জ্বলদর্চি

বিশেষ ছোটোবেলা সংখ্যা- ১৪

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা 

 ছোটোবেলা বিভাগটির সম্পাদক বিশিষ্ট গল্পকার মৌসুমী ঘোষ। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হচ্ছে নিয়মিত প্রকাশ। আমরা চাই কিশোর কিশোরীরা আরও আরও লেখা ও ছবি, ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতা পাঠাক। সরাসরি পত্রিকা দপ্তরে কিংবা বিভাগীয় সম্পাদকের কাছে। স্বনামধন্য ফোটোগ্রাফার নীলাব্জ ঘোষ উপহার দিয়েছেন তাঁর ফোটোগ্রাফি। তাঁকে ও আমন্ত্রিত লেখকদের ধন্যবাদ।  তরুণ লেখকদের শুভেচ্ছা। ২০২১ নতুন বছর নতুন হোক।



ভারতবর্ষের মাটি
অনুষ্কা চ্যাটার্জী, একাদশ শ্রেণি
দিল্লী পাবলিক স্কুল, দুর্গাপুর

নববসন্তের মৃদু হাওয়া আমার মনকে বারবার উদাস করে তুলছিল, মনে পড়ছিল একটি মানুষের কথা - যিনি সমাজের স্বার্থে অনায়াসে মৃত্যুকেও বরণ করতে ভয় পাননি।

দিনটি ছিল ৩০ শে জানুয়ারি, সকালবেলা ঘুম থেকে সবে উঠে দাদুর ঘরে গিয়ে দেখলাম তিনি খবরের কাগজ পড়ছেন। আমার দাদু বিদেশী জামা গায়ে দিতেন না, পরতেন সাদা ধুতি ও উত্তরীয়। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মাথায় উস্কোখুস্কো চুল, কাঁচা পাকা গোঁফ, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা ও হাতে একটা লাঠি। দাদুকে দেখলেই আমার মনে হতো গান্ধীজীর কথা।

আমার দাদু চিরকাল পরের জন্য নিঃস্বার্থ সেবা, চেনা-পরিচিত দীন দুঃখীর বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন আর নিজের সর্বস্ব দিয়ে সমাজের উন্নয়নের কাজই করে গেছেন। মানুষটি শুধু চেহারায় নয়, কর্মেও ছিলেন মহাত্মার ন্যায় মহান।

সেই দিনটিতে আমাদের এখানকার একটি রেশনের দোকান কিছুতেই সঠিক মূল্যে গরিব মানুষদের ন্যায্য পাওনা দিচ্ছিলেন না। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল ক্ষমতাসীন পার্টির ছেলেদের সাথে সেই বঞ্চিত মানুষগুলোর দ্বন্দ্ব। প্রথমে তর্কাতর্কি, তারপর হাতাহাতি শেষে রীতিমতো মারামারি বেধে যায়। যেহেতু দাদুকে এলাকার মানুষ সবাই খুব শ্রদ্ধা করতেন, তাই আমাদের পরিচিত অমল কাকু এসে দাদুকে বললেন --"মাস্টারমশাই, আপনি কি একবার গিয়ে দেখবেন ? " দাদুও তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লেন কাকুর সঙ্গে। হ্যাঁ, মারামারি অবশ্য থেমেছিল, কিন্তু হিংসায় উন্মত্ত জনতা ভুলে গিয়েছিলেন গান্ধীজীর অহিংসার বাণী। ভুলে গিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ। সেদিনের সেই দাঙ্গায় দাদুর রক্তাক্ত দেহ ঘরে ফিরে ছিল। হাসপাতালের আই .সি. ইউ তে আমাদের সকলকে ছেড়ে চির বিদায় নেওয়ার আগে সকলকে বলে যান,  "বন্দেমাতরম্"।

আমার মনে হয়েছিল,যেন দূর থেকে ভেসে আসছে সেই বহু বছর আগের বিপ্লবের ধ্বনি। মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছিলাম বহু দূর হতে গান্ধীজী বলছেন --"বন্দেমাতরম্"।

শ্মশানের নিম গাছের তলায় সাদা কাপড়ে ঢাকা দাদুর দেহটা দেখে বারবার শিহরিত হচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে আমি এগিয়ে গেলাম দাদুর দিকে, ওই একটু বেরিয়ে থাকা পা  দুটোর দিকে। শেষবারের মতো পাদুটো  ছুঁয়ে মনে হল এ যেন ভারতবর্ষের প্রকৃত মাটি।
দিল্লি : যেখানে ইতিহাস আজও কথা বলে

ঋতরূপ ত্রিপাঠী
নবম শ্রেণি, রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন, মেদিনীপুর 

কথায় বলে— দিল্লি চলো।
সেই উদ্দেশ্যেই আমরা (আমি, বাবা, মা, মামি ও মামু) ২০১৯ সালের ৮ই অক্টোবর রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ভারতের রাজধানী দিল্লি। দিল্লি, বহু সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন দেখেছে। দিল্লি সাতটি শহরের ধ্বংসাবশেষের উপর বিকশিত রয়েছে। হিন্দু রাজপুত শাসক থেকে শুরু করে মুঘল এবং অবশেষে ব্রিটিশদের দ্বারা এই দিল্লি নির্মিত হয়েছিল। যাই হোক ট্রেন যথারীতি এক ঘণ্টা দেরি করে দুপুর এগারোটার সময় দিল্লির স্টেশন(NDLS)-এ পৌঁছাল। এরপর আমরা আমাদের হোটেলে(মাতৃ মন্দির সমিতি) পৌঁছে সেখানে স্নান, খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে পড়লাম অজানাকে জানার ও অচেনা চেনার উদ্দেশ্যে।
  প্রথম গন্তব্য ইন্ডিয়া গেট। ইন্ডিয়া গেট ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এটি ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই গেটের ভিতরে আছে ভারতের তিনটি সশস্ত্র বাহিনীর পতাকা-- ভারতীয় সেনা, ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী। আর ঠিক তার সামনেই অবস্থিত ভারতীয় শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত অমরজ্যোতি।

