জ্বলদর্চি

বিলুপ্তির পথে চষা মাটির সোঁদা গন্ধ / সুব্রত মাইতি

বিলুপ্তির পথে চষা মাটির সোঁদা গন্ধ 

 সুব্রত মাইতি

   দাদুদের লাঙল দিয়ে জমি চাষ করতে দেখেছি।আমন আবাদ ধান রোপন নয় ধান বপন।খনার বচন বা লোক মুখে শুনেছি " জ্যৈষ্ঠের বার যত বুনতে পার" অর্থাৎ ধান বপনের জন্য লোক মুখে প্রচলিত ছিল,আজ তা ইতিহাস। চাহিদার বদল ঘটেছে, বদল ঘটেছে চাষ আবাদের পদ্ধতি। যান্ত্রিক জীবনে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাষ আবাদের পরিবর্তন এল।এল যন্ত্রের যন্ত্রণা। ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলারের মাধ্যমে লাঙ্গল শুরু হল।বৃষ্টির ওপর ভরসা না করে ভূগর্ভস্থ জলকে চাষের কাজে লাগানো শুরু। তার সাথে রাসায়নিক সার কীটনাশকের দাপট,তাও মানিয়ে নিলাম আমরা কিছুটা সহ্য করতে বাধ্য হল প্রকৃতি মা।জমির ভূমিরূপে বদল ও জমির বন্ধু পোকা কেঁচো আস্তে আস্তে হারাতে আরম্ভ করলাম।

    চাষের সমস্ত কাজকর্ম হত চাষি ভাইদের পারস্পরিক বদল খাটার মাধ্যমে। তবে মানুষ মুনাফা অর্জনের অতিরিক্ত লোভ আর প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা হেতু চাষিরা আরও যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ল।মাঠের ফসল কাটা সব হারভেস্টার দিয়ে শুরু হল। আর এখন তা মাঠের নব্বই ভাগ জমি এই যন্ত্রের সাহায্যে কাটা হচ্ছে।তারপর কাটা খড়গুলোকে নিরদ্বিধায় আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। 

     এমন এক সময়ে এসে উপস্থিত আমরা প্রকৃতি মা পুড়ে ছারখার। সারা মাঠ পুড়ছে বললে ভুল হবে না।এই আগুনের শিখায় জমির মাটি ইটে পরিনত হচ্ছে। পরিবেশ ও জমি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। প্রসাশনিক ভাবে ও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা ভাবে সর্তক করলেও আমাদের হুঁশ নেই। একটা দিকে হুঁশ মুনাফা আর মুনাফা। 

🍂
ad

   ছোট বেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়েছি" বাতাস ওঠে ভরে ভরে চষা মাটির গন্ধে"। তা পরতে পরতে অনুভব করেছি শুকনো জমিতে জল দিয়ে ভেজানো হলে কী সুন্দর চষা মাটির সোঁদা গন্ধ পেতাম।সেই জমিতে কত পোকা মাকড়, আর সেই পোকামাকড় খেতে কত রকমের পাখি আসত।মনের সুখে পোকামাকড় খুঁটে খুঁটে খেত।এখন তা প্রায় হারানোর পথে। এখন জমিতে জল দিয়ে ভেজানো হলে সোঁদা গন্ধ নেই, পাখির কলতান নেই শুধু পোড়া পোড়া গন্ধ।আমরা জেনে ও না জানার ভান করে চলছি।এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চাষযোগ্য জমি থাকবে না।খাদ্য সংকট দেখা দেবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবেই।ফিরিয়ে আনতে হবে চষা মাটির সোঁদা গন্ধ।

Post a Comment

0 Comments