জ্বলদর্চি

দূষণ নিবারণ দিবস (২রা ডিসেম্বর)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


দূষণ নিবারণ দিবস (২রা ডিসেম্বর)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২রা ডিসেম্বর, জাতীয় দূষণ নিবারণ দিবস। আসুন আমরা সবিস্তারে জেনে নিই, দূষণ কি?এবং এটি নিবারনের জন্য কি,কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? কিম্বা জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণে কতটা দূষণমুক্ত আমরা? 

প্রতিবছর আজকের এই ২রা ডিসেম্বর বিশেষ দিনটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস (জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস) হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৮৪ ভোপালের সেই দুর্ঘটনার দিনটিকে কেন্দ্র করে দূষণ নিবারণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। আজকের দিনটি পরিবেশ দূষণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সচেতনতা জাগানোর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়ে থাকে। ভারতকে দূষণমুক্ত করতে তথ্য আইন রয়েছে। বায়ু দূষণে আইন রয়েছে ,শব্দ দূষণে রয়েছে আইন ,জল দূষণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আইন। কিন্তু আইনের এই কড়াকড়ি করেও আমাদের দেশের আকাশ, বাতাসকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি?

ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২রা ডিসেম্বর পালন করা হয় জাতীয় দূষণ নিবারণ দিবস। 

২রা ডিসেম্বর ১৯৮৪সালে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডিতে যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের স্মরণে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির লক্ষ্য, দূষিত জল, ভূমি এবং বায়ুর কারণে সৃষ্ট প্রাণহানি সম্পর্কে সচেতনতা আনা। এছাড়াও, ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির মতো শিল্প বিপর্যয় কীভাবে এড়ানো যায় তা তুলে ধরা। পরিবেশ দূষণ, জীবন ও স্বাস্থ্যের মানকে প্রভাবিত করে। দূষণ বিশ্বের মুখোমুখি একটি বড় সমস্যা।  ভারতের ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল অনুসারে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭মিলিয়ন মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়। এটি পরিবেশ দূষণ নামেও পরিচিত। দূষণকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে পরিবেশে যে কোনো পদার্থের সংযোজন, তা কঠিন, তরল, গ্যাস, বা যে কোনো ধরনের শক্তি যেমন তাপ, শব্দ ইত্যাদি।

দূষণ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী যেমন পটকা ফাটা, কার্বন নিঃসরণ, বোমা বিস্ফোরণ, শিল্পকারখানার মাধ্যমে গ্যাসের লিকেজ ইত্যাদি। বর্তমানে দূষণের সমস্যা দিন,দিন বাড়ছে এবং এটা সংশ্লিষ্ট সরকারের এবং জনগণেরও কর্তব্য। দূষণের মাত্রা কমাতে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের ধারণা ও পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শিল্প বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং দূষণের মাত্রা হ্রাস করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য সারা বিশ্বে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়।

জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হল জল, বায়ু, মাটি এবং শব্দের মতো বিভিন্ন দূষণের কারণ এবং পরিবেশ ও স্পষ্টতই স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এমন শিল্পগুলি থেকে  মানুষকে সচেতন করা এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা ভুলতে পারি না, ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি যেখানে বিষাক্ত গ্যাস 'মিথাইল আইসোসায়ানেট (এমআইসি)' এর লিকেজ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ট্র্যাজেডি চোখে পড়ে।

দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাও জরুরী, যাতে একটি ভাল বা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করা যায়। ভারতে সরকার দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করেছে যেমন দিল্লিতে রাস্তায় চলা যানবাহন হ্রাস করা। ন্যাশনাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (NPCB) হল প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যেটি নিয়মিতভাবে শিল্পগুলির উপর চেক পরিচালনা করে, যে তারা পরিবেশগত বিধিগুলি অনুসরণ করছে কি না।
ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি সম্পর্কে ২রা এবং ৩রা ডিসেম্বর ১৯৮৪সালে বিষাক্ত রাসায়নিক MIC (মিথাইল আইসোসায়ানেট) এবং কিছু অন্যান্য রাসায়নিক একটি কীটনাশক প্ল্যান্ট UCIL (ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড) থেকে ভোপাল, MP-তে নির্গত হয়। দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা ৫০০০০০এরও বেশি লোককে প্রভাবিত করেছিল। প্রায় ২২৫৯জন অবিলম্বে মারা যান এবং পরে এমপি সরকার ঘোষণা করে যে প্রায় ২৫০০০ মারা গেছে। বিশ্বব্যাপী ইতিহাসে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি অন্যতম বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয় হিসাবে চিহ্নিত।

🍂

 আইনের এই কড়াকড়ি করেও আমাদের দেশের আকাশ, বাতাসকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি? 
আজ দেশের রাজধানীতে বায়ুর গুণগত মানের চিহ্নের দিকে একবার নজর রাখা জরুরি। বর্তমান বায়ুর গুণগত  সূচকের দিকে যদি নজর দিই, তাহলে দেখা যাবে, দিল্লির চত্বরে  বায়ুর গুণগত গুণমান ২৪২, মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী চত্বরে বায়ুর গুণগত গুণমান ছিল ১৮৫। কলয় ফোট উইলিয়াম চত্বরে বায়ুরগত গুণগত গুণমান ছিল ২৪২। চেন্নাইতে বায়ুর গুণগত গুণমান মান ছিল মাত্র ৩০।
ডব্লিউএইচও-এর অনুযায়ী বায়ুর গুণগত মান নির্দেশ করে মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে। বেশি মাত্রায় ঠিক করা হয় বায়ুর গুণগতমান রাখতে ৬০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। দেশের বড় শহরের বায়ুর গুণগত গুণমান বলে  দেয় আমরা দূষণ নিরোধে আমরা কতটা সফল বা অসফল।

কিন্তু দূষণমুক্ত পরিবেশ পেতে কী করতে হবে? সে বিষয়ে জানতে পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ এসএম ঘোষণা করেছেন। দেশের উত্তর দিকের শহরে একদিক কাঠের বাসস্থান, ফলে গাছ কাটা পড়েছে প্রচুর পরিমাণে এতেও বায়ুতে দূষণ ঘটছে, অক্সিজেন কমে গিয়ে অন্যদিকে গ্রামের কোথাও কোথাও বাস্তুস্থানে এখনও  জ্বালানি হিসাবে কাঠ পোড়ানো হয়, সেখানে কাঠ পোড়ানো কমাতে হবে। শহর অঞ্চলের গাড়িতে চড়া কমাতে হবে। কলকাতার যে সমস্ত জায়গায় ইমারতি দ্রব্য পড়ে আছে, ইট,বালি সিমেন্ট, সেখান থেকে অনেক অংশে দূষণ ছড়াচ্ছে, নজরদারি প্রয়োজন সেক্ষেত্রেও।

কলকাতায় ফোলিয়ামের দূষণের নির্দিষ্ট অংশের নির্দিষ্ট অংশ থেকে কয়েক গুণ বেশি,কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ,হাওড়ার ঘুসুরি সংলগ্ন এলাকা এখানে দূষণ অনেকটাই বেশি। রাষ্ট্র যাতে দূষণ নিবারণের ব্যবস্থা দ্রুত  করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।অতিরিক্ত আবর্জনা শক্তি প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। আর সর্বোপরি সচেতন হতে হবে শহরবাসীকে এবং আরও বড় বড় গাছ লাগাতে হবে।

Post a Comment

0 Comments