চিত্র- শুভম দাস
রাতের তারার গভীরে
পুলককান্তি কর
রিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই নন্দা বলল, 'ঢং দেখে বাঁচিনা। বেশি বেশি আদিখ্যেতা!’
রিপন এতক্ষণ পেটের ব্যথায় কোঁকাচ্ছিল, খানিকক্ষণ নন্দার দিকে তাকিয়ে বলল, 'কার কথা বলছো? রিনা?'
আর কার কথা বলব? এভাবে নাটক করে আসারই বা দরকার কি, দু মিনিট দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ারই বা দরকার কি?
ও এসে এখানে একটা টুল দখল করে বসে থাকলে কি তোমার বেশি ভালো লাগতো? তখন তো তুমি সারাক্ষণ প্যান প্যান করতে ‘কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই – হাসপাতালে কেউ দেখতে এসে এতক্ষণ বসে থাকে? অনেক লোক দেখতে আসছে, তাদেরও তো জায়গা করে দিতে হয়’।
তুমিই বা এতখানি প্রোটেক্টিভ বিহেভ করছ কেন রিপন? এই না তোমার পেট ব্যাথা করছিল? নাকি প্রাক্তন স্ত্রীকে দেখে কমে গেল?
রিপন হাসলো। এসব কথার উত্তর দিতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। ওর এত বছরের অভিজ্ঞতা। বলল, 'সিস্টার দিদিকে খবর দাও – ব্যথাটা একটু বেড়েছে বলে!
নন্দা উঠে যেতে রিপন উদাস চোখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। নিউটাউনে নতুন অনেক হাসপাতাল গজিয়েছে – জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালে– অনেকদূর অব্দি শূন্য মাঠ দেখা যায়। এখন আর চাষাবাদ হয় না – সব বিক্রি হয়ে গেছে বৃহত্তর সভ্যতা তৈরির জন্য। এই শূন্যতা দেখতে দেখতে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার! ওর আর রিনির সম্পর্কটা এইরকমই একটা পরিত্যক্ত জমির মত – বহু কাল ওতে কর্ষণ হয়নি, চাষবাস বন্ধ হয়ে গেছে কবে।
সিস্টার এসে বললেন, 'খুব ব্যথা হচ্ছে মি: দাস?'
মোটামুটি। কেমন যেন খিমচে ধরছে মাঝে মাঝে।
ঠিক আছে। একটা ইনজেকশন দিতে বললেন ডাক্তার বাবু। দিয়ে যাচ্ছি, আশা করি আধ ঘন্টার মধ্যে কমে যাবে।
আমি কি এখন মুখে কিছু খেতে পারব?
না, মি: দাস। আজকের দিন টা এন. পি. এম এ থাকুন। এখন স্যালাইন চলছে। আপনি অকারণ উতলা হবেন না!
রিপন দেখলো নন্দা এসে চুপ করে বসে আছে চেয়ারে। এই কেবিন গুলোতে ফ্যামিলি অ্যালাও করে – নন্দা থাকবে বোধ হয় আজ। ওরা অফিসিয়ালি যদিও হাজব্যান্ড ওয়াইফ নয়, তবু লিভ টুগেদার করে যখন – ওর এই অধিকার আছে। রিপনের আজ একদম ইচ্ছে করছে না নন্দা এখানে থাকুক। থাকলেই এখন কিচির মিচির। বিশেষ করে রিনির আসাটা ও একেবারে ভালোভাবে মেনে নিতে পারছে না, মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যতক্ষণ না ওর ঘুম আসছে, ততক্ষণ এই নিয়ে কথা চলতেই থাকবে। নন্দার এই দোষ। আজ যে রিপন অসুস্থ, ওর বিশ্রাম দরকার - ওর সেই সেন্স থাকে না।
পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য রিপন বলল, তুমি একটু কিছু খেয়ে আসতে পারো তো – নীচ থেকে!
থাক, এখানেই তো সার্ভ করবে!
তার তো দেরি আছে।
তুমি গিয়ে চা-ফা খেয়ে এসো।
ইচ্ছে করছে না। তুমি এখন কেমন বোধ করছ?
ভালো, ব্যথাটা কমছে মনে হচ্ছে।
কাল কত করে বললাম, রাত জেগো না – সকালে উঠে কাজ কর; শুনলে না – দেখলে তো কেমন বাধিয়ে বসলে!
আসলে রিপন তখন রিনির সাথে ডিভোর্সের ফাইলটা নিয়ে বসেছিল। সে নাকো বুঝতে পারছে, নন্দা কিছু একটা কথার সূত্র ধরে রিনির বিষয়ে আসতে চাইছে। এসব ব্যাপারে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো – আগ বাড়িয়ে ডাইরেক্ট অ্যাটাক করে লাভ নেই। দু এক মিনিটের মধ্যেই প্রসঙ্গ এলো – আচ্ছা রিনিদি জানলো কি করে তুমি অসুস্থ? তুমি জানিয়েছো নাকি?
- আমার কি জানানোর মতো অবস্থা ছিল নন্দা! দেখেছো তো কেমন ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলাম।
- তাহলে?
- আমাদের কমন ফ্রেন্ডের কি অভাব আছে?
- এভাবে আসার দরকার টা কি? এসে দু মিনিট ফ্যাল ফ্যাল করে তোমাকে চেয়ে দেখল, কোন কথা নেই বার্তা নেই,আবার ফিরে চলে গেল- পুরো শো অফ্! কি দেখাতে চাইলো, 'দ্যাখো আমি এখনো তোমার কথা ভাবি! আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি!'
- মানুষের মনের কথা আমি কি করে বুঝবো নন্দা!
বারো বছরের সম্পর্ক! প্রায় দেড় যুগ – ওকে এইটুকু বোঝ না?
ভালো যদি বুঝতে পারতাম, তবে ছেড়ে আসতাম কি?
যা বাবাঃ! লোকে তো বলে সব বোঝা শেষ হলে যখন মানুষ দেখে – কোনও ভাবেই ওর সাথে থাকা যাবে না – তখনই কেবল তারা ছেড়ে আসে!
তুমি জানো, আমি কেন ছেড়ে এসেছি। সুতরাং এনিয়ে অকারণ বাক্য চালনা করে লাভ নেই!
যাই বল রিপনদা, রিনিদির কোন সেন্স নেই। এই সময় তুমি অসুস্থ। এ সময় ও এলে তোমার খারাপ লাগতে পারে, শরীর বেশি খারাপ হতে পারে - সেই হুঁশটাই নেই। কেমন যেন একটা!
রিপন মনে মনে ভাবল 'সে সেন্স তো তোমারও নেই নন্দা!' কিন্তু বলতে গেলেই ঝগড়া বাঁধবে। তার বড় ক্লান্তি লাগছে, এ নিয়ে কথা বলতে তার মোটেও ইচ্ছে করছে না।
কি হলো, কিছু উত্তর দিচ্ছ না যে? তার মানে কি ধরে নেব তুমি উল্টোটা ভাবছো?
এখন তুমি চুপ করো নন্দা। আমি শুধু ঘুমাবো।
অসময়ে ঘুমিও না। রাত্রে ঘুম হবে না, উল্টে বিপদ হবে। জেগে থাকো, কথা বলো আমার সাথে! জেগে থাকলে ভালো।
আমাকে কি সাপে কেটেছে নন্দা যে জেগে বসে থাকবো? বেশি ডাক্তারি ফলিও না।
জানো আমার মনে হয় রিনিদি পুরো নাটক করতে এসেছিল।
তাতে লাভ?
এখনো তো ডিভোর্সটা হয়নি। এখন ও দেখাতে চাইছে ও তোমার জন্য কত কনসার্নড। ও কতটা ভালোবাসে – এসব ভেবে যদি তুমি সিদ্ধান্ত বদলাও.... কিগো সিদ্ধান্ত বদলাবে নাকি? হঠাৎ করে গলায় চপলতা মিশিয়ে দিল নন্দা।
রিপন নন্দার হাতটা মুঠোয় নিয়ে বলল, সিদ্ধান্ত বদলানোর হলে আমি কি তোমার সাথে জড়াতাম? আমি কখনো বিশ্বাসের অমর্যাদা করি না।
তুমি রিনিদির বিশ্বাসের অমর্যাদা করো নি?
না। আমি রিনিকে বহুবার সুযোগ দিয়েছি। ও প্রতিবার ক্ষমা চেয়েও একই ভুল করেছে। সুতরাং আমার এ নিয়ে কোন বিবেক দংশন নেই! আমি জানি সে এখনো আমাকে প্রচুর ভালবাসে, কিন্তু সেই জন্য সারা জীবন আমি সেই ভালোবাসার মন্থনে নিংড়ানো গরল পান করতে রাজি নই!
ভালোবাসে না ছাই! ভালবাসলে কেউ এরকম অসুস্থ অবস্থায় মানসিক ক্ষত দিতে উপস্থিত হয় না!
এটাই তো মানুষের স্বভাব নন্দা! যে ভালোবাসে সে সবসময় চায় - তার দুঃখ কষ্ট যেন যাকে ভালবাসে তাকে কষ্ট দেয়। এতেই ওর সুখ! প্রতিটা সম্পর্কই বেঁচে আছে - অন্যের দুঃখে তুমি কতটা দুঃখী হচ্ছ নিত্তি মেপে তার বিচার করে। সেখানে ওই পক্ষে যদি একটুও ঘাটা পড়ে - তবেই অনর্থ। আমরা যে বলি – আমি চাই তুমি সর্বদা সুখে শান্তিতে আনন্দে থাকো – তাতেই আমার সুখ। এর চেয়ে বড় মিথ্যে কথা আর নেই। এটা ততক্ষণই সত্য - যতক্ষণ আমি সেই একই কারণে সুখ শান্তিতে আছি, আনন্দ পাচ্ছি – আর একটা কথা ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন – আমি ওর আসতে বিন্দুমাত্র মানসিক কষ্ট পাচ্ছি না!
তবে কি খুশি হয়েছ?
কষ্ট না পেলেই কি খুশি হতে হয় নন্দা? কেউ ইন্ডিফারেন্ট থাকতে পারে না!
এত বছরের সম্পর্ক, এত বছরের একসাথে থাকা - শোওয়া – সেই সম্পর্কে কি এতখানি ইন্ডিফারেন্ট থাকা যায় রিপনদা? আর তাই যদি সত্যি হয়, আমাকেও তোমার প্রতি সাবধান থাকতে হয়। একই কাজ তুমি তো আমার সাথেও করতে পারো।
সম্পর্ককে যদি কখনো এতখানি তিক্ত করে দাও, তবে তোমার সাথেও তাই হবে। তুমি সে রকম হলে এখনই সাবধান হয়ে নাও!
হঠাৎ সিস্টার ঘরে ঢুকে বললেন, 'কি ব্যাপার মিঃ দাস – আপনি বসে আছেন কেন? শুয়ে পড়ুন, ডাক্তারবাবু রাউন্ডে আসছেন।
ডাক্তার বাবু বললেন, 'কি আশ্চর্য! ফোর্টউইন - ক্যাম্পোজ ইনজেকশন দিতে বললাম, সিস্টার দেননি?'
দিয়েছি তো!
পেশেন্ট ঘুমোচ্ছে না কেন? ঘুম পাচ্ছে না আপনার? দেখান জিভটা!
ডাক্তারবাবু টিপেটুপে নানা রকম পরীক্ষা করতে লাগলেন। রিপন ভাবল, ডাক্তারবাবু যদি অনেকক্ষণ এখানে থাকেন, বেশ ভালো হয়।
(২)
রিপন আজ তার পুরনো ফ্ল্যাটে এসেছে রিমির সাথে দেখা করতে। ডিভোর্স সংক্রান্ত কিছু ব্যাপার সেট্ল করা দরকার। নন্দার সাথে থাকা শুরু করার আগে থেকেই রিপন তার নতুন কেনা ফ্ল্যাটটায় চলে গেছে। পুরনোটায় রিনি ছেলেকে নিয়ে থাকে। রিপন ফোন করেই এসেছে, ফলে রিনি প্রস্তুত হয়েই ছিল। ও আসতেই রিপনের পছন্দের ঠান্ডা লেবু সরবৎ এনে দিল সে। এ কথা সে কথার পর রিপন বলল - তুমি অ্যালিমনি বাবদ কি কিছু দাবি করছ?
কিছু না!
সে কি! তোমার চলবে কী করে?
যিনি খান চিনি, তাঁকে জোগান চিন্তামণি। ঈশ্বর কোনো ব্যবস্থা করবেন নিশ্চয়ই!
শোন রিনি। ছেলের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ, টিউশন, হায়ার এডুকেশনের জন্য কোচিং – সব আমি দেব। এছাড়াও এই ফ্ল্যাটটা তো তোমার নামেই কেনা – সুতরাং এটায় তুমি আরামসে থাকতে পারো – আমার কোন দাবি থাকবে না। বাকি খাওয়া দাওয়া শখ শৌখিনতা বাবদ কিছু টাকা নাও – এককালীনও নিতে পারো, মাসে মাসেও নিতে পারো।
বললাম তো কিছু লাগবে না।
কিছু তো নিতেই হবে রিনি!
তুমিই বা এত দিতে ব্যাকুল কেন রিপন? আমি না নিলে তো বরং তোমার খুশি হওয়ার কথা। তোমার হবু বউ এই নিয়ে খোঁচা দিতে পারবে না।
এটা আমার ব্যক্তিগত ইস্যু রিনি। এতে তো নন্দার কিছু বলার নেই। বিয়ের সময় তোমার অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করব - এই মর্মে মন্ত্র পড়েছিলাম - সুতরাং আমি কথার খেলাপ করতে চাই না।
বিয়ের সময় তো আরো অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল রিপন, সেগুলো যখন মানতে পারোনি, তাহলে আর ওটা রক্ষা করতে চাও কেন?
তুমি কি আমায় গিল্টি ফিল করাতে চাইছো রিনি? বা টাকা রিফিউজ করে তুমি কি নিজেকে মহান দেখাতে চাইছো?
আমি কিছুই দেখাতে চাইছি না রিপন!
তুমি ভাবতেই পারো – তোমার মহানতা ভেবে যদি আমি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করি! পরিষ্কার শুনে রাখ – আমি অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সুতরাং আর পেছনে ফিরে তাকাবো না। তুমি কোন ভাবে ওরকম আশা মনে পুষে রেখো না!
শোন রিপন, মিথ্যে বলবো না, প্রথম প্রথম আমার মনে হতো, তুমি ফিরে আসবে, তোমার পুরনো স্মৃতি মনে পড়বে। জয় কে এভাবে অনাথ করে দেবে না। কিন্তু যখন দেখলাম – তুমি নন্দার সাথে লিভ ইন শুরু করেছ, তখন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি তুমি আর ফিরবে না।
জাস্ট আউট অফ কিউরিওসিটি জিজ্ঞেস করছি – তোমার এমন মনে হওয়ার কারণ? মানুষ কি সেকেন্ড রিলেশন থেকে ফিরে আসে না?
শোন, সম্পর্কটা কী জানো? – এটা একটা মায়া; মোহের বাঁধন। পরস্পরের অনেক দোষ ত্রুটি জেনেও মানুষ এই কারণেই অন্যকে ছেড়ে যায় না। তুমি যখন একটা মায়া কাটিয়ে অন্য মায়ায় জড়ালে – সেই বাঁধন সব সময় তোমাকে পুরোনোতে ফিরে আসার ব্যাপারে বাধা দেবে রিপন। তুমি তো ফুলে ফুলে মধু খাওয়ার মত পুরুষ নও। নন্দাকেও নিশ্চই কিছু কমিটমেন্ট করেছ। সুতরাং মিথ্যে আশায় আমি ভুলতে চাই না।
তাহলে অ্যালিমনি কেন নিতে চাও না?
আমাকে তোমার দয়ার দানে কেন বাঁধতে চাইছো রিপন? যে সম্পর্ক নেই সেটা কবে ছিল – সেই ঢেকুর তুলে এখন লাভ কি? আমাকে বিয়ে করেছিলে বলে তার দায় তোমাকে সারা জীবন করতে হবে এ দাবি আমি করি না।
কিন্তু তোমার চলবে কি করে? বিয়ের পর কতবার বলেছিলাম, চাকরিটা ছেড়ো না।
ও চলে যাবে। তখন ভেবেছিলাম - মন দিয়ে সংসারটা করব। সেটা যখন হলো না, আবার পুরোনো কোম্পানিতে চাকরির চেষ্টা করব। না হলে – নাচ জানি। বাচ্চাদের শেখাতে পারি। বাবার টাকা, যেটা তুমি আমার নামে এম. আই. এস করে দিয়েছিলে সেটাও চালু আছে। ছেলের খরচা যদি আমাকে না ভাবতে হয়, তবে আর চিন্তা কি!
নিজের খরচ নেবে না, অথচ ছেলের খরচ নিতে তোমার খারাপ লাগছে না কেন?
ছেলে তোমারও! ওতে তোমার অধিকার আছে – ওর যাতে ভালো হয় – সেই চেষ্টা করা তোমার দায়িত্ব। কিন্তু এখন তোমার ওপর আমার অধিকার নেই – আমি তোমার থেকে টাকা নিতে পারবো না।
তুমি কি বিয়ে করবে রিনি? সেরকম হলে আমায় বলো, জয়কে তাহলে আমার কাছে নিয়েই রাখবো।
সে সম্ভাবনা নেই আদৌ।
কেন? অরিত্রের কথা তো ভাবতে পারো।
আমি তো তোমায় বহুবার বলেছি রিপন, ও আমার ভালো বন্ধু। তাকে স্বামীত্ব দেওয়ার বাসনা আমার কোনও কালে ছিল না, এখনো নেই।
আসলে ভয় হয় – তুমি যদি একই ভুল আবার করো। তখন আমি থাকতাম – সময় মত হাসপাতালে দেওয়া যেত। এখন যদি ওরকম অ্যাটেম্পট নাও – জয়ের জন্য বড় চাপ হয়ে যাবে।
সুইসাইড অ্যাটেম্পটের কথা বলছ কি? চিন্তা করো না। বড় বোকা ছিলাম আমি – ওইসব করে তোমাকে অনেক বিড়ম্বিত করেছি এখন বুঝতে পারি। তখন মাথার ওপর তুমি ছিলে। এখন ছেলের মাথায় আমি – বাড়তি দায়িত্ব। সুতরাং এমন কিছু করার আগে অবশ্যই ভাববো এবার থেকে। ছেলের ব্যাপার ছাড়া তোমাকে তো আর যখন তখন ফোন করা যাবে না আগের মত!
কেন?
সেদিন হাসপাতালে গিয়ে বুঝলাম, আমার যাওয়াটা উচিৎ হয়নি। আসলে তোমার শরীর খারাপ – হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে – এসব শুনে মাথাটা ঠিক ছিল না – হুট করে চলে গেলাম। পরে মনে হল, তোমাকে ভারী এমব্যারাসড করলাম গিয়ে! আসলে আমার তো এটাই দোষ – নিজের আবেগটা কন্ট্রোল করতে পারিনা।
খানিকটা চুপ থেকে, রিপন বলল, 'আর কখনো এমন সিচুয়েশন হলে যেওনা রিনি। নন্দা ভাবে তুমি ভালোবাসার শো অফ করতে যাও। আমি বুঝি ব্যাপারটা ঠিক নয়। কিন্তু কিছু বলতে গেলে ঝগড়া লাগে।’
দ্যাখো রিপন, আমি তো তোমায় সত্যিই ভালোবাসি। আগেও বাসতাম – এখন তুমি ছেড়ে চলে গেছো বলে মনের সেই অনুভূতি বদলে গেছে – এমন নয়! কিন্তু এটা আমি কখনো দেখাতে যাই না। আবেগের বশে চলে গিয়েছিলাম।
আমি বুঝি রিনি; তবে এটা এক্সিবিট না হওয়া ভালো। আমি কাগজপত্র রেডি করে উকিল বাবুর সাথে কথা বলবো। তখন না হয় ফোন করবো। এবার উঠি তবে?
যাওয়ার আগে একটা সত্যি কথার উত্তর দেবে?
বলো!
এখন তো তুমি নন্দার সাথে থাকো। ডিভোর্সটা হয়ে গেলে হয়তো বিয়েও করবে। এখন নিশ্চই প্রতি মুহূর্তে তুমি কমপেয়ার করার অবকাশ পাও। সত্যি করে বলতো, আমি কি নন্দার তুলনায় খুব খারাপ ছিলাম?
রিপন উঠে দাঁড়ালো। আলতো করে জড়িয়ে ধরল রিনিকে। পরিষ্কার বুঝতে পারল – রিনির বুকটা অসম্ভব জোরে ধক ধক করছে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, 'আজ চলি, নিজের যত্ন নিও!'
0 Comments