জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা
কমলিকা ভট্টাচার্য

মোবাইলী খোকা খুকি

খোকা খেলো, খুকি খেলো —
মা হাতেতে মোবাইল দিলো।
আয় না পাখি, না কেউ বললো —
আতু আতু করে,
না কুকুর খেলো!

খোকা খেলে, খুকি খেলে —
মোবাইল স্ক্রিনে আঙুল চলে।
ঢেঁকুঁচ কুঁচে ঢেঁকি চড়ে,
দোলনাগুলোয় মরচে পড়ে।

খোকা পড়ে, খুকি পড়ে —
মোবাইলেই ছড়া গড়ে।
অ—অজগর আসছে তেড়ে,
স্ক্রিন ভাঙে, তবু পাতা না ছেড়ে।

খোকা কাঁদে, খুকি কাঁদে —
মোবাইলের আটকে ফাঁদে।
বন্ধু মেলে নীল কাঁচে,
মোবাইলে কার্টুন নাচে।

খোকা ঘুমায়, খুকি ঘুমায় —
মোবাইলই গল্প শোনায়।
ঘুমের দেশের গানটি গেয়ে,
কে আর দেয় পিঠে চাপড়ে,
ঘুম পাড়িয়ে!

একদিন সব উল্টো হলো —
খোকা রাগলো, খুকি রাগলো,
আচাড় মেরে মোবাইল ভাঙলো।
ভেতরে না বন্ধু ছিলো,
না খেলার মাঠ ছিলো —
ভেতরে না কেউ নাচ করে,
না হেসে হেসে গল্প পড়ে।

নেই সেখানে কথা-বলা পাখি,
না ফুল, না প্রজাপতি।
এসব হলো মিথ্যে সবই —
ক্যামেরায় তোলা রঙিন ছবি।
এমন জিনিস চাই না আমি,
যতই হোক এসব দামী।
খোকা জেদী, খুকি জেদী,
বাইরে তারা যাবেই আজই!

কুকুরছানা মাটির পরে,
মায়ের কোলে খেলা করে।
দেখতে হবে বিড়ালটা কেমন করে,
ছোট্ট নেংটি ইঁদুর ধরে।

পাখিগুলো কি কথা বলে?
নাকি খালি কিচিরমিচির তোলে?
গরুগুলো কি হাম্বা ডাকে?
হাঁসগুলো কি খায় পাঁকে?

মুরগি কোথায় ডিম পাড়ে?
কাঠবেড়ালি কেমন গাছে চড়ে?
ফুল ছিঁড়লে কি গাছ রাগ করে?
মধু খেলে কি মৌমাছির সাথে ঝগড়া করে?

পিঁপড়েগুলো সব যাচ্ছে কোথায়?
কি নিয়েছে তারা মাথায়?
পাখিরা কোথায় ডানা পেলো?
মেঘেরা বিনা ডানায় কেমনে উড়লো?

শিশু মনের প্রশ্নগুলো
মোবাইলকে হারিয়ে দিলো।
খোকা খুকি আজ মোবাইল ফেলে —
বাইরে গেলো, খেলতে চলে...

🍂


 বোকার দেশে

একদিন স্বপ্নে ভেসে
চলে গেলাম বোকার দেশে
আজীব সে এক দেশ ভাই
বোকার মত হাসছে সবাই।

প্রশ্ন শুধায় বোকার মত
উত্তরও দেয় বোকার মত
চেয়ে থাকে সব বোকার মত
আছে সেথায় বোকা যত।

বকবক করে বোকার মত
কথাও বলে বোকার মত
কাজও সারে বোকার মত
মজার সেসব গল্প যত।

ঝগড়া ফাঁদে বোকার মত
চিৎকার হাঁকে বোকার মত
যুক্তি দেবে বোকার মত
বোকা হবে তুমি বুঝিয়ে শত।

চুপ থেকে শোনে বোকার মত
পড়ে পড়ে মার খায় তারা বোকার মত
কাঁদেও তারা বোকার মত
বোকার কষ্ট বলবো কত।

সেথায় বোকা বুড়ো বুড়ি
আছে যত ছোঁড়া ছুঁড়ি 
ভুগছে তারা সবাই সাজা
সেই দেশে যে চালাক রাজা।।



যত দোষ নন্দ ঘোষ

মা বলে, “পড়ে পড়ে বাছার,
আমার মুখটা শুকালো!”
বাবা বলে, “আদরে আদরে ছেলে,
গোল্লায় গেলো!”

মা বলে, “সারাদিন করো বকাবকি!”
বাবা বলে, “সারাদিন করে কি? জানো তুমি নাকি?”
মা বলে, “দিন যায় স্কুল, কোচিং, টিউশন—”
বাবা বলে, “না করলে খাবে কি? আছে কি তোমার টেনশন?”

মা বলে, “ছেলেটার জন্য নেই তোমার কোনোই ইমোশন!”
বাবা বলে, “চারিদিকে জানো কত কম্পিটিশন!”
“সারা জীবন রোজগারে বাইরে না বেরোলে,
সংসার কি করে চলে— টের তাই না পেলে!”

মা এবার রেগে বলে, “আমি বসে খালি খাই?
জানো কি খেটে দু’পয়সা বাঁচিয়ে কী করে সংসার চালাই!”

আমায় ডেকে মা বলে, “মায়ের প্রয়োজন ফুরিয়েছে,
হয়ে গেছো বড়!”
বাবা বলে, “মায়ের আঁচলের তলায়
যা ইচ্ছে করো তো করো!”

এইভাবে ধীরে ধীরে বাড়ে কথা কাটাকাটি,
মুখে এঁটে কুলুপটি—
আমি বুঝি না কোন দিকে হাঁটি!

বাবা হেঁকে বলে, “তোর জন্যই সব— যা, অঙ্ক কস!”
মা চিৎকার করে বলে, “তোকে নিয়েই যত জ্বালা, এসে খেতে বস!”
আমি বলি, “যা বাবা,
শেষমেশ যত দোষ নন্দ ঘোষ!”

এবারে মা–বাবা একসাথে বলে,
“বেড়েছে যে বড় সাহস, মুখে মুখে কথা কস!”

Post a Comment

7 Comments

  1. প্রথম কবিতা টা অসাধারন, দ্বিতীয় টা খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Kamalika BhattacharyaNovember 14, 2025

      ধন্যবাদ।প্রণাম নেবেন।

      Delete
  2. ভালো প্রচেষ্টা। কবির এক উল্লেখযোগ‍্য নতুন সন্ধান

    ReplyDelete
    Replies
    1. Kamalika BhattacharyaNovember 14, 2025

      অনুপ্রাণিত হলাম।ধন্যবাদ।প্রণাম নেবেন।

      Delete
    2. Kamalika BhattacharyaNovember 14, 2025

      অনুপ্রাণিত হলাম,অনুসন্ধান চালিয়ে যাব এইভাবে উৎসাহ পেলে।
      প্রণাম নেবেন।

      Delete
  3. এবার কবিতার প্রসঙ্গ ভিন্ন, পড়ে খুশি হলাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. Kamalika BhattacharyaNovember 14, 2025

      আগেও চেষ্টা করব ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে লিখতে।
      উৎসাহিত করবেন মতামত দিয়ে।
      ধন্যবাদ।প্রণাম নেবেন।

      Delete