জ্বলদর্চি

নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সি ভি রামন / পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা


শুভ জন্মদিন প্রিয় সি. ভি. রামন

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

প্রথম সারির দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে একটি বিজ্ঞাপন। ব্যাঙ্গালোরে সদ্য প্রতিস্থাপিত একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক নিয়োগ করা হবে। শূন্যপদের সংখ্যা তিন। 

এমন আকর্ষণীয় পদের জন্য অনেক প্রার্থী আবেদন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচজনকে বাছাই করা হয়। ফাইনাল ইন্টারভিউ এখনও বাকি। এই ইন্টারভিউ নেবেন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ও উদ্যোক্তা সদ্য অবসর নেওয়া এক প্রবীণ অধ্যাপক।

নির্দিষ্ট সময়ে সমাপ্ত হল অন্তিম ইন্টারভিউ। পাঁচজন থেকে তিনজন যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হল। বাদ পড়ল মাত্র দুজন। তাদের মধ্যে একজন প্রার্থী পরের দিন পুনরায় ইনস্টিটিউটে হাজির। ইনস্টিটিউটের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেদিন বয়স্ক অধ্যাপক করিডোর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অকৃতকার্য হওয়া ওই তরুণ প্রার্থীকে দেখেই চিনতে পারলেন। থমকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'কী ব্যাপার! কোনও সমস্যা?'

অজ্ঞাত তরুণ হাসিমুখে বলতে শুরু করে, 'সমস্যা কিছুই নয়, স্যার। আসলে গতকাল ইন্টারভিউ সমাপ্তির পরে যাতায়াত সহ অন্যান্য খরচ বাবদ আমি যত টাকা দাবি করেছিলাম, অফিস আমাকে তার চেয়ে সাত টাকা অর্থ বেশি প্রদান করেছে। ওই অতিরিক্ত সাত টাকা আমি ফেরত দিতে এসেছি। কিন্তু এখন আমি খুব অসুবিধায় পড়ে গেছি।'

'কেমন অসুবিধা?'― নরম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন অধ্যাপক।

"যখন আমি অফিসে এলাম ততক্ষণে অফিসে সেদিনকার অ্যাকাউন্টস ক্লোজড হয়ে গেছে। অ্যাকাউন্ট্যান্টের পক্ষে ওই অর্থ আজকে আর ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়।" বরং অফিসের পরামর্শ― ওই সামান্য ক'টা টাকা ফেরত না দিয়ে আনন্দের সঙ্গে তিনি যেন গ্রহণ করেন। এদিকে তরুণও নাছোড়বান্দা। এ হেন অর্থ গ্রহণ করতে সে অপারগ। ফেরত সে দেবেই দেবে। সমস্ত ঘটনা শুনে বর্ষীয়ান অধ্যাপক অগত্যা নিজেই সেই অতিরিক্ত সাত টাকা তরুণের কাছ থেকে নিয়ে নিলেন। তারপর হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুটা পথ যাবার পর হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর কপালে কুঞ্চিত বলিরেখার মাত্রাতিরিক্ত ঘন সন্নিবেশে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অধ্যাপক খুব চিন্তিত। পেছনে ঘুরে তরুণের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, 'আগামীকাল সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে আমার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করবে।' কথা শেষ হতে না হতেই হেঁটে দৃষ্টির অন্তরালে অন্তর্হিত হলেন।

এদিকে তরুণের মুখমণ্ডলের ভৌগোলিক বলিরেখা পূর্ণ স্থানগুলো তৎক্ষণাৎ প্রকট হল। আনন্দে। চিত্ত উৎফুল্ল। চকচক করে উঠল মুখচোখ। না, না, চাকরি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে নয়। কারণটা ভিন্ন। আসলে ইনস্টিটিউটের প্রধান ওই অধ্যাপক একজন নামী নোবেল জয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত হওয়ার অছিলায় প্রার্থীদের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। সম্মানজনক চাকুরীর হাতছানি এবং মহান বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য লাভ। তাই অকৃতকার্য হলেও অবাছাই প্রার্থীরা খুশি হয়ে বাড়ি ফিরেছিল নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানীর সামান্য সঙ্গলাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারায়। 

সেক্ষেত্রে ওই তরুণের ভাগ্যে তো আবারও সুযোগ এসেছে বিজ্ঞানীর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ করার! সেজন্য পরের দিন ১০: ৩০ মিনিটে আসতে বলায় ত‍রুণ যারপরনাই খুশি হয়। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বর্ষীয়ান নোবেল জয়ী অধ্যাপক পরের দিন বলতে শুরু করেন, 'বাছা, তুমি ফিজিক্স টেষ্টে ফেল করেছ; কিন্তু সততার পরীক্ষায় তুমি জয়ী। সুতরাং তোমার জন্য আমি আরও একটি পোষ্ট তৈরি করেছি।' বিষ্ময়ে আকাশ থেকে পড়ে সেই তরুণ চাকুরী প্রার্থী 
সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, পরবর্তীকালে 'চন্দ্রশেখর লিমিট' আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল (১৯৮৩) পুরস্কার পান। সাত টাকা কীভাবে তাঁর জীবন আমূল বদলে দেয় তার বর্ণনা একটি পুস্তকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।
আর সেই নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রবীণ অধ্যাপক? কে তিনি? কী তাঁর পরিচয়? তিনি আর কেউ নন, পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন। সংক্ষেপে স্যার সি. ভি. রামন। ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির তিরুচিরাপল্লিতে এক হিন্দু তামিল ব্রাহ্মিণ পরিবারে তাঁর জন্ম ১৮৮৮ সালের ৭-ই নভেম্বর। মাতা পার্বতী আম্মাল। পিতা চন্দ্রশেখর রামানাথন আইয়ার স্থানীয় হাইস্কুলের একজন শিক্ষক। রমনের জন্মের চার বছর পর তার পিতা পুরো ফ্যামিলি-সহ বিশাখাপত্তনম তথা ভাইজাগে স্থানান্তরিত হন। ভাইজাগের Mrs. A. V. Narashimha Rao College-এ ফিজিক্সের লেকচারার নিযুক্ত হয়ে। সেখানকার সেন্ট অ্যালয়সিয়াস অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হাইস্কুলে মা-বাবার আট সন্তানের দ্বিতীয় জন রমনের স্কুল জীবনের হাতেখড়ি হয়। ছোট্ট রামন লেখাপড়ায় খুব ব্রিলিয়ান্ট। মাত্র এগারো বছর বয়সে সে মাধ্যমিক এবং তেরো বছরে বৃত্তি নিয়ে এফ. এ. (F.A.) পরীক্ষায় (বর্তমানের ১০ + ২ সমতুল্য) সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়।

তারপর ১৯০২ সালে মাদ্রাসের (বর্তমান নাম চেন্নাই) প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিক্সে ভর্তি হন। অবশ্য ফিজিক্স ও গণিত পড়ানোর জন্য এখানে বদলি হয়ে এসেছেন তার পিতা মি. আইয়ার। সেই প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৪ সালে ফিজিক্সে স্বর্ণ পদক সহ তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে গ্র্যাজুয়েট (B.A.) হন। ১৯০৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ জার্নাল 'ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিন'-এ আলোকের অপবর্তন (Diffraction)-এর ওপর একটি পেপার তিনি প্রকাশ করেন। পরের বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিসটিঙ্কশন সহ মাষ্টার্স ডিগ্রি (M.A.) অর্জন করেন। ১৯০৭ সালে উপরোক্ত ম্যাগাজিন তার দ্বিতীয় পেপার ছাপে। বিষয় ছিল তরলের পৃষ্ঠটান। পেপারটি ম্যাগাজিনে লর্ড র‍্যালে' (Lord Rayleigh) -এর আর্টিকেল 'শব্দতরঙ্গে মানুষের কানের সংবেদনশীলতা'র ওপর প্রকাশিত পেপারের পাশে মুদ্রিত হয়। তারপর থেকে বিজ্ঞানী র‍্যালে রামনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকেন। নম্রতার সঙ্গে রামনকে 'প্রফেসর' অ্যাখ্যা দেন তিনি।

রামনের ক্ষমতার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স টিচার রিচার্ড জোনস তাকে ইংল্যান্ডে গবেষণার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন। তড়িঘড়ি মি. জোনস কর্নেল স্যার জেরান্ড জিফার্ড-এর কাছে রামনের ফিজিক্যাল ইন্সপেকশনের ব্যবস্থাও পাকা করে ফেলেন। কিন্তু ইন্সপেকশনের শেষে কর্নেল জিফার্ড শোনালেন হাড় হিম করা তথ্য। ইংল্যান্ডের খারাপ আবহাওয়া রমন সহ্য করতে পারবে না এবং টিউবারকিউলোসিসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল। তাই বিদেশ গমন আপাতত স্থগিত থাকল।

