মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব --১৬১
বেবী সাউ (কবি, গবেষক, ঝাড়গ্রাম)
ভাস্করব্রত পতি
'ধারালো ছুরির কাছে আমার সমস্ত উপাসনা তুলে ধরি
মৃদু নুপূরে বাজে শহরের চাঁদ মন্দিরের নকশা
নতজানু চোখ দেবী হয়ে ওঠে
কল্পিত ভুলের মাশুলে জেগে ওঠে দলমার ছায়াচিত্র নিপুণ কৌশল জানে সীমাবদ্ধ উৎসবে কীভাবে মেশাতে হয় নুন দাগ'!
-- 'শিল্পী', বেবী সাউ।
তিনি গ্রামের মেয়ে। গ্রামের মেঠোপথে আদুল গায়ে ঘুরে বেড়ানো শৈশবের জারকরসে জারিত তিনি। শহরের ইট কাঠ পাথরের বৈভবে হয়তো আজ তাঁকে অভিযোজিত হতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর মননে স্মরণে চিন্তনে শোভিত হয় গ্রামের কুড়চি, মহুল, শালের ফুল। তাঁর কবিস্বত্বা আর ক্ষেত্রসমীক্ষকের সুডৌল ভাবনায় সাদা কাগজের ওপর কলমের আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হয়ে প্রাণ পায় গাঁয়ের মানুষের চিরন্তন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য --
'মুই থিনু রাজকুমারী মাগো
রাজকুমারীর গাঁঠিয়া তাড় মাগো
কে ছাড়াইলা মমতা ক্রোড় মাগো
ডাকি নিঅ মোকে ক্রোড়কু নিঅ মাগো
ক্ষীর ভাঙি ক্ষীর মুহুকে দিঅ মাগো
গাঁ ভিতরে ডাকে সুয়ারি মাগো
সুয়ারি ভিতরে জ্বলুছি দীপ মাগো
দীপ নিভাইতে মমতা গেলা মাগো
কোন দেবতাকু স্মরণা করল মাগো
ঝাড়গ্রামের শাল জঙ্গলে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কবি বেবী সাউ
গ্রামকে তিনি ভালোবাসেন। তাই গ্রামের সহজ সরল নির্যাস তাঁকে দারুনভাবে টানে। গ্রামের পরিবেশের মোহময়ী রূপের শীতল স্নিগ্ধতা আর একাত্মবোধে নিমগ্ন গেঁয়ো মানুষের প্রতি মানুষের অমোঘ টান, ভালোবাসা, নিবিড় সম্পর্ক, চুলোচুলি, ঝগড়া থেকে শুরু করে পশুপাখিদের মধ্যেকার প্রেম, বিরহ, রাগ, অনুরাগ সবকিছুই অনুভব করা যায় বাংলার এইসব গ্রামগুলিতেই। ড. বেবী সাউয়ের কবিমনে তাই প্রাধান্য পায় গাঁয়ের রূপ। গাঁয়ের সৌন্দর্য। গাঁয়ের লালিত্য।
'কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত' (২০১৮)
কবিতাই তাঁর কাছে অন্যতম ভালোবাসা। ইচ্ছে হলেই কবিতা লেখেন। পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে চান কবিতার উপঢৌকনে। কিন্তু এ পর্যন্ত কতগুলি কবিতা লিখেছেন, তাঁর হিসাব তিনি রাখতে চাননা। তাঁর কাছে কবিতা হল জানালার মতো। মানুষ কতবার জানালা খোলে আর বন্ধ করে -- তার হিসেব কি কেউ রাখে? তিনিও তাই হিসেব রাখেননা। মানুষ নিজেকে তো সারাদিনে কতবার দেখতে পায়। তার কোনও হিসেব থাকেনা। অন্যদের চোখে হয়তো ধরা পড়েনা নিজের মুখাবয়ব। কিন্তু নিজেকে দেখা কেউ কখনও থামায়না। তাই কবিতার মধ্যেই নিজেকে সবসময় দেখতে ভালোবাসেন এই আধুনিক কবি।
'রুটি ও বর্ণমালা দেখলেই তোমার বিষণ্ণ মুখ নড়েচড়ে ওঠে
প্রকৃত সত্যের খোঁজ কখনোই ফুরাবে না জেনে সবটুকু দরজা হাট করে খুলে রাখো
তুমি শীতল মেঝেতে কান পেতে শোনো গোপন সংকেত চুপচাপ হেঁটে যায় হরিধ্বনি,
কয়েন ছড়ায় চোখ বন্ধ করতে করতে এরকম শিহরিত দৃশ্য বারবার মৃত্যুকে ঘোষণা করে...'।
