জ্বলদর্চি

তপস্যা /পুলককান্তি কর





তপস্যা

 পুলককান্তি কর


এক মনে গান শোনা শেষ করে আবার একবার চালিয়ে দিল সংবিধা। ওর মেয়ে মাম্পি এবার বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এই নিয়ে পাঁচবার শুনলে মা। কী এমন আছে গানটায়?’ 

– কেন? তোর ভালো লাগেনি?

– ভালো লাগবে না কেন? কথা সুর ভালো। তাই বলে এতবার শোনার মতো কিছু না। 

– তুই একটা গান চোদ্দবার করে শুনিস না?

– সে সব গান আর এই গান সমান হল? এখন এত মেলোডিয়াস বাংলা গান চলে না। একটু জীবনমুখী টাইপ বা একটু রক-টক – এরকম ভ্যারিয়েশন না আনলে মনে হবে স্বর্ণযুগের গান শুনছি।

– কেউ যদি স্বর্ণযুগের মতো গান তৈরী করতে পারে এযুগেও, সেটা কি প্রশংসনীয় নয়?

– নিশ্চই প্রশংসনীয় মা! কিন্তু কেউ শুনবে না। যেমন ধর আজ যদি কেউ রবীন্দ্র সঙ্গীতের মতো ঘরানায় গান বানায়, লোকে নেবে না। তুমি যখন এত ভক্ত, একটা কমেন্ট পাঠাতে তো পারো – অন্যরকম গান বানাতে!

– সবাই কি একরকম পারে? যে যেটা পারে সেটা তার ঘরানা। আর কিছু মানুষ এর গান পছন্দ করে নিশ্চই, নইলে এত হাজার লাইক পেয়েছে কী করে!

– তা ঠিক! তোমাদের মতো কিছু শ্রোতা তো আছেই। বাই দা বাই, তোমার এই রনজয়ের গান এর লাইভ হচ্ছে গিরিশ মঞ্চে আগামী সতেরো তারিখ! তোমার আর বাপির জন্য দুটো টিকিট বুক করে দেব?

– না রে মাম্পি। হলে গিয়ে গান শোনা আমার পোষায় না। এই ইউ টিউবই ভালো।

– তোমাকে বুঝিনা বাবা। যার তুমি ডাই হার্ট ফ্যান, ইচ্ছে করে না তাকে মুখোমুখি দেখতে? মুখোমুখি বসে তার গান শুনতে?

পাশ থেকে সংবিধার স্বামীর ফোড়ন কাটলো, ‘মুখোমুখি বসে গান শোনানোর ব্যবস্থা থাকলে তোর মা নিশ্চিত যেত মাম্পি। হলে এত লোকের ভিড়ে কি জীবনানন্দ বনলতা সেন রোমান্স আসবে?’

🍂

স্বামীকে চোখের ইশারায় কপট ধমক দিল সংবিধা। মেয়ে সবে পনেরো বছর, ওর সাথে কি এই ধরনের রসিকতা করা যায়? লোকটা যেন কেমন!

  স্বামী ভদ্রলোক বেশ রসিক। মাম্পি অন্য ঘরে যেতেই বলল, ‘সোমু, ভালো করে শুনে দ্যাখো, গানটা যেন তোমার উদ্দেশ্যেই লিখেছে– ঠিক যেন রবি ঠাকুরের চৌদ্দশ সাল!’

– এর মধ্যে আবার চোদ্দশ সাল এলো কোত্থেকে?

– শোনোনি লাইনটা – আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসে আমার কবিতাখানি কৌতুহল ভরে!? এখানেও বলছে শোনো – ‘বহুদিন পরে যদি শোন বসে এই গান’...। ভদ্রলোক কি নিজেই লেখে নিজেই সুর দেয়?

  সংবিধা শুধু ছোট্ট একটা হুঁ দিয়ে বলল, ‘তুমি কি আর একবার চা বা কফি খাবে?’

– ম্যাডাম আজ এত সদয়? গান শুনে? বাবা রনজয়, তুমি রোজ গান আপলোড করো, তবে ম্যাডামের মন প্রফুল্ল থাকবে, আর না চাইতেই চা কফি পাওয়া যাবে!

– চা কফি রোজ যে খাবে, বাড়ীতে থাকোটা কোথায়? ছুটির দিনে দুবার করে তো দিই! মুখ ঝামটা দিলে সংবিধা।

– নাও নাও, তুমি গান শোনো ভালো করে! মেজাজটা আবার বিগড়ে গেল দেখছি! স্বগতোক্তির মত বলতে বলতে ম্যাগাজিনে মুখ ডোবালো বেচারা স্বামী।

 রাত সাড়ে এগারোটা বাজে, বাবা মেয়ের গুলতানি আর শেষ হয় না। সংবিধা তাড়া লাগালো, ‘সকালে কিন্তু ভোর পাঁচটায় আমাকে উঠতে হবে। সে খেয়াল আছে?’

   এই পরিবারে সংবিধার কথাই চলে। সুতরাং এই হুঙ্কারে কাজ হল। ওর বর সাত্যকী লুঙ্গির গিঁটটা ভালো করে আবার বাঁধতে বাঁধতে শোবার ঘরে এসে বলল ‘জানো সোমু, আজ মাম্পিকে ওর কোচিং এর কোনও এক বন্ধু লাভ লেটার দিয়েছে। তাতে যা বানান ভুল, ওই অপরাধেই ওর কালকে গিয়ে দশবার কান মুলে দেওয়া উচিৎ। প্রেমপত্র লেখার অপরাধ পরে বিবেচ্য।’

– তুমি কি মেয়েকে সেই পরামর্শ দিয়ে এলে নাকি?

– ইচ্ছে তো ছিল, বাকী তোমার হুঙ্কারে বলা হল না।

– আজকাল কেমন ধারা যেন সব! আমরা আমাদের বাবার সাথে এমন কথা বলার সাহস পেতাম? প্রেমপত্র তো জীবনে কম পাইনি। তাই বলে সেগুলো এনে বাবাকে পড়াতাম না কখনও।

– সোমু, এর ভালো দিকটাও তো দ্যাখো! আজকাল ছেলে মেয়েরা ফ্রি হলে সারাদিন ধরে কী করছে তার একটা হদিশ পাবে। চারদিকে যা মূল্যবোধের অবক্ষয়, কখন কী ঘটে যাবে, তুমি কখনও নাগাল পাবে না। আমাদের বাবাদের সে হুঁশ ছিল না। প্রয়োজন হয়তো ছিল, তবে পরিস্থিতি এত জটিল ছিল না বলে লোকসান ততখানি হয়নি।

– সেটা ঠিক বলেছ।

– আচ্ছা সোমু, বিয়ের পর থেকে একটা কথা তুমি বারবার এড়িয়ে গ্যাছো। আমি জানি বহু ছেলে তোমার প্রেমে পড়েছে। তুমি তার মধ্যে কাউকেও কি একটুর জন্যও ভালবাসো নি?

– এসব কথা শুনে লাভ কী?

– লোকসানটাই বা কী সোমু? আজ সতেরো আঠেরো বছরে আমি কি সেই আস্থা অর্জন করতে পারিনি যে তোমার মনে হয় – এমন কথায় আমি তোমাকে আওয়াজ দেব না বা মনে মনে ঈর্ষাকাতরও হব না?

– বিষয়টা তা নয়। আমি সত্যি সত্যি কাউকে ভালবাসিনি।

– ব্যাপারটা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি সোমু। কিন্তু তোমার এই কথার মধ্যে কোথাও একটা না বলা কথা আছে।

  একটু চুপ থেকে সংবিধা বলল, ‘আমি একজনকে মনে প্রাণে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।’

– পারোনি! কেন? বাড়ির সমস্যা ছিল?

– না না। সেগুলো তো পরের কথা। আগে তো ভালোবাসবো মনে। সেটাই হয়ে ওঠে নি।

–  কারণটা কি?

– সেটা বোধহয় আমার ধরন। আমি ঠিক জানি না। আমার মন কোনওদিন ওর প্রতি সাড়া দেয় নি। অথচ ছেলেটা আমাকে পাগলের মত ভালবাসতো। এখনও বাসে।

– কী করে জানলে? তোমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে যোগাযোগ আছে নাকি? ঈষৎ ভ্রূ নাচিয়ে কৌতুক করলো সাত্যকী।

– এটা বোঝার জন্য লুকিয়ে যোগাযোগ করতে লাগেনা সাত্যকী । লুকিয়ে কিছু করা যায় তার সাথেই, যাকে মানুষ ভালোবাসে।

–  স্যরি। বলো তার কথা। কে সে?

