জ্বলদর্চি

আত্মহত্যা-অবসাদ এবং করোনা-কাল/গৌতম বাড়ই

আত্মহত্যা-অবসাদ এবং করোনা-কাল

গৌতম বাড়ই


গত ১০-ই ডিসেম্বর এক বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকের অনেক ভেতরের দিকে একটি পাতায়(১৩ নং) নজরে পড়ল গুরুত্বপূর্ণ এক খবর। খবরটি ছিল, 'করোনা-কালের অবসাদে লাফিয়ে বাড়ছে আত্মহত্যা, শঙ্কায় ডাক্তারেরা'। উন্নত দেশের মতন আমরা মানুষের মানসিক দিক নিয়ে তেমন চর্চা করিনা। অথচ পরিসংখ্যানে বলছে আগামী দিনে ভারতবর্ষে আত্মহত্যা এক বিরাট সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দেবে। এই ধরনের খবর সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় আমাদের দেশে অবশ্যই আসা উচিত। জানি না কি অজ্ঞাত কারণে ভেতরের দিকেই ঠাঁই হয়!

জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে ভীষণ ---- শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে। কাল রাতে--- ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হল তার স্বাদ।

এরকম স্বাদ কেন হয়? এরকম স্বাদ করোনা-কালে এত বেড়ে গেল কেন? বর্তমান পৃথিবীতে আত্মহত্যা চরমতম এক জায়গায় এই এক থেকে দেড়-দশকে পৌঁছে যাবে, যা আমাদের ধারণার বাইরে। আজকের এই দুর্দশাগ্রস্ত  সময়ে এই শঙ্কাই গ্রাস করছে আমাদের।

বলতে গেলে প্রায় সব দেশেই প্রথম দশটি মৃত্যুর কারণের মধ্যে আত্মহত্যা একটি। প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন জীবনের কোনও না কোনও সময়ে আত্মহননের কথা ভাবেন। আত্মহত্যা কোনও অপরাধ নয় -মনের এক গভীর থেকে গভীরতর অসুখ।
বর্তমান বিশ্বে এক অদ্ভুত সংকট চলছে নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। তার জন্যে সুস্থ মানসিক চিন্তাশক্তি ক্রমে ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আমাদের জীবনচর্যা থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আর সদর্থক মূল্যবোধগুলো তিল তিল করে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ঘরে-বাইরের প্রবল মানসিক চাপে মানসলোকের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে আমরা চূড়ান্ত নেতিবাচক পরিমানের শিকার হচ্ছি। ফলশ্রুতিতে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার অন্ধকূপ।

বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নিই-----

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, কম-বেশি ৪০-৪৫ কোটি মানুষ সারা বিশ্বে বর্তমানে মানসিক অবসাদের শিকার। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন। আর আত্মহননের চেষ্টা করেন প্রায় ২ কোটি মানুষ। তথ্য প্রমান থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন কম-বেশি ৪-৫ হাজার নারী-পুরুষ অসহনীয় মনসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যার চূড়ান্ত পথ বেছে নেন। মানসিক অবসাদের চাপে চুরমার হয়ে যাচ্ছে আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনের আশা-আকাঙ্খাগুলো, ভেঙ্গে যাচ্ছে সুস্থ মানবিক সম্পর্ক।  লেখাপড়ার অত্যধিক চাপে  ছাত্রছাত্রীরা ক্লান্ত ও অবসন্ন। জীবন ও জীবিকার চাপে তাদের বাবা মায়েরাও আজ বিধ্বস্ত এবং অবসাদগ্রস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজের পরে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করবে মেন্টাল ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ নামক রোগটি। ক্যানসার, এইডস্‌ ইত্যাদি নানান মারণব্যাধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদের সবাইকে পরাস্ত করে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই মানসিক অবসাদ রোগের আনুপাতিক গুরুত্বের বিচারে প্রথম স্থানটি দখল করে নিতে চলেছে।
আমাদের প্রত্যেকের আশপাশের আত্মীয়-অনাত্মীয় তাদের নিয়ে আমাদের যে সমাজ সংসার, তাদের ভেতর মানসিক অবসাদ গ্রস্তদের  চিনব কী করে?

অবসাদের কবলে পড়ে মানুষ চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দৈন্দনিন কাজকর্মের আগ্রহ কমে যায়। আনন্দ পাওয়ার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যাওয়ার কারণে কোনও কিছুই আর একদম ভালো লাগে না। রোগীর মনের অবস্থা এতটাই নেতিবাচক হয়ে ওঠে যে, তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, এই হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির আর কিছুতেই পরিবর্তন হবে না। সব কিছুতেই খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিভাব, ভিতরে ভিতরে চূড়ান্ত অস্থিরতা গ্রাস করে। অসম্ভব ক্লান্তি ভাব, কোনও কাজে মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারে না। জীবনে ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতেও ভুল করে বসে। সারাদিন শুয়ে বসে কাটাতে মন চায়। খিদে ও তেষ্টা কমে যায়। রাতে ছটফট করে, ভালো করে ঘুমোতে পারে না। রোগী বিশ্বাস করতে শুরু করে, তারই দোষে সংসারের আজ এই হাল। ভাবতে থাকে, আমি মরে গেলে সংসারের সবার কল্যাণ হবে, মঙ্গল হবে। কেউ কেউ মৃত্যুচিন্তায় উদ্বেল হয়ে ওঠেন। ভাবেন, কোনও মতে এ পৃথিবী থে কে বিদায় নিতে পারলে আমার শান্তি। রোগী যখন অবসাদগ্রস্ত অবস্থা আর সহ্য করতে পারে না, তখন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়ে। তখন তাঁর ভিতরকার অস্থিরভাব হঠাৎ করে স্তিমিত হয়ে আসে। তখন এমনকী তাঁরা নিজের প্রিয় জিনিসটিও অন্যকে ডেকে দিয়ে দেন।

মানুষ আত্মহত্যা করে কেন? এও এক যদিও কঠিন মনো-বিশ্লেষক প্রশ্ন। তবুও অনিবার্য কিছু কারণ আমরা বের করতেও পারি।

ব্যক্তিত্বের বিকার থেকে মানুষ যখন তাঁর সহজাত জৈবিক চাহিদাগুলোকে পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে দেখা দেয় বিষণ্ণতা, হতাশা, অপরাধবোধ, উৎসাহহীনতা, কর্মবিমুখতা ও আত্মহননের ইচ্ছে। ধর্মীয় ও নানারকম আর্থ-সামাজিক কারণে মানসিক অবসাদ আমাদের গ্রাস করে, আমাদের মনের আকাশ ছেয়ে যায় অবসাদের কালো মেঘে। বেকারত্ব, দারিদ্র‍্য, ঋণগ্রস্ত অবস্থা, সাম্প্রতিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ক্রমাগত মানসিক চাপ,  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি ও দাম্পত্যকলহ অবসাদের কারন হয়ে দেখা দেয় ও পরিণতিতে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। একাকীত্ব-জনিত নিঃসঙ্গতা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অবসাদের অন্যতম কারণ। পারিবারিক বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই মনোবিকার বিশেষত মানসিক অবসাদের কবলে পড়েন। ছেলে-বউমার সংসারে স্বাধীনতাহীন অবস্থায় বেঁচে থাকার যন্ত্রণায় বেশি বয়সের অবসাদগ্রস্ত অবস্থা আত্মহত্যার কারন হয়ে দেখা দেয়। দীর্ঘকাল যন্ত্রণা ও বেদনাদায়ক কঠিন অসুখে ভুগলে অবসাদ আসে। মদ্যপান, ড্রাগ ইত্যাদি নেশার সামগ্রী অত্যধিক সেবনে অবসাদ দেখা দেয়। মাদকাসক্তের মধ্যে তাই মানসিক অবসাদের কারনে আত্মহত্যার প্রবনতা বেশি। ‘স্মাইলিং ডিপ্রেশন’ নামের একটি শব্দবন্ধ অনেকেই হয়ত শুনে থাকবেন। অনেক ডিপ্রেশনের রোগী থাকেন যারা অবসাদ লুকিয়ে বাইরে হাসিমুখে থাকেন, রাস্তায় দেখা হলে জিজ্ঞাসা করলে বলেন – তিনি সুখে ও আনন্দে আছেন। আত্মহত্যা জাতীয় কোনও মারাত্মক অঘটন না ঘটলে বোঝাই যায় না যে তিনি আসলে কতটা অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। এছাড়া, ব্যক্তির কামনা-বাসনার সঙ্গে তাঁর প্রকৃত সামর্থের সামঞ্জস্য না থাকলে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। বর্তমান যুগে সর্বাত্মক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় আমাদের অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন অবক্ষয়ের প্রকোপে আমাদের আগামী প্রজন্মের সন্তান-সন্ততিরা মানসিক বিকৃতি বা পার্ভাটেড হয়ে যাচ্ছে। তাদের অবচেতন মনে  গৃহীত সেইসব বিকৃতির প্রভাবে ক্রমশ তারা উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনায় উথালপাথাল হতে থাকে। মানসিক এই স্বাস্থ্যহানির কারণে কেউ কেউ অপরাধপ্রবণ হয়ে অবশেষে অসামাজিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। কেউবা আবার বাস্তব থেকে পালিয়ে কল্পনার জগতে বাস করতে করতে স্কিজোফ্রেনিয়ায় (অলীক কাল্পনিক বাতুলতা রোগবিশেষ) আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেকে আবার না পাওয়ার হতাশা-জনিত কারণে মানসিক বিষণ্ণতায় আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
আত্মহত্যা সংক্রান্ত জ্ঞাতবা কিছু তথ্য

ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো-র রেকর্ড অনুযায়ী আমাদের দেশে ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সরকারি তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী, ভারতবর্ষে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পুরুষদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা নারীদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। আর নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় চারগুণ বেশি। বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা তুলনামূলক কম, পক্ষান্তরে বয়স্ক অবিবাহিত, বিধবা বা বিপত্নীকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে অবশ্য বিবাহ-বিচ্ছিন্নাদের ক্ষেত্রে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রী, পুলিশকর্মী ও সেনা জওয়ানদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা প্রচণ্ড হারে বাড়ছে। মনোরোগ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করার আগে মনোচিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন এবং আকার-ইঙ্গিতে নিজের জীবন নিয়ে হতাশার কথা ডাক্তারবাবুকে জানিয়েছিলেন। আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষজন মৃত মানুষদের নিয়ে বারংবার আলোচনা করতে পছন্দ করেন, মানুষ কীভাবে মারা যায় তা নিয়েও আলাপ-আলোচনা করতে ভালোবাসেন। তাঁর মধ্যে হঠাৎ করে চুপচাপ একা থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কালক্রমে অবসাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে মানুষ আত্মহত্যার কথা ভাবে।
আত্মহত্যা নিবারণে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব

আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। মানসিক অবসাদ কাটাতে কোনও কথাই নিজের মধ্যে গোপন করে রাখবেন না। সমমর্মী কাউকে আপনার মানসিক দুরবস্থার অংশীদার করে নিন। অবসাদে নিমজ্জিত ও হৃদয় মননে জর্জরিত মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা সবাই তাঁর পাশে আছেন ও তাঁর বিষণ্ণতা ও অবসাদের কারন অনুসন্ধান করে, তার থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে নিকট আত্মীয় পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সকলে ঐকান্তিক প্রয়াস করছেন। অবসাদের তীব্রতা কমাতে বিশেষ কিছু ব্যায়াম দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে। আপনি যোগাসন প্রানায়াম ও ধ্যান অভ্যাস করতে পারেন। দূরের কোনও অচেনা রাস্তায় বেশ কিছুক্ষন হেঁটে আসুন বা পুকুরে সাঁতার কাটুন। অবসাদের প্রকোপ কমাতে অবসর সময়ে ভালো বন্ধুদের ফোন করুন। আর নেতিবাচক মানসিকতার লোকজনের থেকে শত হস্তে দূরে থাকুন।

আত্মহত্যা-প্রবণদের অবসাদ কাটিয়ে ওঠার জন্যে দেশে-বিদেশে আজকাল মিউজিক থেরাপি চালু হয়েছে, চালু হয়েছে আর্ট সাইকোথেরাপি। প্রয়োজনে এ সবের সাহায্য নিতে পারেন। সময় করে আপনার পছন্দের গান-বাজনা বা লঘু শাস্ত্রীয় সংগীত শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। নানা ধর্মীয় পুস্তক আপনার মানসিক অবসাদ কাটাতে সাহায়তা করতে পারে। দিনের সামান্য কিছুটা সময় আপনি শিশুদের সঙ্গে হই চই করে খেলাধূলা করে কাটাতে পারেন। অবসাদের প্রকোপে মানুষ আলস্যপরায়ণ ও কর্মবিমুখ হয়ে ওঠে। আলস্যপ্রবণতা কাটিয়ে উঠতে বাড়ির কিছু কাজ নিজের হাতে করুন। ঘর-গৃহস্থলি পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন রাখুন ও সুন্দর পরিপাটি করে সাজান। বাড়ির সংলগ্ন বাগান পরিচর্যা করতে পারেন বা কিচেন গার্ডেন-এ ফলমূল, শাক-সবজি চাষ করতে পারেন। টেনশন ও ডিপ্রেশন কমাতে প্রাণখোলা হাসির জুড়ি নেই। সুস্থ রুচির জোকসের বই পড়ুন বা টেলিভিশনে মজাদার হাস্যরসের অনুষ্ঠানগুলো দেখুন। আজকাল শহরের ইতি-উতি লাফিং ক্লাব চালু হয়েছে – তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এমন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠাণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতে সর্বদা নানান ধরনের সৃজনশীল লোকজনের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার সময়-সুযোগ থাকলে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সব এনজিও গঠনমূলক কাজ করে, তাদের মাধমে সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হতে পারেন।
আত্মহত্যাপ্রবণ নারীপুরুষদের পুনর্বাসন কীভাবে
করা যেতে পারে? তার অনুসন্ধানে কিছু তথ্য নির্ভর লেখনী এখানে তুলে ধরছি।

প্রত্যেক মানুষের জীবন অমূল্য। বিশ্বসমাজ মেনে নিয়েছে, আত্মহত্যা কোনও অপরাধ নয় – এটি মনের একটি গভীর অসুখ। যে অসুখের মূল কারন মানসিক অবসাদ নামের এক গোপন মহামারি। এই অবসাদ অ্যান্টি-ডিপ্রেশ্যান্ট অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি ঔষধের সাহায্যে কাটিয়ে ওঠা যায়। প্রচণ্ড অবসাদে যে সমস্ত রোগী আর খাবার-দাবার খেতে চায় না বা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তার জন্যে বিভিন্ন মেন্টাল থেরাপির সুযোগ নেওয়া যায়। মুড স্ট্যাবিলাইজার হিসেবে বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি ঔষধও বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন অবসাদগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসায় সুফলদায়ক।  ঔষধের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি, বিশেষভাবে কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি, সাপোর্টিভ ও এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি এবং ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন পদ্ধতিগুলো অনুসরন করে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষজনের চিকিৎসা করতে হবে।

পরিশেষে আত্মহত্যা নিবারন শুধুমাত্র মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের উদ্যোগে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ আইনজ্ঞ, মনঃসমীক্ষক, পুলিশ, প্রসাশন, রাজনীতিবিদ এবং অবশ্যই সমাজ-সচেতন সংবাদমাধ্যম-কে যৌথ প্রয়াসের অংশীদার হিসেবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া, আত্মহত্যা প্রতিরোধে মনোবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সমাজের অন্যান্য সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজনকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
করোনা-কালে যে বৃদ্ধটি এই খোদ কলকাতা শহরে কাজ হারিয়ে আর্থিক অনটনের চাপ নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন, মানসিক অবসাদে যে ছাত্রটি পঁচিশ তলার বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়,তাদের প্রতি আমাদের এক দায়বদ্ধতা থাকেই এড়িয়ে যেতে পারিনা।সংবাদেই প্রকাশ এ বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশ এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫০টির মতন।এ দেশের ১৫ - ৩০ বছর বয়সিদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বলে নানা সমীক্ষায় এ মত উঠে এসেছে।

তবে আশার কথা, এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের তরফে একটি বিশেষ‌ পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে। স্কুল- কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি হেল্পলাইন নাম্বার চালুর পরিকল্পনা আছে। বিশেষ করে এই ধ্বস্ত সময় সামাল দিতে , এই আত্মহত্যার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঠেকাতে,  এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, এর আশু প্রতিকারে সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments