বাংলার ব্রত উৎসব ক্রমেই লুপ্ত হতে বসেছে
পর্ব -২
পি.শাশ্বতী
সনাতনী ইতিহাস মতে, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞার পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী একমুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলেছিলেন, আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবস রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ণ হবে। অশ্বিনীকুমারদ্বয় হলেন নাসত্য ও দস্র। ঋগ্বেদ এবং সংস্কৃত সাহিত্যেও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নাম এসেছে। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ্যপর্বাধ্যায়ে উপমন্যোপাখ্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তাদের ভূমিকার কথা জানা যায়। পুরাণবিদরা মনে করে থাকেন, সংজ্ঞার এই পার্বতী বর্ণিত ব্রত পালনের সূত্র ধরেই আমাদের দেশে ব্রতের প্রচলন হয়েছে।
🍂
সংসারের মঙ্গল কামনায় বাঙালি রমণীরা এইসব ব্রত পালন করে থাকে। আবার অবিবাহিত মেয়েরা ব্রত করে ভালো বরপ্রাপ্তির আশায় কিংবা পরিবারের আয়ের উৎস কৃষিজ ফসল উৎপাদনের ভরভরন্তের জন্য।
‘আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়
যেই বর মাগে, সেই বর পায়’।
সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই প্রবচন। আশ্বিন সংক্রান্তির রাতে সারারাত জেগে বিশেষ খাবার তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম গুড়মিশ্রিত নারকেল। কার্তিকের সকালে সেই নারকেল ও কলা দিয়ে পুজোয় নিবেদন করা জলে ভিজিয়ে রাখা পান্তাভাত খাওয়া হয়। কার্তিক মাস একসময় ছিল অভাবের মাস। সেই মাসের প্রথম দিনের সকালে সন্তানকে ভালোমন্দ খাইয়ে মায়েরা আশা করতেন— ‘গোটা বছর ভালো যাবে, সন্তান থাকবে দুধে ভাতে।’
ব্রত পালন বঙ্গ পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু ব্রত একান্তই ঘরোয়া হলেও কিছু কিছু ব্রত সামগ্রিক ভাবে উৎসবের চেহারা নেয়। যেমন— নীল ব্রত, শিব চতুর্দশী ব্রত, কৌশিকী ব্রত ইত্যাদি। ব্রত অর্থে মনের নির্দিষ্ট কোনো কামনা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো দেব বা দেবীর উদ্দেশে কৃচ্ছতাসাধনের মধ্যে দিয়ে আত্মনিবেদন করা। মূলত বাঙালি মহিলারাই ব্রত পালন করে থাকে। আগেই বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা ঘরসংসার ও সন্তানাদির মঙ্গল কামনাতেই এই সব ব্রত পালন করে থাকে। নিজেদের জন্য বাঙালি রমণীরা খুব একটা ব্রত পালন করে বলে দেখা যায় না। আর এটাই বাঙালি রমণীদের মাহাত্ম্য।
ব্রত মূলত দু-প্রকার— ১. শাস্ত্রীয় ব্রত, ২. মেয়েলি ব্রত।
শাস্ত্রীয় ব্রতের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে। তবে কালের গহ্বরে শাস্ত্রীয় ব্রত প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ব্রতর প্রধান অংশই ছিল স্বস্তিবচন, পঞ্চগব্য শোধন, শান্তিমন্ত্রের মতো নানা শাস্ত্রীয় আচার। কিন্তু বর্তমান সময়ের মানুষের মধ্যে থেকে এ ধরনের শাস্ত্রীয় মনোভাব ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসায় এই ব্রত প্রায় দেখাই যায় না।