  ইন্ডিয়া গেট থেকে বেরিয়ে সংসদ ভবন ও রাষ্ট্রপতি ভবন দেখলাম। রাষ্ট্রপতি ভবন ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন। এরপর আমরা অক্ষরধাম মন্দিরে গেলাম। এই মন্দিরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সর্বাঙ্গীণ হিন্দু মন্দির। তবে এই মন্দিরের ভিতরে ফোটো তোলার অনুমতি নেই। এই মন্দির দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর আমরা হোটেল ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে সেদিনের মতো বিশ্রাম নিতে গেলাম।

  পরদিন আমরা গাড়ী করে কুতুবমিনার, লোটাস টেম্পল, মহাত্মা গান্ধী মিউসিয়াম, ইন্দিরা গান্ধী মিউসিয়াম, যন্তর-মন্তর, পুরানো কেল্লা, রাজঘাট ও রেডফোর্ট দেখলাম। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল কুতুব কমপ্লেক্স, পুরানো কেল্লা ও রেড ফোর্ট। এইসব স্থাপত্য শিল্পের বেশিরভাগগুলিই সুলতানি ও মুঘল যুগে তৈরি হয়েছিল।
কুতুবমিনার সম্বন্ধে আমার আগ্রহ জেগেছিল সপ্তমশ্রেণিতে বাংলা বইয়ের এক পাঠ্যসূচি থেকে --- সৈয়দ মুজতবা আলির ‘কুতুব মিনারের কথা’ প্রবন্ধ পড়ে। এত সহজ সরল এবং আকর্ষণীয় করে বর্ণনা ছিল, যা অবর্ণনীয়। কুতুবমিনার ভারতের সুলতানি স্থাপত্য-শিল্পের খুব বড়ো একটা দৃষ্টান্ত। এর কাছাকাছিই আছে কুয়াত-উল ইসলাম মসজিদ। কুতুব কমপ্লেক্সের ভিতরে ইলতুৎমিশের সমাধি, রাজিয়ার সমাধি, আলাই দরওয়াজা, আলাই মিনার ও মেহোরৌলির লৌহ স্তম্ভও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। মেহোরৌলির লৌহ স্তম্ভ প্রায় ১৬০০ বছর আগে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও এটিতে এখনো মরচে পড়েনি দেখলাম এবং আলাউদ্দিন খলজি কুতুবমিনারের দ্বিগুণ উচ্চতা বিশিষ্ট যে মিনারটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন সেটিই হল আলাই মিনার, যদিও এই মিনারের কাজ শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। এরপর আমরা লোটাস টেম্পলে দেখে যন্তর মন্তরে পৌঁছালাম। যন্তর-মন্তর প্রধানত জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্যই বানানো হয়েছিল। এটিতে একটি সূর্য ঘড়ি আছে --- যেটা আকর্ষণীয়। এরপর আমরা মহাত্মা গান্ধী মিউসিয়াম ও ইন্দিরা গান্ধী মিউসিয়াম দেখে পুরানো কেল্লায় গেলাম। এই পুরানো কেল্লায় আছে কিলা-ই-কুহনা মসজিদ, হুমায়ুন গেট, পুরানো কেল্লার মিউসিয়াম, শিষ মহল, শের মহল ইত্যাদি। শের মহলেই হুমায়ুন পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যান। যাইহোক পুরানো কেল্লার মিউসিয়াম দেখার পর আমাদের গন্তব্য রেড ফোর্ট। এখানেই প্রত্যক্ষ করলাম মুঘল সাম্রাজ্যের আভিজাত্য, তার জাঁকজমক। ইতিহাসের এক বিরাট অধ্যায়, যা এতকাল শুধু ছিল নিরস পাঠ্যক্রম, তা নতুন রূপে, নতুন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। সেখানের গাইডরা বলল দিওয়ান-ই-আম বানানো হয়েছিল আম জনতার জন্য ও দিওয়ান-ই-খাস বানানো হয়েছিল খাস জনতার জন্য এবং মোতি মসজিদ শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ব্যক্তিগত পূজা-অর্চনার মসজিদ হিসেবে এটি নির্মাণ করেন। আমরা যখন রেড ফোর্ট ভ্রমণ করি তখন দেখি কিছু কিছু বিল্ডিং উঠছে, গাইডরা বলল ওখানে এখন মিউসিয়াম তৈরি হচ্ছে। যাই হোক সেই দিন রেড ফোর্ট দেখেই আমরা হোটেলে ফিরে গেছিলাম। তবে দিল্লিতে পৌঁছেই একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম যে দিল্লির রাস্তাঘাট এবং টুরিস্ট-স্পটগুলি খুবই পরিষ্কার, পরিছন্ন। রাস্তার দুপাশেই সবুজের সমারোহ আছে।