কবি বেবী সাউয়ের জন্ম ১৯৮৯ এর ২৯ শে অক্টোবর ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের পাইকাম্বি গ্রামে। মেদিনীপুরের সুযোগ্যা কন্যা সন্তান। তবে এখন কর্মসূত্রে থাকেন জামশেদপুরে। গ্রামের বাড়িতে এখনও আছেন আত্মীয়রা। বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ২০২৫ এ রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ষাট দশকের কবিতা ও মনীন্দ্র গুপ্ত' বিষয়ে গবেষণা করে পেয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি। বর্তমানে আমেরিকার নিউ জার্সি শহরের 'সাউথ এশিয়া জার্নালে'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং জামশেদপুর আকাশবাণীতে কর্মরত। তবে তাঁর আসল পরিচয়, তিনি বাংলা ভাষার এক অন্যতম বলীষ্ঠ কবি।
গ্রামের আনাচে কানাচে বেজে ওঠা ঝুমুরের সুর, সন্ধ্যের আকাশ ভরা কীর্তনের মূর্ছনা আর বারো মাসের তেরো পার্বণের আনন্দ লেগেই থাকে গ্রামে। সেইসব থেকে রসদ সংগ্রহ করে বিকশিত করেন নিজেকে। প্লাবিত করেন নিজের কবিমনকে। গ্রামের মানুষের লুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কাঁদনাগীতের ভাষায় ভাসিয়ে দেন নিজেকে। নারীদের অশ্রু নদীকে বহমানতা দিতে বৃহত্তর পরিসরে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন 'কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত' (সৃষ্টিসুখ ২০১৮)। দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার এই লুপ্তপ্রায় লোকগান নিয়ে তাঁর গবেষণাসমৃদ্ধ প্রবন্ধগ্রন্থটি এক অত্যন্ত পরিশ্রমনিষ্ঠ কাজ। এছাড়াও আরও দুটি প্রবন্ধের বই 'সঙ্গোপনে ব্যক্তিগত' (প্রতিভাস ২০২০) ও 'উড়োচিঠির জার্নাল' (সৃষ্টিসুখ ২০২২) লিখেছেন তিনি।
ওড়িশা সীমান্তবর্তী মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত এলাকা সহ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, বালেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার এক অন্যতম লুপ্তপ্রায় লোকসঙ্গীত 'কাঁদনাগীত'কে জনসমক্ষে তুলে ধরার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি।
'মার মতন যতন কে নিবে গো এ কাকি
সবু নোক আসি মা কি ডাকে গো কাকি
এতবা মা বলি কাকে ডাকিমু গো কাকি
মা নাই মোর কুয়া উড়ি গেলা গো কাকি
সাতসকালু কাঁদেটে মন গো কাকি
মা ছাড়ি গেলা বালুত কালরু গো এ কাকি
মা নাই কথা কে শুনিবে গো এ কাকি
সেই কাঁদনাগীত সম্পর্কে ড. বেবী সাউয়ের কথায়, 'কাঁদনাগীত একটা স্বতন্ত্র আবেদন। সম্পূর্ণভাবে জীবনাশ্রয়ী এই গানগুলিতে নারী সমাজের নির্যাতিত করুণ অবস্থানটি ফুটে উঠেছে। কাঁদনাগীতিগুলির গহন গহ্বরে ঢুঁ দিলে দেখা যাবে নারীদের প্রেম, যন্ত্রণা, হাহাকার, বিরহ, অভিযোগ, মান অভিমান, আর্তি বিরহ, বেদনাভর্তি হৃদয়ের কথা বড়ো হয়ে উঠেছে। গানগুলির নিজস্ব কিছু টেক্সট আছে। গানগুলি দুঃখের অস্থিস্বরূপ। কিন্তু নগরায়ণ, বিশ্বায়নের ফলে গানগুলি আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মের নারীরা পরিবর্তনের ধারায় সংস্কৃতির কিছুটা গ্রহণ করলেও এই গানগুলি আজ বিলুপ্তির পথে'।
কবি যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী, তখন তাঁর ঠাকুমা তরণী সাউ মারা যান। আর কবি হারিয়ে ফেলেন তাঁর রূপকথার সাম্রাজ্য। রাক্ষস, খোক্ষস, ব্যাঙ্গমা, ব্যাঙ্গমী, সাতমহলা বাড়ি, আর দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা ঘোড়সওয়ার। যদিও তাঁর জীবনের বেশ বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তাঁর দাদু মহাদেব সাউ। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে অনেক বড় হয়ে উঠতে হয় সকলকেই। তিনিও হয়েছেন 'বড়'। ধীরে ধীরে স্কুল হোস্টেল কলেজের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে যায় ছোটোবেলার যাবতীয় অনুভব। এরপরই বাবার কথায় হুঁস ফেরে। সময় এগিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি। মৃতপ্রায় সংস্কৃতির (Moribund culture) এক বিপন্ন উদাহরণ দীর্ঘ ক্ষেত্রসমীক্ষায় তুলে ধরলেন দুই মলাটের মধ্যে। উঠে এলো মেদিনীপুরের এক Interpenetrative Folklore।
শুধু ক্ষেত্রসমীক্ষালব্ধ কাজে ব্যাপৃত নন তিনি। বাংলা ভাষার পাশাপাশি হিন্দি এবং ইংরেজিতেও নিয়মিত লেখালেখি এবং অনুবাদের কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি লিখে ফেলেছেন সতেরোটি কাব্যগ্রন্থ, তিনটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং তিনটি অনুবাদ গ্রন্থ। একাধারে কবি, অন্যদিকে গবেষক। ছোট থেকেই অনুরাগ কবিতার প্রতি। রান্টুয়া হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই গোপনে লিখতেন কবিতা। কিন্তু সেসব লুকিয়ে রাখতেন কোনও মলাটহীন ডায়েরির অন্দরমহলে। আসলে তখন তো ছাপানোর সুযোগ ছিল না। এত পত্র পত্রিকার সম্ভারও ছিল না। নিজের মনের খেয়ালখুশির জেরে লিখে গিয়েছেন কবিতা। অনেক পরে ২০১২ সালে ঝাড়খণ্ড থেকে প্রকাশিত 'দুটিপাতা' পত্রিকায় মা'কে নিয়ে লিখলেন প্রথম ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত কবিতা 'মা'। সেই শুরু। আর থামার সুযোগ নেই। এরপর থেকেই অনবরত লিখে চলা।
'আরও বিলম্বিত ঢঙে বোবা সেজে থাকো তুমি
অকালের মেঘ কেটে যাবে ভেবে রটন্তী মন্দিরে দাও তাজা জবাফুল বেলপাতা
ছিটকে ছিটকে আসে তার ফোঁপানো কান্নার সুর দুহাতেই চেপে ধরো কান শব্দ আয়াতের মানে
শিশুটি নাছোড় বড় শেষতক তোমাকেই পিতা ডেকে বসে
আর সেদিন তুমিও আত্মহত্যা শেখাও নিজেকে'। '।
-- 'সংশোধনাগার', বেবী সাউ।
কবি বেবী সাউ পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বাংলা অকাদেমি পুরস্কার। যা তাঁর কবি প্রতিভার প্রতি সঠিক মূল্যায়ন। এছাড়াও তিনি ১. এখন শান্তিনিকেতন পদ্য সম্মান (২০১৯), ২. মাসিক কৃত্তিবাস দীপক মজুমদার পুরস্কার (২০১৯), ৩. রাঢ় বনতলি রোদ্দুর সম্মান (২০২০), ৪. শব্দপথ যুব পুরস্কার (২০১৯), ৫. বইতরনী পুরস্কার (২০১৯), ৬. পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি তাপসী বসু স্মারক সম্মান(২০২০), ৭. সিংভূম রত্ন সম্মান (২০২০), ৮. শব্দরূপ সম্মান ২০২১, ৯. দশভুজা স্মারক সম্মান ২০২৩, ১০. সৃজন সম্মাননা, ২০২৩, ১১. মালীবুড়ো স্মারক সম্মান ২০২৩, ১২. সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ ইত্যাদি বেশকিছু সাহিত্য সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তাঁর কাব্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ।
বেবী সাউয়ের লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল : ১. বনঘাঘরা (প্রতিকথা ২০১৫), ২. ইউথেনেশিয়া (বইতরণী ২০১৭), ৩. গান লেখে লালনদুহিতা (আবহমান ২০১৮), ৪. ছয় মহলা বাড়ি (ভাষালিপি ২০১৮), ৫. একান্ন শরীরে ভাঙো (আদম ২০১৯), ৬. হেমন্তের অন্নপূর্ণা (প্রতিভাস ২০১৯), ৭. পিতৃপরিচয় (গুরুচণ্ডালী ২০২০), ৮. তুমি পুজো, পরমহংস (চৈতন্য প্রকাশনা, বাংলাদেশ ২০২১), ৯. ছায়াপথের পরিযায়ী (সিগনেট, আনন্দ পাবলিশার্স, ২০২২), ১০. বাবুঘাটের লাইব্রেরি (বান্ধবনগর ২০২২), ১১.শীত ও সহোদরা (নভেম্বর, ২০২২, হাওয়াকল), ১২. হ্যাঁ জল, তোমার কথা লিখি, স্রোত প্রকাশনা, ত্রিপুরা, ২০২৩), ১৩. মণিপদ্মে লেখা, শহরতলি প্রকাশনা, (আগস্ট ২০২৩), ১৪. আমাকে কাশ্মীর ভেবে (প্রতিভাস, কলকাতা বইমেলা ২০২৪), ১৫. বিধিনির্ধারিত (কবি প্রকাশনা, একুশে বইমেলা, বাংলাদেশ, ২০২৪), ১৬. কাঠের চশমা (আলোপৃথিবী প্রকাশনা, কলকাতা বইমেলা ২০২৫), ১৭. দুখজাগানিয়া, (আগামী বাংলা প্রকাশনা, কলকাতা বইমেলা ২০২৫) ইত্যাদি।
বিদেশী ভাষার কবি বেক সিওক, থিক নাত হান এবং ইবনে আরাবির কবিতা অনুবাদ করেছেন বাংলায়। তিনি যেসব অনুবাদের বই লিখেছেন, সেগুলি হল : ১. বেক সিওকের কবিতা (সৃজন ২০২০), ২. থিক নাত হান-এর কবিতা (সোপান, কলকাতা বইমেলা ২০২৩), ৩. ইবনে আরবির কবিতা (স্টুডেন্ট ওয়েজ, বাংলাদেশ, ২০২৩) এবং ৪. নারী সমকালীন হিন্দি কবিতা (সৃষ্টিসুখ, কলকাতা বইমেলা ২০২৫)। সম্প্রতি তিনি ১০০ বছরের বাংলা নারীদের কবিতার হিন্দি অনুবাদ 'সমকালীন বাংলা কবিতা' নামে একান্নজন কবির কবিতা অনুবাদ করেছেন। যেখানে রাজলক্ষ্মী দেবী থেকে এখনকার প্রজন্মের নারীদের বাংলা কবিতার হিন্দি অনুবাদ করেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো ছাপার অক্ষরে সারা ভারতের পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন।
তাঁর কবিতা অনুবাদ হয়েছে অসমিয়া, ওড়িয়া, হিন্দি, ইংরেজি, গ্রীক, রুশ এবং আরবি ভাষায়। এই কৃতিত্ব সত্যিই অপরিসীম। তিনি নিজেও বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় নিয়মিত অনুবাদ করেন। বাংলা, ওড়িয়া, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি সহ আরও বেশকিছু বিদেশী ভাষায় পারদর্শী তিনি। ফলে বিভিন্ন ভাষা থেকে নিয়মিত বাংলা এবং হিন্দিতে অনুবাদ করেন অসংখ্য লেখা। উপহার দেন পাঠকের দরবারে। 'নব উজ্জ্বলনীলমণি' (কথকথা, কলকাতা বইমেলা ২০২৫) নামে একটি উপন্যাসও লিখে ফেলেছেন। এই মুহূর্তে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বহু কবিতার ম্যাগাজিন এবং সংকলনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর কবিতা।
নিবিড় কবিতাচর্চায় তাঁর পরিচয় এবং কর্মযোগ আজ আর কারও অজানা নয়। ইতিমধ্যে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের উড়ান টিভি, ট্রাভেলটক টিভি চ্যানেল ছাড়াও গ্রীস, রোমের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কবিতা সম্মেলনে। তাছাড়া সাহিত্য আকাদেমি, কলকাতা ইউনিভার্সিটি (দু'বার), মেদিনীপুর কলেজ, আনন্দ পাবলিশার্স কবিতা সন্ধ্যা, কবিতা কর্নার, বাংলা আকাদেমি, সাহিত্য আকাদেমি, কবিতা একাডেমি কবিতা উৎসব, দে'জ সুবর্ণ জয়ন্তী