জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি। ৬৮-পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য (পম্পেই সমাধি নগরীর পরবর্তী অংশ )

বার্লিনের ডায়েরি।   ৬৮পর্ব    চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
(পম্পেই সমাধি নগরীর পরবর্তী অংশ )

নীলচে সবুজ মেশানো ফিরোজা রঙের জলে অবাধ সাদা ফেনার মেডিটেরিয়ান সী। তিতিরের চোখ থেকে বাইনোকুলার নিয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে শ্রী আত্মহারা হয়ে ঋষভ কে ডাকে, দেখ এখান থেকে কী সুন্দর! অপূর্ব দৃশ্য !  অপরূপা জ্লদেবী  যেন জল খেলায় মেতেছে।সোনালী রোদ জলের ওপর ঝিলমিল করে । ঋষভ বলে একরাশ তরল সোনা গড়িয়ে চলেছে। উপসাগরীয় রাশিরাশি ঢেউয়ের গর্জন শোনা যায়, সাগর পার থেকে হুহু করে ছুটে আসা হিমশীতল বাতাস পাথুরে দেওয়ালের গায়ে ধাক্কা খাওয়ায় হিসহিস শব্দে প্রতিধ্বনি তুলে কানের পাশ দিয়ে চলেযায়। মনেহয় কাদের যেন  দীর্ঘশ্বাসের শব্দ --না বলা অজস্র কথার রাশি কান্না ভেজা গলায় হাহাকারে বাঁচার আকুতি ,গোঙানির মত শোনায় অশরীরী আত্মার বেঁচে থাকার গল্প। মাথার ওপরের সোনালী সামিয়ানা পলকে  যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। কালচে বেগুনি রঙা আকাশ টার বুকে সাদা ডানা মেলে সার দিয়ে ভেসে যায় দিগন্তের দিকে সাগর বলাকা। মেঘের আড়ালে নিমেষে সূর্য ঢাকা পড়েছে। অসময়ে কালোছায়া নেমেছে প্রাণহীন নগরীতে। 

মিস ব্রানটা ওর গ্রূপের কুড়ি জনের সদস্যের দলটি নিয়ে পম্পেই হারকুলেনিয়ামের  চত্বরের থেকে চত্বরে ঘুরছে। ঐতিহাসিক নগরীর বর্ণনা ফাঁটা রেকর্ডের মত বেজেই চলেছে ওর শুকনো ভাঙ্গা গলার স্বরে। পম্পেই ও হারকুলেনিয়াম এবং তার আশেপাশের শহরের হতভাগ্য পরিবারগুলোর ভাবীকালের একরাশ স্বপ্নে সাজানো আলোকময় ভাবী জীবনের করুণ পরিণতি। ইতিহাস বলে ১৭০৯ সালে -সেই কবে-এ শহর দু’টিই  তখনো অচেতন গভীর ঘুমে। দৈবক্রমে  হারকুলেনিয়ামের সমাধি স্থানের উপর এলোমেলোভাবে গড়ে উঠেছিল ‘রোসনা’ নামের শহর টি। জলের প্রয়োজনে কূপ খননের কালে দৈবক্রমে একজন শ্রমিক আঘাত করেছিল প্রাচীন অডিটো রিয়ামের থিয়েটারের ভবনের আসনগুলোতে।  বেরিয়ে এসেছিল মহামূল্যবান সুন্দর দুর্লভ মার্বেল পাথরের নমুনা। সে সময় ইতালি ছিল অস্ট্রিয়ানদের দখলে। এবং সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে অফিসার ছিলেন  কোনো একজন অস্ট্রিয়ান যুবরাজ। তার  আদেশ  ও অনুসন্ধিৎসার অনুসারে কাটা হলো আরো সুড়ঙ্গ।  না এমন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি খনন কার্য্যে মন দেন নি ,তার আসল উদ্দেশ্য স্বীয় নির্মীয়মাণ বাসভবনের জন্য দুর্লভ মার্বেল পাথর সংগ্রহ।  তিনি বুঝতে পারেননি সেখানে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসের এক অপূর্ব উপাদান। মাটির নীচে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমাহিত হয়ে আছে একটি প্রাচীন শহর। অবশেষে ১৭৩৮ সালে পাতালের গহ্বরে লুকিয়ে থাকা  শহরের অবস্থান শনাক্ত হলে অতি সন্তর্পনে দায়িত্ব নিয়ে প্রাচীন সভ্যতা আবিষ্কারের প্রয়াস শুরু হয়েছিল ।  
পম্পেই সমাধি নগরীর মর্মান্তিক দৃশ্য।

