জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি- ৬৭ পর্ব / চিত্রা ভট্টাচার্য্য

বার্লিনের ডায়েরি   ৬৭ পর্ব        
 চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
(সমাধি নগরী পম্পেই এর পরবর্তী অংশ )

রোমান মহাকবি পাবলিয়াস বলেছিলেন, ‘মার্শেলাস, আমি গেয়ে যাই সে কাহিনী সেখানে ভিসুভিয়াস প্রচণ্ড আক্রোশে নিক্ষেপ করছে আগুন ভয়াবহ সে আগুন। কিন্তু তা সত্যি। ভাবীকালে একদিন যখন আবার দেখা দেবে শ্যামল শস্যক্ষেত্র এবং ধ্বংসস্তূপ ছেয়ে যাবে সবুজের সমারোহ। তখন কি লোকে বিশ্বাস করবে এর নীচে সমাহিত আছে সুন্দর নগরগুলো, তার অধিবাসীরা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের জনপদগুলো বরণ করছে একই ভাগ্য’'। 

উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তরের সামনে দাঁড়িয়ে দূরের পাইনের ছায়ায় ঢাকা ছাইরঙা শান্ত পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে তিতির আপন খেয়ালে আবৃত্তি করে চলেছিল অনেক দিন আগে শোনা কবিতার লাইনগুলো।  
চলার পথে কালো পাথরের ওপরে পা ফেলে শ্রীর পাশে এসে বলে তোমার মনে আছে মা ! আমার ছোটবেলায়  এই পম্পেই নগরের গল্প বলতে গিয়ে কতবার  তুমি এই লাইনগুলো  পড়ে শোনাতে। শ্রী বলে বেশ  মনে আছে।  রোমান মহাকবি পাবলিয়াস অর্থাৎ প্যাপিলিয়াস স্ট্যাটিয়াস আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে এটি লিখেছিলেন, যখন আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস থেকে নিঃসারিত গলিত লাভা, ছাই, কাদা আর পাথরের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল ঐ দু’টি জীবন্ত নগরী  পম্পেই আর হারকুলেনিয়াম । 

শ্রীর মনে হয় ,রোমান মহাকবির সেই ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ভিসুভিয়াসের সানুদেশ মৃত নগরীতে সুশোভিত হয়ে উঠল শ্যামল শস্যক্ষেত্র আর বৃক্ষরাজিতে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য বর্বর জাতিদের দ্বারা আক্রান্ত হলে পতন শুরু হয়। রেনেসাঁর যুগে ইতালিয়ানরা আবার আবিষ্কার করল তাদের গ্রিক ও রোমক উত্তরাধিকার। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে জানাগেল গলিত লাভা, ভস্ম এবং পাথরের নীচে চাপা পড়া তাদের প্রাচীন দু’টি ঐশ্বর্যশালী নগরীর কথা। যদিও তাদের প্রকৃত অবস্থান ছিল রহস্যাবৃত; তবুও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ভিসুভিয়াসের পাদদেশে আছে চাপা পড়া দুই নগরীতে গুপ্তধনের ভাণ্ডার। তারই লোভে শুরু হলো কোদাল শাবল  গাইতি দিয়ে পাথুরে মাটি খোৱা এবং খোঁজ ,পাথুরে মাটিতে খোৱা খুরি।   

🍂

মিস ব্রানটা বলেছিল ,ঐতিহাসিকের মতে  ভিসুভিয়াসের ভয়ঙ্কর অগ্নি উদ্গীরণ থামলে যে দলটি প্রথম খনন করতে এসেছিল, তারা ছিল হারকুলেনিয়ামের  সেই সব অধিবাসী, যারা প্রাণ হাতে নিয়ে শেষ মুহূর্তে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তারা যতটুকু পেরেছিল খনন করে তাদের কিছু কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করেছিল। ছাইয়ের পাহাড়ের কোন কোন স্থানে এখনো তাদের তৈরি সুড়ঙ্গগুলো দেখা যায়। সময় থেমে থাকে নি ,শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। জনগনের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুছে গেছে পম্পেই আর হারকুলেনিয়ামের নাম। যা ছিল প্রাচীন সভ্যতার ধারক এক সুসজ্জিত ধনজনে পূর্ণ বিশাল ঐতিহ্যের নগরী ।  

অদ্রিজার সাথে ইরিনার খুব ভাব জমে গিয়েছে ,মিষ্টার অড্রিন ও যোগ দিয়েছে ওদের গল্পে। ইরিনার  হাতে  পম্পেই ও হারকুলেনিয়ামের ম্যাগাজিন। দুহাজার বছর আগের ইতিহাস সেই অগ্নুৎপাতে ধ্বংস নগরীর হারকুলেনিয়ামের ভস্মীভূত হওয়ার বিবরণ। 
 সে সময় উৎসবের নগরী কানায় কানায় পূর্ণ অতিথি সমাগমে। এমনিতেই  রোমের বিশিষ্ট নাগরিকদের জন্য এই দুটি সমৃদ্ধময় শহর ব্যবহার হত একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক বন্দর হিসাবে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে   পসরা সাজিয়ে বণিকেরা জলপথে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে আসতো নগরের বন্দরে । শহরটির এক পাশে ভাসছে  নীল সমুদ্রের সাদা ফেনা , অপর দিকে সবুজের গাঢ় ছোঁয়ায় চিরনিদ্রিত আপাত শান্ত  ভিসুভিয়াস। মাথার ওপর উন্মুক্ত নাগরিক আকাশের সোনালী সামিয়ানা। সুন্দর পরিকল্পিত বাড়ি ঘর এবং বিস্তৃত পাকা সড়ক রাস্তা, মাঠ প্রান্তর শস্য শ্যামলিমায় পরিপূর্ণ  অবাধ ,স্বাধীনতা ,সমৃদ্ধি , যৌনতা, পতিতালয় এসব কোন কিছুর অভাব ছিল না এ বিলাসী নগরীতে। প্রাচীন গ্রিক, রোমসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের মুক্তাঞ্চল। বাণিজ্যিক টুরিস্টদের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছিল অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, প্রাসাদ, বাজার। শহরটি ধীরে ধীরে প্রাচীন কালের আধুনিক সভ্যতার নানা  রকম  চিত্তাকর্ষক মনোরঞ্জনের জন্য প্রাণবন্ত বিচিত্র নগরে পরিণত হয়েছিল।  

সেদিন ও ছিল এমনি নির্মেঘ আকাশের নীচে নেপলস উপসগারের নীল জলধী নিস্তরঙ্গ শান্ত। ছোট্ট ছোট্ট প্রমোদ তরী ভাসিয়ে সাগর জলের যাত্রী একরাশ উল্লাসে মাটির টানে বন্দর শহরের  বুকে ঠাঁই নিতে আসছিলো। দূর থেকে দূরবীনে চোখ রেখে নজরদারি চালাচ্ছিল নাবিকেরা । আর কত দূরে বন্দর ? সমুদ্র পাখি আলব্রাটস ওর বিরাট ডানাটি হাওয়ায় মেলে দিয়ে উড়ে যায় তীরের পানে যেন এ শহরের নবাগতদের স্বাগত জানিয়ে পথ চিনিয়ে আনতে।  সামনেই দেখা যায় বার্চ সিডার  জলপাই সবুজের মায়াময় আবরণে ঢাকা সুপ্ত ভিসুভিয়াস। তার পায়ের তলে বিলাসী নগরী হারকুলেনিয়াম,পম্পেই  মেতেছে উৎসব মুখরিত হয়ে আনন্দ উল্লাসে।

