জ্বলদর্চি

কবি সুবোধ সরকার-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়

কবি সুবোধ সরকার-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় 

প্রতিটি ভোর এসে আমাকে এখনও বলে,‘ উঠে পড়ো, লিখতে বসো’:সুবোধ সরকার

নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় 


(তাঁর কবিতা প্রথম থেকেই এক অদ্ভুত গতিময়তার ভেতর ছুটে চলেছে।২৮ অক্টোবর কলকাতা থেকে দূরে ১৯৫৮ খ্রীঃ নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সুবোধ সরকারের জন্ম।কৈশোরে প্রবেশ করেন নি, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সুবোধ পিতৃহারা হন।এক সাক্ষাৎকারে  সুবোধ বলেছেন একটি কাঁচের দোকানে জুতো দেখে কিনে দেওয়ার বায়না করলে,বাবার একটি চড় আসলে তাকে ভারতবর্ষ চিনতে শিখিয়েছে।'ঋক্ষ মেষ কথা ' থেকে যে যাত্রা শুরু 'জেরুজালেম থেকে মেদিনীপুর' হয়ে সেই যাত্রা আজও  'বেলুড় থেকে বাসনাপুর' পৌঁছতে চায়। সুবোধ সরকারের কবিতায় শ্লেষ প্রতিবাদ, অভিমান, জেদ সর্বোপরি কবিতার অতিরিক্ত অলংংকারহীনতার জন্য সুবোধের কবিতাকে অনেকে এন্টিপোয়েট্রি গোত্রের পর্যায়ভুক্ত করতে চান।কবিতার জন্য আমেরিকা,ফ্রান্স,গ্রিস,জার্মানি, চীন,রাশিয়া, ইস্তানবুল, তাইওয়ান সুবোধ ভ্রমণ করেছেন।সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য আকাদেমির ইংরেজি জার্নাল, ইন্ডিয়ান লিটরেচার।২০১৩ সালে সুবোধ সরকার তাঁর 'দ্বৈপায়ন হ্রদের ধারে ' কাব্যগ্রন্থের জন্য 'সাহিত্য আকাদেমি' পুরস্কারে সম্মানিত হন, এবং সম্প্রতি ২০২৫ সালে তিনি তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যকৃতির জন্য লাভ করেন 'রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার।'

নির্মাল্য: নমস্কার। আপনাকে স্বাগত।জ্বলদর্চির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর দীর্ঘদিনের আগ্রহ,আপনি তাঁর পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার দিন।কলকাতা এবং কলকাতা ছাড়িয়ে দূর মফসসলের কবিদের, মুখ্যত তরুণ কবিদের যে ভালবাসা আপনি পেয়েছেন,আজ সাতষট্টি বছর বয়সে এসে একে কি চোখে দেখেন?আপনার উচ্চতা,প্রভাব আজ  কি কখনও-কখনও, কোনও- কোনও ক্ষেত্রে এই আগ্রহগুলিকে ভালোবাসার পাশাপাশি সন্দেহের চোখেও দেখতে চায়?

সুবোধ:আমি কাউকে সন্দেহ করি না। আমি নিশ্চিত হয়ে কাঁধে হাত রাখি।ভালবাসি।কিন্তু তরুণ কবি হলেই ভাল হয়ে যায় না। আমি কবিদের ওপর ভরসা করি না। আমি আমার পাঠককে ঈশ্বর মনে করি। তাঁরাই আমার গরম ভাতের পাশে এক চিমটি নুন। আমি ওই নুনের জন্য লিখি। আমি সেইসব কবিদের জন্য লিখিনা যারা কুচুটে হয়। তিনতলায় প্রণাম করে একতলায় নেমে বলে, 'কেমন দিলাম?'
 তবে এটা একটা অংশ। আর একটা অংশ আছে যারা পড়াশোনা করে। দেশবিদেশের কবিতা পড়ে। শোনো একটা কথা বলি, আমরা কেউ লালন ফকির নই। লেখা পড়ে শিখতে হয় কি লিখব কি লিখব না।  যারা লেখাপড়া করে না, তাদের লেখা পড়লেই বোঝা যায়। তরুণ কবিদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভাল পাঠক।  ভাল পাঠক না হয়ে ভাল কবি হওয়া যায় না। একজন বীতশোক ভট্টাচার্য  আকাশ থেকে পড়ে না।“ও শিঙে জ্বলে :কোথায় জল? পায়ের তলে ধরণী” একদিনে এই সুষমায় পৌঁছনো যায় না। এই একটি লাইনেই লুকিয়ে আছে বাংলা কবিতার ঐতিহ্য। সত্তর দশকের এই সাধক কবিকে দেখে শিখতে হয়।তিনি নেই, সো হোয়াট! তাঁর  কবিতা আছে।

নির্মাল্য:  আজকের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম দেখলে বোঝা যায় ব্যক্তি সুবোধ সরকার, তাঁর আচরণ, কবি সুবোধ সরকারের থেকে অনেক বেশি আলোচ্য হয়ে উঠেছে।কিভাবে দেখেন এ বিষয়টা?আজকের সময়ে নিজেকেই কিভাবে দেখেন আপনি?

সুবোধ: চারদিকে এত ঘৃণা।  তবু প্রতিটি ভোর এসে আমাকে বলে’উঠে পড়ো, লিখতে বসো।’ ব্যক্তি আর কবিকে আলাদা করে দেখিনা আমি।তুমি ঠিকই বলেছো,সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি অনেকের আলোচনার বিষয় হয়েছি।কী আর করা যাবে, যিনি যেভাবে দেখতে চান আমায়!

নির্মাল্য : কবিতায় আপনি যা  লিখতে চেয়েছেন তার কতটুকু লিখতে পেরেছেন বলে মনে হয়?
এখানে একটা সহযোগী প্রশ্নও করি, সমস্ত বিষয়ই কী আপনার কাছে কবিতার বিষয় বলে বিবেচিত হয়?
সুবোধ :  আমি ঠিক নিজেও জানিনা, সত্যিই আমার লেখাপত্র কিছু হয়েছে কি না।লেখা আমার ভালোবাসা।তবে তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলি, যা লিখতে চাই, তার সবটা লেখা সম্ভব নয়, অন্ততঃ আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। আর সমস্ত বিষয়ও কবিতার বিষয় বলে আমার মনে হয় না। সকল কবির কাছেই, তা তিনি যে পর্যায়েরই হোন না কেন, অনেকদিন লিখছেন, সদ্য লিখছেন—এদের প্রত্যেকেরই একটা চয়েস আছে। তিনি জানেন তিনি এটা লিখবেন, ওটা লিখবেন না। এটা তার ভিতরের একটা পদ্ধতি। সেই অর্থে প্রত্যেক কবিরই একটা স্পেশালাইজেশন আছে। সুতরাং সব বিষয়ে বোধহয় লেখা যায় না। 

নির্মাল্য:গল্প বলার একটা ঝোঁক,পাঠকের কাছে, বিশেষত বাচিক শিল্পীদের কাছে আপনার কবিতার জনপ্রিয়তার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে অনেকে বিবেচনা করেন। কবিতায় এই গল্প বলার আয়াসকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করেন?কখনও কি গল্প লেখার কথা ভেবেছেন?

সুবোধ:  এটা সত্য, আমার অনেক কবিতায় অনেক ক্ষেত্রেই একটা গল্প থাকে।হতে পারে এটা আমার দোষ, হতে পারে এটা আমার গুণ!কিন্তু কবিতার ওই গল্পের আভাসটা কি শুধুই গল্প?তার কোনও কারুকাজ,সূক্ষ্মতা নেই?অথবা বাংলার বর্ণনামূলক গল্প যেভাবে লেখা হয়,এটা কি ঠিক হুবহু সেরকমই কোনও লেখা!পাঠক বলতে পারবেন।
 আসলে গল্পটাকে আমি আমার মতো করে ভাঙি।ফলে সেই গল্পের ছোঁয়া কবিতার ক্ষতি করে না বলেই আমার বিশ্বাস। এখন কথা হল,কবিতায় একজন গল্প রাখতেও পারেন নাও পারেন, বিবৃতি দিতে পারেন নাও পারেন, কেউ স্লোগান লিখতে পারেন নাও লিখতে পারেন, একই অবচেতনের কথা লিখতে পারেন নাও পারেন—কিন্তু যে যাই লিখুক না কেন,লেখাটাকে কবিতাই হতে হবে। আমি অ্যান্টি-পোয়েট্রি লিখি বলে যা প্রচার, যা অভিযোগ— সে যাই লিখি, মূল জায়গাটা হচ্ছে যে সেটা শেষপর্যন্ত কবিতা হিসেবে মানুষকে স্পর্শ করছে কিনা। যদি স্পর্শ করে তাহলে আমার ভালো লাগবে। আর যদি স্পর্শ না করে তাহলে হাজার রহস্য লিখেও লাভ নেই।হাজার গল্পহীন বাস্তবতা—হাজার ফটোগ্রাফিক, হাজার সুররিয়ালিস্টিক কবিতার মতো করে লিখে অথবা হাজার কবিতার গল্প লিখেও কোনও লাভ নেই।আমি মনে করি কবিতা লেখার পথ অনেক হতে পারে,কিন্তু শেষপর্যন্ত  তাকে হয়ে উঠতে হবে কবিতাই।
  আর হ্যাঁ আলাদা করে গল্প আমি সেভাবে লিখিনি ঠিকই,কিন্তু কে বলতে পারে কখনও হয়ত লিখেও ফেললাম!

নির্মাল্য: বিদ্রোহ প্রতিবাদ সোচ্চার এইসব পেরিয়েও আপনার কবিতার মধ্যে অদ্ভুত এক রোম্যান্টিকতা অন্তঃপ্রবহমান!এংগার আছে,আবার একধরনের রোম্যান্টিক এংগুইশ যেন কোথাও আচ্ছন্ন হয়ে থাকে আপনার কবিতার ভিতর।নিজের কবিতার রহস্য কখনও কি খুলে দেখেছেন?

 সুবোধ:  নির্মাল্য নিজের কবিতার রহস্য নিয়ে বলা মানে নিজের শ্লীলতাহানি করা। তুমি যেভাবে আমার কবিতাকে দেখ, আর একজন কবি সেভাবে দেখেন না। তোমার দেখাটাকে আমি সম্মান জানিয়েই বলব, আমার ভেতরে একটা নৈরাজ্য আছে। ছারখার আছে। একটা সংহত অ্যানার্কি আছে। কবিতা লেখার জন্য কোনও ইডিওলজি  লাগে না। কোন দর্শন লাগে না। কবিতা লেখার জন্য লাগে ধুলো। যার হাতে পায়ে ধুলো নেই তার পক্ষে কবিতা লেখা সম্ভব নয়।  আমার ধুলোকে যদি তুমি 'রোম্যানটিক এংগুইশ' বলো তাতে আমার কবিতা দরবারি কানাড়া হয়ে উঠবে না। চল্লিশ বছর আমি প্রতিবাদ লিখছি। এখনো যদি না লিখি তখন মুহুর্মুহু গাল খেতে হয়। মাথা পেতে ঢিল নিতে হয়। কবির নিয়তি কবি লেখা ছেড়ে দিয়ে গুহায় ফিরে যেতে পারে না। কবির জন্য  'ইনফারনো' হল সেই  জায়গা যেখান থেকে কবিতা না লিখে পারা যায় না।

নির্মাল্য: আপনি সাহিত্য আকাদেমির 'ইন্ডিয়ান  লিটেরেচার' সম্পাদনা করছেন। তামিল,মারাঠী কন্নড়, ওড়িয়া অথবা অন্যান্য ভারতীয় ভাষার কবিতার সঙ্গে বাংলা কবিতার বিশেষ কি পার্থক্য নজরে এসেছে আপনার?

সুবোধ : আমি 'ইন্ডিয়ান লিটরেচার ' সম্পাদনা করেছি।এই  ইংরেজি পত্রিকা, হয়তো সাহিত্যের বিচারে ভারতবর্ষের শীর্ষ-পত্রিকাগুলির একটি। কিন্তু অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় কবিতা সম্পর্কে আমি বেশি উপকৃত হয়েছি তার একটু আগেই। আমাদের যে পত্রিকা 'ভাষানগর'— মূলত সেখান থেকেই। এর মূল ফোকাসটা ছিল অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় কবিতা, যেমন মালয়ালিতে কি লেখা হচ্ছে, কন্নড়ে, কোঙ্কনীতে, মারাঠীতে কারা ভালো লিখছেন— সেগুলি চিহ্নিত করে, তার অনুবাদ প্রকাশ করা। সাহিত্য আকাদেমির পত্রিকাটি বলতে পারো আমার ক্ষেত্রে তারই একটি উন্নত সম্প্রসারণ। যদিও মল্লিকা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায়, তখন ওই কাজ ছেড়ে আমি দিল্লি থেকে কলকাতায় চলে আসি। তাই দুটো জায়গাই আমার কাছে আনন্দের। আর বাংলা কবিতা সম্বন্ধে আমাদের কারোর-কারোর ভিতর একটা বদ্ধ ধারণা  মাথায় রয়ে গেছে, যে বাংলা কবিতাই বুঝি শ্রেষ্ঠ কবিতা ভারতবর্ষের, (অবশ্য এ ধারণা আমাদের তৈরি হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে, কিন্তু তাঁকে ভাঁড়িয়েই আর কতদিন খাবো আমরা?) যাইহোক এই বদ্ধ ধারণাটুকু সরিয়ে নিলেই  দেখব, অন্যান্য ভারতীয় ভাষায়, বিশেষ করে মারাঠীতে,প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে বর্তমানে, অন্ততঃ বিগত পঁচিশ বছরের, গোটা ভারতীয় সাহিত্যের নিরিখে একটি বড় পরিসর তাঁরা পেয়ে গেছেন, যা এই মুহূর্তে সর্বভারতীয় স্তরে বাংলা কবিতার নেই। বাংলা কবিতা খানিক পিছিয়েই বলা যায়। 

নির্মাল্য :'উদ্দাম রজনীর কাব্য' র ভরকেন্দ্র ইতিহাস এবং প্রেম।এ আপনার লেখা প্রথম কাব্য-উপন্যাস।লক্ষ করেছি এরপর থেকে অন্তত 'সা' পর্যন্ত,প্রেম যেন মাঘের শীতের মতো আপনার কবিতায় জাঁকিয়ে বসল।কি বলবেন?

সুবোধ: 'উদ্দাম রজনীর কাব্য ' একটি অতি উচ্চাকাঙক্ষা আমার। সে জন্যই ব্যর্থ। কেউ পড়ল না। কেউ পুছল না। কোনও  একটা জায়গায় আমি গন্ডগোল করে ফেলেছি। সেটা কী সেটা জানার চেষ্টা করছি। দোষ আমার। লেখার গুণে অনেক লেখা দাঁড়াতে পারে না।আবার লেখার দোষ থাকা সত্ত্বেও কোনও কোনও লেখা উঠে দাঁড়ায়।  গুণ বা দোষে নয়। লেখাটা অন্য কোন নিয়তির সন্তান হয়ে থেকে যাবে।আর প্রেম তো সত্যিই এক অপূর্বতম অনুভূতি।সে যদি আমাকে লিখিয়ে নেয় কিছু,তাতে দোষ কী!

নির্মাল্য:স্যাফো থেকে লোরকা,প্রেম,সমকাম।দেশ পত্রিকার গদ্যে আপনি প্রশ্ন করেছেন,একজন কবি হোমসেকস্চুয়াল বলে খুন হয়ে যাবেন?সমকাম অবশ্য এখনও আমাদের এখানে স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয়নি।সাহিত্যে সমকামকে আপনি কিভাবে দেখেন সুবোধদা?

সুবোধ:বিশ্বের অনেক দেশে সমকাম স্বীকৃত। গিনসবার্গের একটি প্রেমের কবিতা পড়তে- পড়তে আমি আমার প্রেমিকার মুখ কল্পনা করে পড়েছিলাম । পরে যখন জানতে পারি গিনসবার্গের প্রেমিকা হলেন পিটার অরলভস্কি। ওরা গে। তারপর যখন কবিতাটা পড়লাম তখন আমার চোখের সামনে একটা নতুন জগৎ উন্মোচিত হল।সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক অধ্যাপক ধরে-ধরে দেখিয়েছেন যে শেকসপিয়রের সনেটগুলো আসলে কোনও নারীর প্রতি লেখা নয়  একজন পুরুষের প্রতি লেখা। অথচ আমরা পরীক্ষার খাতায় চারশ বছর ধরে লিখে এলাম ভুল তথ্য। নম্বরও পেলাম। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে অক্সফোর্ডেই পড়াতে গেলাম।সমকামের কবিতায় এখন সাদা পৃষ্ঠারা ভরে গেছে। স্যাফোর সময়ে যা ছিল লজ্জার তা এখন আদালতে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলতে পারছে আমি এসে গেছি।

নির্মাল্য:সম্পাদকের শব্দসংখ্যার সীমা মনে রেখে এবারে  একটি অন্যরকম প্রশ্ন করি সুবোধদা। অবশ্য এ প্রশ্ন আমি আগেও আপনাকে করেছি।জানতে চাই, মৃত্যুকে আপনি কিভাবে দেখেন?
মৃত্যু কি এক ধরনের অনস্তিত্ব আপনার কাছে?

সুবোধ:তুমি আগেও আমাকে এ প্রশ্ন করেছ আর আগেও উত্তরে  যা বলেছি, এখানেও তোমাকে তাই বলি।মৃত্যুকে আমি এক গ্লাস জল হিসেবে দেখি। রাত দুটো। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাবে। দরদর করে ঘামছি। বাড়িতে কেউ নেই। আমি একা কুড়ি তলার ঘরে। রোরো নেই। রোরো আমেরিকায়।সে তখন দিনের আলোয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি মেক্সিকান ছাত্রীর সঙ্গে কফি খাচ্ছে। আমি রোরো বলে ডাকলাম। তার কফি কাপ থেকে হয়ত একটু কফি চলকে পড়বে।আমি কুড়ি তলার ঘরে,আমার হাত এগিয়ে চলেছে ঢাকা দেওয়া একটা গ্লাসের দিকে। এক গ্লাস জলের দিকে।আমার কাছে মৃত্যু ওই এক গ্লাস জল।মৃত্যুকে বেশি পাত্তা দিলে মৃত্যু ঘাড়ে উঠে বসে। আমি দিই না। কখনো দিইনি। কিন্তু এবারের জন্মদিনে লিফটে একজনের সঙ্গে দেখা হল। লোকটিকে জিজ্ঞাসা করা হল কার কাছে যাবেন  সে কোন নাম বলতে পারল না। সে কোথা থেকে এসেছে তাও সে জানে না। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, তাহলে আপনি আমাদের লিফটে কেন উঠেছেন?  তাও সে জানে না।শুধু একঝলক মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করল সে।এই লোকটির নাম মৃত্যু। নাকি মৃত্যুঞ্জয়?

(এই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ বণানী পত্রিকায় এবং ঋকবেদ পত্রিকায় গৃহীত।)
🍂

Post a Comment

1 Comments

  1. কবি আর কবির কথপোকথন ভালো লাগল।তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রশ্ন প্রত্যাশা করেছিলাম।

    ReplyDelete