এদিকে ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বসা Indian Finance Service-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান দখল করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পরে স্মৃতিচারণ করেছেন, 'সেখানে জমায়েত হওয়া সকল প্রার্থীর দিকে আমি এক পলক তাকালাম ও তারপর আমি মনে মনে বিশ্বাস করতে থাকি যে আমি প্রথম হতে যাচ্ছি।' প্রথম হয়ে সহকারী অ্যাকাউন্টস জেনারেল হিসেবে কলকাতায় নিযুক্ত হন ১৯০৭ সালের জুন মাসে। এর পূর্বে ঐ বছরের ৬-ই মে তারিখে তিনি ১৩ বছর বয়সী বালিকা লোকসুন্দরী আম্মাল-এর সঙ্গে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন।

কলকাতায় থাকাকালীন ১৮৭৬-এ স্থাপিত ভারতের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র 'Indian Association for Cultivation of Science' (IACS)-এ সরকারি কাজের ফাঁকে গবেষণার জন্য তিনি তীব্র আসক্ত হয়ে পড়েন। IACS-এর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি অমৃতলাল সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও IACS-এর কার্যনির্বাহী সদস্য আশুতোষ মুখার্জি ও আশুতোষ দে সমূহ বিশিষ্ট জনের সঙ্গে বন্ধুত্বের পূর্ব পরিচিতি তার সে-বাসনা সফল করে। নিজের সময় মতো IACS-এ গবেষণার অনুমতি পান তিনি। শুরু হয় তার দ্বৈত-জীবন। প্রতিদিন খুব সকাল ৫:৪৫ a.m. থেকে ৯-টা ৪৫ মিনিট এবং সরকারি অফিস বিকেল ৫-টায় বন্ধ হবার পরে রাত্রি ৯:৩০ p.m. বা ১০-টা পর্যন্ত তিনি যেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ, চলে যান IACS-এ। সেখানে গভীর মনোনিবেশ করেন গবেষণায়। তারপর দিনের বেলায় যোগ দেন সরকারি কাজে। 

এর পূর্বে IACS কোনও রিসার্চ স্কলার নিয়োগ করেনি। শুধু তাই নয়, আজ পর্যন্ত IACS থেকে কোনও রিসার্চ পেপারও প্রকাশিত হয়নি। তার অমানুষিক পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ১৯০৭-এর শেষের দিকে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে 'নেচার' পত্রিকায় ছাপানো অক্ষরে প্রথম কোনও পেপার প্রকাশ হয়। দু'বছর কাল কলকাতায় থাকার পর রেঙ্গুন, নাগপুরে বদলির কারণে তার কলকাতা বাস স্থগিত হয়। পদোন্নতি করে Accountant General হয়ে ১৯১১-তে পুনরায় কলকাতায় আগমন ঘটে তার। ১৯১৫ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় IACS-এ তাঁর অধীনে রিসার্চ স্কলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

শেষমেশ অ্যাকাউন্ট্যান্ট-এর বেশি বেতনের চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯১৭ সালে প্রায় অর্ধেক বেতনে পাকাপাকিভাবে অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পালিত প্রফেসরের পদ অলংকৃত করেন তিনি। যদিও তখন তার PhD ছিল না। তাই MA ও MSc-এর কোন ক্লাস নিতে পারবেন না― গবেষণার জন্য এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে তার হাত কাঁপেনি। ১৯১৯ সালে অমৃতলাল সরকারের মৃত্যুর পর IACS-এর সাম্মানিক প্রফেসর ও সাম্মানিক সেক্রেটারি দ্বৈত পদ অলংকৃত করেন তিনি। তিনি নিজে এই সময়কালকে তার জীবনের 'স্বর্ণ-যুগ' অ্যাখ্যা দিয়েছেন। 

তারপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯২৮ সাল। তারিখটা ছিল ২৮-শে ফেব্রুয়ারি। দেড় মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে ওইদিন তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন 'রমন এফেক্ট'। যার জন্য শুধু প্রথম ভারতীয় নয়, প্রথম এশিয়ান বিজ্ঞানী হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের কালো চামড়ার মানুষের প্রতিনিধি হয়ে ১৯৩০ সালের ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার জয় করেন তিনি। তার নোবেল প্রাপ্তির খুশিতে ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২৮-শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভারতে 'বিজ্ঞান দিবস' হিসাবে পালন করা হয়।

কিন্তু 'রমন এফেক্ট' কী, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন? 