  পরদিন গতিমান এক্সপ্রেসে চেপে আগ্রার উদ্দেশ্যে যাত্রা।

  আগ্রা পৌঁছে প্রথমেই গেলাম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম একটি স্থাপত্যশিল্প --- তাজমহলে। তাজমহলের তুলনা নেই বললেই চলে। আদতে তাজমহল শাহজাহানের পত্নী মমতাজের কবরের ওপরে তৈরি ইমারত। এর দুপাশে অবস্থিত দুইটি মসজিদ এবং সামনে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্য শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন স্বরূপ ফোয়ারা যুক্ত উদ্যান। এর ঠিক পিছন দিক দিয়েই যমুনা নদী চলে গেছে এবং যমুনার বিপরীত পাড়ে শাহজাহান ব্ল্যাক তাজমহল তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন কিন্তু সেটা আর তাঁর করা সম্ভব হয়নি। যাইহোক সেইদিন পুরোটাই তাজমহল ও তার আশেপাশের সমস্ত দ্রষ্টব্য স্থান দেখতে দেখতেই কেটে গেল। সন্ধ্যা যখন হয় হয়, তখন আমরা তাজমহল থেকে বেরিয়ে আশেপাশের লোকাল মার্কেটে কিছুক্ষণ কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।
  পরদিন আমরা গাড়ি করে মথুরা, বৃন্দাবন গেলাম। মথুরা, বৃন্দাবনের কয়েকটি মন্দির দেখে আমরা মিয়াবাজারে গেলাম। এই বাজারেই শাহাজাহানের সঙ্গে মমতাজের আলাপ হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু কেনাকাটি করে, তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পরলাম পরদিন আগ্রা র্ফোট ও ফতেপুর সিক্রি যাব বলে। আগ্রা থেকে ফতেপুর সিক্রির দূরত্ব ৩৬ কিমি। যেতে যেতে রাস্তা থেকে দেখে নিলাম মিনি তাজকে। এরপর আমরা সকাল ১০ টার দিকে ফতেপুর সিক্রিতে পৌঁছালাম। ফতেপুর সিক্রি দুই ভাগে বিভক্ত – ১)ফতেপুর ও ২)সিক্রি। সম্রাট আকবরের গুজরাত বিজয়ের পরে এই শহরটির নাম হয় ফতেপুর সিক্রি, 'বিজয়ের শহর'। ফতেপুর সিক্রিতে আমরা দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, বীরবলের ঘর, আকবরের পাঠশালা, আকবরের বিছানা, তৎকালীন রান্নাঘর(যদিও রান্না ঘরগুলোতে এখন আছে শুধু চামচিকের বিদঘুটে গন্ধ), রানীদের ঘর, আকবরের সঙ্গীতশালা(যেখানে একসময় তানসেন গান গাইত), পঞ্চ মহল ইত্যাদি দেখলাম। এরপর আমরা বাসে করে সিক্রি শহরে গিয়ে পৌঁছালাম। এই সিক্রিতেই আছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বুলন্দ দরওয়াজা। আছে সেলিম চিশতির সমাধি, জামা মসজিদ, বাদশাহি দরওয়াজা। এইসব দেখার পর আমরা ফতেপুর সিক্রি থেকে আগ্রা ফোর্টের দিকে রওনা দিলাম। আগ্রা ফোর্টের ঢোকার মুখেই পড়ে জাহাঙ্গীরের বিশালাকৃতির বাথটব। এরপর আমরা ক্রমশ জাহাঙ্গীরের কক্ষ, শাহাজাহানের কক্ষ, তৎকালীন রাণীদের কক্ষ, মমতাজের স্নানঘর, ইত্যাদি দেখলাম। এরপর আমরা দোতলায় গেলাম। খুব সম্ভবত আগ্রা ফোর্ট-ই এমন একটি স্থান যার দোতলায় যাবার অনুমতি আছে। দোতলায় আমরা দেখলাম শাহাজাহানের সিংহাসন, যা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের আমলে ঘটিত সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজদের গুলিতে দুফাঁক হয়ে গেছে ও আওরঙ্গজেব যে কক্ষে শাহাজাহানকে বন্দী করে রেখেছিলো, সেখান থেকে তাজমহলকে খুব ভালো ভাবে দেখা যায়। তাছাড়া দেখলাম একসময় আগ্রা ফোর্টে আঙুর চাষের জন্য নির্মিত বাগান। যাইহোক এরপর আমরা আগ্রাফোর্ট থেকে বেরিয়ে এসে শেষ বারের মতো সন্ধ্যার তাজমহলকে দেখে নিলাম। তাজমহলের সামনের উদ্যানে আমরা অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। এরপর দিনের আলো ক্রমশ কমে আসায় আমরা তাজমহলের থেকে বেরিয়ে এসে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরদিনই আমরা যোধপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসে ঘরে ফিরে এলাম.........