মেয়েলি ব্রতর মধ্যে কোনো শাস্ত্রীয় আচার নেই। তাই এই ধরনের ব্রতই এখন বেশি পালিত হয়। মেয়েলি ব্রত ঘরে বসে নিজের মতো করেই করা যায়। খুব বেশি হলে একজন পৈতেধারী পুরোহিত ধরে এনে পুজো দিলেই সমস্যা মিটে যায়। তবে ব্রতী তার মনের কামনা-বাসনা জানাবার ক্ষেত্রে দেব বা দেবীর প্রতি কিন্তু অচলাই থাকেন। এই ধরনের ব্রতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নাচগান এবং আনুষঙ্গিক ছড়া। মেয়েলি ব্রত আবার দু-ধরনের হয়। ১. কুমারী ব্রত এবং ২. নারী ব্রত।
আগেই উল্লেখ করেছি উৎসবমুখী ব্রতের কথা। এমনই একটি ব্রত রাঢ়বঙ্গের মাটিতে সেই প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত ভাঁজো ব্রত উৎসব। রাঢ়বঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে একটা ব্যাপক অংশের সাধারণ মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উপজীব্য কৃষি, অর্থাৎ চাষবাস। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-জল— সারা বছর ধরে মাঠেঘাটে ফসলের যত্ন, লালনেই কেটে যায় এই অঞ্চলের একটা ব্যাপক অংশের মানুষের জীবন। বছর শেষে মাঠের ফসল ঘরে তুলে তবে এদের শান্তি, স্বস্তি। আর এই কৃষিকাজে পুরুষরা যেমন তাদের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে চলেছে নিরন্তর, রাঢ়বঙ্গের নারীরাও কিন্তু উৎপাদনের মেহনতের কাজে পিছিয়ে নেই। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে এইসব রাঢ়বঙ্গীয় রমণীরা থাকে তাদের ঘরের পুরুষের পাশে পাশে। আর তাই বছর শেষে তারা একটিবারের জন্য মেতে ওঠে কৃষিকেন্দ্রিক এক লৌকিক উৎসবে। শুদ্ধ আচারে তারা পালন করে এক বিশেষ লৌকিক ব্রত। বহু প্রাচীন এই ব্রতটি হল ‘ভাঁজো’। কোনো কোনো অঞ্চলে একেই বলা হয় ভাদু, ভাজ বা ভাজুই। তবে ভাদু উৎসব কিন্তু একটি স্বতন্ত্র উৎসব হিসাবে প্রচলিত আছে। যেখানে সেটি মূলত রাঢ় অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আধুনিকতার সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে গ্রামাঞ্চলের এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লোক উৎসবটির ক্রমেই বিলুপ্তি ঘটতে চলেছে। বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আর জীবনযাপন ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখে রাঢ়বঙ্গের মানুষের মধ্যে থেকে এই বর্ণময় লৌকিক ব্রত উৎসবটি হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় রাঢ়বঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা এবং বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রায় সর্বত্র এই সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল। এই অঞ্চলগুলিতে প্রচলিত অন্যান্য লোকসংস্কৃতির মধ্যে ‘ভাঁজো’ লোকব্রতটি ছিল একটি বিশেষ মর্যাদায়। এই ‘ভাঁজো’ ব্রতটি আসলে কী? কোথা থেকে এসেছে এই ব্রত পালনের রীতি। কীভাবে পালন করা হয় ব্রতউৎসবটি? মূলত রাঢ়বঙ্গের মেয়েদের কৃষিব্রত হিসাবেই এটি পালন হয়ে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। যে-কোনো সমাজেই নারীই তো সৃষ্টির আধার। ভারতীয় পৌরাণিক যুগ থেকেই নারীকেই জগতের ধাত্রী হিসাবে বর্ণনা করে আসা হয়েছে। তাই কৃষির মতো সৃষ্টির অগ্রভাগে যে নারীরাই থাকবে এতে আর সন্দেহ কী! তাই ‘ভাঁজো’কে কেন্দ্র করে নারীদেরই একচ্ছত্র ব্রত পালনের অধিকার।‘ভাঁজো’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ নিরূপণ করা খুবই কঠিন। শুধু জানা যায় এটি অস্ট্রিক ভাষা থেকে আগত একটি অনার্য শব্দ। যতদূর জানা যায়, শব্দটির অর্থ আধার বা পাত্র। এই ব্রতের একটি বড় অনুষঙ্গ হল একটি যেকোনো আকারের পাত্রে ইঁদতলার মাটি ও ইঁদুরের গর্তের মাটি মিশিয়ে তার মধ্যে গম, ছোলা, মটর, মুগ, কলাই, অড়হর ও তিল শস্যের বীজের অঙ্কুরদগম করা হয়। দেশি অর্থে অনেকগুলো জিনিস একত্রে মেশানোকে বলা হয় ভাঁজানো। হয়তো সেই জায়গা থেকেই এই ব্রতউৎসবটির নাম হয়েছে ‘ভাঁজো’। যদিও এই নামকরণকে কেন্দ্র করে আরও বেশকিছু মত আছে। যেমন— কারও কারও মতে যেহেতু এটি ভাদ্র মাসে পালন করা হয়, তাই সেই ভাদ্র থেকে ভাদজ এবং সেখানে পরিবর্তিত হয়ে ভাজো এবং সর্বশেষে ভাঁজো রূপ নিয়েছে।
আর একটি প্রচলিত অর্থ হল, দেবরাজ ইন্দ্রের মনোরঞ্জনের জন্য সব থেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অপ্সরার নাম ভঞ্জাবতী। ‘ভাঁজো’ ব্রতের নৃত্যগীত সেই ভঞ্জাবতীর নৃত্য শৈলী অনুসারে উপস্থাপিত হয় বলে এই ব্রতউৎসবের নাম ভঞ্জা অপভ্রংশে ‘ভাঁজো’।
আর একটি ধারা হল এই যে, এই ব্রতের বিশেষ অঙ্গ নৃত্যগীতের সঙ্গে ছড়া কাটা। ঢোল ও কংসের তালে তালে মেয়েরা কোমরে হাত রেখে শরীরটা মৃদু বাঁদিকে কাত করে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে। অঙ্গের এই খানিক ভাঁজের কারণে এই ব্রতকে বলা ‘ভাঁজো’ ব্রত। যেটা ভাঁজ>ভাঁজো।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লোকসংস্কৃতি গবেষক চাঁদ রায় তাঁর ‘ভাঁজো’ সম্পর্কিত গ্রন্থে তাঁর স্বর্গীয় পিতার মত উল্লেখ করে বলেছেন, ভঞ্জাবতীর থেকে ‘ভাঁজো’ শব্দটি আসার মতটিই বেশি সমর্থনযোগ্য।
‘ভাঁজো’ ব্রত বা পুজোর তিনটি পর্যায় আছে। প্রথমে ইঁদ বা ইঁদুর পুজো। যেটিকে বলা হয় ইন্দ্রযজ্ঞ। এরপর শোস্ পাতা বা শস্য পাতা এবং সব শেষে নৃত্যগীত ও ছড়া কাটা।
প্রথম অংশটি বৈদিক আচারের সঙ্গে যুক্ত। দ্বিতীয়টি কৃষিকাজ বা মানুষের কৃষি জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত এবং দেশের গানবাজনা বা ছড়ার সৃষ্টির উৎস হল লোকগীত এবং লোকসাহিত্য। এবার বিস্তারিত ভাবে এই ব্রতপুজো বা ব্রতউৎসবের আলোচনা করা যাক। ভাদ্র মাসের ইন্দ্রদ্বাদশীর সাতদিন পর বিকেলে শুরু হয় এই ব্রতউৎসব। চলে রাত পর্যন্ত। আবার পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই উৎসবপালিত হয়। ভাঁজো উৎসব যেখানে পালন করা হয়, সেটিকে বলে ভাঁজোতলা। যেহেতু মেয়েরাই এই ব্রত পালন করে, তাই বাল্য বয়স পেরোনোর পর কোনো পুরুষেরই ভাঁজোতলায় যাওয়া নিষেধ। কৌতূহলবশত কোনো পুরুষ যদি ভাঁজোতলায় চুপি চুপি ঢুকে কিছু দেখার চেষ্টা করে ধরা পড়ে যায়, তাহলে তার আর কোনো নিস্তার নেই। অন্য কোনো সমস্যা নেই। তাঁকে ধরে মেয়েরা তাৎক্ষণিক ভাবে নানা রকমের টিপ্পনি ছড়া কেটে কেটে তার জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে এবং তাকে সেসব টিপ্পনি মুখবুজে সহ্য করতে হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তাদের হাত থেকে ছাড়া পাচ্ছে। অন্য কোনো পুরুষের ভাঁজোতলায় প্রবেশাধিকার না থাকলেও যিনি ঢোল বাজাতেন নাচগানের জন্য, তাঁকে তো থাকতেই হতো। কারণ বাজনা ছাড়া তো আর নাচ হয় না।
যাই হোক ভাঁজো উৎসবের মূল বিষয় অর্থাৎ এর লৌকিক আচার-আচরণ। আগেই বলা হয়েছে, ভাঁজো ব্রত উৎসবটি তিনটি পর্যায়ে সমাধা হয়ে থাকে। যার প্রথমটি ইঁদ পুজো বা ইন্দ্রযজ্ঞ। এপ্রসঙ্গে আলোচনা করতে যাবার আগে হিন্দু ধর্মে প্রচলিত দেবদেবী নিয়ে কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন। ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মতে চিরাচরিত কাল থেকে বাঙালি জীবনে মোটামুটি তিন ধরনের দেবদেবীর কথা জানা যায়। (১) বৈদিক, (২) পৌরাণিক এবং (৩) লৌকিক। একটা বিষয় এখানে লক্ষ্যণীয়, বাঙালির ধর্ম ও সামাজিক জীবনের আচারে সিন্ধু সভ্যতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। “এর প্রমাণ সাপেক্ষে পাঁচটি মূল সূত্র হল— (১) মাতৃ উপাসনা, (২) মৎস্য-ভক্ষণ, (৩) হস্তীর সঙ্গে পরিচয়, (৪) ধানের ব্যবহার, (৫) শিব ও শিবলিঙ্গের ব্যবহার।”
সেই অর্থে বাঙালিদের প্রকৃত আর্য হিন্দু হতে বেশ সময় লেগেছে। এই জাতিটির লোকায়ত ধর্মবিশ্বাসের উপর আর্যতন্ত্র ও পৌরাণিকতন্ত্র প্রভাব পড়তে যথেষ্ট সময় লেগেছে যে শুধু তাই নয়, এই প্রভাব পড়েছে খুব ধীরে ধীরে। তারপরেও বাঙালি এ সমস্ত কিছু গ্রহণ করেও নিজের একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট বজায় রেখেছে।
এখন এই বৈদিক দেবতাদের মধ্যে প্রধান দেবতা হলেন ইন্দ্র। ইনি ঋক বেদের প্রধান দেবতা এবং অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের রাজা। ইনি সহস্রাক্ষ ও মেঘবাহন। ইন্দ্রের কৃপায় ধরণীতে বৃষ্টি নামে। তাঁর হাতে থাকে বজ্র। এই দেবরাজ বৃত্রাসুর, নমুচি, বল প্রভৃতি অসুর বধ করে অসুরপুরী ধ্বংস করায় তাঁর নাম হয় পুরন্দর। ইন্দ্রের ঘোড়ার নাম উচ্চৈশ্রবা আর হাতির নাম ঐরাবত। ত্রিভুবনে যে আটজন লোকপাল আছেন, ইন্দ্র তাঁদের অন্যতম। বাকি সাতজন লোকপাল হলেন, অগ্নি, যম, নিঋতি, বরুণ, কুবের ও রুদ্র। সেই আদিকাল থেকেই বৈদিক দেবতাদের উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের যাগযজ্ঞ করা হতো। ইদানীংকালে সেই রীতি অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। সেই জায়গা খানিকটা দখল করে নিয়েছেন পৌরাণিক দেবতারা। যেমন— শিব, বিষ্ণু, তাঁর অবতার শ্রীকৃষ্ণ, সাম্প্রতিক কালে গণেশ। এছাড়াও আছেন দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীর মতো দেবদেবীরা। এঁদের আরাধনাই বর্তমানে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে। তারপরেও বাঙালিদের লৌকিক কিছু আচরণের মধ্যে কোনো রকমে টিকে আছেন ইন্দ্র। তার একটি এই ভাঁজো উৎসবের ব্রত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষিকে কেন্দ্র করে একটা উৎসবের ব্রতর সঙ্গে ইন্দ্র কিভাবে মিশে গেলেন। সেকি শুধুই তিনি বৃষ্টির দেবতা বলে? হয়তো তাই। কারণ এছাড়া এর পেছনে তো আর কোনো লৌকিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যতদূর জানা যায়, পুরাকালে ধনসম্পদ, কৃষিজ ফসল উৎপাদন ও সেই ফসলের শ্রীবৃদ্ধির প্রার্থনা জানিয়ে বর্ষাকালে ইন্দ্রমহ যজ্ঞ করে ইন্দ্রকে আহ্বান করা হতো। এই যজ্ঞের সময় ইন্দ্রধ্বজ ব্যবহার করা হতো। ভাঁজো ব্রতর ইঁদপুজোতে ছাতা ব্যবহার করা হয়। রাঢ়বাংলার গ্রামে গ্রামে এক সময় তালপাতা দিয়ে তৈরি ধ্বজ বা ছাতা ইঁদতলায় একটি চারকোনা গর্ত করে তার পাশে একটি লাঠির উপর বসিয়ে দেওয়া হতো। সেখানেই হতো যজ্ঞ।
পৌরাণিক মতে এই ধ্বজা বা ধ্বজ নারায়ণ ইন্দ্রকে দান করেছিলেন। ইঁদপুজোয় ব্যবহৃত তালপাতার ওই ছাতা তাঁরই স্মারক। ইতিহাস বলে প্রাচীনকালের রাজামহারাজারাও যথেষ্টই সমারোহ করে ভাদ্র মাসের শুক্ল দ্বাদশীতে শস্য ও শান্তি কামনায় ধ্বজাপুজো করতেন। এমনকি কোনো যুদ্ধ জয়ের পরও রাজপুরোহিতরা রাজাকে ধ্বজাপুজোর পরামর্শ দিতেন। ইঁদপুজোর দ্বিতীয় ধাপ হল শস্যপাতা। আচার অনুযায়ী ইঁদপুজোর পর গ্রামের মানুষ প্রত্যেকে ইঁদতলার মাটি সংগ্রহ করে যে যার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইঁদুরের গর্তের ও সাধারণ মাটি একত্রিত করে ভালো করে মিশিয়ে একটি পাত্রে রেখে সেখানে নানা ধরনের শস্যবীজ রোপণ করে।এরপর শুদ্ধাচারে তার উপর জল দিয়ে ঝুড়িচাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। দিনসাতেক পরে সেখান থেকে ওই বীজের যে চারা বের হয় তাকেই বলা হয় শোসপাতা। কোথাও কোথাও একে আঁকুর বা আঁকুরিও বলে। অঙ্কুর থেকে এসেছে। এর পর থেকে প্রতিদিন শুদ্ধাচারে শোসপাতার উপর লক্ষ রাখা হয় তার বৃদ্ধি কেমন হচ্ছে। রোজই যত্ন করে সেখানে জল সিঞ্চন করা হতে থাকে পরিচর্চার জন্য। আসলে এটি হল ভালো ফসল ফলানোর প্রাক্-প্রস্তুতি। এখানে মনে রাখা দরকার যে, ফসল তোলার সঙ্গে কিন্তু ভাঁজোর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শুধুমাত্র কৃষক জীবনের একান্ত নিজস্ব একটি ঘরোয়া পুজো। বরং বলা যেতে পারে, ফসল বোনার আগেই এই পুজো বা ব্রতউৎসবটি করা হয়ে থাকে। কারণ ভাদ্র মাসের পরই শুরু হয়ে যায় রবিশস্যের জন্য প্রস্তুতি। শোসপাতার অঙ্কুরোদগমের পর শোসপাতার পাত্রকে ঘিরে মেয়েরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে একটি ছড়া কাটতে থাকে।
সেটি হল:
ভাঁজো ভালো ফসল ভালো
ভাঁজোতে আছে নতুন আলো।
ভাঁজোব্রত যে সর্বত্র একই প্রথায় পালন করা হয় তা নয়। রাঢ়বঙ্গের স্থানভিত্তিক ভিন্ন প্রথায় ব্রত পালন করতে দেখা যায়। যেমন কোনো কোনো ক্ষেত্রে শোসপাতার অঙ্কুর বের হবার পর ব্রতীরা সন্ধ্যাবেলায় জল সিঞ্চনের সময় শুদ্ধাচারে ফলমূল, মিষ্টি, দুধ ও আতপ চাল নৈবেদ্য সাজিয়ে গান করে ভাঁজোদেবীকে সন্তুষ্ট করে। যাতে চারাগাছগুলি আরও দ্রুত পুরুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে। এরকমই একটি গান:
ভাঁজো মা, একদিন দু-দিন পেরোল
তিনদিন দিল পা
মাগো মা আমার
গা ঝাড়ো মা।
গা তোলো মাগো ভাঁজমণি
বসতে দেব তালে তলাই
খেতে দেব দুধে সর ননী।
আর দেব খেতে মাগো
বোলপুরের কলা
উঠে বসো, খেতে বসো
নাচতে হবে নাচের বেলা।
মাগো, ভাঁজো নাচের বেলা।
আবার কোথাও কোথাও শোসপাতার পাত্র কোনো অন্ধকার ঘরে রাখা হয়। তারপর সেই পাত্রের মাঝখানে একটি ঘট স্থাপন করে রাখা হয়। এর কারণ সম্পর্কে যেটা জানা যায়, ওই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, বাইরের কোনো মানুষ শোসপাতার চারা দেখে ফেললে, সেই চারা আর বাড়বে না। যদিও এটা নেহাতই একটা লৌকিক সংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভাঁজো ব্রতউৎসবের তৃতীয় পর্যায়ে শোসপাতার পাত্রকে উপলক্ষ করে কুমারী মেয়েদের নাচগান ও ছড়া কাটার অনুষ্ঠান। সর্বত্র যে কুমারী মেয়েরাই এই ব্রত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়, এমনটা নয়। অনেক জায়গাতেই বিবাহিত মহিলারাও ভাঁজো ব্রত ও তার বিভিন্ন পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তৃতীয় পর্বের এই অনুষ্ঠানেরও কয়েকটি ভাগ আছে। প্রথমত, প্রস্তুতি, দ্বিতীয়ত, শোস সাজানো পর্ব, তৃতীয়ত, নাচগানের পর্ব এবং সব শেষে ভাসান।
প্রস্তুতি: আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ইন্দ্র-দ্বাদশীর সাতদিন পর হয় ভাঁজোপুজোর প্রস্তুতি হিসাবে ভাঁজোতলা সাজানোর কাজ। নির্দিষ্ট করা পুজোর জায়গাটি খুব সুন্দর করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে নানা শৈলীর আলপনা এঁকে ভরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বসে ভাঁজো মায়ের মূর্তি। ভাঁজোমূর্তির নির্দিষ্ট কোনো অবয়ব নেই। স্থান ও কাল ভেদে এই মূর্তির এক এক রকম অবয়ব হয়ে থাকে। ভাঁজোমূর্তির অবয়ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে চাঁদ রায় তাঁর গ্রন্থে বলেছেন, “কোথাও দেখেছি, একটি লাঠির মাথায় নারকেলের মালা বসিয়ে এবং আড়াআড়ি ভাবে আরেকটি ছোটো লাঠি বেঁধে তাতে শাড়ি পরিয়ে ঘোমটার মতো দেওয়া হয়। নীচের দিকে থাকে মাছ ধরা পলুই বা ঝুড়ি।”কোথাও আবার দেখা যায় নারকেলের মালার প্রতীকী মুণ্ডুর বদলে ছাঁচে তৈরি মাটির রং করা মুখও বসিয়ে দেওয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে একেবারে মৃৎ শিল্পীর সাহায্যে তৈরি কোনো অজানা দেবীর মূর্তি বসিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। আবার কোথাও শুধুমাত্র ঘট পেতে ভাঁজোদেবীর পুজো করা হয়। আর আজকের দিনে তো ভাঁজো ব্রতটিই উঠে যেতে বসেছে।
যাই হোক, দেবী যে রূপেই থাকুন না কেন, তার চারপাশে খেজুরের পাতা-সহ ডাক পুঁতে প্রত্যেকটি কাঁটাওয়ালা পাতার ডগায় নানা রকমের ফুল আটকে দিয়ে সুসজ্জিত করে তোলা হয় পুজো প্রাঙ্গণ। ইঁদতলার আয়োজন শেষ হলে মূলত কুমারী মেয়েরাই রঙিন শাড়ি বা নতুন পোশাক পরে মাথায় ফুলের মালা ওড়না লাগিয়ে যে যার বাড়ি থেকে খুব সাবধানে শোসএর পাত্রগুলি ভাঁজোতলায় নিয়ে আসে। সকলের উপস্থিতিতে পুরোহিত পুজো শুরু করেন।
শোস সজ্জা ও পুজো: পুজো প্রাঙ্গণের কাছাকাছি জায়গায় এলাকাবাসী মেয়েরা তাদের শোসপাত্রগুলি পাশাপাশি সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে রাখে। ভাঁজোদেবীর যিনি পুজো করেন, সাধারণত তিনিই ওই শোসপাত্রগুলি পুজো করেন। তখন যে যার শোসপাত্রর সামনে ফলমূল, ফুল নিবেদন করে হাঁটু মুড়ে বসে দেবীর স্মরণ নেন। কোথাও কোথাও পুরোহিতের মাধ্যমে শোসপাত্রের পুজো নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কুমারী মেয়েরাই এই কাজটি করে থাকে। আবার কোথাও কুমারী মেয়ের পরিবর্তে স্থানীয় ঈশ্বরমুখী কোনো বয়স্ক মহিলা এই কাজটি করে থাকেন। যেহেতু ঠাকুরদেবতা নিয়েই তাঁর কাজ, তিনি হয়তো স্থানীয় কোনো মন্দিরের দেখভাল করেন। কিংবা তাঁর নিজের বাড়িতেই কোনো প্রতিষ্ঠিত দেবতার আরাধনায় তাঁর অনুশীলন আছে, তাই তাঁকেই এই কাজ করতে ডাকা হয়। এই সমস্ত মহিলাদের স্থানীয় ভাবে বলা ‘দ্যাশিনি’ বা দেয়াশিনী। যা থেকে দেয়াশী পদবী প্রচলিত। শোসপাত্র পুজোর সময়ও মেয়েরা গান কিংবা ছড়া বলে থাকে। এরকমই একটি গান:
এসো ভাঁজো বসো ভাঁজো
বসতে দেব শেতল পাটি
আমার ভাঁজো থাকবে বসে
সাজবে পরিপাটি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই গান বা ছড়াগুলিতে করুণ রসের আবেগ মেশানো থাকে। তবে জায়গা এবং সময়ের উপরে এই পরিবেশ অনেকটা নির্ভর করে। এরপর ভাঁজোমূর্তির চারপাশে ওই শোসপাত্রগুলিকে সাজিয়ে রেখে নিজেদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করে এতক্ষণের উপোস ভঙ্গ করে ব্রতী মেয়েরা।
ততক্ষণে ঢোল বাজনদার সেখানে এসে হাজির হয়। সঙ্গে থাকে কাঁসির বাজনদার। বেশির ভাগ সময়েই এই ভূমিকায় দেখা যায় কোনো একটি ছোট্ট ছেলেকে। তারপর শুরু হয় ভাঁজো উৎসবের মূল অনুষ্ঠান নাচগানের আসর। যেটি একটানা রাত পর্যন্ত চলতে থাকে।
নাচগান:
ভাঁজোমূর্তিকে কেন্দ্রে রেখে ব্রতীরা বৃত্তাকারে দাঁড়ায়। কোথাও ব্রতীর সংখ্যা বেশি হলে এবং পরিসর কম থাকলে একাধিক বৃত্ত রচনা করা হয়। দৃষ্টিনন্দনের দিক থেকে সেটি আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে। ঢোল ও কাঁসির বাজনা বাজতে শুরু করে একটি বিশেষ তালে। মেয়েরা বাঁ-হাতটি কোমরে রেখে ডান হাতটি নিজের কোমরে রাখা বাঁ-হাতটি স্পর্শ করে একটু বাঁদিকে ঝুঁকে ঢোলের ঝংকৃত বাদ্যের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে বৃত্তাকারে তাদের নৃত্য শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ এই দর্শনীয় নৃত্য প্রদর্শনের পর ক্ষণিক বিশ্রাম। এই অবসরে নাচ বহির্ভূত মেয়েটি পালা করে ছড়া কাটতে থাকে। বৈচিত্র্যময় এই ছড়ার বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকে দেবদেবী থেকে শুরু করে সমকালীন সামাজিক-প্রাকৃতিক, রাজনীতি-অর্থনীতি নানা বিষয়। সেই সঙ্গে ছড়ার মধ্যে দিয়েই চলতে থাকে তর্কাতর্কি, কূটকচালি। যার মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে মেয়েলি যৌনতা, প্রেম-প্রণয়ের মতো নানা আদিরসাত্মক মোটাদাগের হাস্যরসের আরক। ছড়াগুলি স্থানীয় মেয়েরা নিজেরাই রচনা করে আগে থেকেই অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত করে রাখে। গ্রাম্য মেয়েদের এই সৃষ্টিশীল উদ্যমও কম ঐতিহ্যবাহী নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সমকালীন ছড়াগুলির মধ্যে রীতিমতো মুন্সিয়ানার ছাপ লক্ষ করা যায়। কালের স্রোতে এসবই আজ লুপ্ত হয়ে যাবার পথে। বাঙালির ব্রত যাপনের এই ঐতিহ্য সংগ্রহ করে রাখার মতো ফুরসতও বিস্মৃতিপ্রিয় বাঙালির মজ্জায় কখনো ঘা মারেনি। এই আনন্দচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে রাত নটা-দশটা নাগাদ সেদিনের অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষিত হয়।
পরদিন সকালে আবারও ভাঁজোতলায় সকলে একত্রিত হয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের নৃত্যগীতের অনুষ্ঠান। অনেক জায়গাতেই দেখা যায় আগেরদিনের তর্কাতর্কির কোনো একটি জুতসই জবাব কেউ হয়তো দিয়ে উঠতে পারেনি। সারা রাত ভেবেচিন্তে যোগ্য জবাব নিয়ে সেদিন সকালে হাজির হয় সে। ছড়া কাটার প্রতিযোগিতায় পরিস্থিতি কোথাও কোথাও এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছোয় যে, আগের দিনের ক্ষোভ, রাগ সেদিন আরও আবেগমুখী হয়ে উঠে সে এক উত্তাল অবস্থা! নৃত্যগীত ও তাৎক্ষণিক বা তৈরি করে আনা ছড়া কাটার এই যে অমিত কৌশল— আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ায় এর তুলনা পাওয়া যথেষ্ট কঠিন। অনেকটা কবির লড়াই এর সঙ্গে তুলনীয়।
এভাবেই ভাঁজো ব্রতীদের সারাদিনের আনন্দানুষ্ঠান চলে দুপুর-বারোটা একটা পর্যন্ত। এগিয়ে আসে ভাসানের সময়। বিষণ্ন, ক্লান্ত ব্রতী মেয়েদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। বেজে ওঠে বিদায়ের করুণ সুর।
ভাসান:
শোস-এর পাত্র ও ভাঁজোতলার মূর্তি ও ছত্র লাঠি নিয়ে শুরু হয় ভাসানযাত্রা। মেয়েদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে ভাসানের গান:
ভাঁজো মা ভাঁজো মা
ওই পথে যেয়ো
বেনাগাছের কড়ি আছে।
দুধ কিনে খেয়ো।
বেশির ভাগ এলাকাতেই কোনো একটি বড় পুকুর কিংবা কোনো একটি নদীর ঘাট নির্দিষ্ট থাকে ভাঁজো ভাসানের জন্য। সেখানে একটি গ্রামের এপাড়া ওপাড়ার মধ্যে ভাসানকে কেন্দ্র করে চলে বিস্তর প্রতিযোগিতা। কখনো কখনো এই প্রতিযোগিতা ব্যাপক ঝগড়ায় রূপান্তরিত হতো। সাধারণত যার নেতৃত্ব দিতেন সেই সব পাড়ার বয়স্ক মহিলারা। এই রকম নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হতো একটি বছরের ভাঁজো ব্রতের উৎসব। শোস পাত্রগুলি থেকে শোসগুলি বের করে কিছু অঙ্কুরিত শোস সংসারের মঙ্গলার্থে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ভাসান শেষে মেয়েরা চোখের জলে ভাঁজো মা-কে বিদায় জানিয়ে আরও একটি বছরের অপেক্ষায় গান ধরে:
ভাঁজো মা ভাঁজো মা
এবার করব কী
পাথরখানা বুকে লিয়ে
মরব জি।
0 Comments