জ্বলদর্চি

ঘুমিয়ে গেছে গানের পাখি (একুশ তম পর্ব) /চিত্রা ভট্টাচার্য্য

ঘুমিয়ে গেছে গানের পাখি        
(একুশ তম পর্ব) 

চিত্রা ভট্টাচার্য্য


ঝুমুর গানে কবি নজরুল

বাংলা লোকগীতির ধারায় আলোচনা প্রসঙ্গে কবির অবদান নিয়ে অনুসন্ধানে অলিগলির পথে চলতে চলতে এক উন্মুক্ত জনজীবনের রাজ্প্রাসাদের দ্বারের ভিতর প্রবেশ করে পেলাম রাঢ় বাংলার লোকগীতি 'ঝুমুর গান।  ভাটিয়ালী বা ভাওয়াইয়া গীতের মতই ঝুমুরের এই গান গুরুত্বপূর্ণ আসনের দাবী রাখে।ঝুমুর গান কিন্তু ভাওয়াইয়া বা ভাটিয়ালীর মত নয়।  এই  গান ত্রিপদী ও পয়ার ছন্দে রচিত মূলত ভাবের গান --ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং ওড়িশার কিছু অংশে প্রচলিত। ভাওয়াইয়া গানে নারী মনের কান্না প্রকাশ পায়। পার্থিব সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, প্রেম-বাসনা, বিরহ-যাতনা, মিলনাকাঙ্খার বর্ণনা ও বিশ্লেষণ থাকে। কিন্তু এই গানের সুর করুণ, দীর্ঘ টানা সুর ও সুরের ভাঁজ, হ ধ্বনির উচ্চারণ এই গানের বৈশিষ্ট্য। লোকসংগীত ও লোকনৃত্যের একটি বিশেষ ধারা ঝুমুর।  আদিতে এটি সাঁওতালদের গান ছিল, যদিও এখন কুর্মী, ওরাওঁ, ভূমিজ, মুন্ডা সহ বিভিন্ন কৃষি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এইগান বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছে । 

আঞ্চলিক করম, টুসু উৎসবে এবং  বিভিন্ন সামাজিক উৎসবের সময় বন্দনার মত এই গান গাওয়া হয়। লোকায়ত সুরকে আশ্রয় করে কাজী নজরুল ইসলামের লোকধর্মী গান একান্তই তার মৌলিক রচনা, সুরের আশ্রয়ে কখনো ভাটিয়ালি কখনো বা ঝুমুর আবার কখনো বা ভাওয়াইয়া ইত্যাদি লোকগানের বিভিন্ন ধারার সুর সম্মিলিত হয়েছে তাঁর সৃষ্টিতে । ঝুমুরগানের ঢঙ্ অবলম্বনে কবি  নজরুল সর্বাধিক গান রচনা করেছেন। বাংলার মাটির একান্ত আপন ঝুমুর গীতে তাঁর রচিত কয়েকটি জনপ্রিয় ঝুমুর অঙ্গের গান এই প্রসঙ্গে মানস লোকে সোচ্চার হয়ে উঠছে  :--
 ''রাঙ্গামাটির পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি,বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো, মন লাগে না কাজে লো,'' রইতে নারি ঘরে ওলো প্রান হলো উদাসী লো ।"
  রাঢ়অঞ্চলের লালমাটির পথে পথে বাতাসে রঙ্গীন নেশায় শাল পিয়ালের বনে দোলা লাগে নোটন খোঁপার ফুলে। মাদলের বাজনার ছন্দে মন খুশিতে আন্দোলিত মাতাল চাঁদের আলোয় প্রিয়জনকে বলবো ভালবাসি লো।

অথবা 

.নাচের নেশার ঘোর লেগেছে নয়ন পড়ে ঢু’লে লো
বুনোফুল পড়লো ঝ’রে নাচের ঘোরে
দোলন-খোঁপা খুলে (লো) ---ঝুমুরের এই গান টি তে সারাদিন কাজের শেষে রাতে দলগত ভাবে মেয়েদের নাচ এবং ছেলেদের গানের চিত্র স্পষ্ট। নৃত্যের ছন্দে সকলে এগোয় আবার পায়ে পায়ে পিছিয়ে যায়। নাচের নেশার ঘোর কাটলেও মনে পড়বে বাঁশরিয়ার মদির টুলটুলে চোখ দু’টিকে।

কবি নজরুল রচিত আরেকটি সর্বজন বিদিত ঝুমুরের গান ---  
''চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিস রে
        চোখ গেল পাখি (রে)
        তোর ও চোখে কাহার চোখ পড়েছে নাকি রে
        চোখ গেল পাখি (রে)''

ঝুমুর অঙ্গের প্রতিটি গানেই সুরে-তালে-ছন্দে সাঁওতালী বা আদিবাসী নারীদের আবেগ ও অনুভূতির স্পর্শ পাওয়া যায়। প্রতিটি গানের কথা ও সুরে ঝুমুরের ঢঙ্ স্পষ্টভাবে স্পন্দিত। কবি নজরুলই প্রথম এই ঢঙটিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে তাঁর গানে ব্যবহার করেছেন। তিনি পাতালপুরী বানীচিত্রের জন্য সাঁওতালী ঢঙে ঝুমুর গান রচনা করেছেন এবং বাংলা গানের নতুন একটি ধারার আবিষ্কার করলেন তাঁর সৃষ্টির মনোরঞ্জনের মহিমায়  ।
 
🍂

 বাংলা ঝুমুরে কবির কল্পনায় রচনা করলেন লাজুক গৃহবধূ তার মনচোরার কথা মনে করার সময়  গৃহকর্মে  আনমনা,হয়ে তার পাস্তা ভাতে লবণের বদলে হলুদ দিয়ে ফেলে সে গঞ্জনা সহ্য করে ঘরে বাইরে। প্রেমিক মানুষটি লাঙ্গল ও কাস্তে হাতে মাঠে গিয়েছে। মাঠে তাকে খুঁজে না পেয়ে বিফলমনে চোখের জলই তার সম্বল হয় । কবি তাঁর প্রেমিকা গৃহবধূটির মুখে অসামান্য লৌকিক উপমার ব্যবহার করে গানটিকে একেবারে লোকজীবনের নিজস্ব সম্পদ করে তুলেছেন।
‘তেল মেখে কি গায়ে তোরা
পীরিত করিস মনোচোৱা,
ধরিতে কি না ধরিতে যাস রে পিছলি’।
(‘ও দুখের বন্ধুরে, ছেড়ে কোথায় গেলি’)
সাঁওতালী ঝুমুরে প্রেমকথা এসেছে লৌকিক জীবন বোধ থেকে । যেখানে প্রিয় তার – প্রেমিকার মাথায় পরিয়ে দেয় ধুতুরা ফুল, যেখানে প্রিয়াকে সাজানো হয় বাবলা কুঁড়ির নাকছাবিতে , কুঁচের চুড়ি আর ঝুমকো দুল দিয়ে। এমন পাগল করা প্রিয়ের পিরিতির জন্যই তো সাঁওতালী মেয়ের ঘরে ফেরাও দায় হয়। 
(“কে দিল খোঁপাতে ধুতুরা ফুল লো’)। মহুয়ার মদের নেশায় শুধু সাঁওতাল সমাজ বিভোর নয়, কবি প্রকৃতির বুকেও এনেছেন সেই নেশার ঘোর।
  
 লোকসংগীত গবেষক করুণাময়,গোস্বামীর মতে  ”ঝুমুর গানের একটা জমজমাট আনন্দ আছে, এক ধরণের ছন্দ দোলা আছে যা হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে মনকে সজাগ করে তোলে। এর সংগীতরূপ বাউল ভাটিয়ালির মতো দীর্ঘ সুর রেখার সাহায্যে গীত নয়, টুকরো টুকরো সুরে এর রূপ রচিত। নৃত্য দোদুলতা এর অবিচ্ছেদ্য অংশ”। ''ঝুমুর গান সাঁওতালদের গান হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের জীবনযাত্রা, কাহিনী নিয়ে রচিত এই আবেগ-জাত গান।  মূলত আদিবাসী সংগীত হলেও সাঁওতালদের মাধ্যমে ঝুমুর বাংলা গানের অন্তর্গত।  বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের সীমান্তে বা তার ভিতরে সাঁওতালদের সঙ্গে বাংলা লোকসংস্কৃতির সংযোগ ঘটলে ঝুমুরের ধারা বাংলা লোকগীতিতে সংক্রমিত হয়”।  

   রাঢ়বাংলার রুক্ষ রাঙ্গা মাটিতে কোঁদাল চালিয়ে বা চাষের ক্ষেতে দ্রুত লয়ে মাটি কোপাতে ও  শিকারের ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে এ গানের ছান্দসিক পরিবেশন। জীবিকার গতি ও ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে সঙ্গীত, তা কখনোই নদী-বিধৌত ভাটিয়ালী অথবা পার্বত্য এলাকার ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের সুরের মত নয়।সহজ সরল কথা ও সুরে দলগতভাবে নেচে গেয়ে এই গান পরিবেশিত হয়।  
 
লোকমুখে প্রচলিত ঝুমুরের আর একটি গান ---- .
 
তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে"একা বসে থাকি।
তুমি যে পথ দিয়ে গেছ চলে তারি ধুলা মাখি’ হে --- 
   
এই গানটির  আঙ্গিকে কবি রচিত একটি বিখ্যাত নজরুলগীতি,-- এক প্রেমিকাকে তার প্রিয়জনের চলে যাওয়ার পর তেপান্তরের মাঠে একাকী বসে থাকার এবং পথ হারানোর বেদনার কথা কবি আপন অনুভূতির স্পর্শে প্রকাশ করেছেন ।এখানে তেপান্তর' মানে রূপকথায় বর্ণিত অজানা, অনেক দূরবর্তী প্রান্তর "তিন প্রান্তরের শেষ সীমার পর যে প্রান্তর" বা অনেক দূরে অবস্থিত বিস্তীর্ণ, জনহীন অঞ্চল। যেখানে একা বিরহিনী প্রিয়া তার প্রিয়তমের চলে যাওয়ার পথে চেয়ে পড়ে থাকে ধূলি ধূসরিত হয়ে ।  প্রিয়জনের স্পর্শ পেতে অপেক্ষায়  দিনগুনে মনের জ্বালা জুড়াতে চায়।   
 
তাঁর রচিত আরেকটি ঝুমুর গানের কথা মনে পড়ে। 
 হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল
এনে দে এনে দে নৈলে রাঁধব না, বাঁধব না চুল।
কুস্‌মী-রঙ শাড়ি, চুড়ি বেলোয়ারি
কিনে দে হাট থেকে, এনে দে মাঠ থেকে
বাবলা ফুল, আমের মুকুল, নৈলে রাঁধব না, বাঁধব না চুল।।
তুর্‌কুট্‌ পাহাড়ে শাল-বনের ধারে বস্‌বে মেলা আজি বিকাল বেলায়,.

দলবদ্ধ হয়ে পথে চলে সকাল হতে বেদে-বেদেনী পায়ে  নূপুর বেঁধে সেখানে যাবে। বাউলকবি কাজী নজরুলের এটি একটি জনপ্রিয় লোকগান, যেখানে গানটিতে যুবতী বঁধু তার প্রিয় দয়িতের কাছে  আব্দার করে হলুদ গাঁদা এবং রাঙা পলাশ ফুল চাই  না এনে দিলে সে অভিমানে চুল ও বাঁধবে না বা রাঁধবে ও না। কবির এই গানে প্রকৃতি ও ধরা পরেছে আপন মুক্তির খেয়ালে। 
 শীত ও বসন্তের প্রতীক হলুদ গাঁদা ও রক্তিম পলাশ ছাড়াও ,"কুস্‌মী-রঙ শাড়ি, চুড়ি বেলোয়ারির সাথে  তার চাই "আমের মুকুল", "বাবলা ফুল"সব যে  তার অঙ্গ রাগের শোভা । 

 সে সময়, আরেকটি গানে দেখা যায়  মাতাল ছুঁড়ির নাচের তালে চাঁদও বেসামসাল হয়ে উঠেছে।

 নিম ফুলের মউ পিয়ে
ঝিম হয়েছে ভোমরা।
মিঠে হাসির নূপূর বাজাও
ঝুমুর নাচো তোমরা।।
কভু কেয়া-কাঁটায়,
কভু বাবলা-আঠায়
বারে বারে ভোমরার পাখা জড়ায় গো–পাখা জড়ায়
দেখে হেসে লুটিয়ে পড়ে
ফুলের দেশের বউরা।। 

মহুয়ার নেশায় বিভোর রাত্রিতে প্রকৃতি ও সাঁওতাল সমাজকে কবি করেছেন একাকার (‘চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনি ঝিনি বাজে লো’)। এমনই এক মাতাল করা বসন্তের দিনে ভ্রমরার যখন নিমফুলের মৌ পিয়ে ঝিম ধরে, তখন কবি আহ্বান জানিয়েছেন ঝুমুর নাচের (‘মিঠে হাসির নূপূর বাজাও/ঝুমুর নাচো তোমরা_)।  কখনো ঝুমরা নাচ নেচে যে সাঁওতাল কালো ছেলেটি আসে, তার আড় চোখের দৃষ্টিতে চাঁদও ‘আউরে’ যায়।  
 তাঁর গানে প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যপট, যা মানব মনে জাগায় মিলনের অনুভূতি। লোকজীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কবি তাঁর ঝুমুর গানে এনেছেন বেদের গান, তাদের জীবনকথা ও অলৌকিক বিশ্বাসের হাত ধরে কখনো কবি বিচরণ  করেছেন তাদের প্রেম সাম্রাজ্যে, কখনো বা তাদের সাপখেলানোর চমকপ্রদ ভঙ্গীতে তিনি বর্ণনা করেছেন প্রাকৃতিক রূপ।  
 কাজী নজরুলের রচিত বেশির ভাগ ঝুমুর গানগুলি তে দেখাযায় ঝুমুরের মেপে চলা সুরের চলনে সাঁওতালী ঝুমুর ও বাংলা ঝুমুর-একাকার হয়ে মিশে গিয়েছে। ঝুমুর গানে নরনারীর  প্রেমের সাথে কবি  রাধাকৃষ্ণের প্রেম-লীলাকে ও মিশিয়েছেন । আধ্যাত্মিক জগতের রাধাকৃষ্ণ নেমে এসেছেন রাঢ়বাংলার রুক্ষ পাথুরে মাটির জীবনধারায় । গানের ভাবে, ভাষায় ও সুরে অসামান্য দক্ষতায় কবি প্রেমকথার মাঝে এঁকেছেন মানুষের বাস্তব জীবনের ঘরোয়া চিত্রকে। প্রেমিকা কখনো কয়লাখাদানের কামিন-তার মনের প্রেম জানাতেও কবি নিয়ে এসেছেন কৃষ্ণকথা। কবির কল্পনায় কৃষ্ণ যেন হয়েছেন কয়লাখাদেরই কোনো এক কুলি, যে সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে দুমুঠো খাবার সংস্থান সহজে করে উঠতে পারে না।

 খুব ছোট বয়স থেকেই সৃষ্টির প্রেরণা কবি কে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। ‘আমরা দেখি লোকগানে নজরুলই প্রথম আদিবাসী গানের স্তর থেকে ঝুমুর ঢঙ ব্যবহার করে, বাংলা গানে ব্যতিক্রমী ধারা সৃষ্টি করেন। কয়লা খনির জীবন, নর নারীর ভালোবাসা, রাধাকৃষ্ণ প্রেমকথা, প্রাকৃতিক শোভা প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ে রচিত নজরুলের অসংখ্য গানে ঝুমুরের এই দোলা লাগানো সুর, আমাদের উদ্বেলিত করে। এই ধারার উল্লেখযোগ্য একটি গান ‘চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে লো।’খোঁপায় দোলে বন ফুলের কুঁড়ি ''।
  কবি বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রভাব, পূর্ববঙ্গের লোকসংগীতের নান্দনিকতা তাঁকে  লোকসংগীত রচনায় প্রভাবিত করেছিল। 
 
বিস্ময়কর প্রতিভা ও সাহিত্য সংগীতের নিপুন দক্ষতা নিয়ে  কাব্য সাধনার এক পর্যায়ের সংগীত সৃষ্টির কাজে  ব্রতী হলেন কবি। নতুন কথা ও সুরের পরীক্ষার দ্বারা গড়ে তুললেন এক বিশিষ্ট ধারা, যার ভিত ছিল লোকসুর। সাংগীতিক কুশলতা ও বিষয়বস্তুর উপস্থাপনায় দিলেন এক নতুন রূপ। যা অনন্য এবং যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের সাংগীতিক স্বকীয়তা এবং মৌলিকত্ব  তার সৃষ্টিকে সবসময় স্বতন্ত্র করে রেখেছে। আর এই জন্যই কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের লোকায়ত সুরের গান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ স্থানের অধিকারী হয়ে চিরকাল থাকবে।

তথ্য সূত্র --আমার নজরুল / লেখক আব্দুল মান্নান সৈয়দ।
নজরুল গীতি / গবেষক করুণা ময়  গোস্বামী। 
নজরুল রচনাবলী।

Post a Comment

0 Comments