ঘুমিয়ে গেছে গানের পাখি
(ত্রয়োদশ পর্ব)
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
প্রকৃতি প্রেমিক কবি নজরুল।
‘দোলন-চাঁপা’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশকালে নজরুল ছিলেন ঔপনিবেশিক কারাগারে বন্দি । কবি-বন্ধু শ্রী পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় এই গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছিলেন, '' সে আজ বন্দি। রাজার দেয়া লৌহ-নিগড়ে তার অন্তরের বিদ্রোহী-বীর কোন দেবতার আশীষ নির্মাল্য দেখতে পেল, তাই সাদরে বরণ করে নিল তাকে আপন বলে। তারপর একদিন যখন বাংলার যুবক আবার জলদমন্দ্রে বাধা-বন্ধহারা হয়ে স্বাধীনচিত্ত ভরে ,বাংলার চির শ্যামল চির অমলিন মাতৃমূর্তি উন্মাদ আনন্দে বক্ষে টেনে নেবে, সেই শুভ আরতিলগ্নে। ইমনকল্যাণ সুরে যে নহবতের রাগিনী বেজে উঠবে, তাতে হে কবি, তোমার প্রেমভৈরব-গাথা-তোমার অন্তর বহ্নি-ব্যথা সন্ধ্যা-রাগ রক্তে আপনি বেজে উঠবে; জননীর শ্যামলবক্ষে তোমার স্মৃতি ব্যথা ভরাতুর হয়ে সকল পূজার মাঝে বারে বারে তোমাকেই স্মরণ করিয়ে দেবে, হে কবি সে আজ নয়। '' এই উদ্ধৃতির মধ্যে নজরুল মানসের প্রেম প্রকৃতি ও বিদ্রোহীর স্বরূপে ইঙ্গিত-সূত্র নিহিত রয়েছে । চির শ্যামল বাংলা মায়ের রূপে আকুল কবি তার দেশমাতৃকার বন্দিনী রূপে ক্ষুব্ধ বিদ্রোহী । প্রেম ভৈরব গাথা কবির যে বহ্নি অন্তর দানব সরে গেলে আপনি বেজে উঠবে।
প্রকৃতি বন্দনায় নিমগ্ন কবি। শৃঙ্খলিত বঙ্গজননী অহর্নিশ কবিকে পীড়ন করে। তার বন্দনায় নিমগ্ন হয়ে কবি অপরূপ রূপের মহিমাটি অত্যন্ত সফলভাবে কাব্যে কথার তুলিতে আঁকলেন।
নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম
চির-মনোরম চির মধুর
বুকে নিরবধি বহে শত নদী
চরণে জলধির বাজে নূপুর ॥
কবির এমন দেশবন্দনায় কাব্যসংগীত রচনা অত্যন্ত সফল এবং সর্বজন সমাদৃত। জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়েছে তাঁর এই শ্রদ্ধা নিবেদনে। মূল প্রেরণার উৎস-রূপসী বাংলার প্রকৃতি ছিল ইতিহাস ও সময় চেতনার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এক পল্লী-জননী। তবে নজরুলের প্রকৃতি সমকালীন জীবন্ত ও নৈসর্গিক; স্পর্শযোগ্য এবং দৃশ্যময়। নজরুলের রচনাতেই ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাতন্ত্র ভূ-খণ্ডের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য প্রথম লক্ষ্য করা গেল । তাঁর জন্মভূমি বাংলার মাটি ,সে প্রকৃতি কতো মনোরম কতো সুশোভিত, সবুজের মায়ায় এর চারিধার এমন করে পরিবৃত যে এই বন্ধন ছেড়ে পৃথিবীর কোথাও গিয়ে তাঁর সুখে থাকা সম্ভব নয়। জন্মভূমির প্রতি নিবিড় ভালবাসা সঞ্চার করা হয়েছে তাঁর কাব্য রচনায়। ---
হরিত অঞ্চল হেমন্তে দুলায়ে
ফেরে সে মাঠে মাঠে শিশির ভেজা পায়ে,
অথবা
একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবণী।
প্রকৃতিই বাংলার আসল সম্পদ। এই ঐশ্বর্যে এর রূপ কানায় কানায় পূর্ণ।নজরুলের হৃদয়-বেদনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশেছিল প্রকৃতি, বিশেষ করে আবহমান বাংলার প্রকৃতি। প্রকৃতির প্রতীক দিয়েই তিনি তার নিজের এবং মানব মনের চিরন্তন আকুতিকে রূপ দিয়েছেন।
গ্রীষ্মের প্রখর রুদ্ররূপের গৈরিকবসনে তপ্ত প্রকৃতির জ্বালাজুড়াতে আসে কালবৈশাখীর ঝড়েরমাতন। বর্ষায় মাথার উপর হিমালয় আশীর্বাদস্বরূপ মেঘবারি পাঠালে সে অনন্যা হয়ে ওঠে। বৃষ্টিকণায় সবুজের সমারোহে পূর্ণ হয়ে ওঠে ওর লীলাভূমি। শরতে শেফালি হেসে মাতাল করে চারিধার। হেমন্তের শিশির আর শীতের পাতাঝরা সবকিছুকে ছাপিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ায় ঋতুরাজ উদাস বসন্ত। প্রকৃতিতে ঋতুর পরিবর্তন এখানে এমন স্পষ্ট সারা পৃথিবীতে যার জুড়ি মেলা ভার । তাই কবি এই মাটির, এই আকাশের কাছে ঋণী থেকেই স্বপ্ন সুখের বাসাবেঁধে এই বাংলার মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চান।
চৈতী হাওয়া কবিতায় কবির ভালবাসার প্রিয়া কবিকে ছেড়ে কোথায় নিরুদ্দেশে হয়ে গিয়েছে। প্রিয়ার সাথে তাই তাঁর বিস্তর দূরত্বের ব্যবধান। একসময়ের নিস্তরঙ্গ পুকুরের মত কবি জীবনে যে প্রিয়া প্রেমের টেউ তুলেছিল আজ সে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে ,কবির ব্যাকুল হৃদয় তাকে খুঁজে বেড়ায়। উত্তাল প্রেমের কবিতা কবির চৈতী হাওয়ায় প্রকৃতির বর্ণনার গভীর ছোঁয়া হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। তাঁর কাব্য-সংগীত প্রবাহ প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে শ্রোতার মন কে উদ্বেলিত করে ।এক চৈতীবেলায় যে প্রিয়তমা তাঁর বাহুলগ্না হয়েছিল কালেরনিয়মে ভেসে আবার ফিরে এসেছে সেই প্রতীক্ষিত চৈতীবেলা । উদাসী হাওয়ায় চারদিক উন্মাতাল। আমের বনে মুকুল ধরেছে, নিসর্গ জেগেছে নানান ফুলে। অথচ কবির জীবন প্রিয়াশূন্য। ,প্রাত্যহিক নিয়মে পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয়ের পর বেলাশেষে পশ্চিমদিগন্ত রাঙ্গিয়ে সূর্যের অস্তরাগ। যাপিত জীবনে এই খেয়াঘাটে কবি মাঝির মতো প্রিয়তমা রূপী যাত্রীর প্রতিক্ষায় বসে কাল গুনছেন । অধীর আগ্রহে প্রিয়া মিলনে অপেক্ষারত কবি লিখেছেন, ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে, ঝরা বন-গোলাপের বিলাপ শোনে’।
প্রেম প্রকৃতি বিরহ ও বিদ্রোহ নিয়ে যে নিবিড় কাব্যিক জগৎ নজরুল গড়ে তুলেছেন তা তাঁর ঐকান্তিক কবিসত্ত্বার অন্তর্মুখী চেতনা চিন্তায় প্রাত্যহিক অনুভূতিতে উপলব্ধ অনবদ্য সাধনার ফসল। সত্যপ্রিয়তা ও মানবতাবোধ তাঁর সৌন্দর্য দর্শনের দুটি দিক। তিনি প্রকৃতির মাঝে আত্মমগ্ন হয়ে শুধুই সৌন্দর্য অন্বেষায় ব্যস্ত থাকেননি । তাঁর বিদ্রোহী সত্তা সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে অসুন্দরকে প্রত্যক্ষ করেছেন।
"মানবতার সর্বাঙ্গীন ও সর্বসংস্কার মুক্ত প্রকাশই নজরুলের সৌন্দর্যবোধের মূল বক্তব্য। বাংলা কবিতায় প্রচলিত সৌন্দর্যাবলীর চিত্র ললিত মধুর; নজরুল সেখানে পৌরুষের দীপ্ত স্বাতন্ত্র্যে সৌন্দর্যাভিসারের ক্ষেত্রে এক নতুন পরিমল রচনা করেন। " (নজরুল ইসলাম, কবি মানস ও কবিতা: ধ্রুবকুমার মুখোপাধ্যায়, পৃ. ১১৭)
কবি তিনি। অত্যন্ত দুঃখ কষ্ট প্রেম বিরহ যাতনায় উদ্বেল হয়ে ও তাঁর সৃষ্টিতে তেজস্বী যৌবনর জয়গানে মুখর কবি। তাঁর কাব্যসৃষ্টির অজস্র শব্দরাশি প্রাণে সাড়া জাগায়। সেখানে ধ্বংসের ডঙ্কা যেমন সরবে বেজেছে তেমনি স্রষ্টার সৃষ্টির অনুপম সুন্দরকে আহ্বান জানিয়েছেন। সাহিত্যের দুনিয়ায় তাঁর কাব্যে প্রকৃতির বন্দনা তাই লাবণ্যময় অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। সেখানে ধ্বংসের প্রলয় হুঙ্কার যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে আত্মসমর্পিত প্রেমিক হৃদয়ের সৃজন বেদনা।
হে মোর রানি! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয় কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
আমার সমর-জয়ী অমর তরবারী
দিনে দিনে কান্তি আনে,হয়ে ওঠে ভারী,,
রোম্যান্টিক প্রকৃতি প্রেমিক কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো নজরুল সে অর্থে প্রকৃতিতেই আত্মনিবেদিত কবি নন। তবু প্রকৃতি বন্দনার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রেমেররাগ অনুরাগ ও বিরহবেদনা গ্রথিত করার প্রয়াস দেখা যায় ।
ফরাসী দার্শনিক বার্গসঁ বলেছেন, ''দু প্রকারে আমাদের সত্যোপলব্ধি হয়ে থাকে-- জ্ঞান ও অনুভূতির সাহায্যে। জ্ঞানের দ্বারা যে সত্যোপলব্ধি তা মানুষের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করে কিন্তু মানব মনকে তৃপ্ত করে না। সে তৃপ্তির জন্যে প্রয়োজন অন্যরকম সৌন্দর্যময় উপলব্ধির। সে উপলব্ধির উৎসধারা হলো শিল্প, সাহিত্য কিংবা সঙ্গীত। এখানে জ্ঞানের সঙ্গে হৃদয়ের উপলব্ধিজাত অভিজ্ঞতার বিচিত্র প্রকাশ ঘটে। যদি তা না হয় তবে সে সাহিত্য সমকালীনতাকে ছাড়িয়ে অসীমের পানে দৃষ্টি ফেলতে পারে না।" নজরুলও যদি জ্ঞানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ না করতেন তবে হয়তো কবেই হারিয়ে যেতেন। তিনি বাস্তবের রূঢ় সত্যকে চিরন্তন সুন্দরের সঙ্গে মেশাতে পেরেছেন বলেই তাঁর কাব্য সঙ্গীত হয়ে উঠেছে সর্বাঙ্গসুন্দর এত মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের নিয়ন্তা পরমারাধ্য নটরাজের বীণার সুর শোনেন কবি প্রভাত প্রকৃতিতে। তারই মনোমুগ্ধকর সুরে আবিষ্ট সমগ্র প্রকৃতি কবিরই সঙ্গে। সেই সুরকে ত্রিভুবন প্রণাম জানায়, তারই মোহিনী মায়ায় কবির ভাবগঙ্গা ‘মন্ত্রমুগ্ধ'। স্থির হয়েছে তারই তরঙ্গ।
“নয়নের জল হেরিতে না পারি
বাহিরে গগনে ঝরে কত বারি।
বন্ধ কুটিরে অন্ধ তিমিরে
চেয়ে আছি কাহার পথ চাহি।
পরম সুন্দর মহাকালের প্রলয় উৎসবের রূপকে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন কালবৈশাখীর বিধ্বংসী ঝড়ের তান্ডবে।পরম কাঙ্ক্ষিতের বার্তা প্রলয়ের পর সৃজনের আনন্দ যিনি বহন করে আনেন -সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে হাসি কান্নার জীবন ছেড়ে মিলিত হতে চান সেই নিত্য নতুন পরমানন্দের সঙ্গে।কবি ঝড় রূপে তাঁর প্রিয়তমের উদ্দেশ্যে যাত্রায় উদ্যত হয়ে মিলিত হতে চান মহাকালের অশান্ত বুকে ঝরা পাতার মতো ।
বন্ধু গো, ওগো ঝড়, ভাঙো ভাঙো দ্বার,
তব সাথে আজি নব অভিসার,
ঝরা পল্লব-প্রায় তুলিয়া লহ আমায়
অশান্ত ও বক্ষে হে বিদ্রোহী ॥
যে উৎসবে বন তার ফুলের ডালা উজাড় করে ঢেলে দেয় দেবতার পায়ে, নীল আকাশে ছুটে আসে মেঘের রাশি, সাগরওঠে দুলে, বান ডাকে শীর্ণানদীর দুকুল ছাপিয়ে-এমন মহোৎসবের দিনে কবে কবির ডাক পড়বে, ঘরের বাঁধন ছিন্ন করে মুক্ত পথে সবার মাঝে মিশে যেতে পা বাড়াবেন তিনি ।
🍂
“হে পথিক, তব সুর অশান্ত বায়/
জন্মান্তর হ’তে যেন ভেসে আসে হায়।
বিজড়িত তব স্মৃতি চেনা অচেনায়/
প্রাণ-কাঁদানো।
’ (“মেঘ-মেদুর গগন কাঁদে)
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে এ দেশের কবিরা নায়িকার রূপ এবং মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। নজরুল ইসলামও তার কবিতাতে বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতি ও তাঁর প্রেমিকার অবস্থা বর্ণনা করেছেন। প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে মানব মনের ও পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যায়। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন উপাদান এবং ঋতু স্বাতন্ত্র্যভাবে মানবীয় রূপ ধারণ করে। নজরুল ইসলাম ও তার কবিতাতে বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতি ও তাঁর প্রেমিকার অবস্থা বর্ণনা করেছেন। নজরুলের প্রকৃতি ও নারীকে আলাদা করে বোঝা যায় না। বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারির মতো প্রেম ও বৃক্ষ প্রেমের কবিতা আধুনিক বাংলা কবিতায় বিরল। তার বৃক্ষ কখনো হয়ে ওঠে নারী-বৃক্ষ। কবি লিখলেন --
জাগি দেখি, মোর বাতায়ন-পাশে জাগিছে স্বপনচারী
নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাক-তরুর সারি!
তোমাদের আর আমার আঁখির পল্লব-কম্পনে
সারা রাত মোরা কয়েছি যে কথা, বন্ধু, পড়িছে মনে!
জাগিয়া একাকী জ্বালা ক\'রে আঁখি আসিত যখন জল,
তোমাদের পাতা মনে হ\'ত যেন সুশীতল করতল
আমার প্রিয়ার!
হয়তো তোমারে দেখিয়াছি , তুমি যাহা নও তাই করে
ক্ষতি কি তোমার ,যদি গো আমার তাতেই হৃদয় ভরে ?
দোলন-চাঁপা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত তাঁর বিখ্যাত "পথহারা" কবিতাটিতে উদাস পথিক , যে হঠাৎ করে তার পথের রেখা হারিয়ে ফেলে এবং গভীর আঁধারের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়। পথের পথিকের পথ হারানোর এক গভীর অনুভূতির প্রকাশ পেয়েছে। পথ হারা পথিক পথ খুঁজে পায় না একাকীত্বের মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
পউষ' কবিতায় কবি পৌষের এক কাব্যমধুর চিত্র অংকন করেছেন, যা সুগভীর প্রকৃতি প্রেমের সাথে কাঙ্ক্ষিতের বিরহ বেদনায় সকরুণ,
পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্রু-পাথর হিম-পারাবার পারায়ে।
ঐ যে এলো গো-
কুজ্ঝটিকার ঘোম্টা-পরা দিগন্তরে দাঁড়ায়ে।
সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়
বিদায়-ব্যথা হায় গো কেঁদে যায়,
অস্ত-বধূ (আ-হা) মলিন চোখে চায়।
(কবিতা --পউষ //দোলনচাঁপা )
বাদলা কালো স্নিগ্ধা আমার কান্তা এল রিমঝিমিয়ে, বৃষ্টিতে তার বাজল নূপুর পায়জোরেরই শিঞ্জনি যে।
ফুটলো উষার মুখটি অরুণ, ছাইল বাদল তাম্বু ধারায়! জমলো আসর বর্ষা বাসর, লাও সাকি লাও ভর পিয়ালায়। (নিকটে : পুবের হাওয়া) কবির বিদায়-ব্যথায় প্রকৃতি ব্যথাতুর হয়ে পড়ছে। যে মৃত্তিকা-মাতা কবিকে গভীর মমতায় ধারণ করেছে, যার আলো বাতাস বৃক্ষ লতা কবির শরীর গঠনে সাহায্য করেছে সেই প্রকৃতি কবির বিরহ সইবে কেমন করে। কবি যে সব সময় প্রকৃতির অনুষঙ্গগুলো কেবল নারীর প্রেম বিরহের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন এমন নয়। মাতৃত্বে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের অনুভূতিও আরোপ করেছেন। এই মায়ার পৃথিবী ছেড়ে যেতে কবির প্রাণ কাঁদে। প্রেমিক কবি নজরুল লিখলেন ''আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি ঐ গো এবার কানে আসে। পুবের হাওয়া তাই কেঁদে যায় ঝাউএর বনে দীঘল শ্বাসে /ব্যথায় বিবশ গুলঞ্চ ফুল/ মালঞ্চ আজ তাই শোকাকুল মাটির মায়ের কোলের মায়া ওগো আমার প্রাণ উদাসে। (শেষের গান : ছায়ানট)।
0 Comments