জ্বলদর্চি

গল্প ধারাবাহিক। বাসুদেব গুপ্ত /আত্মারাম খাঁচাছাড়া। পর্ব ২


গল্প ধারাবাহিক। বাসুদেব গুপ্ত

আত্মারাম খাঁচাছাড়া। পর্ব ২ 

আত্মাদের হাসি থামলে ওদের একজন প্রতিনিধি আত্মা বংশীকে বোঝাতে লাগল ব্যাপারটা।
ধুর আপনি তো আধুনিক টেকনলজির কোন খবরই রাখেন না। প্রত্যেকের কিউ আর কোড আছে প্রিন্ট করা। চিত্রদা শুধু স্ক্যান করে দেন।
-বেশ। তো আপনাদের পাচার করছিলো কে বা কারা? 
-সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। তারাও একরকম আত্মা। কিন্তু আত্মাচক্ষে আমরা যেমন আমাদের দেখতে পাই তেমন না। 
-কৈ আমি তো আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না
-ঐ তো। আমরা নিজেদের দেখতে পাই। আমরা আসলে অনেক হাল্কা ম্যাটার দিয়ে বানানো, ভিতর দিয়ে লাইট চলে যায়। 
-আর ঐ পাচারকারীরা?
-ওরা লাইট টেনে নেয়। ব্ল্যাক হোল জানেন তো। সেইরকম। ছোটদের গল্পে যার নাম ডিমেন্টর। 
-তো আপনাদের পাচার কোথায় করা হচ্ছিল। আপনাদের দোষই বা কি। আর আপনাদের আত্মাদের সরকার আটকাতে পারে না?
-একবারে একটা একটা করে প্রশ্ন করুন। এটা তো প্রেস কনফারেন্স নয়। আমরা যখন মানুষ ছিলাম তখন ছিলাম আইটি ফিল্ডে। আইটি বোঝেন তো? ইনকাম ট্যাক্স নয় কিন্তু। সফ্‌টওয়ার ডেভলপার। দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে আর চাও মিন আর চিলি চিকেন খেয়ে আর সারাদিন ফেসবুকে, টুইটারে খিস্তি করে, আমাদের দিব্যি চলছিল। হঠাৎ এলো এ আই। আসতে আমাদের দুম করে লে অফ করে দিল। আমরা যারা পারলাম না তারা ই এম আই না দিতে পেরে এখানে ওখানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মারাষ্ট্রে চলে গেলাম। 
-ভিসা লাগে নাকি যেতে?
-না না ডান্কি হয়ে। তবে বেশি রাস্তা পেরোতে হয় না। একটা মাঠ আছে ১০০ কিমি লম্বা। সেখানে পৌঁছলেই আত্মা এজেন্টরা তুলে নেয় টপাটপ। 
-তুলে নেয় মানে?
-মাঠের মধ্যে গোল হয়ে ঘুরতে হয় আর সাদা মোজা পরে, মৌজা মৌজা করে গান গাইতে হয়। ড্রেস চাই সাদা। কোন কালার থাকলে চলবে না। 
-তারপর?
-তারপর একটা চার্জের মত কি আসে আকাশ থেকে। তখন আমরা হঠাৎ দেখি আমরা আত্মা হয়ে গেছি । 
-মরে ভূত বলুন! বজ্র পাতে মৃত্যু।
প্রচুর খসখস আওয়াজ ওঠে চারদিক থেকে। 
-ভূত আর আত্মার তফাত বোঝেন না কথা বলবেন না। ভূত হয় বেঘোরে মরলে। তারপর তারা কালো ঝুলের মত ভাঙা বাড়ির কোণায় লটকে থাকে। এদিক ওদিক হাওয়ায় ওড়া ছাড়া কিছু পারে না। বাংলা সিনেমায় এদের নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করা হয়। আমাদের একটা আলাদা ওয়ার্লড। সব রিলিজিয়নে দেখবেন আত্মাকে কত সম্মান দেওয়া হয়। 

-তা ঠিক। তো আপনাদের নিয়ে যাচ্ছিলই বা কোথায় আর ফেলেই বা গেল কেন?
-ঐ বলে কে? পাশের দেশে ইলেকশান হবে তার জন্য ট্রোল চাই। এখন ট্রোল খুব বিরল প্রজাতি, শুধু এই দেশেই হয়। তাই রপ্তানী ব্যানড কবে থেকে। তাই পাচার। 
-তো ফেলে পালালো কেন ?
-দামে পোষায় নি বর্ডারে। ওরা বলেছে ইলিশ আমরা সস্তায় পাঠাবো আর তোমরা ট্রোলের এত চার্জ। ব্যাস থলে খালি করে ঝুরঝুর করে ফেলে দিল সেক্টর ফাইভে। নেহাৎ আত্মা অবিনশ্বর। তাই কিছু হয় নি কিন্তু আত্মাদের ব্যথা লাগে না কেউ বলেছে দেখেছেন? সারা গায়ে ভীষণ ব্যথা। বাবা গো মা গো কি ব্যথা গো। 
-তা আমি কি করি বলুন। আমি তো আর কাইরোপ্র্যাকটিক নই আবার ছুঁচথেরাপিস্টও নই। আর আপনাদের রেইকিও হয় কিনা বলতে পারবো না। 
-কিছু করতে হবে না। একটা গান চালান তো দেখি আমাজন মিউজিকে। যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা। 

🍂

-তা ঠিক। ঐ গানটা সবাই ব্যথা হলে গায়। টাইগার বামের চেয়ে বেশি কাজ দেয়। এমনকি দেশের বামেরাও প্রতিবার ভোট হয়ে গেলে শোনে। 
 
সেই শুরু। রোজ রাতে পাঁচটা সাতটা করে আত্মা পাচারকারীরা ফেলে দিয়ে দিয়ে যায় আর বংশীর ঘর ভরে ওঠে। ওর ঘর যেন আত্মাদের এয়ার বি এন বি। বংশী তো সাতের নয় পাঁচেরও নয় কোনকাল। তারই এমন দুর্ভোগ! ঘরগুলো লোভনীয় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া অজস্র পুরনো মালের ভিতর কোজি একটা বাতাবরণ, চারদিকে একটা আত্মাচাক আত্মাচাক ভাব। মোটামুটি একটা এস্টিমেট করা গেছে ওদের সাইজের। এক একটা এই চামচিকের মত হবে। তো বেশ শ খানেক চামচিকে আত্মা পাশের ঘরে ভরে যেতে বংশী ঠিক করল আর না। একটা হেস্ত নেস্ত করতেই হবে। 
 
সোজাসুজি কথাটা পেড়েই বসল একদিন। দুপুরবেলা। ঝনঝন করছে রোদ। আত্মারা গরমে ফরফর করছে। বংশী এক বালতি কোক এনে ঘরে রেখে দরজা বন্ধ করে বাইরে অপেক্ষা করল। হুস সিপ সুপ আওয়াজগুলো থেমে যেতে ভিতরে গিয়ে কোকের বালতিটা সরিয়ে রাখল।
 একটা মাইক্রোফোন আর একটা টুল নিয়ে বসল ঘরের ঠিক মাঝখানে। বালতিতে কোক যে কে সেই, আত্মারা খায় কিন্তু ভারচুয়ালি। আওয়াজ হয় তৃপ্তি হয় আবার খাবার থেকেই যেই। প্রথমে আঁতকে উঠেছিল বংশী কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
মাইকে কথা বললে আত্মারা শোনে ভালো। একবার গুগল মিটের কথাও তুলেছিল। কিন্তু প্রবল আপত্তি হয় তাতে নাকি গুগল এআই দিয়ে ওদের দেখিয়ে দিতে পারে। সেটা হলে আত্মাদের ম্যাটারের সিক্রেট ফাঁস হয়ে যাবে। 
 
মাইকটা সেট করে বংশী প্রস্তাবটা পাড়লো। এখন তার আর ভয় টয় নেই, সে বুঝে গেছে এরা তার পোষ্য, আত্মাই হোক বা ভূত হোক, ওদের এখানে কোন নাগরিক পরিচয়পত্র নেই, বাইরে গেলে আত্মা পুলিশ ধরলে হাজার বছর ভূত করে রেখে দেবে জেলে, বিচার ফিচার হয় না আত্মাদের। বংশী বেশ নেতাদের মতই ঘোষণা করল
 
= আজ আপনাদের জন্য যা খবর এনেছি, শুনলে আপনাদের গায়ের ব্যথা সব সেরে যাবে। বলি কথাটা? 
-ক্রমশঃ—
আরও পড়ুন 
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

Post a Comment

0 Comments