জ্বলদর্চি

চৌরঙ্গী স্কোয়ার- দ্বিতীয় অংশ /উত্তীয় ভট্টাচার্য


চৌরঙ্গী স্কোয়ার 
দ্বিতীয় অংশ

উত্তীয় ভট্টাচার্য

এখন রাত বারোটা
   বুড়ো ঘড়িটার ঢংঢং শব্দ
ক্রমশ হালকা হয়ে আসছে।

এক চমৎকার নিঃশব্দ
  এক চমৎকার থমকে যাওয়া সময়।
এখানে হাড় হিম করা ঠান্ডা বাতাস,
    শরীর কাঁপানো হওয়া,
কোনোটাই নেই।

'সময়'এখানে প্রাণহীন
'প্রাণ' এখানে প্রাণহীন।
 'আলো' এখন এখানে নেই। 
আকাশের ঝিকিমিকি তারা
 শুধু বলে যাচ্ছে ,
" কালো মেঘ তাদের ঢেকে দিতে আসছে।"

শক্ত মাটির ওপর তিয়াশার সেই ভেলভেটে মোড়া পা,
 ক্রমশ ফিরে পাচ্ছে হালকা 
শিরার টান।
 কিন্তু এ কি তার পায়ের নরম 
পাতার ওপর কি?
ওটা কি হেঁটে গেলো?
কোন বিষাক্ত সাপ, বিষাক্ত বিছে,না রক্তচোষা বাদুড়ের বাচ্চা।
🍂

খপ করে তিয়াশারা ওই নরম হাত দুটি কেউ একজন ধরে বললো,
"তিয়াশা।"
   তিয়াশার ওই টানা টানা চোখ  তখনও এক সীমাহীন    নেশায় ডুবে আছে।
 
 তিয়াশা,তিয়াশা "আমি এসেছি এই তো আমি।"

এই  'অচেনা স্বর ', ' অজানা  ডাক' 
এই কি তিয়াশার সেই অজানা রাজকুমার নাকি অন্য  কেউ?

মৃদু পূবালী হওয়া,
আকাশের কালো মেঘ,
আর পুরোনো শাল গাছের 
উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা,
' আওয়াজ ' করা রক্তচোষা বাদুড়
এর উত্তর দিয়ে গেলো।

আকাশের নিল ধ্রুবতারা তবুও তার আলোতে তৈরি,
সাদা  রেখার নতুন রাস্তা করে দিলো তিয়াশার জন্য।

তিয়াশা আর তার নতুন বন্ধু
এখন একই বিন্দুতে।

তিয়াশার মনের গভীরে তখন একটাই প্রশ্ন
কে? 

উত্তর দিলো ওই দূরের কবরখানার বুড়ো পাহারাদারটার লণ্ঠনের আলোর শিখা,
উত্তর দিলো ওই বুড়ো ডোমের শক্ত শাবলের ঠুক ঠাক আওয়াজ,
উত্তর দিলো ওই বুড়ো পাদ্রির 
ফিরে যাওয়ার বুটের আওয়াজ।

ভারি লোহার গেটের 'কেঁচ 
কেঁচ' শব্দের মাঝে কারা যেন,
ওই দূরের কবরখানা থেকে 
'কাজ শেষ' করে ফিরে যাচ্ছে।
" তিয়াশা তুমি এখানে কি করছো, যাবে না?"
সেই অপরিচিত স্বর আবার বলে উঠলো,

কিন্ত তিয়াশা নিরুত্তর।

টুপি,কোর্ট,প্যান্ট ওয়ালা চেহারাটা আবার কিছু একটা 
বলতে চাইল।
তিয়াশার কোনো উত্তর এলো না।

এই অজানা মানুষ টাই 
কি তিয়াশার সেই অজানা রাজকুমার নাকি অন্য কেউ?

গুটি গুটি পায়ে তিয়াশা ফিরে আসছে এখন সেই 
চেনা পথে,সঙ্গে তার সেই নতুন বন্ধু।

সে ফিরে আসছে এখন সেই কুঁড়েঘর ফেলে রেখে।
' সবুজ ঝিকিমিকি ' জোনাকির আলো, সেই
' কাল পেঁচার ডাক '
কোন কিছুই যেন এখন আর এক নেই।

তিয়াশার মন এখন আলাদা হয়ে উঠেছে।
এর পর তিয়াশার আর তার নতুন বন্ধুর সেই পথ ধরেই এগিয়ে যাওয়া।
 সেই বুড়ো চৌকিদারটার গলার আওয়াজ,
তার পোষা কুকুরটার আওয়াজ,
কোনো কিছুই যেনো আর আগের মতন নেই,
    
  এরপর তিয়াশার আর তার নতুন বন্ধুর সেই গগনচুম্বী অট্টালিকার শক্ত দরজায় 
হালকা ছোয়া,আর এই অপেক্ষা,শুধু অপেক্ষা।

Post a Comment

1 Comments

  1. Kamalika BhattacharyaAugust 29, 2025

    নতুন বন্ধু কি মৃত্যু?

    ReplyDelete