ঘুমিয়ে গেছে গানের পাখি
২৪তম পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
( ইসলামী সংগীত রচয়িতা নজরুল )
গানেগানে ভুবন মাতালেন সুর ও সংগীতের পূজারি নজরুল-- তাঁর বাণীসমৃদ্ধ বিষয়বৈচিত্র্য ও সুরবৈশিষ্ট্যের জন্য সমসাময়িক অন্যান্য কবি সংগীত রচয়িতা ও সুরস্রষ্টাদের তুলনায় নিজের এক অনন্য জগৎ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিলেন কবি । এত বিচিত্র বিষয়কে অবলম্বন করে এত অধিকসংখ্যক গান রচনায় পারদর্শী তিনি এক বিরল প্রতিভার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পারস্যের প্রেমের কবিতার প্রভাবের সাথে ইরানি কাব্যসুষমার লালিত্য ও ভারতীয় মার্গ সংগীতের অপূর্ব সুর মিশিয়ে সৃষ্টি রসে সমৃদ্ধ তাঁর অতুলনীয় গজলগানে বাংলার সুরের মুখরিত আকাশে আমরা পেলাম ইরানি মহাকবি হাফিজ এবং সেই সঙ্গে ওমর খৈয়ামের প্রভাবে রচিত গজল সম্রাট নজরুলের শ্রুতিমধুর মনমুগ্ধকর অজস্র গজল সংগীত। ---ইসলামী বিষয়বস্তু ধারণ করে, যা তাঁর ইসলাম ধর্মের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও জ্ঞানের পরিচায়ক।
নজরুলের সংগীতপ্রতিভার প্রথমদিকে কাব্য-সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি অনুকূল পরিবেশে বিস্তার ঘটেছে দেশবন্দনা, উদ্দীপনামূলক, জাগরণী গান, গণসংগীত, হিন্দু-মুসলিমের মিলনপ্রত্যাশী অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিমূলক গানে। এরপর বাংলা গজল রচনা ও পরিবেশনের সময়ে এসে নজরুলকে পাওয়া গেল সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে। এখানে তিনি ছিলেন ঝরনাধারার মতো বেগবান, তবে সংহত। সংগীতপিপাসু শ্রোতার আন্তরিক সমীহ, ভালোলাগার এই পর্বে নজরুল অনাস্বাদিত আনন্দের স্বাদ পেয়েছেন।
বাংলা গজল রচনার আগে দেশাত্মবোধক গান, উদ্দীপনামূলক-জাগরণী সংগীত, ব্যঙ্গাত্মক বা হাসির গান, নারী জাগরণী গান, জাতীয়সংগীত ইত্যাদি সময়োচিত গান নজরুল স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিখেছেন। দ্বিতীয়পর্বে সংগীত সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার পর তিনি অবিরত রচনা করে গেছেন ইসলামি সংগীত, শ্যামা সংগীত, শাক্ত, শৈব, ভজন, কীর্তন, বাউল-ভাটিয়ালি, গণসংগীত ও আধুনিক গান। বাংলা গানের ভুবনে এই পর্বে নজরুলের স্থান, বলা বাহুল্য, স্বতন্ত্রধারার পথিকৃতের। স্বনামধন্য কবি হতে তাঁর যেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়নি, তেমনি আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষা ছাড়াই সংগীতজ্ঞ হয়েছেন গভীর নিষ্ঠা ও একাগ্রতায়। ভবঘুরে লেটো দলের সান্নিধ্যে মিশে গান শেখার মত স্বীয় চেষ্টায় সংগীত-যন্ত্র বাজানো ও রপ্ত করেছিলেন। সৃজনশীল জীবনে যতদিন সক্রিয় ছিলেন ততদিন বৃহত্তর লোকমানসের প্রকৃতি ও মানবাত্মার সুরসঙ্গীত শ্রুতিধরের মত আত্মস্থ করেছেন। নিবিড় মনোসংযোগে যে সুর ধ্বনি তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় হয়ে মর্মে প্রবেশ করে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে তারই চিরস্থায়ী আসন পাতা হয়েছে কবির মননে। তারপরে স্রষ্টা তাঁর খুশীমত অনবদ্য শৈল্পীক গুণে সফল প্রয়োগ করে অনন্য কাব্যগুণ ও সুরের মায়ায় আপন পথ তৈরি করে নিয়েছে ।
🍂
নজরুলের অদ্বৈতবাদী প্রেম-চেতনা তাঁকে সর্বজনীন প্রেম-চেতনায় স্থিত রেখেছে। কবির ইসলামি সংগীত যে-কোনো ধর্মের প্রেমিকের ভাবসম্পদ হতে পারে। ইসলাম ধর্মে-বর্ণিত স্রষ্টা ‘আল্লাহ’কে নজরুল প্রভু এবং নিজেকে ভৃত্য না ভেবে প্রেমিক ভেবেছেন। তাই খোদার প্রেমের শরাবপান করে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকেন। যে-পথে তাঁর মুর্শিদ নবী মোহাম্মদ আসবেন। আর এই নবী মোহাম্মদের নাম যাঁর হৃদয়ে আছে তাঁর সঙ্গে খোদারও আছে গোপন পরিচয়। সুফি সাধকদের মতো নবীকে তিনি মুর্শিদ রূপে অন্তরে ধারণ করে খোদার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন। এমন অনুভবে ইসলামি সংগীত ও এক অসাধারণ ধারায় মনে প্লাবন তোলে।
কবি লিখলেন ---.খোদারই প্রেমের শরাব পিয়ে
বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ
এলো যে ওই পথ ধরে ॥
দুনিয়াদারীর শেষে আমার
নামাজ রোযার বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে
নিত্য মোনাজাত করে ॥
কাজী নজরুলের ইসলামী গানগুলি তাঁর ধর্মীয় চেতনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৩১ সালে শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের অনুরোধে তাঁর রচিত প্রথম ইসলামী গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ একটি কালজয়ী সৃষ্টি যা ঈদের আনন্দ ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য রূপ তুলে ধরে। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ।’ গানটা উপমহাদেশের প্রতিটা মানুষের হূদয় স্পর্শ করেছিল।
মুসলিমদের মতে রমজান মাসের ৩০টা রোজার শেষে সাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখে ঐ গানটা শুনলে নিজেকে পূতপবিত্র মনে হয়। এই গান ছাড়াও, তাঁর ইসলামী গানের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যেখানে তিনি আল্লাহ, রাসুল (সাঃ) এবং ইসলামের মহিমা তুলে ধরেছেন, যেমন 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ'। তিনি অনেক গান তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন, যার কারণে সংরক্ষণ করা যায়নি এমন অনেক গান হারিয়ে গেছে বলে অনুমান করা হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কালজয়ী ইসলামি সংগীত রচনার জন্য বাংলা সাহিত্যাকাশে বিশালতর এক ধ্রুবতারা হিসেবে চির অম্লান হয়ে থাকবেন। কাজী নজরুল ইসলাম তার অমর কীর্তিমান ইসলামি সংগীতগুলো না লিখলে বাংলার ইসলামি সংস্কৃতি হাজার বছর পিছিয়ে থাকত।তিনি প্রায় ২৮০ টি ইসলামী সংগীত রচনা করেছেন তাঁর রচিত প্রায় ৮০ভাগ গানেই তিনি নিজে সুর দিয়েছেন।
বিদ্রোহী কবি তাঁর ক্ষুরধারসম শানিত কলমের আঁচরে তুলে ধরেছেন ইসলাম ধর্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে কুরআন ও হাদিসের আলোকে হাজার বছরের সেরা সব ইসলামি সংগীত, গজল, হামদ, নাত। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, তাওহিদ, রিসালাত, ঈদ, রমজান, শবে কদর, শবে বরাত, মিরাজ, মহররম, ইসলামি জাগরণী গান, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ, মহিয়ান-মহীয়সী নারী-পুরুষের জীবনীসহ সব বিষয়ের সুন্দর উপস্থাপন একমাত্র কাজী নজরুল ইসলামের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। পবিত্র কুরআন মাজিদের ৭৫ নম্বর সুরা ‘আল-কিয়ামা’র ছোট্ট ছোট্ট ৪০টি আয়াতের ছায়াশ্রয়ে কবি লিখেছেন, ‘যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার, তুমি হবে কাজী।/ সেদিন তোমার দিদার আমি, পাব কি আল্লাহ জি?’
আর এক কবিতায় লিখলেন,কেয়ামতের দিন যারা আল্লাহকে দেখতে পাবেন, তারা বেহেস্তি। অথবা যারা বেহেশতের ফায়সালা পেয়ে যাবেন, তারা তাদের পরমার্থ কে দেখতে পাবেন। কাজী নজরুল ইসলাম তার ঐ গানের দ্বিতীয় অন্তরায় লিখলেন, ‘আমি তোমায় দেখে হাজার বার, দোজখে যেতে রাজি!’ সুন্দর, সুললিত ভাষায়, আবেগাপ্লুত সুরে জীবনের চরম বাণীগুলো ইসলামি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন!
কবরবাসীদের প্রতি দোয়া করে কবি লিখলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায়, কবর দিও ভাই,/ যেন গোরে থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’ মুসল্লি ঘর থেকে অজু করে মসজিদে যাওয়া পর্যন্ত তার প্রতিটি কদমে সওয়াব লেখা হয়। এই হাদিসের আলোকে কবি ঐ গানের দ্বিতীয় অন্তরায় লিখলেন, ‘আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজিরা যাবে,/ পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি, এই বান্দা শুনতে পাবে।/ গোর আজাব থেকে এই গুনাহগার, পাইবে রেহাই।’
কবি কাজী নজরুল ইসলাম শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের অনুরোধে ইসলামি সংগীতের ধূমকেতু হয়ে আর্বিভূত হয়েছিলেন বাংলার ইসলামি সংস্কৃতির সাহিত্যাকাশে।
কৈশোরে মাত্র আটবছর বয়সে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য নজরুল মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং মক্তবের ওস্তাদ হয়েছিল,এবং এরপর লেটোর দলের সাথে ঘুরতেঘুরতে লিখেছিলেন, ‘নামাজি, তোর নামাজ হলো রে ভুল’। আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, বাংলার পাণ্ডিত্বপূর্ণ ভাষাশৈলী প্রয়োগের মাধ্যমে এবং হূদয় শীতল করা ভাবাবেগী সুরের মূর্ছনায় ইসলামি সংগীতগুলোকে চিরসবুজ, চির অমর ও উজ্জ্বল। এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী । সিদ্ধহস্তে বিদেশি ভাষার সুন্দর প্রয়োগের পাণ্ডিত্যে, কখনো বিদেশি সুরের ছায়াশ্রয়ে তিনি ইসলামি সংগীতকে করেছেন বাঙালি হূদয়ের তৃষ্ণা নিবারণের শরাবসম। তুরস্কের বিখ্যাত, ‘কাটিবিম ইশকাদার’ গানের সুরাশ্রয়ে কবি লিখলেন, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ, এলো রে দুনিয়ায়’ অথবা ‘শুকনো পাতার নূপুর বাজে, নাচিছে ঘূর্ণিবায়’ ইত্যাদি।
শিশু নবি হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ধরণিতে আগমন নিয়ে হূদয়ের গভীর থেকে আবেগী হয়ে কবি লিখলেন, “হেরা হ’তে হেলে দুলে, নুরানী তনুর—” অথবা “তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে” অথবা “আমিনা দুলাল নাচে, হালিমার কোলে” ----ইত্যাদি ।
কবির হজে যাওয়ার মন কিন্তু আর্থিক অনটনে সামর্থ নেই। সেই আকুতি ফুটিয়ে তুলেছেন তার অনেক অমর কীর্তিতে। তার লেখা ‘দূর আরবের স্বপন দেখি, বাংলাদেশের কুটির হতে!’ কিংবা ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’ বা ‘ওরে ও দরিয়ার মাঝি, মোরে নিয়ে যারে, মদিনায়’ অথবা ‘আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ’সহ বহু গানের কথাগুলোয় পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার পরম আকুতি প্রকাশ পেয়েছে।
মোনাজাত বিষয়ে তিনি লিখলেন, ‘হে খোদা দয়াময় রহমানির রহিম’ অথবা ‘খোদা, এই গরিবের শোন মোনাজাত’ অথবা ‘শোনো শোনো, ইয়া ইলাহী, আমার মোনাজাত’ ইত্যাদি।
কবি লিখলেন --আরবের মরুর বুকে ফুটলো আলোর ফুল
মা আমিনার কোলে এলেন মুহাম্মদ রাসূল ॥
আকাশের গ্রহ তারা পুলকে আত্মহারা
বন্দিছে তার নিখিল ধরা গাহিছে বুলবুল ॥
তাঁর সমসাময়িককালে কবি গোলাম মোস্তফা ও অন্যান্য দু’একজন কবি ইসলামী সঙ্গীত রচনায় নিমগ্ন থাকলেও কাজী নজরুলই ইসলামী সঙ্গীতের ভাণ্ডারকে কানায় কানায় পূর্ণ করেছেন এবং জনপ্রিয় করেছেন। বাংলা সংগীত জগতের কোনো গীতিকার এখনো নজরুলের সংগীত রচনার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, আমার জীবনে প্রথম সুন্দর আসে ছোটগল্প হয়ে, তারপর কবিতা, নাটক, উপন্যাস হয়ে বহুবার ধরা দিয়েছে। অবশেষে সংগীত হয়ে আমার মাঝে বিরাজ করেছে সেই সুন্দর। নজরুল ইসলামের হাত ধরেই বাংলা সংগীতে প্রথম গজল, শ্যামা সংগীত, ইসলামী সংগীতের সৃষ্টি। এছাড়াও বাংলা সংগীতে ২০টিরও বেশি রাগের জন্ম নজরুলের হাতে। মধ্যপ্রাচ্যের সুর ও আবহ তৈরী করে বাংলা সংগীতকে তিনি রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। যেমন নজরুলের জনপ্রিয় একটি ইসলামি সংগীতের বাণীতে রয়েছে—
“কলমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি।
ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।।
ঐ কলমা জপে যে ঘুমের আগে
ঐ কলমা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে,
দুঃখের সংসার যার সুখময় হয়, তা’র—
তার মুসিবত আসে না কো, হয় না ক্ষতি।”
তিনি আধুনিক গান, প্রেমের গান, শ্যামা সঙ্গীত, ইসলামী গান লিখেছেন। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ তার নজরুল সাহিত্য বিচার গ্রন্থে ‘নজরুলের গান এবং তার বৈশিষ্ট্য প্রবন্ধে লিখেছেন— নজরুল ইসলাম নানা রকম গান লিখেছেন। আধুনিক গান, গজল গান, ইসলামী গান, কীর্তন, রামপ্রসাদী, শ্যামা সঙ্গীত ও বিভিন্ন রকম সঙ্গীত। তবে বাংলা ভাষায় তাঁর ইসলামী গান সবিশেষ পরিচিত। নজরুলের গানের ভেতরে আছে উন্নত উপমা,মন চিত্রকল্প, দর্শন। " ক্রমশঃ
তথ্য সূত্র :--১)আব্বাসউদ্দীন আহমদ: /আমার শিল্পী জীবনের কথা, (হাসি প্রকাশনী।)
২) নজরুল-গীতি প্রসঙ্গ; করুণাময় গোস্বামী; প্রকাশক: বাংলা একাডেমী; প্রথম প্রকাশঃ ১৯৭৮।
৩). বাংলা গানের পথচলা; অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়; আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লি.
৪)নজরুলের ইসলামী গজল; //গাজী আবদুল হাই; ছিদ্দিকিয়া (নেট থেকে )
0 Comments