   এদেশে একটা প্রবাদ চালু আছে। তাতে বলা হয়েছে, যে জীবনে একবার অন্তত তাজমহল দেখেনি, তার জন্ম বৃথা.........। 
অদ্ভুতুড়ে 
ছন্দিতা মল্লিক

ঘুঁটেপুরে ঘেঁটুবনে মশা জোঁক তাড়িয়ে
ডাংগুলি খেলে দুটি ছেলে স্কুল পালিয়ে
ঠুস ঠাস সাঁই সাঁই বন বন আওয়াজে
ঘুম ভেঙে রাগে কাঁপে শ্রীহরি বাড়ুজ্জ্যে
"দেহ ছেড়ে ঘর ছেড়ে লোকালয় পেরিয়ে,
কত সাধে তালগাছে বাসা বেঁধে গুছিয়ে,
ফলমূল মধু খেয়ে ঘুমে ডুবি সুখেতে -
কোন ব্যাটা হতভাগা এলি ঘুম ভাঙাতে?"
খড়মেতে খটখট তুলে এলো কাছে যেই
ছেলে সে মারলো এক গুলি ছোটে বাঁই বাঁই!
তাই দেখে কাছা বেঁধে খড়মটা গুছিয়ে
পাঁই পাঁই ছোটে বুড়ো দাঁত মুখ খিঁচিয়ে
খুঁজে পেতে গুলি হাতে পলকেতে সামনে
দেখে তাক নেই বাক ধুতি পরা বামুনে
ছেলেপুলে খেলা ভুলে 'কেরে বাপ'.. পালারে'!
হেঁকে কেঁদে গেলো ভেগে বুড়ো হাঁকে 'দাঁড়া রে!'
'খেলনাটা নিয়ে যা হতভাগা মর্কট!'
আর ফেরে? চারিপাশ শুনশান খটখট
ডাং গুলি গড়াগড়ি হাতে তোলে শ্রীহরি
খোঁনা সুরে নড়েচড়ে বট আম সুপুরী
শন শন বাঁই বাঁই বুড়ো হাড়ে ভেল্কি
সেই থেকে ঘেঁটুবনে কারা খেলে জানো কি?

পরীক্ষা বিভ্রাট
 ফাল্গুনী পান্ডা
 

 মনির আগামীকাল পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা।
 কিন্তু এবার  পরীক্ষার প্রস্তুতি যথাযথ হয়নি।
 কাল সারারাত ছিল লোডশেডিং।
 একে পরীক্ষার দুর্ভাবনা তার উপরেই ঝঞ্ঝাট।
 দুশ্চিন্তা করতে করতে অনেক রাতে মনি ঘুমিয়েছে ।
 সকালে উঠতে তাই সাতটা বেজে গেল।
 কিন্তু একি! এখনো যেন অন্ধকার অন্ধকার লাগছে।
 কেমন একটা স্নিগ্ধ ক্ষীণ আলো।
 গরমকালের সকাল দৈনিক সংবাদপত্র এসে গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট লেখা আছে পরিষ্কার আকাশ। বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই।
     এই নিয়ে ভাবার আর সময় ছিল না। দশটা থেকে পরীক্ষা।
 স্কুলে প্রার্থনা শেষে শিক্ষক এসে প্রশ্নপত্র দিলেন। মনি বসেছে একটা জানলার পাশের বেঞ্চে।
 প্রশ্নপত্র দেখেই মনির চোখে অন্ধকার নেমে এলো।
 ভয়ে হাত-পা কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে ,দরদর করে ঘামছে সে। একটাও উত্তর সে মনে করতে পারছে না। কি হবে এবার? টপ টপ করে চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে খাতা। কার মুখ দেখে উঠেছিল সে? মনে পড়ছে না। 
    এমন সময় একটা ক্ষীন শব্দ শুনতে পায় সে। ও বন্ধু! ও বন্ধু!
 কোথা থেকে আসছে শব্দ টা? চারিদিকে তখন লেখার খসখস আওয়াজ ছাড়া কিছুই নেই।
 এবার সে দেখতে পেল জানলার পাশে একটা পুকুরে আরে এ তো চাঁদ!
 তার দিকে চেয়ে হাসছে। কি ব্যাপার? তাহলে কি ওই ডাকছিল? হবে হয়তো।
   
 চাঁদ: তোমার কি হয়েছে কাঁদছো কেন?
 মনি :একটাও প্রশ্নের উত্তর জানিনা।
 চাঁদ :দেখি প্রশ্নগুলো শুনে।
 আমি সব উত্তর জানিনা। তবে মহাকাশের কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। তোমাকে বুঝিয়ে দেব উত্তরগুলো তুমি সাজিয়ে লিখো।
 মনি :মহাকাশে প্রথম জীবিত প্রাণী যে গিয়েছিল সেটি কি তার নাম কি?
 চাঁদ :আরে ওই যে তোমাদের মহাভারতের মতই, যুধিষ্ঠির  কে যেমন ধর্মরাজ কুকুরের  বেশে স্বর্গের পথ দেখিয়ে নিয়ে  গিয়েছিল,  তেমনি লাইকা নামের এক কুকুর মহাকাশে গিয়েছিল।
 মনি :উপগ্রহের একটা উদাহরণ।
 চাঁদ: যেমন আমি চাঁদ।
 মনি :পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?
 চাঁদ: একটু আগেই তো এলাম প্রায় চারশো কুড়ি হাজার কিলোমিটার।

  এমন সময় হঠাৎ মহাদেব এলেন ত্রিশূল হাতে। দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছেন। তিনি চাঁদকে কান মুলে দিয়ে বললেন বেয়াদব! কাল রকেটে যখন শিব লোকে যাচ্ছিলাম, যান্ত্রিক গোলযোগে রকেটের ঝাকুনিতে  যেই  জটা
আলগা হয়েছে কি! সেই সুযোগে তুমি চম্পট দিয়েছো! স্বর্গ-পাতাল সব খুঁজে এতক্ষণে তোমায় পেয়েছি।
 ভাগ্যিস পৃথিবী বলল যে আজ নাকি সূর্যকে তুমি ডিউটিতে আসতে বারণ করেছ। ওভারটাইম করে বেশি পয়সা নেবে বলে।
 এবার চলো তোমার মজা দেখাচ্ছি।
 এই বলে মহাদেব চাঁদ দুজনেই ভ্যানিশ।
 ছুটিরঘণ্টা তে খেয়াল হলো মনির যে আজকের মত পরীক্ষা শেষ।
 জানলা দিয়ে তখন রোদ পড়ছে খাতায়।