যখন কোন স্বচ্ছ বস্তুর ওপর আলো পড়ে, বস্তুস্থিত অণু-পরমাণু-ইলেকট্রন সমূহ উক্ত আলোকশক্তি শোষণ করে। শক্তি শোষণের ফলে তারা উদ্দীপ্ত অবস্থায় উন্নীত হয়। এই উত্তেজিত অণু বা পরমাণু অথবা মুক্ত ইলেকট্রন তখন ভিন্ন কম্পাঙ্কের আলোক-শক্তি নির্গত করে। এই ঘটনা বিক্ষেপন (scattering) নামে পরিচিত। রমন এফেক্ট এক বিশেষ ধরনের বিক্ষেপন ঘটনা। একটি বস্তুর মধ্যে অসংখ্য অণু বর্তমান। এখন এমন একটি স্বচ্ছ বস্তুর ওপর নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের আলোক আপতিত হলে প্রকৃতপক্ষে আলোক শক্তি বস্তুর মধ্যেকার অণু বা পরমাণুর উপর আপতিত হয়। ফলে বিক্ষেপনের পর একটি বস্তু থেকে তিনটি ভিন্ন কম্পাঙ্কের আলোক নির্গত হয়, যথা―
  (১) আপতিত আলোর সমান কম্পাঙ্কের আলোক।
  (২) আপতিত আলোর চেয়ে কম কম্পাঙ্কের আলোক, 
        যা 'স্টোকস লাইন' নামে পরিচিত ও সংখ্যায় বেশি।
  (৩) আপতিত আলোর চাইতে বেশি কম্পাঙ্কের আলোক,
        যা 'অ্যান্টি-স্টোকস লাইন' নামে পরিচিত।

সোজা ভাষায় বললে; একটি স্বচ্ছ বস্তুর ওপর একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলো আপতিত হলে বস্তুটি থেকে তিনটি আলাদা আলাদা বর্ণের আলো নির্গত হবে। এই বিক্ষেপন ঘটনাটিকে রমন বিক্ষেপন বলা হয়। এ হেন ঘটনা আবিষ্কারের নেপথ্যে একটি ঘটনার কথা ব্যক্ত করা আশু প্রয়োজন। 

সময়টা ১৯২১। সে-বছর আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসবে লন্ডনে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তখন সি. ভি. রামন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেলিগেট হিসাবে প্রফেসর রমনকে লন্ডনে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। অধিবেশন শেষ করে সমুদ্র পথে জাহাজে চড়ে বাড়ি ফেরার সময় রমনের মনে প্রশ্ন জাগে, 'একটি কাঁচের গ্লাসে জল বর্ণহীন, কিন্তু সমুদ্রের জল নীল দেখায় কেন?' এই প্রশ্নের সমাধান করতে গিয়ে না-কি ১৯২৮ সালে রমন এফেক্টের ঘটনা তাঁর মনে উদ্রেক হয়। রমন এফেক্ট থেকে রমন স্পেক্ট্রোস্কোপির উদ্ভব।

১৯৩০ সালে ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার জয়ের তিন বছর পর তিনি কলকাতা ছাড়েন। ১৯৩৩-এ ব্যাঙ্গালোরে Indian Institute of Science-এ যোগ দেন। সেখান থেকেই ১৯৪৮ সালে অবস‍র গ্রহণ করেন। এক বছর পরে তিনি ব্যাঙ্গালোরে রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন ও নিজে বৈজ্ঞানিক নিয়োগ করেন। ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার তাকে 'ভারতরত্ন' সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে।

১৯৭০ সালের ২১-শে নভেম্বর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

প্রফেসর সি. ভি. রামনের লেখা পুস্তক সমূহ―
  (১) Molecular Diffraction of light (1922)
  (২) The New Physics (1951)
  (৩) Scientific Papers of C. V. Raman

প্রফেসর সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের লেখা বই―
  (১) Radiative Transfer (1950)
  (২) Hydrodynamic and Hydromagnetic stability
        (1961)
  (৩) The Mathematical Theory of Black Holes
        (1983)
আজ ৭-ই নভেম্বর। মহান বিজ্ঞানী সি. ভি. রামনের শুভ জন্মদিন। জন্মদিনে প্রিয় বিজ্ঞানীকে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম ও অন্তহীন ভালোবাসা জানাই।
-----------
আরও পড়ুন। 
এ.পি.জে আবদুল কালাম।
 শ্রদ্ধা ও স্মরণে পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা।


Post a Comment

0 Comments