জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা
কমলিকা ভট্টাচার্য 


সময়ের বুকে...

এক অদ্ভুত ভালো লাগা আমাকে গ্রাস করছে
শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বুকের ভিতর টেনে ভরে নিচ্ছি তোমাকে।
তোমার অনুপস্থিতিতেও
শিরা-উপশিরায় চাঞ্চল্য,
আয়নায় তাকালে একটা
সুন্দর মুখ দেখছি
উজ্জ্বল।
আবার সাজতে ইচ্ছা করছে।

বিকেলে বারান্দায় চুল খুলে দাঁড়াই,
সমুদ্রের নোনা হাওয়ায় জট পড়ে যাওয়ার ভয় পাই না আর।
লিলি আর বেলফুলের মিষ্টি গন্ধ ছোঁয় আমায়,
ঠিক তোমাকে না ছুঁয়ে পাওয়ার মতো।

দুটো হাত পরস্পরকে ছুঁতে চায়,
মাঝখানে সত্যিই দূরত্ব নেই,
তবু পেরিয়ে যাওয়া যায় না।

পিছন ফিরে দেখি শাড়ির আঁচলে বাঁধা আরতি-আগুনের তাপ,
দূর থেকে আবছায়া নিভন্ত আলোয় তোমাকে চলে যেতে দেখি।
আমি ডাকি নাম ধরে,
তুমি পিছন ফিরে তাকাও না।
আমার অভিমান মূল্যহীন ধুলোয় ঝরে পড়ে।

এক রাশ সান্ত্বনা আমার মনকে আগলে বলে—
"যে নাম বলিসনি তাকে,
সেই নামে কি কেউ তাকে ডাকে?"

আমার অভিমান ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়,
আকাশের দিকে তাকিয়ে জানায়—
বুক পেতে সবাই জড়ায়,
কিন্তু সত্যি বুকে জায়গা দেয় সময়।

🍂

স্বপ্নের সমুদ্রঘূর্ণি


অসম্ভবের কুয়াশায় ঢাকি নিশ্চিত ফিকে রঙ,
অজানা নদীর স্রোতে গড়ে তুলি সম্ভাবনার বাঁধ,
দিনের শরীরে ভোর জড়িয়ে রাখে অবচেতন ঘুম,
সন্ধ্যার অর্ধেক চাঁদ জানে
আলোও কখনো ম্রিয়মাণ।

আমি কল্পনার ডানা দিই পরিযায়ী বাতাসে,
উড়ে যায় অজস্র বিন্দু
অপূর্ণ কবিতার ধুলো,
অন্ধ মহাদেশে ছায়াদের ভাষা শেখাই,
নীল জলে সবুজ স্বপ্ন গুলে জন্ম দিই নির্জন দ্বীপ।

সম্ভাবনার সাথে সম্ভাবনার গোপন সন্ধি হলে
স্বপ্নের সমুদ্রঘূর্ণি ছুঁয়ে যায় মাটি,
অন্তহীন কালরেখা ভেদ করে ধ্বংসস্তূপে জাগে নতুন আশা,
প্রাচীন শহরের বুকে শুরু হয় স্বপ্নের ভিত গাঁথা।



মনে মনে সহবাস

আর মনে করবো না! কিন্তু না!!
চারদিক জুড়ে শব্দের নিঃশ্বাস,
মন জুড়ে মুগ্ধতার ফাঁস—
সেদিনের মনে-মনে সহবাস।

হঠাৎ যেন শুরু বৃষ্টি,
শরতের মেঘ, কাশফুলের বনে,
একঘেয়ে মাথা ব্যথা চনমনে—
নিমেষেই উভে গেল সব, তোমার চুম্বনে।

আরম্ভ হলো মনে যাতায়াত অহরহ,
সাজানো জীবনে জায়গার অভাব,
লুকিয়ে মন নিয়ে ছিনিমিনি—
এই যে তার স্বভাব।

কি করে লিখব বল,
কবিতায় সেই ভাব?
*********************

একবার কি বলতে পারো?
   কমলিকা ভট্টাচার্য

একবার কি বলতে পারো?
তুমিও একটা মানুষ, চেয়ার-টেবিল নয়,
নয়তো কোনো জড়।
চোখের কোণে নোনা জলের নীড় গড়ে,
কি করে বাঁচবে শোকেসের পুতুল ঘরে?

একবার কি বলতে পারো?
সঙ্গে ছিলে, সঙ্গে আছো, থাকবে আগলে,
কেনা সুখ থাক জমা সব মাস্তুলে।
কিছু সময় বুক ভরে শ্বাস,
নীল আকাশের তলে।

একবার কি বলতে পারো?
চুলোয় যাক সব কাজ,
মুছে কপালের ভাঁজ,
ফেলে সব পিছুটান—
আমার রানী সাজ।

একবার কি বলতে পারো?
কেন মিছিমিছি অভিমান করো?
তবে রাগলে তোমায় মিষ্টি দেখায় বড়,
আমার মনে যে তুমি,
সব সময়ই আদর হয়ে ঝরো।

একবার কি বলতে পারো?
সব তর্ক দাও ছুঁড়ে ফেলে,
আজ গভীর আলিঙ্গনের আশা।
চোখের মণিতে জেগে চেনা ভালোবাসা,
শব্দ নয়, স্পর্শই হোক আজ ব্যাখ্যার ভাষা।

একবার কি বলতে পারো?
দিনের শেষে, কোলাহল থামলে,
আকাশে তারাদের গল্প জমলে—
তুমিও শুনবে মুগ্ধ হয়ে,
আমি গপ্পো শোনালে।

একবার কি বলতে পারো?
ছিল প্রেম যত,
আজও আছে,  ঠিক আগের আগের মতো।


শিলাবৃষ্টি


সংসারের দহন যদি জ্বালায় আমায়
শিলাবৃষ্টির শীতলতায় পাই যেন তোমায়।
যদি কান্না লুকোয় মিশে বৃষ্টির জলে 
দিও আশ্রয় তোমার বিস্তৃত তরু তলে।

বিদ্যুৎ যখন মেঘের বুক করবে ফালাফালা,
তখনইতো তোমার ,আমাকে বুকে আগলে রাখার পালা।
বজ্রপাতে যখন হৃদয় উঠবে কেঁপে কেঁপে,
বাহুর বাঁধনে জড়িয়ে আমায় রেখো তুমি চেপে।

তোমার চোখে দেখি আমি ঝরা শ্রাবণের গান,
ভেজা বাতাসে মিশে যায় আমার আকুল প্রাণ।
তোমার স্পর্শে ঝরে পড়ে যখন জলকণা,
অধর ছুঁয়ে আসে মেঘের ঐ আমন্ত্রণা।

শিলাবৃষ্টির ঠান্ডা ফোঁটায় জাগে যত স্মৃতি,
তোমার ছোঁয়ার শিহরণে মনে জাগে ভীতি।
তোমার কল্পনায় রচি আমার হাতে সৃষ্টি,
শিলাবৃষ্টিতে গাঁথি প্রেমের গোপন দৃষ্টি।

যদি ঝরো তবে এসো আমার আঙিনায়,
তোমার হাত রাখো আমার হাতের মেলায়।
বৃষ্টির ফোঁটায় লিখবো প্রেমের ছন্দ,
তুমিই হবে আমার বর্ষার আনন্দ।

তোমার ভালো লাগে বৃষ্টি,
আমার কাছে তুমিই যে বড় মিষ্টি
তাহলে এসো এই শিলাবৃষ্টির রাতে,
হারাই দু’জনে এক প্রেমময় অপেক্ষার প্রভাতে।


প্রত্যাখ্যান

আসার পথে যখন 
হয়ে ছিল দেখা
চোখ নামিয়ে গেলে চলে
খুঁজে পেতে চাও সেই কথা আজ
সেদিন যে কথা যাওনি বলে।

সেদিন ভোরের ছাদের কার্নিশে রোদ্দুর
দুটো শালিকের ঠোঁটে ঠোঁট
আমার বালিশ ভিজে জলে
হোঁচট বাঁচিয়ে লেগেছিল মনে চোট।

আজ ফিরে পেতে সেই সুখ
ফাগুনের গুণে মরিয়া
পলাশের রঙে ক্ষতের রং
ডুবে ছিল প্রেম মাঝ দরিয়া।

সেদিনের গ্রহণের ছিল আমন্ত্রণ
আয়ুর চনমনে অধীর টান
যোগ্য বিচারে হারিয়েছে সময়
আজ প্রত্যাখানেই বেঁচে থাকার অভিমান।।

Post a Comment

2 Comments

  1. বৃষ্টি যেমন আকণ্ঠ তৃপ্তি দেয়, ভালোবাসাও তেমনই মন ছুঁয়ে থাকে। কেউ যদি কোন নামে ডাকে তখনই আবির রাঙা মন। এ কবিতা গুচ্ছ প্রাপ্তি কারণ প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।

    সুদাস ভট্টাচার্য্য

    ReplyDelete
  2. কমলিকা ভট্টাচার্যMarch 27, 2025

    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete