Bengali grammar and debate
বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক
পর্ব ১০
অসীম ভুঁইয়া
বিশেষণপদের অসীম আকাশ
বিশেষণপদ নিয়ে এবার আলোচনাটা সেরে ফেলা যাক।
বিশেষণপদ সাধারণত বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, প্রথাগত অব্যয় ও ক্রিয়াবাচক শব্দের দোষ,গুণ, ধর্ম, সংখ্যা, পরিমাপ, অবস্থা, সম্বন্ধ, মাত্রা প্রভৃতি প্রকাশ করে থাকে। যেমন- "সবুজ" সংকেত পেলেই যাব।
"অতি সুন্দরী" সে।
"দ্রুত" হেঁটে যাচ্ছে।
উদ্ধৃতি দেওয়া শব্দগুলি বিশেষ্য, বিশেষণ বা ক্রিয়ার গুন, অবস্থা, মাত্রা প্রভৃতি প্রকাশ করছে।
বিশেষণ পদের শ্রেণিভাগ
বিশেষণ পদের শ্রেণিভাগের ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। আগেই বলেছি পদের শ্রেণিভাগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা থেকে গেছে। বিশেষণ পদের ক্ষেত্রেও একই কথাই প্রযোজ্য। কারণ বাক্যে একই বিশেষণ, ক্ষেত্রবিশেষে নানাভাবে প্রয়োগ হতে পারে। আবার অন্যান্য অনেক পদও অনেক সময় বিশেষণের ভূমিকা নিয়ে থাকে। অন্যদিকে এক শ্রেণির বিশেষণের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অন্য এক শ্রেণির বিশেষণের কিছু বৈশিষ্ট্যের একটি হয়তো মিলে যায়। তাই একেবারে তর্কাতীতভাবে বিশেষণের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণিভাগ কখনোই সম্ভব নয়। কেউ কোনোদিন করেছে বলেও মনে হয় না।
যাইহোক সবদিক বিবেচনা করে স্বল্প বুদ্ধিতে আমরাও একটি শ্রেণি নির্ণয়ের চেষ্টা করলাম।
বিশেষণ পদের প্রধানত চারটি শ্রেণি।
১. বিশেষিত শব্দ অনুযায়ী
২. উৎস ও গঠন অনুযায়ী
৩. প্রয়োগ বৈচিত্র্য অনুযায়ী ও
৪. বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী।
১ নং ভাগে, অন্যান্য পদগুলিকে বিশেষণ পদ কীভাবে বিশেষিত করেছে তা আলোচনা করা হয়। যেমন- "বুদ্ধিমান" সে।
"সুন্দরী" মেয়ে।
"দ্রুত" ছুটছে ইত্যাদি।
অর্থাৎ এই শ্রেণিতে নামপদ ও ক্রিয়াপদকে বিশেষণপদ কীভাবে বিশেষিত করছে তা দেখা হয়। এখানে উদ্ধৃতি দিয়ে দেখানো হয়েছে।
আরো একটু ভেঙ্গে দেখলে, এই শ্রেণিভাগটির আরো নানা ধরন পেয়ে যাব।
i. বিশেষ্যের বিশেষণ।
ii. সর্বনামের বিশেষণ।
iii. বিশেষণের বিশেষণ।
iv. প্রথাগত অব্যয়ের বিশেষণ ও
v. ক্রিয়াবিশেষণ।
i. বিশেষ্যের বিশেষণ - "উজ্জ্বল" নক্ষত্র। "বেগবতী" নদী। উদ্ধৃত শব্দদুটি বিশেষ্যের বিশেষণ।
এরা আবার নয় ধরনের- গুণবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ: "পবিত্র" মসজিদ। ভাববাচক বিশেষ্যের বিশেষণ- "সুখী" মানুষ। অবস্থাবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ- "কিশোর" বালক। উপাদান বাচক বিশেষ্যের বিশেষণ- "তুলোট" কাগজ। পরিমাণবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ- "অনেকটা" জল।
বর্ণবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ- "নীল" কালি। সংখ্যাবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ - "তেত্রিশ" বছর। পূরণবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ - "তৃতীয়" পর্যায়।
এবার আসি ii. বিশেষণের বিশেষণ - "ভয়ঙ্কর" সুন্দর থ্রিলার। "খুব" চমৎকার ব্যাপার।
চিহ্নিত বিশেষণগুলি তার পাশের বিশেষণগুলিকে বিশেষিত করেছে। একেই বিশেষণের বিশেষণ বলে। পবিত্র সরকার একে "অতি বিশেষণ" নামে অভিহিত করেছেন। নামটি আমাদের বেশ মনে ধরেছে।
iii. সর্বনামের বিশেষণ- "বুদ্ধিমান" সে হারে না তাই। তুমি "বোকা" কেন?
চিহ্নিত বিশেষণপদগুলি সর্বনামপদের আগে বা পরে বসে পদগুলিকে বিশেষিত করেছে।
iv. অব্যয়ের বিশেষণ- যাদের আমরা আবেগশব্দ বলি।
"শত শত" বাহবা তোমায়। "ধিক ধিক" ওরে শত ধিক তোরে। "সুন্দরী" ওগো, কোথায় চলেছ?
চিহ্নিত বিশেষণগুলি পাশের অব্যয়পদকে বিশেষিত করেছে। এদেরই অব্যয়ের বিশেষণ বলা হয়। যদিও আমরা এদের আবেগশব্দের বিশেষণ বলি।
v. ক্রিয়াবিশেষণ - "ধীরে ধীরে" বলো। "কী সুন্দর" হাসলে গো তুমি!
উদ্ধৃতি দেওয়া বিশেষণগুলি কোনো না কোনো ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করেছে।
অর্থ ও অন্বয়গত দিক থেকে ক্রিয়াবিশেষণকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়।
অবস্থা বা ধরণবাচক ক্রিয়াবিশেষণ।
কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ। স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ।
না - বাচক ক্রিয়াবিশেষণ ও সংযোজক ক্রিয়াবিশেষণ।
প্রতিটির একটি করে উদাহরণ দিচ্ছি। (পরপর দেখে নিতে হবে ) "নিশ্চিন্তে" থেকো। "অন্ধকার" নেমে এল। "কোথায়" পাব তারে।
এখন "যাব" না।
"তোমার কবিতা পড়েই "তবু " তো মারের ওজন বইছি।"
উদ্ধৃত অংশগুলো বিশেষণ।
২. গঠন ও উৎস অনুযায়ী বিশেষণপদকে নয় ভাগে ভাগ করতে পারি।
বিশেষ্যজাত বিশেষণ। সর্বনামজাত বিশেষণ। অব্যয়জাত বিশেষণ। ক্রিয়াজাত বিশেষণ। ধন্যাত্মক শব্দজাত বিশ্লেষণ। অনুকার শব্দজাত বিশেষণ। সমাসসিদ্ধ শব্দজাত বিশেষণ।
উপসর্গজাত বিশেষণ। প্রত্যয়জাত বিশেষণ।
একটি করে উদাহরণ দিচ্ছি । পরপর দেখে নিতে হবে।
"রাজা" লোক,
"নিজ" লোক।
"হায় হায়" করছ কেন? "আসছে" বছর।
"রিমঝিম" বৃষ্টি,
"বোকাসোকা" লোক "চুলোচুলি" করছ কেন? "নিম"রাজি।
"চলন্ত" ট্রেন।
একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে: সর্বনাম, অন্যপদের বিশেষণ হলে তা সর্বনামজাত বা সর্বনামীয় বিশেষণ।
যেমন: "অন্য" লোক। এখানে "অন্য" নিজেই সর্বনাম হয়ে বিশেষণের ভূমিকা নিয়েছে।আর কোনো বিশেষণ পদ সর্বনামকে বিশেষিত করলে, তা "সর্বনামের বিশেষণ।" যেমন: "মূর্খ" আমি। এখানে "আমি" সর্বনাম, আর তার বিশেষণ "মূর্খ।"
এবার ক্রিয়াবিশেষণ ও ক্রিয়াজাত বিশেষণের তফাৎ জেনে নিই।
ক্রিয়াবিশেষণ, ক্রিয়াকে বিশেষিত করে। যেমন "দ্রুত" হাঁটছে। এখানে "হাঁটছে" ক্রিয়াকে বিশেষিত করেছে "দ্রুত" বিশেষণটি।
আর ক্রিয়াজাত বিশেষণের ক্ষেত্রে , ক্রিয়াপদ নিজেই বিশেষণের ভূমিকা নেয়। যেমন: "হেঁটেই" যাব। এখানে "হেঁটেই" ক্রিয়াটি বিশেষণের ভূমিকা নিয়েছে।
৩. এবার প্রয়োগ বৈচিত্র্য অনুসারে বিশেষণে শ্রেণিভাগ-
এদের সাতটি ভাগে ভাগ করেছি।
একপদী বিশেষণ,
বহুপদী বিশেষণ,
শব্দদ্বিত্ব বিশেষণ,
পদান্তরিত বিশেষণ, প্রশ্নবাচক বিশেষণ, বাক্যাশ্রয়ী বিশেষণ ও
সম্বন্ধ বিশেষণ।
একটি করে উদাহরণ দেওয়া যাক।
"সরল" বালক,
"আকাশ ভরা" সূর্য তারা।
"হাসি হাসি" মুখ,
"ফুটন্ত" জল। "ফুট" বিশেষ্য থেকে বিশেষণ "ফুটন্ত।" "কেমন" তুমি কী জানি।
"সব পেয়েছির দেশে" যাব নতুন বেশে ।
"গঙ্গার" জল পবিত্র।
উদ্ধৃত অংশগুলো বিশেষণ।
এখানে একটি বিষয় দেখে নেওয়া ভালো, বিশেষণপদ বিশেষ্যরূপেও বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
যেমন- "কবির সংগীতে বেজে উঠছিল "সুন্দরের" আরাধনা।"
"পোড়ামুখী" দুচোখের বিষ।"
এখানে "সুন্দর" ও "পোড়ামুখী" বিশেষণ হয়েও বিশেষ্যের মতো আচরণ করছে।
৪. এবার বাক্যে অবস্থান অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ।
এদের দুটি বিভাগ- সাক্ষাৎ বিশেষণ ও বিধেয় বিশেষণ। যেমন- "প্রাণবন্ত" শিশু, "সুন্দরী" নারী,
"উন্মাদ" সে।
এরা বিশেষ্য বা সর্বনামপদের আগে বসেছে। তাই সাক্ষাৎ বিশেষণ। অর্থাৎ যে বিশেষণগুলো অন্যান্য পদের আগে বসে, তারাই সাক্ষাৎ বিশেষণ, আর বিধেয় বিশেষণ হল- "মেয়েটি" সুন্দরী, "লোকটি" নির্বোধ। এই বিশেষণগুলি অন্যান্য পদের পরে বসেছে। অন্যভাবে দেখলে, বিধেয় অংশে অবস্থান করছে। তাই এদের বিধেয় বিশেষণ বলে।
উল্লেখ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিধেয় অংশে বিশেষণ থাকলে তারপর আর বিশেষ্যপদ বসে না।
সবশেষে বলি, শব্দসংখ্যা মাথায় রেখে খুব সংক্ষেপে শেষ করতে হল। বিশেষ করে সংখ্যা ও পূরণবাচক বিশেষণ নিয়ে বেশ কিছু বলার বাকি থেকে গেল। পরে একদিন নিশ্চয়ই বলে দেব।
সংযোজন : আজ ১০ টি পর্ব শেষ হয়ে গেল। ছাত্র/ ছাত্রী, সাধারণ পাঠক, বৈয়াকরণ তথা গুণীজনদের সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামত আশা করছি। ( ভালো ও খারাপ দুটোই) ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকটি এগিয়ে নিয়ে যাব কিনা তা আপনাদের ওপরই নির্ভর করছে। তাই সরাসরি মতামত ও উপদেশ দেওয়ার অনুরোধ করছি। লিঙ্কে ক্লিক করে আগের পর্বগুলো আরেকবার দেখে নিতে পারেন।
Whatsaap no- 7001888143
Mail id- ashim.bhunia1982@gmail.com
এছাড়া লিঙ্কের কমেন্ট বক্সেও মতামত দিতে পারেন।
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments