জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 
কমলিকা ভট্টাচার্য

রাখি ভাই

সে আমার কেউ নয়,
হয়তো দেখিনি কোনোদিন,
বা দেখেছি ভিড়ের মাঝে—
তবু খেয়াল করিনি বিন্দুমাত্র,
নতুবা হয়তো দেখতে চাইনি।

আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে—
এই তো সে, বড় আপনজন!
কবে হবে তার সঙ্গে দেখা?

সে রোজ আসে কাকভোরে,
যখনও আঁধার আকাশজুড়ে,
আমি তখনও বিছানায়—
ভোরের ঘুম জড়ানো চোখে
এসির সুইচ বন্ধ করতে করতে
জানলা দিয়ে দেখি তাকে,
পিছন ফিরে চলে যায় গাড়ি নিয়ে।

আমি আবার চাদরে মুখ ঢাকি—
বাকি ঘুমটুকু শেষ করি,
কিন্তু তার দিন শুরু হয় আমার আগে,
আমার জন্যই আসে নিঃশব্দে—
আমার ভালো থাকার আয়োজন সেরে
চলে যায় ধীরপায়ে।

নোংরা নিজ হাতে করে সাফ,
বিনা অভিযোগে, হাসিমুখে—
আজ বড় ইচ্ছে করছে
দেখি তার সেই দুই হাত—
কি জানি, গ্লাভস পরে কি না!

আজ আমি জেগে আছি বিছানায়,
ভোরের আলো এসে পড়েছে জানলায়,
অপেক্ষায় আছি—
যেন এবার সে আসবে,
আমার সাফাইকর্মী ভাই—
যার হাতের রেখায় লুকিয়ে আছে
ময়লা মাখা অসংখ্য অচেনা সকাল,
যে হাতে আজ বেঁধে দেব
রঙিন সুতো আর কৃতজ্ঞতার গিঁট—
সে হবে আমার চিরদিনের
রাখি ভাই।
**********
সে আমার ছোটবোন


বাড়ি জুড়ে আজ হুলুস্থুল
কেউ জানেনা কি হয়েছে ভুল 
সবাই  মেনেছে হার একে একে 
কার সাধ্য মানাবে তাকে।

শুধু একজনই আছে 
ওর মনের খবর আছে তার কাছে 
মেয়ে যে আজ বড় অভিমানী
এতটুকু খাবার দাঁতে কাটেনি।

সেই যে বিছানায় মুখ গুঁজেছে 
অশ্রুধারায় চোখ ভরেছে
একটি গলার আওয়াজ
বদলাতে পারে তার মেজাজ।

সে আমার ছোটবোন 
বড় আদরের ছোটবোন..
দাদা গেয়ে উঠে গান
ভেসে  যায় সব আভিমান।

দাদার গলা জড়িয়ে ধরে
সব অভিযোগ পড়ে ঝরে
দাদা নেয় তুলে তাকে পিঠে 
দাদার হাতে খাবার খায় সে চেটেপুটে..।

একটি ছোট্ট মেয়ে ফুটফুটে
দাদার সাইকেল চলেছে ছুটে 
দাদাকে ধরেছে সে জাপটে
নিমেষে সময় যেন গেল আটকে।

দূর থেকে চেয়ে দেখি সেই ছবিটি
ভাই বোনের হাসি স্নেহ মাখা খুনসুটি 
কোথায় যেন এদের দেখেছি আমি
আমি কি এদের চিনি?

সাইকেলের প্যাডেল ঘুরছে
দাদা গান ধরেছে
সে আমার ছোটবোন বড় আদরের ছোটবোন...
ছোটবেলায় হারিয়ে যাচ্ছে মন...
শৈশবের উঠোনে ফেরার আজও অশেষ সেই আহ্বান।
***************
ভালো থাকিস

কিছু সম্পর্কের জন্ম আগে থেকেই লেখা —
ভগবান নিজেই টেনে দেন রেখা,
একটা পুতুল, একটা ঘুড়ি,
একজন কাঁদলে অন্যজন কষ্ট ভোগে,
যত ভাব তত আড়ি,
ছোটবেলা কেটে যাওয়ার কি যে ছিল এত
সাত তাড়াতাড়ি!

বড় হতে হতে বড় হয়ে গেল ফাঁকটাও,
সময় এসে পড়ল দেয়াল হয়ে,
তবু ফোনের ওপার থেকে এখনও শুনি —
“তোর কথাটা মাথায় এল, তাই কল করলাম।”

শুভকামনারা এখন আর মুখে নয়,
ওরা নীরবে বয়ে যায় প্রার্থনার মতো।

তবু —
আমি নিঃশব্দে দুঃখে ডুবে গেলে
তুই অকারণ আনমনা হয়ে পড়িস,
আর চিন্তা তোকে ছুঁলে
খুঁজি শব্দ — সান্ত্বনা দেব কি বলে!

সেই কবে থেকেই বাঁধা আছে
অদৃশ্য রক্ষার সুতো,
যা কাটে না দূরত্বে, ক্ষয় হয় না সময়ে
শুধু থেকে যায় ভাই-বোনের একে অপরের ভালো চেয়ে।

ভালো থাকিস!

🍂

Post a Comment

0 Comments