তারাশংকর দে
রবীন্দ্রনাথের প্রতি
তুমি চলে গেলে — তবু থেকে গেলে,
আলোয়, বাতাসে, বাঙলার কুসুমে;
তোমার গান আজও বাজে সন্ধ্যা-নদীর ধ্বনিতে,
আকাশের সুরে, কোকিলের ছন্দে।
তোমার কলমে ছিল শালবনের গন্ধ,
আকাশের রং, আর মানবের প্রাণের অভিব্যক্তি।
তুমি বৃষ্টি দেখেছ ভিন্ন চোখে,
তোমার কবিতায় কেঁদেছে ঋতুরা।
তুমি যেখানেই গেছো, ছুঁয়েছো হৃদয়,
নীরবতায় দিয়েছো ভাষা —
তাই আজ, শত বছর পরে,
আমরা তোমাকেই খুঁজি প্রতিটি পঙক্তির ভিতরে।
তুমি চিরকালীন —
যেমন সন্ধ্যায় উঠে দাঁড়ায় ধূপ-আলো,
যেমন শিশুর হাসিতে লুকিয়ে থাকে জন্মদিনের প্রার্থনা।
তুমি আমাদের স্মৃতির সারস,
অতীতের আকাশে এখনো ওড়ো —
নতুন প্রজন্মের স্বপ্নে গেয়ে যাও,
"আমার সোনার বাংলা… আমি তোমায় ভালোবাসি।"
ঘোর কলির জয়
ঈশ্বর, তুমিও একচোখা হতে পারো,
ভেবেছিলাম তুমি ন্যায়, এখন দেখি পারো,
যার হাতে টাকা, তারই মুখে হাসি,
গরিবের কান্না যেন বাতাসে যায় ভাসি।
ভক্তি নেই, আছে ব্যবসা, পূজার নামে হাট,
ভগবানও যেন এখন করেন সেলস টার্গেট পাত।
ধর্ম বইছে ট্রেনের মতো, গন্তব্য অনিশ্চিত,
চালক মোরা নয়, টিকিট কাটা রাজনীতি।
সত্য বলে চেঁচালে হয় অপমান,
মিথ্যে বললেই মেলে সম্মান।
ধর্মগ্রন্থের পাতায় জ্বলছে বিজ্ঞাপন,
নিষ্ঠার চেয়ে জরুরি এখন ব্যাঙ্ক ব্যালান্স।
যুদ্ধ হয় এখন লাইকের ভিড়ে,
মহাভারত নয়, ইনস্টার স্ক্রিপ্টে ফিরে।
মন্ত্র নয়, ভাইরাল চায় সবাই,
ঈশ্বরও বুঝি আজ ফলোয়ার খুঁজে থাকি।
জয় হোক! জয় হোক কলির,
সত্য পথহীন, মিথ্যে আজ গলার মালা।
ঈশ্বর, যদি দেখছো সবই,
তবে চুপ কেন? কে দেবে এই উত্তরটা কবি?
🍂
প্রতীক্ষার প্রাচীন সিঁড়ি
বন্ধু এসো, খোলা দ্বার শুধুই প্রহর গোনে —
সময় থেমে থাকে, দেয়ালে কেবল ছায়ার লেপ্টে থাকা।
একটা দীর্ঘশ্বাস রোজ এসে বসে দালানে।
জানালার কাচে জমে থাকে কুয়াশার চিঠি,
যেন তুমি লিখে গেছো — কিন্তু পাঠাও নি।
বাতাস শুধু নাম নেয় অচেনা গলায়।
এক এক করে ফুরোয় দিনের পাতাগুলো,
মোমবাতির শিখায় গলে যায় সন্ধের মুখ।
এই সিঁড়ি জানে, কতোবার পা ফেলেছ তুমি,
কতোবার ফিরেছও — নিঃশব্দে।
দরজার ওপারে আজও দোল খায়
ফিরে আসার অসমাপ্ত গল্প।
তবু কেউ নেই।
শুধু আমি, আর এই পুরোনো উঠোন,
যেখানে প্রতিটি ইট জানে তোমার অনুপস্থিতি।
বন্ধু, এসো —
এসো, অন্তত শেষবার —
1 Comments
ভালো লাগলো
ReplyDelete