কমলিকা ভট্টাচার্য
মাটির দিকে ফিরে দেখা
মাটি—
যেখানেই রাখি পা,
সেখানে তার শত সহস্র বছরের গল্প।
এই নরম ধুলো, এই কাঁদামাটি,
কত জীবনের বীজ বুকে লুকিয়ে
আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
কিন্তু মানুষ—
অদ্ভুত এক তাড়নায়
তারই মায়ের কোলকে খুঁড়ে খুঁড়ে
ফেলে দিচ্ছে পরিত্যক্তের মত।
নদী শুকোয়, মাঠ ফেটে যায়,
চাষির হাতের ভাঁজে জমে ওঠে
উদ্বেগের ধুলিকণা।
আমরা কি ভুলে গেছি
ফসলের ঘ্রাণে ভোর হওয়া সকাল?
ভুলে গেছি
একটা মাত্র গাছ কেটে দিলে
একটা ঋতুর গান থেমে যায়?
চল, মাটির দিকে ফিরে তাকাই—
শুধু ব্যবহার নয়,
তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলি।
এক মুঠো সবুজ,
এক ফোঁটা জল,
একটু দায়বদ্ধতা—
কারণ মাটি বাঁচলে,
শুধু পৃথিবী নয়—
বাঁচবে আমাদের ভবিষ্যৎ,
আমাদেরই পরের প্রজন্মের স্বপ্ন।
আমি মাটি
ফসল কেটে নিয়ে গেছে ওরা,
আমি পড়ে আছি একা
খই আর ফুল ছড়ানো পথ
শবযাত্রা চলে গেছে
আবার খুঁড়ে খুঁড়ে করবে আলগা।
ঝুরঝুরে মাটি, কদিনেই বোনা হবে নতুন বীজ।
ওই কেঁচোগুলোর সুড়সুড়িতে
আমি নরম হই,
গোবর লেপা উঠোনের ঘ্রাণে,
মিশে যায় মরা পাতার স্মৃতি।
আমি নিজেকে উর্বর করি,
তবুও ওরা ঢেলে দেয় বিষ।
নীলকণ্ঠে জড়িয়ে থাকে ফনা আমায়
আমি জ্বলি, যেমন করে শ্মশানে পুড়ে যায় শোক
অবশেষ ধুয়ে মিশে যায় স্রোত
বিষাক্ত ফেনা জমা হয়
কচুরিপানা ভরা নালায়।
ভেতরে ভেতরে পচন ধরেছে আমারও,
অনেকটা তোমাদের মতো
আমারও হাত পা বাঁধা,
গুঁড়ো গুঁড়ো পাপ মিশে গেছে শরীরে,
না চেয়েও ফসলেও।
কেটে নিয়ে গেছে ফসল ওরা,
আলগা হচ্ছি আবার আমি।
কদিনেই হবে বীজ বোনা,
বৃষ্টির জল কি ভরবে সুধা
আমি যে ঊষরের কান্না শুনতে পাই।
🍂
2 Comments
🙏
ReplyDeleteThank you😊
Delete