জ্বলদর্চি

কবিতার চেরি ব্লসম -২ /স্বস্তিকা ধর

কবিতার চেরি ব্লসম -২
স্বস্তিকা ধর

মুখহীন প্রণয়ীর , স্মৃতিহীন 
দিবসযাপন ! 
১২ ই কার্তিক , ১৪৩১ 

(কার কথা ? তার কথা? 
হ্যাঁ, চিন্তা করে, চিন্তা তো করেই ! বিশেষ করে 'ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব' বিষয়টা সোজা কাজ নয় তো )

ঠিক ঠিক , কোন সুর ; কোথায় কতটা মীড়
কতখানি একা করে , কতজন সুহৃদের ভিড় !
কোন নদী, কোন তীরে , কার যেন সাগরে দীঘল !
সব কথা 
সব রঙে 
সবটুকু 
'ঝর্ণা নামাতে পারা' হাসিতে গাঁথবে 
তখনই তো ঘুম নামবে 

এই কাজ , রোজকার কাজ , রোজ তার কাজ 
অমল রোদের সাজ , দিনের গরজ ;
সন্ধ্যের মুখে , খুলে রাখে দরোজার ভাঁজে 
গাঢ় করে মেখে নেওয়া কাজলের আঁচ 
ঢিমে সুরে গুনগুন ভিয়েনে চড়ায়, 
সন্ধ্যে গড়ায়-

রাতের দ্বিতীয় প্রহরে 
তার , মনে পড়ে, 
জেগে আছে ; ঘুমহীন - পর্দানশীন 
ঘুম পাড়াবেই তাকে -
প্রতিদিন নিশিডাকে -

বিপ্রতীপে ফুটে ওঠা সকালের অমল আলোয় 
অন্ধ হয়, বধির হয়, নিমেষে নিঃশব্দ 
মুখহীন প্রণয়ীর , স্মৃতিহীন 
দিবসযাপন ! 




ডুবেছো তুমিও; পাথর !
১৫ অগ্রহায়ণ , ১৪৩১ 

(কাল রাত্রে আপনার নিশ্চিন্ত ঘুমের ভেতর , আপনার মাথার কাছে খুলে রেখে এসেছি আমার আদরের ডানা)

এই যে নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টির ভিতর আছি 
শব্দের 
হাসির 
গানের 
নৈঃশব্দ্যের 
এর চেয়ে দীর্ঘতম রাত্রি আর কবে ?

নদীর বুকের ওপর নীল চাঁদোয়া , উটকো মেঘ 
আমি সাঁতার জানিনা , ডুবে যাবো - এই আশংকায় গজগজ করছে সাদা মেঘ 
হাত ধরে টেনে নিয়ে চলেছে আমাকে , কোথায় -

পাহাড়ি বনফুল , নদীর বালি , জঙ্গলের শুকনো পাতা 
আর 
পাথর - পাথর - পাথর 
এইসব জড়ো করে বানানো বাসায় আমার দিন কাটছে 

মহাকাল 
আমার বাসার সামনে বসে , হাঁটু মুড়ে 
অনেক অভিমান অনুযোগ করেও খুলতে পারছে না -
আমার শক্ত হাতের মুঠো !
আমার বন্ধ চোখের পাতার ভিতরে জেগে থাকা ঘুম

পরোয়া করবোনা বলেই 
ফিরে যাবার পরোয়া করবোনা বলেই তো এই স্বখাত সলিল 

স্তুপ স্তুপ মৃত্যুর মাঝখানে সুখের মতন জেগে থাকা , সবুজ হৃদয় 
কি ভয় ?
কি লয়?
কোন ক্ষয় ?
কে চাঁদ ?
কার ফাঁদ?
কার জয়ে কার পরাজয় ?

চালাক চালাক হাঁসেরা ; ডানায় লাগেনা জল !
তবুও ,
ধরা চুড়ো সহ ডুবলো তো ? 
বল ?
এ বছর , বড়ো বেশি ভালোবেসে 
ঘুমন্ত আদরের , অপর্যাপ্ত চুম্বন কাতর -
ডুবেছে তুমিও , পাথর !



সে কি আমায় নেবে চিনে?
৩ রা ফাল্গুন , ১৪৩১ 

প্রেম তো এরকমই -
হয়তো , তুমি নির্ভার সাজিয়ে বসে আছো ঘরদোর,
মাফলার কিনেছো বাছাই , 
কিনেছো দুষ্প্রাপ্য পুঁথি , 
বানালে লবঙ্গ লতিকা , 
পর্দায় দিয়েছো খুশির খুশবু,
হাওয়ায় জর্জ বিশ্বাস , 
টেবিলের উপর ভাস্কর চক্রবর্তী -
তুমি জানো, ঠিক কোন কবিতার কোন লাইনে কোন আঙুলের কতখানি স্পর্শ হবে !
সদর দরজার সিঁড়ি ধুয়েছো ,
মুছেছো অযত্নের ধুলো, হোক না প্রাক্তনের ফটোফ্রেম , তবুও !
বিশেষ সুগন্ধি চায়ের ভক্ত তিনি 
সুতরাং পরিপাটি নীল ড্রাগন আঁকা টি পট ( অবশ্যই বিনা চিনি )

এইসব সারা হলে যখন একমাত্র অপেক্ষাই বাকি, 
সেই প্ৰাক মিলন মুহূর্তেই 
পাহাড়ে এলো ভূমিকম্প 
জঙ্গলে লেগে গেছে দাবানল 
শরীরের ওপর দিয়ে 
নিষেধ না মানা সমুদ্রের লোনা জল উপুড় বইছে 
বাড়ির পোষা কুকুর গুলো প্রানপন বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়লো তোমার কোলে 
সব ভাঙা ভাঙা সব মরমর 
এই অবস্থায় , এক নাম জপ করে চলেছ তুমি 
বলে চলেছো একই কথা নিজেকে বারবার
'সে কি আমায় নেবে চিনে'? 
প্রেম তো এরকমই !

🍂

Post a Comment

1 Comments

  1. ভাস্কর সেনFebruary 23, 2025

    স্বস্তিকা ধর খুব ভালো লিখেছেন। এক একটি কবিতা এক এক ছন্দের, এক এক স্বাদের। শব্দ ও ছন্দ নিয়ে তাঁর পরীক্ষা- নিরীক্ষার (এক্মপেরিমেন্ট) কাজ খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

    ReplyDelete