বৃষ্টি
কত কত বৃষ্টি ঝরে রাতের বাগানে!
এরকম বৃষ্টির দিনে গোড়ালি ভেজা বিকেলে
তুমি হেঁটে যেতে সূর্যের দিকে—
চারপাশ থেকে হাওয়াদের পাখিদের পাতাদের
দু'চোখ ভরে দেখা শেষ হত না
আর মনখারাপ করে রাত্রি নামত।
আজ রাত্রির বিজন বনে
গান গাইছে একলা নদী, ভাসতে চাইছে অঝোর বাদলে...
সেই আষাঢ় শ্রাবণকে সঙ্গে করে
তার নিজের অজান্তেই ভিজে যাবে পাগল বর্ষায়!
শুধু গোড়ালি নয় ভিজে যাবে তোমার বুক, চোখ
ভেসে যাবে এত বছরের গোপন কান্না আর মধুর দীর্ঘশ্বাস!
🍂
যাও, উত্তরে হাওয়া
শ্রাবণ রাত্রির হাওয়া ঢাকছে মুখের ছায়া
উজ্জয়িনী তীরে জ্বলে না আলোকরেখা
রেবার দু'পাশে শুয়ে দীর্ঘ সবুজ বন
কেঁপে কেঁপে ওঠে ধ্বনি তোমার স্বপ্নে মায়া!
রামগিরির পথে উড়ে আসে কত মেঘ
ভুলে গেছে তারা সব চাঁদের দাবানল
সব কথা গান শেষে, যাও উত্তরে হাওয়া
নীরবে পুড়ছে ধূপ তার নিঃশেষ হওয়া!
মাটির কথায় নীল আকাশও বেসামাল
বইয়ে দিচ্ছে নদী দীর্ঘদিনের চাওয়া
বিন্ধ্যের ঢাল বেয়ে ছুটে ঝর্ণার ধারা
আমিও চলেছি পথে ভারতবর্ষ মাপা!
1 Comments
এই মনোমুগ্ধকর কবিতায় কবি দিলীপ মোহান্তি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বৃষ্টির সঙ্গে মানুষের অন্তরের এক গভীর সম্পর্ক তুলে ধরেছেন, যেখানে রাতের বাগানে ঝরে পড়া বৃষ্টির দৃশ্য থেকে শুরু করে গোড়ালি-ভেজা বিকেলের স্মৃতিচারণ এক বিষণ্ণ অথচ মধুর আবেশ সৃষ্টি করে। কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে একাকীত্বের সুর, যেখানে একলা নদী অঝোর ধারায় ভেসে যেতে চায়, যা আসলে বহু বছরের গোপন কান্না এবং অব্যক্ত দীর্ঘশ্বাসেরই প্রতিচ্ছবি। শেষ পর্যন্ত, এই বৃষ্টি কেবল গোড়ালি ভেজায় না, বরং তা বুক, চোখ এবং সমগ্র অস্তিত্বকে প্লাবিত করে এক নিবিড় অনুভূতির জগতে পৌঁছে দেয়, যা পাঠকের হৃদয়ে এক চিরন্তন বিষাদ এবং সৌন্দর্যের উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে।
ReplyDeleteচন্দন ভট্টাচার্য
কবি, লেখক, গল্পকার এবং সমালোচক