  সময় থেমে থাকেনি। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত খননকাজ এখোনো নিরন্তর চলছে যদিও ধীর গতিতে। হয়তো আগামী আরো এক শতক ও কেটে যাবে সম্পূর্ণ শহরগুলোর ধ্বংসাবশেষ  আবিষ্কৃত হয়ে বাস্তবের আলোতে প্রকাশ পেতে। বর্তমানে পম্পেইতে খননকার্য প্রায় শেষের পথে। কিন্তু সেই তুলনায় হারকুলেনিয়ামের কাজ অনেক পেছনে। তবুও যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে তাই প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ইতিহাসে বিস্ময়কর। কারণ পৃথিবীর অন্যকোথাও দেখা যায় নি ,মাটির স্তূপের তলে সযত্নে চাপা পড়ে থেকেছে প্রাচীনযুগের এমন সাজানো শহর। অক্ষত এক গোটা সভ্যতা। সে  যেন হঠাৎ বন্দী হয়ে গেছে সময়ের ফ্রেমে। 

🍂

উঠোন বারান্দা পেরিয়ে অন্দরের দিকে এগিয়ে শ্রী দেখেছিল বাড়ির ডাইনিং রুম ,স্টাডি রুম যেমন ছিল তেমনি আছে। রয়েছে আউটহাউস --সার্ভেন্ট দের জন্যও আলাদা ঘরের ব্যবস্থা । দুই হাজার বছর আগেও বাড়ির দেওয়ালে সুন্দর মার্বেল স্ল্যাব এবং মেঝেতে মোজাইক করা দেখে ওরা সবাই বিস্মিত। আড্রিক ও বড়োবড়ো চোখে তাকিয়ে ইরিনা কে বলে আশ্চর্য হয়ে  ভাবছি ; এই  নিদর্শনগুলো সহজেই অনুমান করে যে সেকালের রোমান সভ্যতার বিভিন্ন সময়ের ধনীশ্রেণীর প্রচলিত জীবন ধারা কেমন ছিল।
 
 শ্রীময়ীর হাত টি ধরে এগিয়ে চলার সময় তিতিরের মনে হয় টাইম মেশিনে ,ওরা পৌঁছেছে সেই সময়ে।পৃথিবীর কোণ থেকে মুছে যাওয়া প্রাচীন শহরের  অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মাঝে।  সেখানে খুবই সতর্ক তার সাথে খননের কাজ চলছে।  প্রতিটি জিনিসের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে যেখানের জিনিস ঠিক সেখানেই সাজিয়ে রাখার জন্য এদের কঠোর প্রয়াস প্রশংসনীয়। সেই ভয়ঙ্কর দিনে ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে নির্গত সর্বগ্রাসী লাভাস্রোতের গতি ছিল বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকার । কোথাও তার প্রচন্ড উত্তাল গতিতে ধ্বসে গেছে ঘরের দেয়াল ,খিলান ও থামগুলো। কোথাও ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে আসবাবপত্র। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে তাদের সম্পদ ,সাধের গৃহস্থালীর টুকিটাকি।  গৃহপালিত পশু পাখি থেকে শহরের, দেবালয়ের সাজানো মূর্তিগুলো। 

কোথাও কোথাও লাভা জমে স্ফীত হয়ে উঠে ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে বাড়িঘর।সেখানে আবার জিনিসপত্র থেকে গিয়েছে নির্দিষ্ট জায়গায় একটুও স্থানচ্যুত হয়নি। এমন কি কিচেনে ওভেনের উপরে বসানো পাত্রটিও রয়েছে স্থির। পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের খননকারীরা সেই ভয়ঙ্কর লাভার স্রোত, গন্ধক ধূম, ছাই ভস্ম পাথর বৃষ্টির স্তুপ পরিষ্কার করে লোকজন যে কি অসহায় আর শোচনীয় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল তা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রমান সহ সাজিয়ে রাখতে পেরেছে।

এখানেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি একইরকম ডিজাইনের বাড়ির কোনো একটি ঘরের  ভিতরে শ্রী দেখে ভয়ে আতঙ্কে আৎকে উঠেছিল।  পরপর বেশ কয়েকটি শবদেহ সার দিয়ে শায়িত রয়েছে। একটি ঘরেতে দেখা গেলো এক জন মানুষ বসে আছে চোখ নাকের ওপর হাত চাপা দিয়ে। হয়তো তীব্র বিষাক্ত গ্যাসে  শ্বাসকষ্ট হওয়ায় নিজেকে বাঁচাতে নাকের ওপর হাত চাপা দিয়েছিল। কোথাও কেউ আবার উপুড় হয়ে শুয়ে তীব্র গ্যাসের প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ।  কিন্তু জীবনের সব আশা ভরসা ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পন ছাড়া তার উপায় ছিলনা। আগ্নেয় গলগলা আঠালো লাভায় ডুবে জ্বলন্ত চিতার সর্বগ্রাসী আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় সব চেষ্টা ব্যর্থ বীভৎস মৃত্যুর শীতল আলিঙ্গনে।                 

 ঘরবাড়ি দালান উঠোন পার হয়ে চলতে চলতে শ্রীময়ী দেখেছিল, দলের ফ্লোরেন্স থেকে  আসা এমিলি হঠাৎ ফুঁপিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ইরিনা বা তিতির কেউ খেয়াল করেনি এমিলি কখন ও প্রান্তের করিডোর দিয়ে অন্যএক ঘরের দোরে পৌঁছে গিয়েছে। সেখানে সংলগ্ন বারান্দায় সুদৃশ্য দোলনায় শায়িত বছর চারের এক শিশু। শীতের গরম পোশাক আবৃত দেহ,তার হাতে ধরা খেলনা। হয়তো সে দোলনায় শুয়ে ঘুমিয়েছিল। আগ্নেয় তরল  লাভার বিস্ফোরক গ্যাসের ছোবল তাকে গ্রাস করায়  ঘুমন্ত অবস্থাতেই তলিয়ে গিয়েছে চিরনিদ্রার দেশে। সদ্য খোৱাখুরিতে ছাইয়ের স্তুপ থেকে দোলনা সমেত  অক্ষতই বেরিয়েছে সে । যেন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে এখুনি ডাকলে সাড়া দিয়ে কেঁদে উঠবে। 

ওরা নিপুন হাতে প্যারিস প্লাস্টারে মুড়ে ফেলেছে শিশুটি কে। আগামীতে ঠিক এমনি করে ঐ দোলনায় সযত্নে শায়িত রাখবে তাকে সরকারী মিউজিয়ামের কাঁচের আলমারিতে। এবং এই সমাধি নগরী দেখতে এমনি সব হাজারে হাজারে পর্যটকের দল আসবে দেশ বিদেশ থেকে। রাশিরাশি বিদেশী মুদ্রায় ধন ভান্ডার ভরে উঠবে। ইটালীর পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ হবে অবশ্যম্ভাবী ভাবে। এমিলির চোখের জল উপচে পড়ছে ,কিছুতেই বাঁধ মানছে  না। ওর সঙ্গী ভদ্রলোকটি ও নির্বাক। তিতির ও শ্রীময়ী অপার বিস্ময়ে!নিমেষ হারা চোখে দেখছে । এমিলির ভ্রূক্ষেপ নেই ,ওর একমাত্র পুত্র রাসেল যে দুবছর আগে ঐ শিশুটির মতই--- । এমনি হ্যামক এ শুয়ে খেলতে --খেলতেই --ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ছিল--। এমিলির জলে ভেজা চোখ কিছুতেই বাঁধা মানে না। ওর সঙ্গী জ্যাক কে বলে,মনে হলো ঠিক যেন সে-ই শুয়ে আছে। এখুনি ঘুম ভেঙে ঝাঁপিয়ে আসবে।পুত্রহারা এমিলির এই শোকাহত দৃশ্য গভীর ভাবে স্পর্শ করেছে তিতির ,ইরিনাকে ও । ওদের চোখ ও জলে ভরা যেন এক্ষুনি উপচে পড়বে। শ্রী র মনে হয় সন্তান হারানো মায়ের র দুঃখ যেন পৃথিবীর সব মায়ে দের মনে একই সুরে একই বীণার তারে বাঁধা। এমনি ভাবেই স্পর্শ করে যায় প্রিয়জন হারানোর গোপন ব্যথা ,দেশকালের সীমা ভেদ করে দুখঃগুলো যেন হৃদয়ের গভীর ক্ষত থেকে অজস্র রক্ত ক্ষরণ করে অনবরত ঝরে পড়ে। 

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য্যের ফলে ধ্বংস্ব স্তূপের পাহাড় থেকে এখোনো পর্যন্ত প্রায়  ১১৫০ টি প্রস্তরীভূত কঙ্কাল খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছিল । এই মৃত নগরীর পথে ঘুরে বাড়ি ঘরের কোণে উঁকি মেরে ওরা দেখেছিল বেশকিছু  হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো ,ফলের ঝুড়িতে আপেল,আঙ্গুর,তরমুজ। এমনকি আধখানা খাওয়া রুটির টুকরো। কোথাও কিচেনে শিকে ঝুলিয়ে শুয়োর ঝলসানো --রান্না চলছিল। খাবার টেবিলে বসেই মারা গিয়েছে কেউ । কারো দৃষ্টি শক্তি ছাই আর পাথরের ঝরে অন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঐতিহাসিক দের ধারণা  কেউ বা প্রাণ ভয়ে  ছুটে পালাতে  গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সেখানেই প্রাণ হারিয়েছে। বহু মৃত নারী পুরুষের দেহের সাথে পাওয়া গিয়েছে সেই সময়ের অলংকারাদি তৈজস পত্র ঘরবাড়ি জমিজমার দলিল, মুদ্রা ,ধন সম্পত্তি ।

