জ্বলদর্চি

যে গল্পের শেষ হয়নি /পুলক কান্তি কর

 চিত্র- শুভম দাস 

যে গল্পের শেষ হয়নি

পুলক কান্তি কর

'পরিমলদা, ভাগ্যিস আপনার সাথে আমার আলাপটা হয়েছিল, নইলে এমন অসাধারণ সব প্লট আমি পেতাম কোথা থেকে?’ খুব আন্তরিকভাবে কথাগুলো বললেন অর্ধেন্দু মুখার্জী। নামী সিনেমা পরিচালক। বাংলায় অনেকগুলো সফল ছবি করার পর এখন বলিউডের দিকে নজর। সেই উপলক্ষ্যে আজ পরিমলের এই বাড়িতে আসা। একটু থেমে পরিমলের হাত দুটো চেপে তিনি আবার বললেন, 'রিয়েলি  থ্যাংকস দাদা, নাম তো আমারই হয়, কিন্তু আমি নিজে জানি এর বারো আনা কৃতিত্বই আপনার। আমি শুধু ক্যামেরার ভাষাতে আপনার কথাগুলো বলি।' 
-- নো মেনশন অর্ধেন্দু বাবু। আপনি যে মুখে স্বীকার করেছেন, এই আমার জন্য যথেষ্ট।
-- কিন্তু একটা কথা দাদা, এসব প্লট আপনি পান কোথা থেকে? ঠিক আগেকার দিনে বাসু ভট্টাচার্য বা হৃষিকেশ মুখার্জী যেমন ফিল্ম করতেন – সামান্য ঘটনা অথচ কী অসাধারণ প্রেজেন্টেশন – আপনারটা অনেকটাই তেমনি।


-- দেখুন অর্ধেন্দুবাবু, জীবনের বাইরে কি কোনও ঘটনা ঘটে? যেটা ঘটে না, সেটা অ্যাবসার্ড! বাকী আপনি ভেবে দেখুন, সম্পর্ক নিয়ে যদি বলেন – সেখানে হয় ভালোবাসা, নয় ঝগড়া, নয় বিচ্ছেদ। কখনও পূনর্মিলন, কখনও বা প্রতীক্ষা – এর বাইরে পৃথিবীতে কিছু আছে কী? সেই একই ঘটনাগুলোকে শুধু মাত্র আঙ্গিক ভেদে প্রকাশ করতে পারাটাই কলা। সবসময় যে সব কিছু ক্লিক করে, তা নয়। যে বেশীটা করতে পারে, সেই সফল।
-- এখন অবশ্য সম্পর্ক বাদ দিয়েও অনেক গল্প হচ্ছে, চলচ্চিত্রায়িত হচ্ছে। 
-- তা ঠিক নয়। সম্পর্ক ছাড়া কোন গল্প দাঁড়াতে পারে না। ওটা বাদ দিয়ে লেখা তখন  প্রবন্ধ নিবন্ধ হয়ে যায়। কোথাও হয়ত, সম্পর্কটা বেসলাইন, কোথাও হয়ত ওটাই প্রধান। ভেবে দেখুন, সম্পর্ক সব জায়গায় আছে।
-- সেটা ঠিক বলেছেন। যেমন আপনার গল্পগুলো। সম্পর্কের শেডস্ আছে, কিন্তু বড় আবছায়া সেখানে।  বহু জায়গায় রহস্যময়তা রেখে দেন, হয়ত ইঙ্গিত দেন, পরিষ্কার করে বলেন না কিছু।
--  অর্ধেন্দু বাবু ,আপনি খ্যাতনামা পরিচালক। আপনি নিজে বলুন তো , গল্প কখন হয়? যেটা সাধারণভাবে ঘটমান, তা আপনার পাবলিক খাবে?
-- না। কথাটা আপনি ঠিকই বলেছেন পরিমলদা। যেটা সাধারণত ঘটে থাকে, তা কখনোই গল্প নয়। সেভাবে বললে লোকে খাবে না।
--  শুধু এইটুকু নয়। অনেক সময় সাধারণত ঘটনাবহুল গল্পও মানুষ নেয় না – যদি সেটা প্রত্যাশিত পথে আসে বা ধরুন ওটা দেখতে দেখতে বা শুনতে শুনতে মানুষের অভ্যাস হয়ে যায়।
-- কী রকম?