মায়াস্বরী
সহেলী রায়

পায়ের পাতার ওপর বালির স্তূপ জমিয়ে হালকা করে পা বের করল রাজু ওস্তাদ। দিব্য একটা বালির গুহা বানিয়ে বন্ধ চোখে ভাবল সামনে একটা আস্ত সমুদ্দুর সার্কাসের বাঘ বাদশাহর মতো আস্ফালন করছে।  নীলুদার মোবাইলে দেখেছে সে সমুদ্রের গর্জন, বালির মরুভূমি। সার্কাসের তাঁবুর চারপাশে যে বালি ফেলা হয়েছে তাই নিয়েই কল্পনায় মেতেছে রাজু ওস্তাদ। রাজুর আসল নাম কী ছিল বা তার উৎপত্তি কোথায়, বয়স- কিছুই জানে না সে। কবে থেকেই সে যেন এই সার্কাস দলের অংশ হয়ে গেছে। দলের ম্যানেজার গুপ্তাজীই রাজুকে নিয়ে এসেছিলেন। রাজুর বয়স বাড়লেও উচ্চতায় সে এক্কেবারে ছোটটিই। লোকে বলে ‘বামন’। সার্কাসের জোকার। রাজু নিজের নামের সঙ্গে ওস্তাদ শব্দটি নিজেই জুড়ে নিয়েছে যাতে শরীরের উচ্চতা কিছুটা ঢাকা পড়ে। রাজু সার্কাস-দলের জোকার হলেও সাধারণ নয়। রাজু মায়াস্বরী। ঠোঁট না নেড়ে সে কথা বলে  তার পুতুল ডিউকের মাধ্যমে। রাজু ডিউকের কথাবার্তায় তাঁবু ফেটে পড়ে দর্শকের তালিতে। ইদানীংকালের লোকজনের মতো রাজু কোথাও শেখেনি মায়াস্বর। ইংরেজীতে কী যেন এক গালভরা নামও আছে এর। নিজের কৌশলেই ভাগ্যিস রপ্ত করেছিল, নইলে ডিউককে পেত না সে। দলে জোকারদের তেমন দরদাম নেই। তারা তো আর অন্যদের মতো খেলায় পারদর্শী নয়। তাই রাজুর একমাত্র বন্ধু ডিউক। সারাদিন সে ডিউকের সঙ্গে কথা বলে। নিজেই প্রশ্নের জবাব ডিউকের মাধ্যমে নিজেই দেয়। কখনো-সখনো মনে হয় সত্যি ডিউকই কথা বলছে।

  বালির গুহাটা ঘাসপাতা দিয়ে সাজিয়ে রাজু গা ঝেড়ে উঠল। আজ তার দু’তিনবার ডাক পড়বে শো’য়ে।  গুপ্তাজীর আজ বেজায় মাথা গরম। তাদের একমাত্র বুড়ো বাঘ বাদশাহর খাঁচার চাবি কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না রিংমাস্টার নীলুদা। বাদশাহ খাঁচা থেকে না বেরলে খেলা দেখাবে কীভাবে? বাদশাহর শরীর খারাপের দোহাই  দিয়ে বাকিদের ম্যানেজ দিতে হবে। গুপ্তাজী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, যে ওই চাবি খুঁজে দিতে পারবে তাকে  পাঁচশ টাকা ইনাম দেবেন। বিস্তর খোঁজাখুঁজি চললেও রাজু চুপচাপ। টাকাটা পেলে অবশ্য মন্দ হোত না। দল থেকে তার খাওয়া-পরা জুটে যায় কিন্তু মুজফফরপুরে সার্কাস দেখাতে এসে সে একজন বুড়োমানুষকে দেখেছে প্রায় অর্ধনগ্ন, জীর্ণ শরীর। তাকে যদি কিছু দেওয়া যেত। এদিকে বাদশাহও মনমরা হয়ে আছে।

  শো’য়ের পরে সবাই ক্লান্ত। রাজুর ঘুম আসে না। সে ডিউককে নিয়ে বাদশাহর খাঁচার কাছে এসে এদিক ওদিক চাবি খোঁজে আর ভাবে সেই শীর্ণ বৃদ্ধ মানুষটির কথা। শীতে না-জানি তাঁর কত কষ্ট। রাজু হঠাৎ দেখে বাদশাহ অপলকে ডিউকের দিকে তাকিয়ে আর ডিউকও যেন বাদশাহকেই দেখছে।
‘বাঁদিকের চাকায় আছে চাবিগোছা-’
ডিউক যেন খানিক নড়ে উঠল। যেন ওই বলল কথাটা। কিন্তু রাজু তো কোন কথা বলেনি। তবে কী বাদশাহ? রাজুর সব গুলিয়ে গেল। সে খাঁচার বাঁদিকে চাকার নীচে তাকাল। সত্যিই একটা চাবি আটকে আছে।