কবিতা উৎসব, কৃত্তিবাস কবিতা উৎসব, কলকাতা বইমেলায় গিল্ড প্রকাশনার কবিতা বিষয়ক আলোচনা, কবিতা পাঠ এবং Chair Poetry Evenings এর মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে মেদিনীপুর কলেজ, খেজুরী কলেজ, সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন নিয়মিত। বেবী সাউ সম্পাদিত পত্রিকাগুলির মধ্যে ১. আবহমান (মুদ্রিত এবং ওয়েব ম্যাগাজিন), ২. সাউথ এশিয়া জার্নাল, নিউ জার্সি, আমেরিকা (ইংরেজি), ৩. রাঢ় বনতলি সংখ্যা ২০২৩, ৪. সমকালীন বাংলা কবিতা (সদানীরা পত্রিকা)- সংখ্যা ২০২৩ এবং ৪. Verseville Magazine 2024 উল্লেখযোগ্য।
কবিতার 'কথা'ই তাঁর প্রাণ। লালমাটির জেলার সুবর্ণরেখার পাড়ের পাইকাম্বি গ্রামের বুক থেকে যে কথা বলতে শিখেছেন, লিখতে শিখেছেন, অনুভব করতে শিখেছেন সেই কথা চাগিয়ে রেখেছেন, জাগিয়ে রেখেছেন এবং বাগিয়ে রেখেছেন অন্তরে, অনুভবে আর হৃদয়ের অন্দরে। তাই তিনি বলতে পারেন, 'কথা ফুরালেও কিন্তু আমার পথ কখনও ফুরায় না। চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ি সাকচি মার্কেটে। বিষ্টুপুরের গোপাল ময়দানে। আলো আঁধারি মেশা নভেরাম হোটেলের চাউমিনে। পথ এখানে বিস্তৃত। পথ এখানে মায়াবী। গভীর, ঋজু, কালো কোবরার মত বিষাক্ত, ভয়ার্ত, অথচ রহস্যময়ী। এই পথ আমাকে টানে। পথের দৃশ্য, তার চারপাশের ফেলে রাখা বিস্কুটের প্যাকেট, জলের মোচড়ানো বোতল, ভাঙা চশমার কাচ... ছেঁড়া চপ্পল, পানের থুতু, কফের দাগ... কেমন যেন এক অস্তিত্বের সম্মুখীন করে তোলে। আর আমি হাঁটি। আর পরবর্তীকালের পাদটীকার মত জুড়ে ফেলি নিজেকে'।
এই হাঁটতে হাঁটতে তিনি খুঁজে পান নিজের জন্মভূমিকে। নিজের শৈশবকে। নিজের অন্তররাত্মাকে। নিজের চোখে দেখা দারিদ্র্য, নারীশিক্ষার অভাব, পণপ্রথা, শ্বশুর বাড়িতে নারী নির্যাতনের চিত্র তাঁর কুসুম কোমল কবিমনকে আলোড়িত করে। সেইসব দুর্দশাময় জীবনের কাহিনি আর অচিনপুরের গহিন অরণ্যে নিজের উড়ুক্কু মনের দেদার হারিয়ে যাওয়ার অমোঘ পরিণতিই হল তাঁর কবিতা লেখার চাবিকাঠি --
'আমি এ বিশ্বের চোখে চোখ রেখে দেখেছি সাহস
কে তোমায় রুখে দেবে, কে জানাবে অহিফেন নয় তো এমন
যে জানে বিষের নীল কীভাবে যে ডেকে তোলে জীবন অলস
তাকেও দুহাতে চাই, যেভাবে শিবের চোখে জাগে ত্রিনয়ন।
মন, যেন চতুর্দিক, মনের ভিতরে ডুবে রয়েছ পাহাড়
সে পাহাড়ে কত ভাঁজ, কত যে ক্রিভার্স, তাকে জানি না
ঈশ্বর
জেনেছি শুধুই তুমি প্রতিবিম্ব, ভেসে যাও যেখানে আঁধার আমার আলোর কথা আমাকেই বেছে দেয়্য উলু আর খড়।
মনের ভিতরে মন, তারও কাছে রয়ে গেছে কে তোমার মন
আমি কি তোমার কাছে রয়ে গেছি? জন্ম যার আমারই দর্পণ?'
-- 'ঘুংঘুর', বেবী সাউ।
🍂
6 Comments
প্রিয় কবি, গবেষক। আশ্চর্য মেধাবী ও আলোয় ভরা কলমের অধিকারিণী। সাহিত্য জগতের সম্পদ... অনেক শুভেচ্ছা কবিকে 🙏
ReplyDeleteধন্যবাদ আপনাকে
Deleteঅনেক কিছু জানা গেল।
ReplyDeleteধন্যবাদ আপনাকে
Deleteপড়ে ঋদ্ধ হলাম কবি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম ধন্যবাদ লেখক কে
ReplyDeleteখুব ভাল প্রতিবেদন।। কবি বেবী সাউকে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ
ReplyDelete