--  যেমন ধরুন বাংলা এবং হিন্দি মুভির কয়েকটা যুগ ধরে একটাই কাঠামো ছিল, গরীবের ঘরের ছেলে, ধনী রাশভারী শ্বশুরের সুন্দরী মেয়ে। অতঃপর প্রেম, শেষে মিলন, খুব সামান্য ক্ষেত্রে বিরহ – তাও মৃত্যুর কারণে। অনেকে বৈচিত্র‍্য আনার জন্য হয়তো একটু আধটু চেঞ্জ করে পরিবেশন করতেন,  কিন্তু মূল বিষয়টা এক।
-- হ্যাঁ । বাংলায় প্রথম যুগে শ্বশুর ভদ্রলোক কিন্তু উদ্ধত এবং নাকউঁচু টাইপের হতেন। মাঝে ওই রোলটা ভিলেনের আওতায় চলে গেল।
🍂
ad

-- হ্যাঁ । হিন্দির প্রভাব।
-- তামিলও বলতে পারেন।
-- ঠিক বলেছেন অর্দ্ধেন্দুবাবু। ঠিক ক'বছর আগে আমাদের বাংলাতে এই তামিল ট্রেন্ডটাই চলছিল। শ্বশুর শালা ভিলেন – ওরা ছলে বলে কৌশলে নায়ক, যে কিনা গরীবের ছেলে – তাকে মারার চক্রান্ত করছে। নায়ক বিরাট শক্তিশালী । সে জ্যাকি চেনের মতো উড়ে উড়ে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে বা উল্টো ধোলাই দিচ্ছে। শেষমেষ অধর্মের পরাজয়, ধর্মের জয়। মধুরেম সমাপয়েৎ।
-- যা বলুন পরিমলদা, মানুষ কিন্তু এখনও এটা খায়। 
-- মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের এটা একটা ভার্চুয়াল অ্যাচিভমেন্ট বলতে পারেন। অবদমিত ইচ্ছেগুলোর নিদেনপক্ষে কল্পজগতে পূরণ। ওরা ওই ব্যাপারটায় নায়ককে রিপ্রেজেন্ট করে।
-- পরিমলদা, আপনার কোনও গল্পেই এই ধরনের নায়কোচিত বীরত্ব বা অতিমানুষিক ক্রিয়া-কলাপ নেই। শুনেছি আপনিও খুব অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন। আপনার কখনও এরকম স্বপ্নপূরণের স্বাদ হয়নি?
    পরিমল হাসলেন । কী যেন ছিল যেন জায়গাটা? নিমপুরা? কাগজেও বেরিয়েছিল ঘটনাটা। একটু উঁচু মতো একটা টিবির ওপর ছেলেটি বসেছিল। পাশেই তো ছিল বন্ধু কমল। বিকেল সবে মাত্র শেষ হয়েছে। দিগন্তে সূর্য পুরোটা দিগন্ত রেখায় ডুব দেয়নি তখনও, আকাশে পাখিদের ঘরে ফেরার স্বপ্নে নিজের কোনও স্বপ্নকে গুলিয়ে ফেলেছিল সে যখন – হঠাৎ পিঠে ধারালো কোন আঘাত – একটা নয় মুহূর্মুহূ – কী ছিল ওটা? তলোয়ার? বল্লম ? মুখ থুবড়ে ঢিবির তলাটায় এসে পড়েছিল যখন, একটুও জ্ঞান নেই ...
অর্ধেন্দু বললেন, ‘কী ভাবছেন পরিমল দা? প্লট?’
 -- হুঁ। হঠাৎ একটা গল্পের সিন মাথায় এল। কী জিজ্ঞাসা করছিলেন যেন?
--  থাক না। আপনি গল্পটা ভাবুন। আমি বরং এই ফাঁকে চা এর কথা বলে আসি ভেতরে।   
    পরিমল চুপ করে বসে রইলেন। ভাবনাটা কেটে গেল। জানালার কাছে উঠে গিয়ে দেখলেন, সন্ধে হয়ে গেছে। আকাশের চাঁদ উঠে গেছে। বোধ হয় পঞ্চমী আজ। কৃষ্ণা পঞ্চমী। পাশেই সার বেঁধে ধানের জমি। এই রকম অল্প চাঁদের আলোর মাঠ-ঘাটকে কেমন দেখায়, কে জানে? আজ বহু বছর গ্রাম ছাড়া। সেই সব ছোটবেলায় ধান খেতে পাহারা দিতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো টুকরো টুকরো মনে আসে। সব কেমন গোলমাল হয়ে যায় । নিমপুরায় সেই ধানি জমিগুলো আছে এখনও? না কি স্বর্ণালী স্বর্ণালী চতুর্ভূজের জালে সবকিছু কংক্রীটের গর্ভে গেছে?
    অর্ধেন্দু এসে বললেন, ‘ভাবলেন গল্পটা?’
-- নাঃ। রেশটা কেটে গেল।
-- আপনি একটা কাজ করুন না। এখনই তো নান্টু আসবে।
-- কোন নান্টু ? ক্যামেরাম্যান?
-- হ্যাঁ। ওর সাথে আপনার গল্পটা একটুখানি শেয়ার করি। ততক্ষণ আপনি ছাতে চলে যান। ওখানে গিয়ে প্লটটা ভাবুন – আপনি যত ভাববেন আমারই লাভ। হয়তো পরের মুভিটা ওটা নিয়েই হবে।
-- এই প্লটটা আপনার জন্য নয় অর্ধেন্দু বাবু। এ গল্প অন্যের।
-- আপনি কি আমার রাইভাল কারোর জন্যও গল্পের কন্ট্রাক্ট নিচ্ছেন নাকি। তাহলে কিন্তু ভেবে কাজ নেই। রসিকতা করলেন অর্ধেন্দুবাবু।
-- না না, অন্য কারুর জন্য মানে অন্য কোনও পরিচালকের জন্য নয়। 
-- হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম মশাই। তাহলে গল্পটা তো আমিই পেতে পারি।
-- না। এটা বড় চেনা ছকের গল্প। গরীর ঘরের ছেলে বড়লোক বাড়ির মেয়ে। কলেজের প্রেম। মেয়ে জোর করে ছেলের বাড়ীতে চলে এল।
-- এ তো উত্তম সুপ্রিয়ার সবরমতীর ছায়া।
-- না । সে ছায়া কেটে যাবে।
 -- তারপর?
-- তারপর ছেলে সমানে পরিস্থিতির কথা বোঝাতে থাকলো, মেয়ে বাজি হলো না। আত্মহত্যার ভয় দেখালো ।
-- শোলের ধর্মেন্দ্র। তবে মহিলা ভার্সন।
-- মেয়ের ভাই কিন্তু ওই এলাকায় মস্তান।
-- এবার তো পুরো তামিল! বাঃবাঃ। তারপর ?
-- তারপর আর কী? বাংলায় গল্প যখন মস্তানরা কিছুটা হলেও বাঙ্গালীদের মতো, মিচকে স্বভাবের হবে। বন্ধু সাজার ভান করে ছেলেটিকে বাড়ীতে ডাকবে, প্রতিশ্রুতি দেবে সবকিছু স্বাভাবিক করে দেওয়ায়। প্রিয় বোন বলে কথা।
-- কাহিনীতে একটা টুইস্ট দরকার এখানে।
-- হ্যাঁ। ঠিক বলেছেন। ছেলেটি হবু শালাদের ডাকে ওদের বাড়ী যাবে, গিয়ে দেখবে তালাবন্ধ। ওদের এক কমন বন্ধু থাকতো পাশাপাশি। তার ঘরে ছেলেটি যাবে অতঃপর। ও বড়লোকের ছেলে, হয়তো দেখানো যেতে পারে মেয়েটির প্রতি তারও দুর্বলতা ছিল। সে একটি ফোন লাগাবে, দুই শালা এসে উপস্থিত হবে। ছেলেটির সাথে মধুর সম্ভাষণ ও মিষ্টবাক্য প্রয়োগ করে গাড়ীতে চড়ে অনেকখানি দূরে একটা নির্জন ঢিবির কাছে যাবে। চারপাশে ধান খেত...।
 -- আপনি তো একদম সিনেমার বাধাঁগত ধরেই এগোচ্ছে পরিমলদা। তা ছেলেটি কি ফাইট দিতে পারবে, নাকি উত্তম-মধ্যম খেয়ে টেঁসে যাবে? 
-- এইটা আবার একটু ঋত্বিক ঘটক মার্কা হয়ে গেল অর্দ্ধেন্দুবাবু। সাধারণ গ্রামের চাষার ছেলে। তাই চাইনিস মারামারি ক্যারাটে কুম্ফু জানবে কী করে? সুতরাং তারপর পেছন থেকে অতর্কিত ধারালো অস্ত্রের আক্রমণ। মুখ থুবড়িয়ে নীচেই পড়ে যাবে সে।
-- ফিল্মটাও মুখ থুবড়ে পরল মনে হচ্ছে পরিমলদা। পুরো ব্যাপারটা হিন্দি সিনেমার মতোই এগোচ্ছিল এইখানটা এসে একটু রিয়ালেস্টিক আতঁলামি টাচ করলো। তা ছেলেটা কি টেঁসে যাবে? এখনকার দিনকাল খারাপ। এখন ব্যবসা মেগা মলে। ফলে এই গল্প আর পাবলিক খাবেনা পরিমলদা।
 -- ছেলেটি বেঁচে গেলে বুঝি খাবে?
    অর্দ্ধেন্দুবাবু অনেকক্ষণ ভেবে বললেন, ‘না পরিমল দা, এই গল্প সিনেমাটিক, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা আপনার উপযুক্ত নয়। আপনার সেই টাচটা কই?’
--  সেইটাই তো খুঁজছি  অর্দ্ধেন্দুবাবু। এই কথাই তো খানিক আগে বলছিলাম আপনাকে, ঘটনাটিতে যতই ঘাত প্রতিঘাত থাক, প্রেজেন্ট করা মুশকিল। মানুষের প্রত্যাশার চেনা ছকে ঘটনাটা ঘুরছে তো! এ কাহিনী আপনার জন্য নয়! 
    হঠাৎ যেন অর্দ্ধেন্দুবাবুকে কেউ ছ্যাঁকা দিল। বললেন, ‘কথাটার মধ্যে কোথাও একটা চ্যালেঞ্জ পেলাম পরিমল দা, আপনি যাই বলুন, এই ছবি আমি বানাবোই। নইলে কিসের বড় পরিচালক?’
-- আমি আপনাকে কোনও চ্যালেঞ্জ দিইনি অর্দ্ধেন্দুবাবু। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেই মনে করি কাহিনীটি বহুবার বহুভাবে বলা। আপনি মিছিমিছি রিস্ক নিতেই বা চাইছেন কেন?
-- আপনি বা মিছিমিছি গল্পটা নিয়ে ভাবছেন কেন?
-- এটা আমার বাধ্যতা। ঘটনাটা যখন মাথায় এসেছে তার শেষটুকু না করতে পেলে শান্তি পাইনা।
    হঠাৎ একটা কলিংবেলের আওয়াজে কথার তালটা কেটে গেল। অর্দ্ধেন্দুবাবু বললেন 'নান্টু এলো বোধ হয়'। একটু বাদে নান্টুই হাজির হল ড্রয়িংরুমে। 'কী ব্যাপার ! প্লট রেডি পরিমলদা?’
  অর্দ্ধেন্দুবাবু নিজে থেকেই উত্তর দিলেন, ‘ওই প্লট তো রেডি, দাদা নতুন একটা প্লট নিয়ে পড়েছেন – একটু সাবেকি, তবে কসমোপলিটন কমপ্লেক্স, টিন এজ লাভ, ফাইটিং ক্লাইম্যাক্স অ্যান্টিক্লাইমেক্স – সব মশলাই আছে।
  -- সে কী, দাদা আবার কমার্শিয়াল প্লট কবে লিখতে শুরু করলেন? নান্টু সকৌতুকে জিজ্ঞাসা করল। 
-- না, না! অর্দ্ধেন্দুবাবু মজা করছেন, আমি সিরিয়াসলি এরকম কোনও প্লট লিখিনি। 
    অর্দ্ধেন্দুবাবু সিরিয়াস গলায় বললেন ‘লেখেন নি তো কী হয়েছে? লিখবেন। এই ফিল্ম আমি বানাবোই। আপনি যান, ছাদে গিয়ে বুদ্ধি গোড়ায় বড় করে ধোঁয়া দিন। ভাবুন শেষটা। আমি বরং নান্টুর সাথে কথা সেরে নিই। 
    চাঁদটা আজ বড্ড ম্রিয়মান। অবশ্য আজ ওর চার পাচঁ ঘন্টার আয়ু, অতখানি তেজই বা পাবে কোথায়? চারপাশে এত বাড়ি আর ফ্ল্যাট – আকাশের সে শোভা কি আর শহরের ছাদে গিয়ে দেখা যায়? আকাশ ছিল গাঁয়ে। চারপাশে অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর মধ্যে অনেকখানি আকাশ – মাঝে মাঝে শুধু লম্বা টর্চ জ্বেলে মাটির দিকে ইতস্তত ফেলে দেখে নেওয়া – আশেপাশে সাপখোপ আছে কিনা। তখন এভারেডি কোম্পানির লম্বা লম্বা স্টিলের র্টচ হত। তিন ব্যাটারি, পাঁচ ব্যাটারি। ব্যাটারিগুলো এখনকার মতো রোগা প্যাঁকাটি মার্কা না, বেশ মোটাসোটা। পাঁচ ব্যাটারি টর্চের আলোর ফোকাসটা অনেকটা র্সাচলাইটের মতো হতো। সাত্যকীদাও নিশ্চয়ই আলখেতে জমি দেখতে গিয়েছিলেন বলে বড় টর্চই নিয়ে গিয়ে থাকবেন। নইলে গোঁগানির আওয়াজে চমকে আলোই বা ফেলবেন কেন দেহটার উপর? সারা গায়ে, মুখে – অজস্র ধারালো গর্ত্ত। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। আগেকার লোক তো! গ্রামের মানুষ, মায়া-দয়া ছিল। তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কয়েকটা হাসপাতাল ঘুরে, কলকাতার পিজি। থানা পুলিশ হল। ছেলেটার স্মৃতি ছিলনা, মুখে কথা ফুটতো না। বাড়ির লোক থানায় নিরুদ্দেশ ডায়েরি করেছিল। সাত মাস বাদে তারা আবিষ্কার করল ছেলে হাসপাতালে। মুখ দেখে আইডেন্টিফাই করা যায় না এতটাই বদলে গেছে। পা দেখে মা সনাক্ত করেছিল, এটা তাঁরই ছেলে। শুধু সাত্যকীদা আসতেন নিয়ম করে। গরীব মানুষ, তবু কলকাতায় এসে সপ্তাহে দু - সপ্তাহে দেখে যেতেন। এই রাত্তিরে এত কর্কশ স্বরে ডেকে উঠল কোন পাখি? পেঁচা। মা লক্ষ্মী নাকি শান্তি না থাকলে ছেড়ে পালান? তাই বা হবে কেন? এত দুষ্টু লোকেরা যারা টাকার গদিতে শুয়ে থাকে – তাদের সবাই কি শান্তিতে থাকে? সে যা হোক, পেঁচার ডাকটি বড় কর্কশ!
     এরপর ঘরে ফেরা। যে লোকটি সীমান্তের সৈন্যবাহিনীতে চাকরি করতে করতে হারিয়ে যায়, তারপর হঠাৎ করে ফিরে আসে – তখন কী অবস্থা হয় তার? অথবা বাড়ীর লোকের? রাজকাপুর সাহেব সঙ্গম ফিল্মটায় এমন সিচুয়েশন দেখিয়েছেন ভারী সুন্দর করে! অথবা সমুদ্রে যে ট্রলার হারিয়ে যায়, তারা যখন ফিরে আসে? ছোটবেলায় দেখা লাইট হাউসটার কথা কেন বারবার মনে আসছে? একটা নির্দিষ্ট সময় পরে পরে আলোর বিন্দুর একই জায়গায় ফিরে আসা বড় মনে পড়ছে। 'আচ্ছা গুলু, লাইট হাউসের বাংলা কী?’ ‘বাতিঘর।’ ‘জানো বাতিঘর ভাবলেই জীবানন্দের ওই কবিতাটা মনে পড়ে, ‘হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়াছে দিশা, সবুজ ঘাসের দেশ/যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভেতর।’ জীবানন্দের নায়ক পথে বেরিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি, ছেলেটা তো ফিরেছিল। হোক না দেড় বছর পর, রুগ্ন কৃশ দেহ, ঝুলে পড়া চোয়াল ফালাফালা করে কাটা, চোখে দুটো যেন ঠিক করে বাইরে আসা – কেউ চিনতে পারেনি। পাড়ার লোক নয়, বাড়ির লোক নয়। পায়ের শব্দে চোখ মেলে দেখলেন, নান্টু আর অর্দ্ধেন্দুবাবু।
-- পরিমলদা স্টোরিটা শুনলাম অর্দ্ধেন্দুবাবুর থেকে। এ চলবে না। নান্টু বলল।
-- কোন স্টোরিটা? আরশিয়ানা?
-- না,না, দ্বিতীয় যে প্লটটা আপনি ভাবছেন।
-- আমি এই গল্পটা চালাতে তো একবারও বলিনি ভাই! গল্পটা আমার মাথায় ঘুরছে আজ বিকেল থেকে। অর্দ্ধেন্দুবাবু নাছোড়, ওটা করবেনই।
   অর্দ্ধেন্দুবাবু মাঝপথে বললেন, ‘আরে দাদা, ওটা আমার উপর ছাড়ুন না। আপনি ফিনিশিংটা কী ভাবলেন বলুন।’
-- ফিনিশিং তো কিছু ভেবে উঠতে পারেনি এখনও। 
    অর্দ্ধেন্দুবাবু বললেন ‘ব্যাপারটার পরে থানা পুলিশ আদালত টানলে কেমন হয়?’
    নন্টু বলল ‘জলি এল এল বি’র মতো, নাকি ‘উত্তর ফাল্গুনী?’
-- ওই রকম কিছু। এজলাসে একটা বড় রকম যুদ্ধ হবে। এই ফাঁকে জেরার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে রহস্য জনক তথ্য। 
    নান্টু ফাজলামি মেরে বলল, 'কেঁচো খুঁড়তে কেউটে।' 
  অর্দ্ধেন্দু বললেন, ‘পরিমলদা আপনার স্টোরিতে কোর্ট ফোর্ট হয়েছিল তো ?’
-- হ্যাঁ ।
-- মেয়েটি কি পাল্টি খেয়ে গেল, নাকি?