  বৃদ্ধ লোকটি রাজুকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন। বাদশাহ চনমন করছে। কিছুই স্পষ্ট নয়, কে এই মায়াস্বরী? ডিউক নাকি বাদশাহ?
দ্বিধার মেঘ সরিয়ে শুধু ভেসে উঠছে বৃদ্ধের খুশিভরা চোখদুটি।
-সমাপ্ত-
হঠাৎ পাওয়া গুপ্তধন
ঋতব্রত সিংহ মহাপাত্র
তৃতীয় শ্রেণী,সরস্বতী দেবী ইন্টারন্যাশানাল স্কুল
বাঁকুড়া
 
গরমকাল। বাইরে প্রচন্ড রোদ। দিনটা ছিল  রবিবার। রোহিত বই পড়ছে। ওর মা প্রিয়াংকা রান্না করছে,আর বাবা উৎসব স্নান করছে। দাদা সবুজ ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে।
  পড়তে পড়তে রোহিত জিজ্ঞাসা করে 'মা মিশরের রাজধানীর নাম কি?
-কায়রো।এটাই বলে দিতে হবে। ক্লাস থ্রিতে উঠে গেছিস!
-আমি আসলে একটা নতুন চ্যাপ্টার শুরু করেছি।
-তা বলে পুরানো গুলো ভুলে যাবি?
মা আর ভাইয়ের কথার মাঝে দাদা সবুজ বলে ওঠে,'আমি বেরোলাম।
-এখন আবার কোথায় যাবি ?
-তোমাকে বলেছিলাম না,আজ আমার ইন্টারস্কুল ক্রিকেট ম্যাচ আছে।
-ও। তাহলে ফিরতে তো দেরী হবে ?
-খেলা শেষ হলেই চলে আসব।
-বেশ সাবধানে যাবি,আর ভালো করে খেলবি।
 এমনিতে ওর বাবা পৌঁছে দেন,কিন্তু আজ সবুজ বলল, ' পৌঁছাতে হবে না, আমি সাইকেল নিয়ে যাবো।'
 দাদা বেরিয়ে যেতেই রোহিত জেদ ধরল  দাদার খেলা দেখতে যাবে বলে।

  রোহিত পৌঁছানোর আগেই খেলা শুরু হয়ে গেছিল। টসে জিতে ব্যাট করছে সবুজদের স্কুল। ওদের স্কুলের সাথে মালতী বিদ্যালয়ের খেলা। ওপেনিং করতে নেমেছে সবুজ এবং শুভময়। বল হাতে মালতী বিদ্যালয়ের অঙ্কিত। প্রথম বলেই ছয়। ভালো ফর্মে ছিল সবুজ। কুড়ি ওভারে মোট রান উঠল একশ চুরাশি। বোলিং ও ভালো করল। ফলে সবুজদের স্কুল ম্যাচটা জিতে গেল চোদ্দ রানে। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ সবুজ। 

   সেই ঘটনার দুদিন পর সবুজের বন্ধু বিতান চলে গেল হাওড়া। কারণ ওর বাবার ট্রান্সফারের চাকরি।তাকে বদলি হয়ে চলে যেতে হচ্ছে হাওড়ায়। যাবার আগে বিতান সবুজ ও রোহিত কে আলাদা করে ডেকে বলল 'এই চিঠি টা রাখ, এটাতে একটা সংকেত আছে। বুঝতে পারলে গুপ্তধনের সন্ধান পাবি।'

  পরেরদিন সকালে চিঠিটা খুলে ওরা দু'ভাই দেখে তাতে একটা ধাঁধাঁ লেখা - 'জঙ্গলের মাঝে আছে এক পোড়বাড়ি / সঠিক সন্ধানে মিলবে গুপ্তধন / তবে করো না বাড়াবাড়ি। '

  দু'ভাইয়ে ভাবতে থাকে এটা কোন বাড়ির কথা বলা হচ্ছে। তবে কি ওরা ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলের যে পোড়ো বাড়িটা দেখেছিল একবার, ওটা কি? হতে পারে, বলে সবুজ। ওখানে গিয়ে দেখে ঘরের মেঝেতে একটা কাগজ পড়ে। তাতে লেখা "দাগাইঁট"। বুঝতে অসুবিধা হয় না দাগাইঁট মানে ইঁটগাদা। পোড়োবাড়ির দক্ষিণে একটা ইঁটগাদা ছিল।ওখানে গেল দু'ভাই। গিয়ে দেখে একটা কাগজে লেখা আছে এম যুক্ত এ যুক্ত নেল।সঙ্গে লেখা ' গো'। রোহিত ভাবতে ভাবতে বলে, 'নেলের যদি প্রথম অক্ষর টা ধরি আর এম যুক্ত এ যদি একসাথে ধরি তাহলে হয় ম্যাঙ্গো। তারমানে এই ঘরের উঠোনে যে আমগাছটা আছে তার কথা বলা হয়নি তো? চল তো গিয়ে দেখি,  বলে ওঠে সবুজ। গিয়ে দেখে আমগাছের তলায় রাখা আছে একটা বড় ব্যাগ। আর তাতে রাখা চারটি ডিউস বল, দুটি ব্যাট, দুটি হ্যালমেট, চারটি প্যাড, একটা ফুটবল, চারটে গ্লাভস, ছটা উইকেট ও দুটো বুট । ওরা বুঝতে পারে রমেশ উপহার স্বরূপ ওদের এই গুপ্তধন দিয়ে গেছে।গুপ্তধন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় ওরা। মনে মনে ধন্যবাদ জানায় রমেশকে। ওরা যে এতদিন ধরে মনে মনে এগুলোই চাইছিল।

 