– জানো, আমি যখন বিএসসি ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম, আমি একবার কিডন্যাপড হয়ে গিয়েছিলাম।

– মানে? চোখ কপালে উঠল সাত্যকীর। এসব তো এতদিন বলোনি? তোমার বাড়ির লোকও লুকিয়ে রেখেছে এতদিন?

– এতেই ভেতরটা বেরিয়ে পড়ল?

–  এটা ভেতর বাইরের বিষয় নয় সোমু! ব্যাপারটা উদ্বেগের। রীতিমতো সাপ্রেশন অফ ফ্যাক্টস্।

– তাতে কি আমায় ত্যাগ করবে? কঠিন গলায় বলল সংবিধা।

– দোষ তো তোমার মা-বাবার, তোমাকে ত্যাগ করবো কেন? আবার গলাটা যতসম্ভব লঘু করে নিল সাত্যকী। 

– যে কান্ডটি ঘটিয়েছিল, সে আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমার অল্প চেনা ছিল সে। এমনিতে ভালো ছেলে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। হঠাৎ একদিন আমার হোটেলে সে এসে উপস্থিত, বলল, ‘চল বাইরে কিছু খেয়ে আসি।’ 

– তুমিও চলে গেলে?

– মেয়েদের হোস্টেলে এমনিতে পুরুষেরা অ্যালাউড নয়। তবে সেদিন আমাকে বাইরে বেরোতে হত। আমিও সরল বিশ্বাসে বেরিয়ে গেলাম। খাবারের কিছু একটা সে মিশিয়ে ছিল। আমি কেমন একটা আচ্ছন্ন মতো হয়ে গিয়েছিলাম। ও ট্যাক্সি ডেকে আমাকে কোথায় নিয়ে চলে গেল, বুঝতেই পারিনি।

– ঘুমিয়ে পড়েছিলে?

–  হ্যাঁ। মনে আছে একটা বিছানা পেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙলো, দেখি রাত সওয়া ন’টা। সামনে ও বসে আছে । আমি বললাম ‘কী ব্যাপার জয়, তুই আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস।’

– আমার ফ্ল্যাটে। 

– তোর ফ্ল্যাটে মানে?

– এই ফ্ল্যাটে আমরা তিন বন্ধু ভাড়া নিয়ে থাকি। 

– তুই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছিস কেন?

– তোকে কিডন্যাপ করেছি ।

– ইয়ারকি মারছিস আমার সাথে? শিগগিরই আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আয়। রাত দশটার মধ্যে আমাকে ঢুকতে হবে। 

– ছাড়া পাবি না।

–  চিৎকার করব?

– চিৎকার করলে কেউ শুনতে পারবে না সোমু। লাভ নেই। 

–  তুই আমাকে নিয়ে এসেছিস কেন?

– তোকে কনভিনস করতে।

– কী ব্যাপারে?

– আমার ব্যাপারে। তুই তো আমায় পছন্দ করিস না। কিন্তু আমি তোকে পাগলের মতো পেতে চাই।

সাত্যকী ফোড়ন কাটল ‘হাইওয়ে’ ফিল্মটা দেখেছিল নাকি?

– কী যে আবোল তাবোল বল! তখন হাইওয়ে ফিল্ম রিলিজ করেছিল? আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে।

– তারপর?

–  আমি তাকে বললাম, ‘তুই আমাকে এভাবে তুলে আনলে আমি তোকে পছন্দ করবো এমন ভ্রান্ত ধারণা তোর হল কেন?’

–  অ্যাটলিস্ট আমার মনের কথাটা তো তোকে জানাতে পারব সোমু। তাছাড়া এই ঘটনা তোর সারা জীবন মনে থাকবে, তুই আমার মহানুভবতা মনে রাখবি। 

– মহানুভবতা মানে?

–  মানে তোকে আমি কিডন্যাপ করেছি বটে, কিন্তু তোকে একটা কড়ে আঙুল দিয়েও টাচ করিনি।

–  জয়, অনগড বল, তুই আমার সাথে কোনও অসভ্যতা করিসনি?

– গড প্রমিস! দ্যাখ সোমু, আমি মনে করি যেখানে মন নেই সেখানে মিছিমিছি দেহ ছুঁয়ে বা বল প্রয়োগ করে কোনও লাভ হয় না। ওই ধরনের মানুষ আমি নই রে।

সাত্যকী আবার ফোড়ন কাটল, তোমার ওই জয় হল গিয়ে রামায়ণের রাবণের মতো। দুষ্টু কিন্তু ওয়াদে মে পাক্কা! সীতাকে কথা দিয়েছিল, সীতা নিজে না চাইলে ও ওকে ছুঁয়েও দেখবে না – এও যেন তাই!

    সংবিধা আবার বলল, আমি ওকে বললাম, ‘তুই যা করেছিস, আমি সারা জীবন তোকে ক্ষমা করবো না। ভালোবাসা তো দূরে থাক, তোকে আমি ঘেন্না করব জয়! ছিঃ ছিঃ! এটা কোনও ভদ্র ছেলের কাজ? 

  – তুই আমাকে কেন ভালবাসতে পারিস না সোমু? আজকের ব্যাপারটা বাদ দে। এই আমি কান ধরে ক্ষমা চাইছি। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। পাশ করেই ভালো চাকরী পাবো। চাইলে বিদেশেও চলে যেতে পারি। দেখতে শুনতে খুব খারাপ নই। তোর সাথে বেমানান হবে না কিছু! আমি কি তোর ভালোবাসার উপযুক্ত নই?

– ভালোবাসা কি এভাবে হিসেব মেনে হয় জয়? এটা একটা মনের বিক্রিয়া। 

– কত ফিল্মে দেখেছি, গল্পে পড়েছি – মেয়েরা যাকে প্রথমে অপছন্দ বা ঘৃণা করতো, কোনও একটা হঠাৎ করে ঘটা ঘটনায় তাদের মনে পরিবর্তন ঘটে আর সেই ছেলেকে ভালবাসতে শুরু করে।

–  নির্ঘাত আমির খানের ‘দিল’ ফিল্মটার এফেক্ট! ওটা তোমাদের এই ঘটনা ঘটার সময় রিলিজ করেছিল। সাত্যকী বেশ আগ্রহ নিয়ে কথাটা বলল। 

– এমন ফিল্মের কি অভাব আছে সাত্যকী? এই বিষয়ে একশ একটা ফিল্মের নাম এখুনি বলে দিতে পারবো বাংলা হিন্দি মিলে। তুমি শুনতে চাইলে শোনো, এভাবে ফোড়ন কেটো না কথার মাঝে মাঝে।

–  বেশ, বেশ। বলো। ‘যত না ডাকো না আমি কথাটি কব না!

–  আমি বললাম জীবনটা ফিল্ম নয় জয়! এভাবে পাগলামি করিস না। আমার জীবনে যদি এইরকম কোনও চেঞ্জ আসে, আমি নিশ্চিত তোকে ভালোবাসবো। 

– আচ্ছা সোমু, তুই কী পছন্দ করিস, বল। আমি না হয় সেটাই হবার চেষ্টা করব।

–  আবার পাগলামি?

–  আরে বাবা বলনা। তুই কবিতা গল্প ভালোবাসিস? তাহলে তাই লিখব। 

– না। আমি ফিল্ম দেখতে ভালবাসি।

– তাহলে আর তোকে বোধহয় খুশী করতে পারবো না সোমু। ফিল্মের হিরো তো চাইলেই হতে পারবো না, আর বাবারও অত টাকা নেই যে আমাকে প্রডিউস করবে। তুই গান শুনতে ভালোবাসিস? মেজদার বিয়েতে তুই বেশ মন দিয়ে গান শুনতে শুনতে নেচেছিলি, আমার মনে আছে।

–  গান ভালবাসি, তবে অতখানিও নয় জয়। আপাতত এইসব পাগলামি ছাড়। আমার এখানেই দশটা বাজতে গেল। হোস্টেলে দরজা বন্ধ হয়ে গেলে কিন্তু ঢুকতে পারবো না।

 সাত্যকী বলল, ‘ছাড়া পেলে, নাকি সারারাত আটকে থাকলে কিডন্যাপারের ঘরে?’

    সংবিধা মুচকি হেসে বলল ‘ছাড়া পেলাম। তবে একটা শর্ত্তে।’

–  কী শর্ত্ত?

– যদি সত্যি সত্যি ওকে কখনও মন থেকে ভালবাসি, তবে সে কথা তার কাছে স্বীকার করতে হবে। এবং সেজন্য সে আজীবন পথ চেয়ে বসে থাকবে।

– তা তুমি ভালবাসতে পারলে না?

– কী করে করব? তার মাঝে তোমার সাথে বিয়ে হয়ে গেল!

– বিয়ে তো আমাকেও ভালোবেসে করো নি সোমু। সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। তাহলে আমার ক্ষেত্রেই বা ভালবাসতে পারবে – এই রিস্কটা নিয়েছিলে কেন?

– ওটা সামাজিক বাধ্যতা ছিল সাত্যকী। বিয়ে করার পর একদিনে তো ব্যাপারটা হয়নি। দিনে দিনে তিলে তিলে তোমার প্রতি ভালবাসাটা তৈরি হয়েছে। এটা উপার্জিত।

–  ওই জয় মহাপুরুষের প্রতিও হয়তো এটা তৈরী হতে পারতো তোমার অভ্যাস বলে!

– তা বলতে পারি না। কেননা সেক্ষেত্রে বিয়ের জন্য আমাকে ইনিসিয়েটিভ নিতে হত। বাবা-মা তো আর নিজে থেকে উদ্যোগ নিত না। যাকে ভালোবাসি না তার জন্য খামোখা বাবা-মাকে বলতে যাব কেন?

– কিন্তু সোমু, একটা কথা পরিষ্কার হল না, তুমি বললে তাকে তুমি ভালবাসতে চাও – এইটা কেন বললে?

– দ্যাখো সাত্যকী, তুমি আমায় ভালোবাসো এটা হয়তো সত্যিই, খাঁটিও। কিন্তু তুমি আমাকে এমনি এমনি পেয়ে গ্যাছো। কিন্তু জয় আমার মন জয় করার জন্য এখনো লড়ে যাচ্ছে। সে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন গান লিখে তাতে সুর দিয়ে আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে।

– মানে? তুমি কার কথা বলতে চাইছ সোমু?

– রনজয়। রনজয়ের গান নিয়ে সেদিন তুমি আর মাম্পি আওয়াজ দিচ্ছিলে না? এই জয়ই হলো রনজয়।

–  তুমি কী করে বুঝলে ও এখনো তোমাকে ইমপ্রেস করার জন্য গান লেখে? ওকি জানে না তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?

– জানবে না কেন? বিয়েতে নেমন্তন্ন খেতে এসেও ছিল। যাবার সময় বলে গেছিল হয়তো এই শেষ দেখা। কিন্তু সে তার ভালোবাসার নৈবেদ্য নিত্য নতুন সাজিয়ে দেবে কথায় সুরে আর গানে। সেই নিবেদন যেন আমি মনে মনে গ্রহণ করি। ওগুলো শুধু আমার জন্যই!

– ভদ্রলোক বিয়ে করেনি?

–  না।

–  মিথ্যে আশা নিয়ে বসে থেকে লাভ কী? বিয়ে থা করে নিতে বলতে তো পারো।

– মিথ্যে আশা মানে? ও কি আমার বিয়ের সতেরো বছর বাদে আবার আমাকে বিয়ে করার কথা ভাবছে নাকি? আর তাছাড়া ওর সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয় না। অন্য কোনও যোগাযোগও নেই।

– কেন, তোমাদের কোনও ফ্যামিলি গ্যাদারিং-এ আর আসে না?

– আমার বিয়েতেই শেষ এসেছিল। তখনই ওর অল্প স্বল্প নাম হয়েছিল। ইদানীং ও এত ব্যস্ত থাকে, সেই জন্য বোধহয় আসে না। বা হয়ত এসব লোকেরা সাধারণ উৎসব অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলে ফেসভ্যালু যাবার ভয়ে।

– মিছিমিছি পণ্ডশ্রম। বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাত্যকী।

 – পণ্ডশ্রম বলছো কেন? এত সৃষ্টি যে হল!

– না – তোমার অ্যাঙ্গেল থেকে বলছি। আলটিমেটলি তোমার ভালোবাসা তো জয় করতে পারল না! বড় নিশ্চিন্ত শোনালো সাত্যকীর গলা।

– আজ পারেনি তো কী হয়েছে, একদিন না একদিন নিশ্চয়ই পারবে।

– তুমিও বুঝি সেই আশাতেই বসে আছো?

   সংবিধা দেখলো ওর স্বামীর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ও সাত্যকীর বুকে মুখটা গুঁজে বলল, ‘ঈর্ষা করো না, তা হলেও তোমার আর মাম্পির ভাগে কম কিছু পড়বে না।’

Post a Comment

0 Comments