জ্বলদর্চি

আমার বাউন্ডুলে কবিতারা /শাশ্বত বোস

আমার বাউন্ডুলে কবিতারা

 শাশ্বত বোস

১.

ভালো করে ভাল না বাসতে পারার
অনেক কারণ আছে। আবার তোমাকে
মন্দবাসি না এটা মনে করতে কোন
নির্জন পথে একা হাঁটার প্রয়োজন হয় না!
একটা চুম্বন যেখানে ঠোঁটে ঠোঁট,
কানে পোয়াতির স্বপ্ন বিলাস,
অদম্য উষ্ণতার আবার কোন শ্রেণীভেদ হয় নাকি!

২.

যারা স্বপ্নের ঘোরে বাঁচে কিংবা বাঁচার ঘোরে
স্বপ্ন দেখে, পকেট ভর্তি কোন এক ঘোলাটে সকালে,
মদের গ্লাসটায় হঠাৎ করে একটা মাছি এসে বসলে,
বিস্তর কিছু হিসেব কষা যায়! ছাতের দেওয়ালে
বেরিয়ে থাকা দাবিহীন ইঁটের গায়ে, আলতো করে
এসে পড়া রোদ্দুরে বসে, অত সিরিয়াস হতে নেই।
জীবন তো এমনই! কখনও শরীরী, আবার কখনও বিদেহী।

৩.

ভালোবাসার দিনে তোমায় একটা প্রিন্টেড গোলাপ দিলে
নেফারতিতি রুষ্ট হবেন কি? শুকনো পাতার কোন অ-ভালোবাসার
রাতে যখন নীলচোখা ঘুম আসে বালিশের পাশে,
তখন অরগ্যানিক বুকে হার্টের হরতাল আর দীর্ঘ্যশ্বাসের
ডুবোজাহাজে চড়ে, মেঘ আঁকতে গেলে
গ্রিক দেবতা জিউস শাপ দেবেন?
আমাদের এই ন্যাকা-ন্যাকা লীলা খেলায়, অবাক হয়েছে
নিষিদ্ধ সূর্যমুখী। একটা হৃদয়খেকো অজগরের ফেনিল শব্দের
দোতারার বাজনাই, ‘টু বি’ অর ‘নট টু বি’র ফয়সলা করে দেয় শেষ পর্যন্ত্য!

🍂

৪.

কাজ না জানা সারেঙ্গীটার পথে,
ঢেউ তুলেছে উষ্ণ ভাষান্তর!
কবিতার গায়ে সাদা লিপস্টিকেরই দাগে,
চিবুক ধরে, নিঃস্ব আপন কিংবা পর।
কুয়াশা ভেঙে পাখিরা বাস্তুহারা,
উৎশৃঙ্খল স্রোত স্থবির তিতীক্ষায়।
কবিতা নিপুণ, কবিতা খেয়ালী, কবিতা মিথেন!
টুনটুনিরা ফাঁপা সূর্য্যের ঘুম খায়।

৫.

কৃষি অধ্যুষিত একটা গ্রামে, সুপ্রাচীন
বটগাছটায় এখন শুধুই ‘আমি’র রঙিন ছায়া।
গাছটার আয়ু টুকে নিয়ে, কৌশলে গা ভাসিয়ে
দেওয়া নিশ্চুপ, নির্ভার, ছায়াচ্ছন্ন বিষন্নতার
ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়া, একটা রাতজাগা পাখি আমায়
ডাকে, নিশ্চিন্ত ঠিকানার খোঁজে। মন খারাপের
রূপকথারা আধো নীল আধো ঘুমে ডুবে আছে,
অপূর্ব এক অন্ধকারে! নিবিড় ছায়ায় নিজের স্বপ্নের
মাঝখানে, মাস-সন-তারিখ বোনে মৌন চোখের জল।

৬.

“নদীয়া কিনারে মোরা দেশ, আও ঘনশ্যাম”,
বর্ষণে বর্ষণে কেটে যায় বিপ্রতীপ যৌবন।
গ্রীন লাইট, রেড এলার্টে,
অতীতের আঁচড়ে, জমা হয়
ভিজে কস্তুরীঘৃত।
হরিণটার নকশা কাটা শিঙে, লেগে থাকে
পুঁই শাকের তাজা রক্ত!
ধূর্ত শিকারীর তৃপ্ত আশ্লেষে একদিন ঠিক
লেখা হবে, চকচকে রোদের কথামালা।

৭.

সমাজবদ্ধ একটা উঠোনে গর্ভকালের
স্বার্থ হিংসা লোভ অথবা মিথ্যে একটা
সম্পর্কের এপিটোম! শখের নৈকট্যে
অটুট শরীরে পিছলে গিয়ে ধ্বংস আর
দীর্ঘ্য চ্যুতির মাঝে ক্লান্তিকর এক অনুবর্তন।
ভিড়, শুধু মৃতদের ভিড়ে
এক আধলা পৃথিবীর কোটরে,
জমা দ্বৈরথে আমিই রাজেশ্বর!

৮.

ঘড়িতে তখন প্রায় রাত দেড়টা!
মাঘী পূর্ণিমা থেকে সরে আসা চাঁদে
গ্রহণ লেগেছে মুহূর্তের।
অলৌকিক চলনে মাইনাস বিহীন ভালোবাসা
কাগজের নৌকায় নিয়ত অথবা অনিয়ত বাড়ে।
দৃশ্যটার পেটের ভেতর স্যাধানো লাউডগা ক্যানভাসে
তখন তুমি-আমি বাঁধা পড়ে গেছি, অনন্ত
এক পর্ণমোচী মায়াজালে!

৯.

সুচারু লম্পট আজকাল আর তেমন প্রায়
চোখেই পড়ে না। কতগুলো বোকা বোকা লোক!
সোশ্যাল মিডিয়ার অনন্ত মায়াজালে হারিয়ে ফেলেছে
নিজেকে। মেঘলাদিনের চৌম্বকক্ষেত্রে প্রেমের
মায়াময় বিহঙ্গ তৈরী করে,
তাকে ছিঁড়ে জুড়ে নতুন
রেখাচিত্র তৈরী করতে জানে কজন?
বিষাক্ত ভালোবাসার নামে
এ যেন অদ্ভুত এক দ্বিচারিতা!

Post a Comment

2 Comments

  1. সুচারু লম্পট আজকাল আর প্রায় চোখেই পড়েনা। দারুন দারুণ। সুচারুতা কোথায় আর? মোটা দাগের ভিড়ে হারিয়ে গেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Saswata BoseJune 20, 2025

      সেই লাম্পট্য এও কোয়ালিটি এখন তলানিতে

      Delete