দল টির দ্রুত গতির চলার সাথে তাল মিলিয়ে চলে ঋষভ বলে শ্রী এবারে  চলেছি অন্য এক সম্ভ্রান্ত পাড়ার বিশাল ধনী ব্যক্তির আলিশান বাড়ির সিংহ দরজায়।  ইরিনা ল্যাটিন পড়ে জানায়  , দরজার গায়ে লেখা  তৎকালীন সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি টি র নাম  ''মিনান্দার '। মিস ব্রানটা বলেছিল এই পাড়ার ঘরবাড়িগুলো  লক্ষ্য করে দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে সেকালে বিশাল ধনবান মানুষের জীবন যাত্রা ও সামাজিক অবস্থান কেমন ছিল। রাউন্ডশেপের থামে ঘেরা ১৯ হাজার ফুটের লম্বা বাড়িটিতে ঢুকেই চোখে পড়েছিল এক দিকে গৃহদেবতার মন্দির এবং তার পাশের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলে অসংখ্য ঘরের সারি।  অদ্রিজা অবাক হয়ে বলে,দেখো ,  প্রতিটা ঘরের দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন থিমের ওপর ফ্রেস্কোর কারুকাজ করা চিত্র দেখে সহজেই অনুমেয় যে মিনান্দার ভদ্রলোকটি বেশ রুচিশীল ও সংস্কৃতি সম্পন্ন ব্যক্তি।  প্রতিটি দর্শনীয় স্থান এবং ঘরে সংরক্ষিত একরাশ  জিনিস পত্র ।এই পাড়াটি তে বিশাল ধনী এবং বহু উচ্চমধ্যবিত্ত সংস্কৃতিবান সম্ভ্রান্ত রুচি সম্পন্ন মানুষের বসবাস ছিলো। 
ধ্বংস প্রাপ্ত নগরী

একটি ঘরের দেওয়ালময়  নিখুঁত ভাবে গ্রীক কবি দের ছবি আঁকা । সব ঘর দেখার অনুমতি ছিল না বিশেষতঃ খননের কাজ চলছিল। কিছু কিছু আবিষ্কৃত ঘরের দেওয়াল চিত্রের পাকা রঙ দেখে মনে হয় এই বুঝি কোনো শিল্পী তার সুদক্ষ হাতে দেওয়াল টি চিত্রিত করে গিয়েছেন।  আড্রিক ও ইরিনা নিজেদের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা নিয়ে দেওয়াল চিত্রে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করেছে। পুরু ছাইয়ের আস্তরণে ঢাকা থাকায় বাসভবন  গুলোতে ছিল আর্দ্রতা ও বায়ুর পরিমান খুব সামান্য হওয়ায় দেওয়াল চিত্র ছিল স্বচ্ছ স্পষ্ট ও অবিকৃত। 

শ্রী পোড়ো বাড়ির এক ভাঙা দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে,২০০০বছরের প্রাচীন নগরী আজ ও প্রস্তরীভূত হয়ে প্রতীক্ষারত ইতিহাসের মর্মান্তিক সাক্ষী রূপে। বাতাসে গুমরে বেড়ায় আতঙ্কিত হৃদয় বিদারক বেঁচে থাকার অস্বাভাবিক জ্বালাময় কান্নার চিৎকার। প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টার ব্যর্থ প্রয়াস চলেছে প্রতিটি ক্ষণে। তার জীবনী শক্তির শেষ নিঃশ্বাস বায়ু টুকু ছাই মাটির নীচে চাপা পড়ার আগে বাঁচার হাহাকার--অন্তিম প্রয়াস বাতাসে ঘুরে বেড়ায়।--একদিন স্তূপ সরিয়ে তার যাবতীয় রহস্যের দ্বার উন্মোচোন করবে আগামী আধুনিক পৃথিবীর নাগরিক ।      ( ক্রমশঃ )

Post a Comment

1 Comments

  1. কি অসাধারণ বর্ণনা, লেখার মধ্যে দিয়ে যা অপরের কাছে দৃশ্য করে তোলে, যে লেখার মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের ঘটনাগুলো অনুভূত হয়, লেখার ভাষা যখন মনকে অনুরণিত করে তোলে যা মনকে মুগ্ধতায় ছেয়ে রাখে, এ কাহিনী তো সেরকমই। অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। পরবর্তী লেখা পড়ার আশায় থাকলাম।।

    ReplyDelete