-- ছেলেটি তো তখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়নি। তবে মেয়েটি ভালো যখন বাসতো ছেলেটিকে, ওর ফরেই নিশ্চই কথা বলবে ভাইদের এগেনস্টে গিয়ে।
  অর্দ্ধেন্দুবাবু বললেন ‘চোরের সাথে মাস্তানদের ভালো রিলেশন। কিছুই হবে না আসল বদমাইশদের, যদি না উকিলের রোলে ভালো একটা আধা নায়ক কাস্ট করা যায়।’ 
 পরিমল কিছুক্ষণ নিজের মধ্যে তলিয়ে গেলেন। মেয়েটির কথায় সত্যিই বা কী এসে যায়। বড় বাড়ীর টাকার জোর। ওটা ভেদ করে কি মেয়েটির আওয়াজ আইনের কানে পৌঁছাবে?
   নান্টু বললো ‘ওই অ্যাঙ্গেলে ভেবে লাভ নেই অর্দ্ধেন্দু দা। মেয়েটার লাইফটা ধরুন। এগুলোকে পূর্বকথনের মত হালকা করে শুনিয়ে মেয়েটির পরবর্তী জীবনটাকে গল্প করুন। ফিল্ম দাঁড়িয়ে যাবে । 
   পরিমল বললেন ‘মেয়েটির কী পরিণতি আপনার আশা করেন?’
   নান্টু বলল, ‘একটু দুখিয়ারি টাইপ। ভাইরা জোর করে একজনের সাথে বিয়ে দিল, পুরনো প্রেমিকের কথা ভুললো না যদিও, তবে থেকে গেল সেখানে। পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে জীবন সায়াহ্ণে এসে কাউকে একটা গল্প করলো টাইটানিক স্টাইলে।’
-- অর্দ্ধেন্দুবাবু, আপনার কী মনে হয়? কেমন হলে পাবলিক খাবে?
-- আমার মনে হয় ভাইদের এগেনস্টে সাক্ষী  টাক্ষী দিয়েও বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পেটে বিদ্যে ছিল, কোনও একটা স্কুল টুল এ চাকরি নেয়। এইবার সেখান থেকে একটা ফ্ল্যাশব্যাকে পুর ঘটনাটা দেখানো যায় – ইনফ্যাক্ট আমার মনে হয় – পূর্বকথন না রেখে ফ্ল্যাশব্যাকে আস্তে আস্তে ফিরে গেলে ভালোই হবে গল্পটা। তবে একটু স্মার্টলি এডিট করতে হবে। ও আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন। হরেন খুব ভালো বোঝে বিষয়টা। গল্পটা শুনতে এখন পাতি চেনা চেনা ঠেকছে। এমন প্রেজেন্ট করবো, কেউ চিনতে পারবে না। তবে পরিমলদা আপনার আমাদের পরামর্শ শুনে গল্প এগোনোর দরকার নেই, আপনার স্বাভাবিক ছন্দে যেটা আসবে সেটাই সর্বোত্তম হবে – কেননা আপনার সব গল্পের ফিনিশিংটা অসাধারণ হয়। সেটাই তো আমাদের ছবির বক্সঅফিস । আপনি নিজে বরং বলুন শেষটা কেমন হলে ভালো হয় !
-- আমি নিজেই জানি না অর্দ্ধেন্দু বাবু। আমি নিজে জানি না এ গল্প কোথায় গিয়ে থামবে!
    ৩
    সকাল বেলায় অনেক কাজ থাকে পরিমলের। ভোরবেলা উঠে মর্নিং ওয়াক করে চা, জল খাবার বানানো। তারপর একটু লেখালেখি, এরই ফাঁকে বাসন মাজা ঘর মোছার মেয়েটি আসে। ও চলে গেলে দুপুরের রান্না। এর মাঝে সকালবেলা কেউ এসে পড়লে সব রুটিনই এলোমেলো হয়ে যায়। সকাল সাতটাও ভালো করে বাজেনি, এর মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে একটু বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললেন তিনি। বাইরে এক মধ্যবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে।
-- কি ব্যাপার?
-- আমি কি একটু ভেতরে আসতে পারি?
    অজ্ঞাত কূলশীল এক মহিলাকে এত সকাল সকাল বাড়ীতে ঢুকতে দেওয়া যায় কিনা ভাবতে ভাবতে মহিলাটি বললেন, ‘আপনি আমাকে আগে দেখেছেন !' 
-- কোথায় বলুন তো!
-- অর্দ্ধেন্দুবাবুর বাড়ীতে। আমি ওনার বাড়িতে আয়ার কাজ করি।
-- ওঃ। একটু স্বস্তির নিশ্বাস পড়লো পরিমলের। বললেন ‘আসুন, আসুন। ওই জন্যই কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকছিল। তা আমার ঠিকানা পেলেন কোত্থেকে?’
-- অর্দ্ধেন্দুবাবু দিয়েছেন।
-- আপনি কি একটু চা খাবেন? আমি নিজের জন্য বানাচ্ছি।
-- আপনি বসুন, আমাকে একটু দেখিয়ে দিন । আমি করে আনছি।
-- আরে না না। আজ আপনি অতিথি। আপনাকে দিয়ে কি করানো যায়? আপনি বসুন।
   একটু পরে দু কাপ চা নিয়ে পরিমল বসার ঘরে এলেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার বলুন তো?’ 
-- একটা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি ।
-- কোন বিষয়?
 -- দেখুন, আমরা সমাজের নীচুস্তরের মানুষ। সব বিষয়ে তো আপনাদের সাথে আমাদের কথা বলা সাজে না।  
    অনেকটা বড় জিভ কেটে পরিমলবাবু বললেন, ‘ছিঃ ছিঃ এ  কী কথা! আমি কখনোই কাউকে নিচু বলে ভাবি না। আপনি এই কাজে এসেছেন অর্থের অভাবেই না! এককালে আমিও প্রচুর দারিদ্র দেখেছি। দু চার বিঘা জমির উপর কখনও একটা বড় সংসার চলতে পারে? আমিও এককালে ছেঁড়া জামা জুতো পড়ে স্কুলে কলেজে গেছি। আপনি নিশ্চিন্তে বলুন ।
-- আচ্ছা আপনার নাম কি ‘গুলু’?
    চমকে উঠলেন পরিমল। 'কেন বলুন তো?'
-- না মানে আমার একটা চেনা গল্পের সাথে আপনার একটা গল্প মিলে যাচ্ছে।
 -- কোন গল্পটা?
 -- সেদিন অর্দ্ধেন্দুবাবুকে যে গল্পটা বলেছিলেন। আমি পুরো গল্পটা শুনেছি। আচ্ছা পরিমলবাবু, আপনার মুখের ওই ফালা ফালা দাগগুলো কিসের ?
-- একটা দুর্ঘটনা।
-- কেন সত্যি লুকোচ্ছেন ? সত্যি করে বলুন, এই দাগগুলো ওই মেয়েটির গুন্ডা ভাইদের করা নয়?
   পরিমল খানিকক্ষণ চুপ করে বললেন, ‘আপনি কি ছন্দাকে চেনেন নাকি?’ 
-- ছন্দা – ওই নামে তো কাউকে চিনি না। আমরা বুয়াদি বলে ডাকতাম। তার ভালো নাম ছন্দা কি না জানি না! আমাদের অফিসে খোঁজ করলে জানা যাবে অবশ্য, যদি আসল নাম দেওয়া থাকে।
-- অফিস মানে ? আয়া সেন্টার?
--  হ্যাঁ।
--  তা আপনার বুয়াদির গল্পটা কী?
--  ঠিক কালকে আপনি যেমনটা বলছিলেন। বাকিটা তো আপনি ছাদে চলে গেলেন, শুনতে পাইনি। তার আগেরটুকু হুবহু এক। 
-- যতটুকু শুনেছেন তার পরেরটুকু বলুন। বুয়া দি যাকে বলেছেন, সে তো বড়লোক বাড়ীর মেয়ে। আয়ার লাইনে এলো কী করে? 
-- ওটা একটা ভাগ্যের পরিহাস দাদা। বুয়াদিকে দেখলেই বোঝা যেত ও সম্ভ্রান্ত বড় ঘরের মেয়ে। তবে জীবন ওকে যা সাজা দিয়েছে তা বলবার নয়। সারা দেহে অশান্তির ছাপ। তবু বোঝা যায় এককালে এই দেহ বড়ই যত্নে ছিল।
--  আপনার বুয়াদি কি বিবাহিতা?
-- সবই বলব পরিমলবাবু! দিদি আমাকে খুব ভালোবাসতো বলে আমি কিছুটা ওর জানি। ও তো এমনিতে খুব চাপা, সবার সাথে কথা শেয়ার করতো না। আর তাছাড়া আমিও অল্প সল্প লেখাপড়া জানি বলে আমার সাথে ওর একটা মনের মিল ছিল।
-- লেখাপড়া জেনে এই পেশায় আপনি কেন ?
-- যে কারণে বুয়াদি এই পেশায়। ভাগ্য বিড়ম্বনা। তবে সে ঘটনা অন্য দিন বলব। আজ বুয়াদির কথা বলি ।
-- বলুন। যেদিন ওদের বাড়ীতে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আধমরা করে ফেলে দিয়েছিল, তার পরের কথা বলুন।
-- বুয়াদিকে আন্তরিক ভাবেই ঘরে বেঁধে রেখেছিল ওর ভাইরা। বছরখানেক পরে বোধহয় কোর্ট কেস হয়। তাতে বুয়াদি ভাইদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়। তবে ওদের বিরাট কিছু সাজা হয়নি, ভাইরা জোর করে ওই এলাকারই কোনও এক পার্টির লম্পট নেতার সাথে বুয়াদির বিয়ে দিয়ে দেয় – সম্ভবত এটা একটা সওদা ছিল। সেই লোকটি নিজের উচ্চকাঙ্ক্ষা মেটাতে বুয়াদিকে ব্যবহার করত।
-- আর আমি শুনতে চাই না। পরিমল চিৎকার করে উঠলেন।
-- আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি পরিমলবাবু। কিন্তু যে মানুষটা মনে মনে আর একজনকে ভালোবেসে দিনের পর দিন ভোগের প্রসাদ হয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তার কথা শুনবেন না?
-- বাঁচিয়ে রেখেছে কেন? এই ঘৃণ্য জীবন কি খুব বেশি আকাঙ্ক্ষিত তার কাছে?
-- জানেন পরিমালবাবু বুয়াদি প্রথম দিকে একটা কথাই বলতো – জানিস মনি, আমি এই পোড়া দেহ এখনও কেন বাঁচিয়ে রেখেছি? এখনও কেন রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়িনি? আমি গুলুকে জীবনে অন্তত একবার দেখা করে ক্ষমা ভিক্ষা করতে চাই। আমি শুধু তার কাছে এটাই বলতে চাই ওর তো কোনও দোষ ছিল না। ও সাধ্যমত আমাকে বারণ করেছিল। তবু আমার গোঁয়ার্তুমির দাম দিতে গিয়ে ও নিজের জীবনে সবটুকু খোয়ালো। এত সুন্দর পুরুষ চেহারা কেরিয়ার – সব।
-- বুয়া কি জানত আমি বেঁচে আছি?
-- আপনাদের কিছু কমন বন্ধুদের থেকে বোধহয় কোনওভাবে খোঁজখবর পেয়েছিল, আপনি বেঁচে আছেন। তবে এখন যে কলকাতায় আপনার নাম আর প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেসব বোধহয় জানেনা ।
-- তারপর কী হয়েছিল?
-- তারপর বুয়াদি পাকেচক্রে কলকাতা এসে পড়ে। ঠিক জানিনা, ও এত ডিটেলসে বলেওনি। এরপর ও কাউকে ম্যানেজ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর আমাদের সেন্টারটায় যোগ দেয়।
-- ও কোথায় এখন?
-- ওটাই তো সমস্যা পরিমল বাবু। আপনি অর্দ্ধেন্দুবাবুর ওখানে গিয়েছিলেন এগারো দিন আগে। আমি সব শুনে ভাবলাম বুয়াদিকে আপনার কথা জানাবো। গত ন' দশ দিন ও সেন্টারে আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে...
   পরিমল অধের্য্য বললেন,  ‘ওর মোবাইল নেই?’
-- না।
-- ও কোথায় থাকে জানেন?
-- তাই তো বলছি। গতকাল ও যেখানটায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতো, সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে শুনলাম সপ্তাহখানেক আগে নাকি পুলিশ নিয়ে এসে কারা ওকে তুলে নিয়ে গেছে। 
-- কে? আর্ওনাদ করে উঠলেন পরিমল।
-- তা কেউ বলতে পারছে না। বুঝতেই তো পারছেন বস্তি এরিয়ায় আসল খবরের থেকে চাটনি হয় বেশী। কেউ বলছে ভাই, কেউ বলছে বর, কেউ বলছে দুষ্টু চক্র। সঠিক জানি না।
     বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল পরিমলের ভেতর থেকে। এত কাছে এসেও খোঁজ মিলল না ছন্দার? একটা ভ্যাপসা গুমোট তাঁর বুকের মধ্যে গ্রাস করতে থাকল। মনি বলল, ‘দাদা আপনারা তো উঁচু তলার মানুষ। পুলিশের বড় বড় অফিসারেরা আপনার কথা শুনবে। আপনি কি ব্যাপারটা দেখবেন না? ওর হয়ে লড়ার আর পৃথিবীতে কে আছে?’ ভীষণ কিংকর্তব্য বিমূঢ় দেখালো পরিমলকে। উনি বললেন 'দেখি, অর্দ্ধেন্দুবাবু কী বলেন!' হঠাৎ একটা শব্দে চমকে উঠলেন দুজনেই। প্রেসার কুকারে সিটি বাজছে। ডালটা গ্যাসে চড়িয়ে এসেছিলেন পরিমল, কিছুক্ষণ আগে।

Post a Comment

0 Comments