হাসিখুশি মেয়ে
বৈভবী সেনগুপ্ত
প্রমীলা মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
 শ্রেণি- প্রথম
                       
একটা ঘরে চুড়িদার পরা সাজগোজ করা সুন্দর একটা মেয়ে থাকতো, যার নাম ছিল মিনা। সে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলো আর স্কুলের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতে নামতে একটা দারুন গন্ধ পেলো। মিনা তখন রান্নাঘরে গিয়ে বললো-
 - গুডমর্নিং মা।
 মা বললো, 'গুড মর্নিং মিনা'। 
 - তুমি কি বানাচ্ছ'? 
 - আমি তোমার জন্য বানাচ্ছি রুটি আর সন্দেশ। মিনা বললো, 'ওরে বাবারে সে তো দারুন'। 
 টিফিন নিয়ে মিনা জুতো পরে স্কুল বাসে স্কুল চললো। যেতে যেতে মিনা ভাবছিলো এরপরে তো আমি রুটি আর সন্দেশ টা খাবো। সে খুব খুশি, তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে দৌড়ে দৌড়ে স্কুলে চলে গেলো।
পড়াশুনো, মিউজিক ক্লাস হলো, তারপরে মিনার ভীষণ খিদে পেয়ে গেলো।যখনই টিফিনের বেলটা বাজলো,  সে দৌড়ে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল ভালো করে, তারপরে টিফিন বক্সটা নিয়ে বেঞ্চে বসে দেখলো আরেকটা সুন্দর মত মেয়ে বসে আছে, তার নাম টিনা। এর নাম মিনা আর ওর নাম টিনা।
মিনা বলল, 'চলো আমরা খাওয়া শুরু করি। টিফিন বক্সটা খুলে মিনা দেখলো তার রুটি আর সন্দেশ নেই, সব খালি। সে যখন হাত ধুতে গেছিল তখন কেউ তার টিফিন খেয়ে নিয়েছে। মিনার খুব কান্না পেলো।
তখন টিনা বলল 'কেঁদো না মিনা'!
তারপরে দুজন মিলে টিনার টিফিনটা ভাগ করে খেলো।
মিনার মনটা ভালো হয়ে গেলো।
মিনা পরেরদিন যখন স্কুলে গেলো, তার মা খুব সুন্দর করে আপেল কেটে দিয়েছিল মিনার টিফিন বক্সে। মিনা টিফিনের সময় টিফিন বক্সটা খুলে দেখলো তার আপেল গুলো আছে।সে খুব খুশি হয়ে টিনার সাথে টিফিন ভাগ করে খেলো।
এর পর থেকে দুজনে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলো।

নতুন বছর স্বাগত
মুক্তি দাশ

পুরোনো তো চলেই গেল -
নতুন বছর স্বাগত! 
তাকে নিয়ে ভেবে কী লাভ -
হয়ে গেছে যা গত? 
নতুন দিনে বাঁচতে হলে 
নতুন আশার আলোকে, 
চিনে তোমায় নিতেই হবে 
কে মন্দ আর ভালো কে! 
ভেবে-চিন্তে এবার বলো, 
তুমি হবে সঙ্গী কার? 
যাক মুছে যাক মন্দ যত -
এটাই হোক অঙ্গীকার!
প্রকাশিত।  ক্লিক করে পড়ে নেওয়া যায়। 


সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন
পর্ব-৪

গৌতম বাড়ই

আর----
শ্রীদামদের  মুদি দোকানের অদ্ভুত সব বিচিত্র নকশা কাঁটা পোস্টার যেমন পড়েছে,তেমনি রাতের অন্ধকারে এখানে-ওখানে বিচিত্র কিছু প্রাণীকে দেখা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন আকৃতির মানুষের মতন  অথচ ঠিক মানুষ না। তবে দু-চারজন দেখতে পেয়েছে এবং তাই কানাকানি হয়েছে। আমাদের স্কুল নয়, ভুটনীরঘাট হাই-স্কুলের বিজ্ঞানের তরুণ  শিক্ষক বারীনের মুখ থেকে ঐ বিচিত্র প্রাণীর কথাটা শুনতে পেরে সবাই নড়েচড়ে বসেছে। বারীনের কথা তো সহজে উড়িয়ে দেবার মতন নয়। এর কিছুটা সত্যি হতেও পারে। 

  আমরা অবাক বিস্ময়ে বাবার মুখের কথাগুলি শুনছিলাম। বাবা তারপর আশ্বস্ত করলেন, আমাদের এই একঘেয়েমীর পল্লী-সমাজে এরকম গল্প যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন তার কিছু বাস্তব ভিত্তি থাকলেও আসলে অনেকটা বিনোদন আর গুজবও ওর মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তাই তোমরা ততটা ঘাবড়ে যেও না যতটা আমি বল্লাম। আমি জানালাম, যা রটে তা কিছুটা'তো বটে। এইজন্যে।

  দিদি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমাকে বলল,'শোন বুদ্ধু ভিনগ্রহের প্রাণীরা আমাদের এই পৃথিবীতে মাঝে-মধ্যেই নেমে আসে।এ একদম সত্যি কথা। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আর সেখানকার দশহাজারের ওপর মানুষ ঐ ভিনগ্রহের মহাকাশ যান বা উড়ন্ত চাকিকে দেখেছে। এতো ফেলে দেওয়ার মতন খবর নয়। আমার কী যেন মনে হচ্ছে, আমাদের সাঁতরাইচেঙ্গা গ্রামের মাঠে-ঘাটে রাতের অন্ধকারে ঐ ভিনগ্রহীদের আনাগোনা নয়তো?

