঙ্কনের জন্য সহকর্মী অসিত ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। কথাগুলি বলার প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার জন্য জ্বলদর্চি পত্রিকার সব ব্যবস্থাপক ও সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী মহাশয়কে আন্তরিক নমস্কার জানাই।সকলে ভালো থাকুন,ভালো রাখুন।
8 Comments
এই ইস্কুল ফিস্কুল এই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার একটি জরুরী দলিল। একে সংরক্ষণের প্রয়োজন। আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনার লেখা আমাদের সমৃদ্ধ করবে, এই আশা করি।
ReplyDeleteধন্যবাদ🙏
Deleteবিদায়ের ক্ষণ মনের ভেতর গভীর মোচড় দেয়। দীর্ঘ ছাব্বিশ পর্বে সৌমেন রায় আমাদের স্কুল কথা শোনালেন। এই কিস্তিতে সেই সব মৌন ম্লান মুখের আশ্চর্য নির্মাণের কাহিনী শুনিয়েছেন তিনি। এই সমাপনী কথকতার জন্যই ওৎ পেতে বসেছিলাম। এসব স্মৃতিই শিক্ষকতা জীবনের অমূল্য রতন অভিজ্ঞতা। মানবজমিন চাষের সময় যত গভীরে হাল চালানো যায়, ততই সোনালী অঘানী ফসলে ভরে ওঠে গোলা। জমি ঠিকঠাক কর্ষণ করতে হয়, ওখানেই সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। আসলে সব শেষ হয়ে যায় না। তবে এই ঘূর্ণনের সময় পলির সাথে জমা হয়েছে বিস্তর আবর্জনা। সবাই মিলে তাকে সরাতে হবে। সেই অপভারের বোঝা হঠাতে পারলে নতুন আলোর ঝলকানিতে বিভোর হবে সবাই। জগজন মানিবে বিস্ময়। সেই সুসময়ের প্রহর গোনা শুরু হোক আজ থেকেই।সাধু, সাধু, সাধু।।
ReplyDeleteমিলে সুর ----💐🙏🙏
DeleteGreat write up, please keep on writing like this creative, thanks and regards
ReplyDeleteThank you
Deleteআজ আমরা কিছু মানুষ আমাদের অফিসে বসে আলোচনা করছিলাম, রাস্তায় যে এলোমেলো মানুষগুলো ঘুরে বেড়ায়, তথাকথিত যাদেরকে পাগল বলে ভাবা হয়, তারা কখনো অ্যাক্সিডেন্ট করে না। তাহলে এটা কিভাবে হয়? তার কারণ আমরা নিজেদের মধ্যে যেটুকু আলোচনা করলাম তাতে বুঝলাম, ওরা যখন রাস্তা পার হয় তখন রাস্তাটাই মন দিয়ে পার হয়।তার চড়াই উৎরাই, খানা খন্দ সবকিছু দেখে পার হয়। আর আমরা বর্তমান সমাজে যখন যা কিছু করি, আমাদের মন থাকে অন্যদিকে। তাই এই যে স্কুলের সব কিছু ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, তার কারণ আমরা স্কুলগুলিকে মন দিয়ে ভাবছি না। যদি সেটুকু মন দিয়ে ভাবতাম তাহলে এখনো আমরা বিশ্বের দরবারে সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারি। তোর লেখাগুলো হয়ত অনেকের চোখ খুলে দিতে পারে।
ReplyDeleteআমিই স্কুল, স্কুল ই আমি।একে অন্যের প্রতিরূপ, একে অপরের পরিপূরক। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই এগোনোর কথা আন্তরিক ভাবে ভাবতে ও কর্মে রূপান্তরিত করতে হবে। তবেই সুদিন ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
ReplyDelete