জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ: অসিতরঞ্জন ঘোষ


কবিতাগুচ্ছ: অসিতরঞ্জন ঘোষ


"নতুন আলো"

সেদিন রাতের ভোর হলো না, সূর্য চিরঘুমে।
নম্র  হয়ে নতশিরে,  কমলো আলো ক্রমে।
আকাশ মাটি এক হোল, নদীর জলে বান।
ঝড় উঠল কালবোশেখী,  আঁধারে সবখান।

আকাশজুড়ে বাজের আলোয় ঝলসে গেল গাঁ।
পরাণ পাখি ফুরুৎ কারো, নেইকো মুখে রা।
ফসল গেল বানের জলে, হাওয়ার দাপাদাপি।
ঘরের চাল গাছের মাথায়, মরা শুধুই বাকি।

ছাইলো ধোঁয়া শহর গ্রামে, আঁধার চারিধার।
ধূম্রমেঘের যমদূতদের নিরন্তর প্রহার। 
প্রাণের ভয়ে আধমরা সব। অন্ধকার ই যম।
আলো দেখার আশে আশে মরণ উপক্রম।

যম রয়েছে বহুরূপে, মৃত্যু চিরস্থায়ী!
প্রকৃতি না মানুষেরা -এ অবস্থার দায়ী?
বাঁচার আশার দিন কি, ফুরিয়ে গেল তবে?
আর কিভাবে মরলে তবে মৃত্যু বলা হবে।

আর কতদিন বাঁচার নামে চলবে এমন  নাটক?
সুস্থ থাকার স্বপ্ন তবে, স্বপ্নেই রবে আটক?
ক্লান্ত হৃদয় শ্রান্ত দেহ, অস্থির অচেতন। 
মূমুর্ষুদের আর্তনাদে, মুক্তির আবেদন।

কার হাতে সেই চাবিকাঠি? আনবে নতুন ভোর।
আধমরারা উঠবে বেঁচে, কাটবে আঁধার ঘোর।
সূর্য উঠবে আবার জেগে, স্বপ্ন সত্যি হবে।
নতুন দিনের আলোয় জীবন, পথটি খুঁজে নেবে।।



"ডাক"

এমন ডাক ডাকলো কে রে, নামলি তোরা পথে।
আপন ভুলে দৌড়ে এলি, হাত মেলালি হাতে।।
কোন আওয়াজে কিসের টানে, বছর বছর ধরে,
নামছে পথে, হাঁটছে সাথে, কী সে ছু-মন্তরে!

সেই সেকালে, প্রেমের বলে, নিমাই দিল ডাক। 
ভাসলো সকল শ্রেণীর মানুষ,  সমাজ তো অবাক!
ভাঙলো সকল বিধিনিষেধ, প্রেম-ই জীবনরেখা।
অমন ডাকে সাড়া দিয়ে, ময়ুর মেলে পাখা।।

প্রেমের বাণী মাতৃভাষায়, বাঁচার জীওনকাঠি।
সেদিন আবার দিল ডাক, "মাতৃভাষাই খাঁটি"।
দলে দলে আবার পথে, স্বদেশ টীকা মাথায়।
"করো কিংবা মরো"র ডাক, দেশপ্রেমের খাতায়।।

কোন ডাকে যে কে সাড়া দেয়, তুমিই জানো শুধু।
সময় সমাজ ছাপ রেখে যায়, আহ্বানে চাই মধু।।
এমন এক ডাকের কথা পড়ছে মনে, কবে?
অদম্য সে ডাকটি ছিল,  "দিল্লি চলো" সবে।

সেদিন রাতে কোন সে ডাকে, বিক্ষোভে সোচ্চার!
নিরাপত্তার অভাব রোধে, "অভয়ার বিচার "।
এমন করে আকুল হয়ে, যদি তুমি ডাকো-
পাশেই পাবে সাড়া জীবন,  অভয়খানি রাখো।।

🍂


"ফসকা গেঁড়ো"

উস্কানিতে ফোস্কা পড়ে, টসকে পড়ে রাগ।
মস্তিষ্কের মসকরাতে, আস্কারা পায় আগ।
রে রে করে তেড়ে আসে হেড়ে গলার ছা।
অন্ধকারে নেত্য করে সন্দ কমে না।

বন্ধ ঘরে হিংসে করে জুড়োয় না জ্বালা ।
নষ্টামি আর ভন্ডামিতে উজার হোল গাঁ।
পাশা যখন আশানিতে আশার ফল জোগায়।
নাশানাশির হুঙ্কারেতে রুধির বয়ে যায়।

স্পষ্টকথায় কষ্ট ভারি, স্রষ্টা হকচকায়।
দশটা এসে গুঁতিয়ে দিলে, দেশটা দুর্দশায়।
নাশকতার ছক কষছে বাসক পাতা চাই। 
বাঘা তেঁতুল রেগে গেলে পালাবার পথ নাই। 

উস্কানিতে উস্কে কেবল ফসকে পড়ে যায়
বাস্কো বন্দি ফাটকা ফন্দি গড়ায় নর্দমায়।
অট্টহাসি ফাঁটা বাঁশি কাঁসি ঘন্টার ঢং।
নাস্তানাবুদ হস্তিমূর্খ, চিৎপটাং  ভড়ং।।

হাসতে গিয়ে পাচ্ছে কাশি, পর্শী বেমক্কায়।
উস্কানিতে কান না দিয়ে, মুস্কান পেল্লায়।।
দস্তুর মেনে স্বস্তির শ্বাস খোসমেজাজে মন।
সুস্থ থাকুন সুখে থাকুন জন সাধারণ। ।



"ছন্নছাড়া"

আয় রে যারা, ছন্নছাড়া,বুদ্ধিহীনের দল!
তোদের নিয়ে বাঁধবো কোমর, তোরাই সম্বল।
বুদ্ধিমানের বুদ্ধি দেখে,
কপাল গেছে কালোয় ঢেকে,
নির্বোধেরাই বোধ জোগাবে, বিদায় গন্ডগোল। ।

সমাজ তোদের ভুল ভেবেছে, দুর্বল করে রেখে।
সব বিপদই তোদের মাথায়, বোঝ্ না এখন থেকে।
হাঁড়িকাঠে দিয়ে মাথা,
মার খাও তো যথাতথা,
শিরদাঁড়াটা হলেই সোজা, মেঘ রবে না ঢেকে।।

আলোয় আলোয় ভরবে ভুবন, জীবন হবে সোজা।
বুদ্ধিমান পাবেই ভয়, দেখবি তখন মজা।
তোদের ঢালে মুখোশখানি,
পড়বে খসে, অমোঘবাণী।
তোদের দলে নাম লেখালাম, উড়বে কালের ধ্বজা।

Post a Comment

0 Comments