জ্বলদর্চি

জাতীয় নৌবাহিনী দিবস/ দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

জাতীয় নৌবাহিনী দিবস 

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ৪ঠা ডিসেম্বর, জাতীয় নৌবাহিনী দিবস। আসুন আমরা সবিস্তারে জেনে নিই, নৌবাহিনী কাকে বলে? কেন নৌবাহিনী দিবস পালন করা হয়? এবং কিভাবে তা উদযাপন করা হয়?

নৌ সেনা বলতে একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর নৌ শাখা, যারা সমুদ্র, নদী এবং হ্রদে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এর মূল কাজ হল, দেশের সামুদ্রিক সীমানা রক্ষা করা এবং নৌ বাণিজ্যকে সুরক্ষিত রাখা। একটি আধুনিক নৌবাহিনীতে বিমানবাহী রণতরী, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, সাবমেরিন, মাইন সুইপার এবং বিভিন্ন সহায়ক জাহাজের মতো অনেক ধরনের জাহাজ থাকে। 
নৌবাহিনীর প্রধান কাজসমূহ:
সীমানা রক্ষা: দেশের সামুদ্রিক সীমানা এবং সমুদ্রের স্বার্থ রক্ষা করা।
সামুদ্রিক বাণিজ্য সুরক্ষা: বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যুদ্ধকালীন অভিযান: যুদ্ধের সময় সমুদ্রে আক্রমণ পরিচালনা করা এবং অন্যান্য মিশন সম্পন্ন করা।
শান্তিকালীন কার্যক্রম: শান্তিকালীন সময়েও দেশের সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বজায় রাখা। 
নৌবাহিনীর প্রধান অংশ:
যুদ্ধজাহাজ: বিমানবাহী রণতরী, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট ইত্যাদি।
সাবমেরিন: পানির নিচে থেকে অভিযান পরিচালনা করে এমন ডুবোজাহাজ।
মাইন সুইপার: সমুদ্রের মাইন অপসারণের জন্য ব্যবহৃত জাহাজ।
🍂

সহায়ক জাহাজ: সরবরাহ, মেরামত ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহৃত জাহাজ।
নৌ ঘাঁটি ও বন্দর: নৌবাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ঘাঁটি ও বন্দর। 

একটি নৌবাহিনী, নৌশক্তি বা সামুদ্রিক বাহিনী হল, একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা যা প্রধানত নৌ এবং উভচর যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত; যথা, হ্রদ -বাহিত, নদীবাহিত, উপকূলীয়, বা সমুদ্র -বাহিত যুদ্ধ অপারেশন এবং সম্পর্কিত ক্ষেত্রে। এতে ভাসমান জাহাজ, উভচর জাহাজ, সাবমেরিন এবং নৌবিমান আনুষঙ্গিক সহায়তা, যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালিত হয়। একটি নৌবাহিনীর কৌশলগত আক্রমণাত্মক ভূমিকা হল একটি দেশের উপকূলের বাইরের এলাকায় শক্তির প্রক্ষেপণ (উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রপথ রক্ষা করা, জলদস্যুতা রোধ করা বা মোকাবিলা করা,সৈন্য ফেরি করা বা অন্যান্য নৌবহন, বন্দর বা উপকূল স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ করা)। একটি নৌবাহিনীর কৌশলগত প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্য শত্রুদের সমুদ্রবাহিত শক্তিমত্তাকে প্রতিরোধ করা। নৌবাহিনীর কৌশলগত কাজ সাবমেরিনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পারমাণবিক হামলার হুমকি প্রদান। নৌ ক্রিয়াকলাপ ভাগ করা যেতে পারে নদীপথ ও উপকূলীয় বা বাদামী-জলের নৌবাহিনী, উন্মুক্ত-সাগরের বা নীল-জলের নৌবাহিনী যার উপভাগ হচ্ছে সবুজ-জলের নৌবাহিনী।

ভারতে নৌবাহিনী দিবসটি প্রতি বছর ৪ঠা ডিসেম্বর পালিত হয় দেশের প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনীর অর্জন এবং ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।এই দিনটি বেছে নেওয়ার পিছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

একদিকে বঙ্গোপসাগর, একদিকে ভারত মহাসাগর। আর এক দিকে আরবসাগর। ভারতের তিনদিকই সমুদ্রে ঘেরা। জলসীমা থাকলে তা যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। তেমনই দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনদিক সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এবং প্রতিকূল পড়শি দেশ। সব মিলিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের উন্নতি এবং সুরক্ষার জন্য নৌবাহিনীর অবদান এবং তাদের গুরুত্বকে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর ৪ঠা ডিসেম্বর পালিত হয় ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস।

স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কিছু যুদ্ধ লড়তে হয়েছে ভারতকে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। সেই সময়ে অপারেশন ত্রিশূল শুরু করা হয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফে। সেই যুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর। চারটি পাক নৌযানকে ধ্বংস করেছিল তারা। সেই সাফল্যকেও স্মরণ করা হয় এই দিনে। দেশের সুরক্ষার জন্য যে সকল নৌ-সেনা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদেরও স্মরণ করা হয়। নৌবাহিনী দিবসে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত। ৩ ডিসেম্বরের সন্ধেয় ভারতীয় বিমানঘাঁটির উপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। তখনই করাচির দিকে তিনটি মিসাইল বোট পাঠায় ভারত। সেই তিনটি বোটের নাম ছিল নির্ঘাত (Nirghat), বীর (Veer) এবং নিপাত (Nipat)। পাকিস্তানের চারটি জাহাজকে ধ্বংস করেছিল তারা

১৯৭২ সালে একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস হিসেবে পালিত হবে।  ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনীর বীরত্ব স্মরণে রাখাই ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। 

নৌ বাহিনীর দিবস উদযাপন করা হয় দিনভর ধরে।
নৌবাহিনী দিবসে বিশাখাপত্তনমে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। অনুষ্ঠানের নাম 'Operational Demonstration'. এখানে নৌবাহিনীর একাধিক যান ও অস্ত্রের প্রদর্শনী করা হবে। সপ্তাহখানেক ধরে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। ইস্টার্ন ন্যাভাল কম্যান্ড থেকে একাধিক অনুষ্ঠান করা হবে। ওয়েস্টার্ন ন্যাভাল কম্যান্ড থেকেও একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।    
ভারতীয় নৌবাহিনী দিবসে, বাহিনীর সব সদস্য এবং তাঁদের পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

Post a Comment

0 Comments