জ্বলদর্চি

এত রঙ্গ বঙ্গদেশে তবুও কু- ভঙ্গে ভরা/গৌতম বাড়ই

এত রঙ্গ বঙ্গদেশে তবুও কু- ভঙ্গে ভরা

গৌতম বাড়ই


বাজারে দু- সপ্তাহে সে হিসেবে যায়নি বললেই চলে। গিন্নী বললেন-  অনেক তো হল! দরজায় যখন আগল খুলেছি এবার ঘুরনা দেই চলো। 

আমি হিসেব কষে ছা- পোষা মানুষের মতন ট্যাকের টাকায় মনে- মনে একটা ছোট্ট হিসেব নিলাম, দেখলাম যাওয়া যেতেই পারে। তা গিন্নী মন্দ বলেনি। একটু কাছে- পিঠে ঘুরে আসাই যায়। গম্ভীর হয়ে বেশ একটা কর্তা- কর্তা ভাব নিয়ে বললুম-- তা কোথায় যাবে ঘুরনা দিতে? এতদিন পরে বেরুচ্ছি কাছাকাছি ভ্রমণ- ই ভাল। কি বল?

গিন্নী বললে-- হ্যাঁ, হ্যাঁ তাই চলবে। তবে আমরা তাহলে যাচ্ছি। তোমার ঐ রাজনীতির নোংরামী দেখে দেখে টিভির মুখ দর্শন করতে ইচ্ছে করে না। ঘরে বোরড হয়ে গেলাম। ইমিউনিটি বাড়াতে আর নিজেকে বুস্টিং করতে বেরুতেই হবে। 

আমি গদগদ হয়ে গিন্নীর কাছ ঘেঁষে বসে গান জুড়ে দিলাম আমার স্বভাবসিদ্ধ ঐ মিহিগলায়--আরও দূরে চলো যাই - মন নিয়ে কাছাকাছি --তুমি আছ আমি আছি-- পাশাপাশি। 
গিন্নী বলে উঠলেন-- কী ব্যাপার কত্তা? খুব প্রেম জেগেছে মনে তাই না! এই যে বেড়ানোর কথা বলে কী প্রেম উস্কে দিলাম মনে! বল? তবে সাবধান, এই বয়সে বেশি ভালবাসা ভাল নয় কিন্তু।

আমি বললাম -- ধুর ছাই শুরু করলুম আর তুমি প্রেমটাকে কেঁচিয়ে দিলে মাইরি! তবে যাই বল আজকালকার ছেলেমেয়েদের ঐ প্রেম- দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস্ ডে বেশ মজার। পুরোনো এই দাম্পত্য প্রেমটাকে একটু রিভাইভ করা যায়। কি বল? 

গিন্নী বেসুরে গলায় বললে-- তা কোথায় যাবে শুনি? তোমার পরিকল্পনা কী শুনি?

আমি বলি হেসে- হেসে-  কাল অফিসফেরতা জানতে পারবে। 

বাজারে ঢুকতেই আজ প্রথমে দিনুদার খপ্পড়ে পড়লাম। দিনুদা বললেন-- তা দাদা তুমি বেশ ঘাঁপটি মেরে দু- সপ্তাহ কাটিয়ে দিলেন। তোমার হাতে পেসাদী না পেলে আমার পুরো হপ্তা ভালো যায় না। তা কী বুঝছো এই ভোটের রঙ্গ দেখে? আমাদের তলিয়ে যাওয়া তো? আজকাল সর্ব- ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো মুখিয়ে থাকে বাংলার রক্তপাত দেখাবে বলে। আগে আমরা বিহারকে দেখাতাম তাই না? এখন? তাহলে বলতে দোষ কী এই এত ভঙ্গের রঙ্গদেশে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর রাজনীতি চলছে। কী মুখের ভাষা সব ন্যাতাদের! এ দেয় ওরে গালি- ও দেয় এরে গালি। আর হাম বাচ্চালোগ বাজাচ্ছি তালি। মাদারীকা খেল চলছে বুঝলে ভায়া! পাঁচ বছর কাজ করো জনগণ কাজের হিসেব করেই শাসক দলকে ভোট দেবে আর বিরোধী- পক্ষ তাদের নতুন প্যাকেজ তুলে ধরবে সরকার গড়বার জন্য   এবং শাসকদলের অনৈতিক কাজের দোষত্রুটি জনগণের কাছে রাখবে-- এই তো সুস্থ রাজনীতি, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচয়। এতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার আহ্বান কেন? আসলে তলিয়ে যাওয়ার সবকটি লক্ষণ এখন বাংলায় প্রকট। সংসদীয় রাজনীতিতে চিরটাকাল মৌরসীপাট্টা জিইয়ে রাখা যায়না, এই সত্যটা সরকারপক্ষ আর বিরোধীপক্ষ-কে ধ্রুবসত্য জানতে হবে। আর এই জানাটাই আমাদের জনগণের কাছে মঙ্গলময় হয়ে উঠুক। শান্তি ওরে শান্তি কোথায় পাব!

দিনুদার শেষ শব্দ আমার মনে ধরল। ঐ সামান্য পেসাদী একটা লাল- চা আর একটা বিড়ির বন্দোবস্ত করলাম পাশের দোকানেই দিনুদার জন্য। বাজারে না ঢুকেই দিনুদাকে বললাম- দিনুদা একটু ছোট কাজ সেরে আসি বাইরে। তারপর বাজার। 

মনে মনে ঐ শব্দ বাজছে দিনুদার জন্য-- শান্তি ওরে শান্তি কোথায় পাব? পাশের প্রাইভেট রেলওয়ে আর ট্রাভেল এজেন্সির দোকানে চটজলদি  ঢুকলাম। কাল অফিস থেকে এসে নয়, আজ ফোনেই ছুটি ম্যানেজ করে বৌকে ভড়কে দেব। 


অল্প বাজার সেরে গদগদ হয়ে গিন্নীকে বললাম-- এবেলাতেই ব্যাগ গুছিয়ে ফেল। কাল ভোরেই রওয়ানা। বেড়াতে বেরুচ্ছি। 

গিন্নী লাফিয়ে উঠলেন-- ওমা তাই গো! এতদিনে তুমি একটু মানুষ হয়েছ গো! অবশেষে সাইজ করা গিয়েছে তোমাকে। তা কোথায়?

আমি বললাম-- অ্যা! শান্তিনিকেতনে। বোলপুরে।

গিন্নী বললেন- হাঁ। সাইজ গো সাইজ। এখনকার কলোকাল বাংলা চলেবল শব্দ জানতে হবে। না জানলে কত্তামশাই পিছিয়ে পড়বে যে! জানতে হয়, না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়।

আমি ধীরে বলি-- ও! আর মনে মনে বলি -- আসলে এখানেও আমার গুরু ঐ বাজারের দিনুদা-- শান্তি পেতে হলে তবেই চল শান্তিনিকেতনে।

Post a Comment

0 Comments