অয়ন মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা
শিকলের মহাকাব্য
আত্মবন্দির উপাখ্যান
শিকলটা কে বাঁধল—
সে নিয়ে আজও তর্ক।
কেউ বলে, সরকার,
কেউ বলে, সংসার,
কেউ বলে, নিজেরই দোষ।
আসলে ব্যাপারটা সোজা—
আমি নিজেই একটু একটু করে
শিকল বানালাম—
অফিসে যাওয়ার জন্য টাই,
বাজারে যাওয়ার জন্য ব্যাগ,
ফেসবুকে যাওয়ার জন্য লাইক,
সবকটাই লোহার আংটা।
দিন গেলে দেখি
শিকলই মানুষকে হাঁটাচ্ছে,
আমরা শুধু কাগুজে ঘুড়ি।
হাস্যকর না?
হাসি আটকাতে গিয়ে
গলা জড়িয়ে আসে।
শেষমেশ শিকল ভাঙব বলে
আরেকটা শিকল কিনি,
নতুন গাড়ি, নতুন ফ্ল্যাট,
নতুন কষ্টের ইএমআই।
অতএব মুক্তি নেই—
শুধু শিকলের দোকানদাররা
রোজ কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে।
🍂
ডিজিটাল জপমালা
হাতের মণিবন্ধে বাঁধা ঘড়ি
আসলে ঘড়ি নয়—
ওটা আমার প্রহরী,
আমার নিঃশ্বাস গুনে রাখে,
হৃদয়ের বীট রেকর্ড করে,
আমার ঘুমকে মাপজোখ করে বাঁধে।
প্রার্থনার মতো
প্রতিদিন সকালে
অ্যালার্মের সামনে মাথা নুইয়ে বলি—
“হে সময়দেবতা,
আমায় আজও বাঁচতে দাও,
কিন্তু স্কুল যেতে দেরি করিও না।”
দুপুরে নোটিফিকেশনের ঘণ্টা বাজে—
ব্রাহ্মণের শাঁখের মতো,
ফেসবুকের পোস্ট মনে করায়,
আজও আমি ভিক্ষুকের মতো
লাইক চাইতে ভুলিনি।
সন্ধ্যাবেলায়
স্মার্টফোনের স্ক্রিন হয়ে ওঠে প্রদীপ,
আমি ধ্যান করি—
কোনও অদৃশ্য দেবতার নয়,
নিজের সেলফির।
পিঁপড়ের শহর
আমরা সবাই ব্যস্ত—
হাজার লেনদেনে,
অজস্র ছোটখাটো দৌড়ে।
কে কোনখানে যাচ্ছে,
সে নিয়ে কোনও গুরুত্ব নেই;
গুরুত্ব কেবল এই—
চলতেই হবে।
মেট্রোরেল যেন
এক বিশাল পিঁপড়ের রাস্তা,
মানুষেরা সাদা-কালো ঝাঁক,
কারও চোখ নেই,
কারও মুখ নেই,
শুধু চলাফেরার এক অদ্ভুত অনুশীলন।
রাত্তিরে বাড়ি ফেরা মানে
শুধু নিজের খোলসে ঢোকা,
যেমন পিঁপড়ে ঢোকে বিলের ভেতর।
সকালে আবার বেরোয়,
আবার একই রাস্তা,
একই ভিড়,
একই নিরর্থক শৃঙ্খলা।
তবে পার্থক্যটা আছে—
পিঁপড়ের শহরে অন্তত
খাদ্য মজুত থাকে,
আমাদের শহরে
4 Comments
খুব সুন্দর লেখা। সময়োপযোগী ও বটে
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteএকদম অন্যরকম ভাবনায় লেখা, বেশ লাগলো পড়তে।
ReplyDeleteধন্যবাদ
Delete