 সহসা  এক কর্ণবিদারী শব্দে বিদীর্ন হলো বিশ্ব চরাচর। বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে ক্রমাগত ফুলে ফেঁপে উঠেছিল সাগর। জলোচ্ছাসে  সারসার প্রমোদ তরণী লাট্টুর মত পাক খেয়ে খানখান হয়ে একবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল নিমেষে।  উত্তাল সমুদ্র, উদ্দাম ঢেউগুলো তীরে আঁছড়ে ফেলতে লাগল যত সামুদ্রিক প্রাণী ,রাশিরাশি মরা মাছ। উত্তপ্ত কাদার সমুদ্র ৩০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু হয়ে এগিয়ে এল হারকুলেনিয়ামকে গ্রাস করতে। আগ্নেয়গিরির প্রলয় নাচনে সর্বগ্রাসী ক্ষুধার জ্বালায় বিশ্বপ্রকৃতি যেন তার জ্বলন্ত চোখে বিশালাকার হাঁ মুখটি প্রসারিত করে মুহূর্তে  গিলে খাচ্ছে সম্পূর্ণ বিলাসী শহরটিকে।     
 
মিস ব্রানটার সাথে দলের সবাই এসে পৌঁছেছিল মৃত নগরের কেন্দ্র বিন্দু ফোরামে। চলার পথে হাজারো ভাবনা নিয়ে চিন্তিত শ্রী কিন্তু বেশ পিছিয়ে পড়লে ঋষভ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে এবং বলে, শ্রী  ভালোকরে লক্ষ্য করে দেখ যেন রোমের সেই ফোরামের মত তবে  ''. ত্রিভুজাকৃত ফোরাম ''। এই জায়গাটি ছিল শহরের মূল বাণিজ্য কেন্দ্র। ' সেকালে এখানে  রাজনীতি ,অর্থ নীতি ,ধর্ম নীতি ,আইনি আদালত ,প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি আলোচনার এক অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ন পীঠস্থান। মিস ব্রানটা তার নীলচোখ থেকে সানগ্লাস কপালের ওপর তুলে বলে গুনে দেখো  '' ২৮ টি কলাম। এখনো কেমন অটুট রয়েছে। সেখানে বিরাট বড় আকারের একটি গ্যালারি এবং থিয়েটার হল ও দেখতে পাওয়া গিয়েছিল । অদ্রিজা বলে অনেকটা  রোমের কলোসিয়ামের রিপ্লিকা।  সে যুগে এই প্রাঙ্গণ টি মুখরিত থাকতো ব্যাবসায়ী আর ব্যাংকার দের লেনদেন হৈহৈ হুল্লোর বাজির মজলিশ আড্ডায়। '' ঐ যে  পশ্চিমদিকের ঘেরাও অংশটি দেখা যাচ্ছে ওর প্রান্ত টি জুড়ে ছিল ম্যাসিলিওম বা বিভিন্ন রকম খাবার দাবারের এলাহী আয়োজন। ফলমূল শাকসব্জির বাজার হাট রেস্তোরাঁ। 

এই ফোরাম চত্বরে নগরের সব বড়োবড়ো অনুষ্ঠান সম্পন্ন হতো। চতুর্দিকে বিভিন্ন ধরণের ভবন এবং  অনেক গুলো স্মৃতি স্তম্ভ রয়েছে। এখোনো এখানে  ছড়িয়ে আছে প্রাচীন স্কোয়ারের নিদর্শন। এর উত্তর দক্ষিণ দিকে মূল চতুষ্কোন যুক্ত কাঠামোটি প্রায় দৈর্ঘ্যে ৪৮২ ফুট এবং প্রস্থে ১২৪ ফুট ছিল। স্কোয়ারের ডান দিকের দেওয়ালে মার্বেলে বাঁধানো তিনটি বড় হলে প্রশাসনিক বড়ো বড়ো কর্ম কর্তারা সে যুগে বসতেন। আইন আদালত বিচার ব্যাবস্থার পরিচালনা ও নাগরিক জীবনে সুষ্ঠ আইন শৃঙ্খলার সঠিক বিলি ব্যবস্থা ও বন্দোবস্তর প্রয়োগ চলতো এখানে।                                                                   
গাইড ব্রানটার চলনে বলনে ভারী ব্যস্ততা  দুমিনিট কোথাও স্থির হয়ে দাঁড়াতে দেবে না। 
 লম্বা লম্বা পায়ের স্টেপ ফেলে এগিয়ে চলার সময় বলেছিল এ শহরে বিস্তর দেখার জিনিস রয়েছে এক জায়গায় বেশীক্ষণ সময় লাগালে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ দর্শনীয় জিনিস অদেখা থেকে যাবে। কৌতূহলী চোখে পথের দুইপাশে শ্রী তাকিয়ে থাকে , শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কতো সুদৃশ্য পানীয় জলের কল এবং স্নানাগার। ওর মনে পড়ে রোম ভ্রমণের সময়ে পায়ে পায়ে ফোয়ারা, জলেরকল দেখেছিল রোমানদের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস ছিল ক্লান্ত পথচারি পথিক যেন তৃষ্ণার জল টুকু অন্ততঃপায়। ভ্যাটিকান সিটিতে ও দেখেছিল জলের উৎস ধারা এঁদের সংস্কৃতিতে এক বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল পিপাসার্ত কে জল দান করা। সে শীতল জল ধারায় তৃপ্তি দানে তাঁদের বিশ্বাসে ছিল ''য়্যাকোয়া বেনে দেত্তা " বা  হোলী ওয়াটার। সে রীতি রেওয়াজ পম্পেই নগরীতে ও সমান ভাবে  প্রচলিত ছিল। সেই আমলে নগরে জল সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থায় প্রথমে নদী থেকে পরে কুয়ো থেকে এবং তারপর ঝর্ণা থেকে। শহরের বিত্ত শালী ধনী ব্যক্তি দের বাড়িতে রিজার্ভার থাকলেও সাধারণ মানুষরা রাস্তার কল থেকে জল সংগ্রহ করতো। ঋষভ ও অদ্রিজা পথে চলার সময় পালা করে কল গুনতে থাকে এবং সেই প্রাচীন  কালের প্রায় চল্লিশটি কলের সন্ধান ওরা পেয়েছিল। যদিও কলগুলো ছিল সেই আদি যুগের তবুও পুরোনো মডেলের মাধ্যমেই আধুনিক যুগে ও এই সমাধি শহরের  দর্শণার্থী পিপাসার্ত পথিক দের জন্য এ শহর জল সরবরাহ করে চলেছে।                                                                                       
শ্রী ওর দলের সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো কিছুটা পথ হেঁটে  বেশ হাঁপিয়ে এসে পৌঁছলো  খানিকটা  নীচের দিকে আন্ডার গ্রাউন্ড ফোরাম বাথে। তৎকালীন সময়ে প্রাচীন রোমান সভ্যতায় স্নানাগারের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা ছিল। এখানেও সেই সুদৃশ্য স্নানাগার ওরা দেখে ছিল এবং নারী পুরুষের জন্য আলাদা ব্যাবস্থা ও স্নানের জন্য সে যুগে ও ঠাণ্ডা গরম জলের সুইমিংপুল এমন কি জামা কাপড়ের লকার এবং স্টীম নেবার সুনিপুন ব্যবস্থা এখোনো অটুট রয়েছে। ঋষভ ও অদ্রিজা দুজনেই হতবাক! বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছে । শ্রী ভাবে সেই কতকাল আগের সাধারণ মানুষের জন্য স্নানের ঘরের এমন বিলাসী সুব্যবস্থা !  
  
 শহরের উত্তর পূর্ব দিকে স্থাপিত উদ্যান ঘেরা হাউজ অব স্যালাস্ট নামের সেই সময়ের সমাজের এক স্বনাম ধন্য ধনীব্যক্তির গৃহে এবার পৌঁছে দেখেছিলো  সেখানে গৃহস্বামী বা গৃহের বাসিন্দারা সহ ঘরবাড়ি যেমন টি সাজানো ছিল ঠিক তেমন ই আছে সেই আদি কালে বিধ্বংসী লীলার পূর্বে যে যেখানে অবস্থান করেছিল অবিকল সে ভাবে। সাথে অবশিষ্ট রয়েছে মৃত্যু পুরীর করাল ছায়ায় মৃত সব মমির দল। শরীরে শিহরণ জাগানো  রোমহর্ষক এক দৃশ্য। যেন স্তব্ধ অতীত তার প্রাচীন কীর্তি বুকে বয়ে বারেবারে সোচ্চার হয়ে উঠতে চাইছে।  আগন্তুক অতিথি দের মৃত গৃহবাসী নির্বাক আহ্বান জানায় 'এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে '। 
এখানেই এক রাস্তার ধারের দোকানে দেখতে পাওয়া গেল  দু হাজার বছর  আগে ছড়ানো রুটির  টুকরো।  সেই প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসযজ্ঞের সময় দুপুরের ভোজন পর্বে কেউ রুটি ছিঁড়ে খাচ্ছিল। তার পাশের টেবিলে খাবার সাজানো ছাইয়ে আবৃত। শ্রী স্তম্ভিতো হয়ে শুধু দেখেই চলেছে।

বাজারের সামনে আধাপ্যাকিং অবস্থায় কিছু কাঁচা দ্রব্য। পাশেই এক ঝালাই করার দোকানে মেরামতের অপেক্ষায় ব্যবহারিক জিনিসপত্র। রুটি তৈরির কারখানায় রুটি সেঁকার ব্রোঞ্জের পাত্রগুলো এখনো অবস্থান করছে উনুনের উপর। আটা পেশার দোকানের সামনে মৃত গাধার কঙ্কাল।  একটি ঘরের বারান্দায়  সুন্দর বিছানায় শায়িত একটি মৃত বালকের দেহ। কাছেই রয়েছে তার মধ্যাহ্নভোজের জন্য প্রস্তুত একটি মুরগির দেহাবশেষ। তিতির বলে ছেলে টি হয়তো অসুস্থ ছিল। অন্যত্র কোথাও ছুটে  যেতে পারেনি।  কিংবা তার পিতা-মাতা হয়তো  সে সময় কাছে  ছিল না।  ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ নিঃসৃত সেই ভয়ঙ্কর লাভা যখন স্ফীত হয়ে তাকে গ্রাস করে ছিল,সে হয়তো বাঁচার জন্য খুব চেঁচিয়ে ছিল। কিন্তু কেউ যে সে সময় জীবিত ছিল না। কেউ যে ওর কথা শুনতে পায়নি। এই মৃত্যুপুরীর প্রতিটা দৃশ্য কত অকথিত গল্প বলে যায়।

  ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অন্দরে প্রবেশ করে শ্রী প্রথমেই দেখেছিল বিশাল খোলা মেলা প্রচুর আলো বাতাস খেলে যাওয়া ঘর টি কে যাকে এট্রিয়াম বলাহয়। ছাদের মাঝে একটি অংশ খোলা রাখা হয়েছে যেখান দিয়ে আলো বাতাসের সাথে বৃষ্টির জল জমা হবে  ''এম্পুভিয়া'' নামে একটি বিশাল টাবে এবং এই সংগৃহীত জল পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো সাংসারিক গৃহস্থালীর কাজে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক বণিক দের সঙ্গে দেখা করার জন্য আলাদা বৈঠক খানা ও থাকার জন্য আলাদা ঘরের ব্যাবস্থাও  চোখে পড়লো। সবশেষে এই বাড়িটিতে একটি লম্বা আকারের সবুজে ভরা বাগান ছিল যার শেষ মাথায় একটি কিচেন ছিল । 

মিস ব্রানটা বলেছিল পুরাতত্ত্ববিদদের মতে এই বাগান টিতে সময় সুযোগ মত এদের লাঞ্চ ডিনার পার্টি ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হতো।  প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে এই বাড়ির মালিক সময়ের সঙ্গে সংযোগ রেখে বাড়িটির নানা রূপ স্টাইলের পরিবর্তন করতেন। শীত ও গ্রীষ্ম দুই সময়ে থাকার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা ছিল।

Post a Comment

0 Comments