আমি আস্তে বললাম, দিদি সামনে আয়।

-- বল কী?
-- ভুটনীরঘাটে কিন্তু ঐ উড়ন্ত চাকি নেমেছে। ভিনগ্রহের জীবরাই আমাদের এ গ্রামে, ও গ্রামে আশে-পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি সেই উড়ন্ত চাকি খোলা জানলায় রাতের অন্ধকারে দেখেছি।

--- বলিস কী! তুই আজকের থেকে জানালা বন্ধ করে শুবি।নাহলে আমি বন্ধ করে দেবো।

  আমি মুখ নামিয়ে দিদিকে একদম নীচু স্বরে ভয়-ভয় গলায় বলি, দিদি সেদিন রাতের অন্ধকারে রাস্তার ঝোপে কোন জন্তু জানোয়ার ছিলনা। বাবা-মা যতই বলুক।শুনে রাখ।

  দিদি বলল-- এবার থেকে রাতে আমরা অন্ধকারে কেউ-ই একা বেরোবো না।

  বিছানায় এসে দেখি ভাই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি শুয়ে পড়ি কিন্তু ঘুম আসছিল না চোখে।ভাবতে থাকি গত কদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি। মা এসে দু-বার ডেকে গেলেন। বললেন-- তাড়াতাড়ি তুইও ঘুমিয়ে পড়। এই ঘুম কী কারো হাতে থাকে, কী করে যে বোঝাই। দিদি এসে জানলা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি আবার খুলে দি চুপিসারে।

  ঝিঁঝিঁপোকারা একটানে ডেকে যাচ্ছে। বড় অদ্ভুত আর আশ্চর্য রকমের নিঃশব্দ সেদিনের রাতের গ্রাম। শেয়াল আর সাথে-সাথেই কুকুরের ডাক ভেসে এলো দোলা-পারের গ্রাম থেকে। আমাদের বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে মাদার গাছের কোটরে বা ডাল থেকে কর্কশ পেঁচার ডাক শুনলাম। মনে হচ্ছিল ক্রমে-ক্রমে রাতটা যেন আরও রহস্যময় রাত হয়ে উঠছে। ঠিক এমনি সময় দূর থেকে একটা ধাতব শব্দের মতন যেন একটা কারো ডাক ভেসে এলো।আমি সটান দু-পা লম্বা করে বিছানায় বসে পড়েছি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছি। কেউ যেন ঐ-রকম ধাতব শব্দের মতন বিচ্ছিরি গলা করে  আমার নাম ধরে ডাকছে। এবারে আওয়াজটি একদম কাছে। ডাকছে-- বুদ্ধদেব, আমরা তোমার বন্ধু। শুনতে পাচ্ছ?

  আমি উঠে বসে জানলা দিয়ে সেই বাইরের গভীর কালো অন্ধকারে চোখ রাখলাম। বেশ কিছু গোল্লা-গোল্লা আলোর জ্যোতি দেখতে পেলাম। এবার স্পষ্ট দেখতে পারছি তারা হাত নাড়িয়ে আমায় ডাকছে। আরে এদের তো আমার চেনা-চেনা লাগছে! আমি চোখ রগড়ে আবার ভালো করে তাকালাম। হ্যাঁ, এদের চিনি তো!

  সেই ধাতব আওয়াজের কন্ঠস্বরে রাতের অন্ধকার একটা অপার রহস্যময়তার সৃষ্টি করছিল। 

---- বুদ্ধদেব। এই রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে এসো। প্রকৃতির সমস্ত রহস্য-সৃষ্টি এই অন্ধকারেই হয়। এসো। 

  ধাতব আওয়াজ হোক। এরা শুদ্ধ বাংলায় কিন্তু কথা বলছিল। আমি কি এক মহাজাগতিক শক্তির প্রভাবে ঘরের বাইরে বেরোনোর জন্য এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।
তারপর কী হল? (আগামী পর্বে)

বিষয়: পশুপাখি।

১. আমাদের জাতীয় পশুর নাম কী?
২.আমাদের জাতীয় পাখির নাম কী?
৩. ইন্ডিয়ান হেরিটেড এনিম্যাল কোন পশু স্বীকৃতি পেয়েছে?
৪. ন্যাশনাল জলজ প্রাণীর স্বীকৃতি পেয়েছে কোন জলজ প্রাণী?
৫. ভারতে লুপ্তপ্রায় দুটি পক্ষী প্রজাতীর নাম কী?
৬. শিল্পী পাখি কাকে বলে?
৭. নাচুনে হরিণ কোন রাজ্যের অরণ্যে দেখা যায়?
৮. রাজাভাতখাওয়া পাখিরালয় কোন জেলায় অবস্থিত?
৯. ভারতে সিংহ পাওয়া যায় গির অরণ্যে। সেটি কোন রাজ্যে অবস্থিত?
১০. সমুদ্রে থাকে এমন এক স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম বলো?

  গত সপ্তাহের উত্তর 
  --------------------------
১. দক্ষিণ ২৪ পরগণা।
২. সুন্দরী।
৩. বাঘ।
৪. ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
৫. রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
৬.বাংলাদেশ।
৭. ভেড়ি অঞ্চলে বিপুল মৎস্য চাষের জন্য।
৮. জাতীয় উদ্যান।
৯. ১ - ৭ ই অক্টোবর।
১০. ৪ ই মে ১৯৮৪ ।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments