অয়ন মুখোপাধ্যায় এর কবিতা গুচ্ছ
পাহাড়ের ভদ্রলোকেরা
পাহাড় চিরকালই শহরের পোষা জন্তু,তার গলায় ট্যুরিস্টদের বকলস বাঁধা আছে।
তুমি তার গায়ে হাত বুলিয়ে বলো, “কী সুন্দর!”
সে কিছু বলে না—কারণ সে জানে, সৌন্দর্যের নাম করে
তুমি কেটে নিয়েছ তার বুকের জঙ্গল।
পাহাড় নরম থাকে—যেন অভ্যেসে মিশে গেছে নির্যাতন।
তুমি যখন তার কোল ঘেঁষে হাঁটো,তখন সে মাটির নিচে ডুবে যায়—তার নিচে ঘুমোয় গাছের ছায়া,জলধ্বনি, শিশুর কণ্ঠ,
আর সেই পুরনো দেবতাদের মুখ
যাকে একদিন তোমরাই বলেছিলে প্রাকৃতিক আশ্চর্য।
🍂
ছবি তোলার আগে
এখন পাহাড় আমাদের কাছে অভিনয় করে—কুয়াশা তার পর্দা, বৃষ্টি তার সংলাপ।
তুমি যখন তাকাও, সে মুখে আলো আনে,
তুমি চলে গেলে সে কেঁদে ওঠে বৃষ্টিতে।
সে জানে—তুমি কেবল ছবি খুঁজতে এসেছ,মানুষ না।
তুমি ফিরে যাবে,ফেলে যাবে তোমার গন্ধ, তোমার প্লাস্টিক,
আর কিছু অব্যবহৃত শ্বাস।
পাহাড়ের ভিতর এখন ঘুমোয় মৃত পাথর,
যাদের কণ্ঠে ধ্বনি ছিল নদীর মতো।
সেইসব কণ্ঠ একদিন
তোমার জানালায় ঢুকে পড়বে—
ভিজিয়ে দেবে তোমার ঘুম,
আর তুমি ভাববে, কে কাঁদছে বাইরে।
অতিথির সংলাপ
আমি পাহাড়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম
“তুমি কথা বলো না কেন?”
সে বলেছিল,
“যতক্ষণ চুপ থাকি, মানুষ হাসে।”
তার গলায় জড়ানো শিকড়,
তার চোখে রাত্রির ছায়া।
আমি বললাম, “তোমার ঘর ভেসে যাচ্ছে।”
সে বলল,
“তোমাদের ভাষায় একে বলে বিপর্যয়।”
তারপর দেখি—
নদী মুখ খুলে বলছে মানুষের স্বরে,
“আমাদের ঘরেও উৎসব ছিল একদিন।”
তারপরই নেমে এলো নিস্তব্ধতা—
যেন বৃষ্টি আর শোক একই শরীরের দুই হাত।
মোমোর দোকান
পাহাড়ের পাদদেশে যে দোকান টা আছে,
সেখানে এখন বিক্রি হয় মানুষের স্মৃতি।
একটা মোমো কামড় দিলে
শোনা যায় শিশুর কান্না,
এক চুমুক স্যুপে
ভাসে স্কুলঘরের কাগজ।
তুমি খেয়ে বলো— “স্বাদ ভালো।”
তোমার জিভে তখনও লেগে থাকে
একটি ভাষাহারা শহরের গন্ধ।
বিকেলে দোকান বন্ধ হয়—
বৃষ্টিরা এসে বসে বেঞ্চে,
তারা কাঁদে না, শুধু ভিজে যায়,
যেন এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃশব্দ আয়োজন।
চাঁদের হোমস্টে
রাতে চাঁদ নামে পাহাড়ে,
একটি ছাদের উপর বসে
চা বানায় শিশির দিয়ে।
বজ্রপাত তার চুলা,
মেঘ তার হাঁড়ি।
চাঁদ জানে, এখানে এখনো
কিছু অতিথির জায়গা খালি আছে।
তারা হয়তো কাল আসবে,
অথবা কোনোদিনই আসবে না।
নিচে নদী হাঁটছে নিঃশব্দে—
তার মুখে ঘরবাড়ির ছাই,
তার গায়ে খুদে হাতের রেখা।
তবু চাঁদ আলো দেয়,
যেন কিছুই হয়নি পৃথিবীতে।
পাহাড় হাসে—
একটা ধ্বসের নিচে থেকে,
একটা দুঃখের ভিতর থেকে,
যেন বলছে—
“আমি তো শুধু মাটি,
0 Comments