জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ২৫

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -২৫

সম্পাদকীয়
স্কুল খুলছে না। সরস্বতী পুজোয় স্কুল যেতে পারলাম না। যতসব গন্ডগোল আমাদের বেলাতেই ঘটে। এসব ভেবে ভেবে যখন তুমি রাগ দেখাচ্ছ কোভিড ভাইরাসটাকে, ঠিক তখনই যদি রাঙাপিসি তোমায় বলে, তার স্কুল জীবনেও একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল বইকি। স্কুলের প্রায় সব ছাত্রছাত্রীদের সে বছর পক্স হয়েছিল। তাই স্কুল থেকে ঠিক করা হয় সরস্বতী পুজো হবে না। এবার কিন্তু তুমি বলবেই বলবে, ' তাই! সত্যি!' আর যদি অন্য কেউ বলেন, শুধু তোমার বেলা নয়। অমলও তো দিনের পর দিন বাড়ি থেকে বের হতে পারত না। তখন তুমিই ঢোঁক গিলে বলবেই বলবে, 'সেটাও তো সত্যি।' তবে আমি জানি স্কুল না খুললেও গ্রামের মাঠে তোমরা জমিয়ে ফুটবল খেলছোই খেলছো। ফুল আর কুলের গাছে উঠে ফুল আর কুল পারা কি এখনও বন্ধ রেখেছ কোভিডের জন্য? নিশ্চয়ই নয়। রাঙাপিসির মন ভালো করা গল্প নিয়ে আবার হাজির হয়েছেন শ্রীকান্ত অধিকারী। অমলের বন্দীদশার কথা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন কবি বিপ্লব চক্রবর্তী। আর ফুটবল খেলার মজা ফিরিয়ে দিয়েছেন দীপক কুমার মাইতি। এঁদের প্রত্যেককে আমার শ্রদ্ধা। গাছে উঠে ফুল পারার অপূর্ব দৃশ্যটিকে ছবি তুলে আমাদের আশ্চর্য করে দিয়েছেন অপু পাল। তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা বেড়েই চলেছে। ছোটোবেলার ছোটো ছোটো চিত্রশিল্পী ও লেখক/লেখিকাদের প্রাকৃতিক আবির পাঠালাম। মেতে ওঠো রঙের খেলায়।   - মৌসুমী ঘোষ।

রাঙাপিসির গল্প 

শ্রীকান্ত অধিকারী     

আজকের গল্প - বড়িমামার  হাতেখড়ি

আজ সরস্বতী পুজো। ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ল, এবছর পুজোতে আমাদের স্কুল যাওয়া বারণ। আমরা এতটাই ছোট আমাদের নাকি সবচেয়ে ভয় বেশি। কোভিড - ১৯ এখনও নাকি আমাদের ছেড়ে যায়নি। কিন্তু তা বলে ঘরে একা একা চুপটি করে বসে থাকব!
বিছানার উপর বসে আমার দুচোখ  ভিজে এলো। চারপাশে তাকিয়ে আমি দেখলাম আমি আমার বাড়িতে নেই , আছি পিসির বাড়িতে। বাড়ির জানলা খোলা। রোদ নেই। আকাশে মেঘ। বৃষ্টি হবে নাকি! এখন তো বর্ষা নয় । আমাদের ওখানে  সরস্বতী পুজো হবে না আর মজাও নেই। তাই রাঙাপিসির আব্দার মত রাঙা পিসির বাড়ি এসে হাজির।
       বিছানায় বসে বসে ভীষণ ভীষণ রকম মনটা কেমন করে উঠলো। আর তখনই কাল রাতে পিসিমার গল্পটা মনে পড়ে গেল। কাল রাতে যখন কিছুতেই ঘুম আসছে না, রাঙাপিসি বলল চল তোর মাথায় বিলি কেটে দিই।
----শোন , তোরা কি ভাবিস তোদেরই  শুধু মনখারাপ করে! প্রত্যেক মানুষের মন খারাপ করে। তা বলে তো মন খারাপকে লজেন্সের মত বা চকলেটের মত চুষে চুষে চেটে খেতে পারি না। মন খারাপের সময় ভালোলাগাগুলো মনে করতে হয়। বার বার।
আয় আজ মন খারাপ টপকে ভালোলাগার গল্প বলি । আমার বড়িমামার গল্প।

  আমি তখন ঠিক তোদের মত। গাঁয়ের ময়নামতি অবৈতনিক নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলে পড়ি। আমাদের গ্রামের আশপাশে চার-পাঁচটা গ্রামের একমাত্র নিম্ন বুনিয়াদী.। আমাদের এই ময়নামতি গ্রামের এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন পাশের গ্রামের নিমাই মাস্টার। উনি আমাদের ভীষণ ভীষণ ভালবাসতেন।তাঁর গল্প তোদের অন্য সময় বলবো।  সেই নিমাই   স্যার নতুন-পুরনো ছেলে নিয়ে সরস্বতী পুজো করতেন খুব ধুমধাম করে। কিন্তু সেবার আমাদের গ্রামে প্রায় সবার বসন্ত হয়ে গেল।  ঠিক পৌষ-মাঘ মাসে। অনেক মানুষ মারাও  গেল। আমাদের গ্রাম থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল অনেক দূরে। তা প্রায় ১০ ক্রোশ তো হবেই। ক্রোশ বুঝিস তো। দু মাইলে ক্রোশ হয়।এখনকার মত কিলোমিটার মাইল সাধারণ মানুষের কাছে এরকম কিছু ছিল না, অন্তত গাঁয়ে গঞ্জে। বড়ো কিছু অসুখ বিসুখ হলে চ্যাং দোলা করে কাঁধে তুলে কিংবা গরুর গাড়ি বা বাঁশের ওপর চট বস্তা বেঁধে দোলার মত করে নিয়ে যাওয়া হত সেই হাসপাতালে। রুগি হাসপাতালে যেতে যেতেই কাহিল। বসন্ত কিন্তু এই সময়েই হয়। আর এটা এত ছোঁয়াচে কি বলব! এখন তো তোরা করোনা  দেখলি, আমি বলব এই বসন্ত যাকে স্মল পক্স বলে তা কিন্তু করোনার থেকেও মারাত্মক ছিল।   শুনেছি নাকি মোটা মোটা মটরের দানার মত গুটি গুটি হত। গুটি বসন্ত প্রথমে গরুদের গায়ে হত এই কারণে কাউ পক্সও বলে । ভাগ্যিস জেনার সাহেব টিকে বের করলেন তারপর থেকে কাউ পক্স  উবে গেল ।  কিন্তু জলবসন্ত এখনো আছে। একবার যদি ধরে অন্তত ১৫ দিন তো বটেই একেবারে বিছানাগত। তারপর শরীরকে  দুর্বল থেকে আরও দুর্বল করে দেয়। সেবার গাঁয়ের যার যা ঘরে ছিল টাকা পয়সা ধান পান এমনকি  হাঁস মুরগি ছাগল গরু, মাচাতে কিংবা চোরা কুঠুরিতে কাঁসার বাসন বিক্রি করে সর্বস্বান্ত। কাজেই খাওয়া-দাওয়ার কোনও ব্যবস্থাও ছিল না । পেটের টান বড় টান হয়ে দেখা দিল। আমাদের মাস্টারমশাই বললেন এবারের মত  সরস্বতী পুজো হচ্ছে না । মা সব বুঝছেন।
ব্যস আর যাই কোথা?  বিনা মেঘে বাজ পড়ল। মাষ্টার মশাইয়ের কথায় চোখ ছল ছল করে উঠলো। সারাদিন মনের ভেতর কোথাও যেন একটা চিনচিনে ব্যথা হতে লাগলো। রাতের বেলায় কোলে বসিয়ে বাবা বলল ওরকম হাঁড়ির মতো মুখখানা কেউ করে? স্কুলে হলো না তো কি হয়েছে বাড়িতে করতে পারিস। পাড়ার  বন্ধুদের নিয়ে গান কবিতাও করতে পারিস।  প্রতিমার চিন্তা করিস না। সে দায়িত্ব আমার। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের  মনটা ব্যাঙ লাফার মত লাফিয়ে উঠলো।
  লেগে পড়লাম প্যান্ডেল বানাতে। বাড়ির সামনে  রাস্তার উপরেই বন্ধুদের নিয়ে শুরু করলাম সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল। গাঁয়ে তো আর বাঁশ বাতা দড়ির অভাব থাকে না। কিন্তু সমস্যা হলো গর্ত খোড়া নিয়ে। কচি কচি হাত পা দিয়ে মাটি কোপানো যায় না। আমাদের কান্ড কারখানা দেখে কোত্থেকে বড়িমামা এসে বলে, - - ছাগলেই যদি পল ঝারবে তাইলে গরু কীসের? বলেই  ফাওরা কোদাল গাইতি কাস্তে হাতুড়ি খুরপি  যেখানে থাকে সেখান থেকে একটা শাবল  নিয়ে এসে কি সব আঁকিবুকি করে গর্ত করতে লাগলো। আমাদের বললো তোমরা বাপু কাপড়-চোপড় নিয়ে এসো। বড়িমামা আমাদের কৃষাণ মাহিন্দার দুইই ছিল। আবার মায়ের কাজও করে দিত। তোরা দেখিস নি। ঐ যে রে গতবার যখন গাঁয়ে গেছিলি, নবান্নের সময় বাড়িতে নেমন্তন্ন করে নতুন চালের পায়েস খাইয়েছিল।সে তো বড়িমামার বড়ো ছেলে। সেই বড়িমামার  উৎসাহ দেখে আমরা সবাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে লাল সবুজ হলুদ সাদা রঙের কাপড় জোগাড় করতে লাগলাম। আজ রাতেই প্যান্ডেল করতে হবে কেননা কাল সরস্বতী পুজো। বড়িমামা  কোত্থেকে একটা হ্যাজাক নিয়ে এসে জ্বালিয়ে দিলে দিনের আলোর মতো ঝকঝকে হয়ে গেল। আমাদের চোখগুলো খুশিতে  চকচক করে উঠলো।  বাঁশ বাতা দিয়ে যখন খাঁচা তৈরি হয়ে গেল আমাদের বললো তোমরা বাপু কাপড়গুলো ঠিক ঠিক করে সুতো দিয়ে সেলায় করে দাও। মায়ের কাছে তৎক্ষণাৎ সুচ সুতো নিয়ে এসে এফোঁড় ওফোঁড় করে প্যান্ডেল তৈরিতে ব্যস্ত তখন দেখি বড়িমামার  বউ কোত্থেকে গোবর জল নিয়ে এসে ঝাঁটা দিয়ে  পরিষ্কার করতে লাগল। এমন কি আমাদের বাড়ি দুটো বড় বড় পিঁড়েতে টকটকে নীল রঙের কাপড় দিয়ে সরস্বতী মায়ের বেদি করে দিল। বড়িমামা বলল,  কই পিত্তিমা নিয়ে এসো।

   আমাদের প্যান্ডেল বানাতে এতই মসগুল ছিলাম সরস্বতী মূর্তির কথা খেয়াল ছিলনা। বড়িমামার কথাতে আকাশ ভেঙে পড়ল।কী করি! হঠাৎ দেখি বাবা একটা সরস্বতী মূর্তি এনে বেদির ওপর বসিয়ে দিল। এবার তোরা বোঝ আমাদের মনে কতটা আনন্দ হয়েছিল। তারপর প্যান্ডেল সাজাতে সাজাতে কত যে রাত হয়েছিল বুঝতে পারলাম ওই মাঠ পেরিয়ে ধান ক্ষেত পেরিয়ে একটা থানার চৌকি থেকে ১২টার ঘন্টা বাজলে। অন্য সময় হলে বাবা ভীষণ বকা দিত কিন্তু কেন জানিনা আজ বাবা যেন অন্য মানুষ। কিছুই বলল না কিন্তু রাতে ভালো করে ঘুম এলো না। খুব সকালে উঠে গিয়ে প্রথমেই আমরা প্যান্ডেলে ছুটলাম  আমাদের প্যান্ডেল আর প্রতিমা দেখতে। এখানেই আমরা প্রথম নিজের সরস্বতীঠাকুরের পুজো করবো।
গিয়ে দেখি বড়িমামা তার বউকে নিয়ে নতুন কাপড় পরে স্নান করে এক কোণে  চুপটি করে বসে আছে 
 আর চারদিক ঝকঝকে তকতকে করছে। সরস্বতী মূর্তির কাছে বেলপাতা আমপাতা বাসক ফুল গাঁদা ফুল সাজানো। খই মুড়কি  গুড়ের চাকতি বাতাসা।  এগারো ভাজা তিলের নাড়ু সব হাজির। এমনকি আমের শাখা পলাশ ফুল আমের মুকুল, গম সর্ষের ঝাঁটি। আঁকা বাঁকা ফুল ফুল সুন্দর সুন্দর আলপনা। গালে হাত দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। - - এসব  কেইবা করল? মা জানাল এগুলো সারা রাত জেগে বড়িমামি করেছে। এমনকি রাতের বেলা পুকুর থেকে শাপলা-শালুক গুগলি এনে থরে থরে সাজিয়েও দিয়েছে। আর ছিল সুন্দর গাঁদা ফুলের ছড়া দিয়ে সাজানো। গোবরের ডাবের ওপর ধুপের গন্ধে প্যান্ডেল ম ম করছে।

    আর থাকা যায়!  স্নান করে মায়ের একটা কাপড় পরে  বই খাতা বগলে এনে মা সরস্বতীর কাছে ডাঁই করে দিলাম। যথাসময়ে পুজো হল। পুষ্পাঞ্জলীও দিলাম। সবাই খুব খুশী। পুরোহিত মশাই ঠিক উঠবো উঠবো করছেন ঠিক তখনই মা বলল, “ ঠাকুরমশাই একটা হাতেখড়ি আছে। একটু ভালো করে হাতেখড়ি দিয়ে দিন তো। দেখলাম মা তার আঁচল থেকে একটা স্লেট আর এক ডেলা খড়ি বের করে বড়িমামার হাতে ধরিয়ে দিল। - - নে নে এবার সরস্বতী মায়ের কাছে ভালো মনে হাতে খড়িটা নিয়ে নে দেখিনি। আমি দেখলাম বড়িমামা-মামির চোখগুলো কেমন জ্বল জ্বল করে উঠল। ঠাকুরমশাই স্লেটের মাথায় স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দিলো। তারপর লিখল  ঔং সরস্বতী দেবী সহায়।

    হঠাৎ আমার ভাবের ঘোরটা কেটে গেল। বাইরে কতগুলো ছেলে মেয়ে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করছে। আমি তাড়াতাড়ি থতমত খেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি রাঙাপিসির বাড়ির আশেপাশের ছেলেমেয়েরা সুন্দর সেজেগুজে আমাকে ডাকছে। সরস্বতী পুজো হবে। আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই দেখি রাঙাপিসির খামারে  সুন্দর একটা সরস্বতী প্যান্ডেল হয়েছে। আর গাঁয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে মা সরস্বতীর সামনে সার দিয়ে বসে। আজ সবার নাকি হাতেখড়ি হবে।
                  
অমলের খোঁজ

বিপ্লব চক্রবর্তী 

বেশেখ এলেই খোঁজকরি অমলের স্বাস্থ্যের
কবিরাজ শেষমেষ কি দিলেন পথ্যের
পিসে আজও কি রকম উদ্বেগে ত্বরাসে
সুধা তাই  প্রতিদিন সাঁঝি হাতে দেখে আসে
পিসীমা কি আজও বসে ডাল ভাঙ্গে জাঁতাতে
অমলটা কেঁদে চলে অসুখের ব্যাথাতে
ডুমুরের গাছ যেথা ঝর্ণায় মিশে গ্যাছে
অমল কি কোনও দিন সেইখানে পৌঁছেছে
মোড়লের দল আজও কোন দলে থাকছে
না কি তারা আজকেও অমলকে বকছে
রাজার চিঠিকি আজও ডাকঘরে পড়ে আছে
জানলে আমিই সেটা দিতাম যে পৌঁছে
ডাক-হরকরা হাতে লন্ঠন কাঁধে বোঝা চিঠি
অমল কি রাখে খোঁজ এ সবের খুঁটিনাটি
পাঁচমুড়া পাহাড়ের নদী সেই শ্যামলীতে
গয়লানী বঁধু যারা আজও নামে নাইতে
ঠাকুর্দা আজও আসে ফকিরের বেশ ধরে
ক্রৌঞ্চ দ্বীপেতে ওরা একসাথে ঘোরেফেরে
এইসব কথাগুলো কাকে সেধে বলব
অমলটা সেরে গেলে ওর সাথে খেলব।

জিদান

দীপক কুমার মাইতি

মুকুন্দপুর বিদ্যালয় এবছর আন্তঃজেলা সুব্রতকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফাইন্যালে উঠেছে। আজ স্কুলের মাঠে বিদ্যালয়ের মূল দলের সাথে অবশিষ্ট বিদ্যালয় দলের প্র্যাকটিস ম্যাচ  চলছে। রতন স্কুলদলের নির্ভর যোগ্য প্লেয়ার। সারা প্রতিযোগিতায় ১০টি গোল করেছে। কিন্তু আজ কিছুতেই ভালো খেলতে পারছে না। মিস পাস, ভুল পজিশন, ঠিক ভাবে বল ধরতেও পারছেনা।  এক ছন্নছাড়া খেলা। অবশ্য ওকে সারাক্ষণ মার্ক করছে কালিপদ। কালিপদ ভালো খেলতে পারে না। তাই মাঝে মাঝে হাত ধরে বা জামা ধরে রতনকে আটকানোর চেষ্টা করছে। ক্রীড়া শিক্ষক গোপালবাবু মাঠের ধারে থেকে রতনকে নির্দেশ দিচ্ছেন।  এমন সময় রতন দুজনকে কাটিয়ে ঢুকছে। কালিপদ পিছন থেকে রতনকে টেনে ধরে। বক্সের মাথায় ফ্রিকিক পেয়েছে রতনরা। রতন ফ্রিকিক থেকে গোল করতে ওস্তাদ। টানটান উত্তেজনা। রতন কিক নিতে প্রস্তুত। কালিপদ হাসতে হাসতে রতনকে কিছু বলে। হঠাৎ রতন রেগে যায়। কালিপদর মুখে ঘুসি মারে। কালিপদ ছিটকে পডে়। পডে় থাকা কালিপদর বুকে রতন বুটসুদ্ধ পায়ে লাথি মারে। মাঠে সকলে ছুটে আসে। দুজনকে ছাড়িয়ে দেয়। মাঠে প্রধানশিক্ষক মহাশয় উপস্থিত রয়েছেন। তিনি প্রচণ্ড রেগে যান। খেলা বন্ধের নির্দেশ দেন। ঘোষণা করেন, বিদ্যালয় দল প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করবে না। যদি যায় রতনকে বাদ দিতে হবে।
  ঘোষণা শুনে কালিপদ ছুটে আসে। হাত জোড় করে বলে, “স্যার যা হয়েছে সব আমার দোষ। স্কুল দলকে রতনসহ খেলার অনুমতি দেন।”
  গোপালবাবু বলেন, “স্যার রতন খুব ভালো ও ঠান্ডা প্রকৃতির। কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। আপনি বিবেচনা করুন।”
“কী বিবেচনা করব? আপনার ঠান্ডা মাথার ছেলে আজ যা নমুনা দেখাল। ফাইন্যালে করলে বিদ্যালয়ের বদনাম হত।”
বলেই হন হন করে অফিসে ফিরে যান। গোপালবাবু অন্য শিক্ষকদের নিয়ে অফিসে আাসেন। সঙ্গে রতন ও কালিপদ। শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষককে বোঝাতে থাকেন। প্রধান শিক্ষক রতনকে বলেন বলেন, “তুমি এমন ব্যবহার কেন করলে?”
“স্যার কালিপদ সারাক্ষণ আমাকে বিরক্ত করছিল। ল্যং মেরে বা জার্সি টেনে ধরছিল……….”
“তুমি গোপালবাবুকে জানিয়েছিলে? তাছাড়া তখন তো হেসে হেসে তোমার সাথে কথা বলছিল। তবুও ওভাবে ওর বুকে লাথি মারলে?”
রতন কেঁদে ফেলে। ছলছল চোখে বলে, “কালিপদ আমার মা-বাবাকে নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলছিল। মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।”
প্রচণ্ড রেগে প্রধান শিক্ষক বলেন, “কালিপদ , রতন যা বলছে ঠিক?”
মাথা নিচু করে কালিপদ বলে, “রতনের সব কথা ঠিক। স্যার, রতন আমাদের দলের সম্পদ। ওকে বিপক্ষদল আটকাতে নানা কৌশল নেবে। ওকে তো মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জেতাতে হবে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের জিদানকে তো এই ভাবেই আটকানো হয়েছিল। সেদিন জিদান যে ভুল করেছিলেন রতন যেন না করে তাই শেখাতে চয়েছিলাম। যা করেছি  দলের স্বার্থে করেছি। রতন আমার প্রিয় বন্ধু।ওকে মনে আঘাত দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইছি।”
বলেই রতনকে জড়িয়ে ধরে।


আড়ি 

অনন্যা মৈত্র 
বেথুয়াডহরি মাতঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়, 
দ্বাদশ শ্রেণি

আজ তুতুলের সঙ্গে আমার আড়ি 
খেলব না তো পুতুল আর ওর সাথে 
যাব না ফুল তুলতে সকালবেলা 
ঘুরব না আর হাত মিলিয়ে হাতে। 

আজকে আমি দিলাম ওকে আড়ি 
পরশু দিনই কিন্তু ছিল ভাব
দুজন মিলে খেলাম তো সেই দিনই
ঝালমুড়ি আর মিষ্টি পাকা গাব।

কিন্তু কেন ও জ্বালাবে আমায়?
দিলাম ওকে জন্ম শোধের আড়ি।
এই জীবনে দেখব না ওর মুখ,
যা খুশি কর, গেলাম আমি বাড়ি। 

এই তো দুদিন মোট্টে গেল চলে, 
এতেই এত লাগছে কেন একা?
ঠিক করেছি করেই নেব ভাব 
একটু আসুক করতে সেধে দেখা।


শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

প্রীতি জ্যোতি
অষ্টম শ্রেণি, কোমধাড়া মথুরকুড় উচ্চ বিদ্যালয়, মথুরকুড়

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে জানি নে জানি নে কিছুতে কেন যে...রিংটোন শুনেই শুভেচ্ছা ‍ছুটে ফোন রিসিভ করলো। 'হ‍্যালো বাপি মায়ের  কী হয়েছে?' শুভা তোমার ভাই হয়েছে। 'ইয়ে কী আনন্দ! বাপি কার মতো হয়েছে'? ঠিক বলতে পারবো না...ছোট্ট তো! আচ্ছা ঠিক আছে দিদাকে বলে দিও রাখলাম। শুভেচ্ছা তাড়তাড়ি ক‍্যালেন্ডারে অক্টোবর মাসে 11 তারিখ লাল গোল করে দিল। ক‍্যালেন্ডারে আরও একটি গোল সংখ‍্যা বাড়লো।কারণ সারাবছরের  কোন্ দিন কি দিবস তা আগেই নীল কালো গোল পড়ে গেছে। যেমন এমাসেই 2 রা অক্টোবর অহিংসা দিবস,10ই বিশ্ব বিপর্যয় হ্রাস দিবস, 14 ই মানব দিবস, 16 ই বিশ্ব খাদ‍্য দিবস।

    চারদিন পর একটা মারুতি করে শুভেচ্ছা ওর বাপি ও মাসির সাথে মা ও ভাই কে আনতে নার্সিংহোম যায়। চারিদিকে দূর্গাপুজোর মাইক বাজছে, মেলা বসেছে, রাস্তায় ট্রাফিক জ‍্যাম, আকাশটাও মেঘলা। নার্সিংহোমে ঢুকে দেখল মা বাড়ি আসার  জন্য রেডি হয়ে গেছে। আর ভাইকে একটা নার্স কোলে নিয়ে আছে। শুভেচ্ছা কে দেখেই বাকি নার্সেরা বলল ' দ‍্যাখো তোমার কী সুন্দর ভাই হয়েছে?' তারপর মাসি নার্সের কোল থেকে ভাইকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।পিছনে শুভেচ্ছার বাপিও ব‍্যাগপত্র নিয়ে নামল। শুভেচ্ছা মায়ের সাথে লিফ্টে নিচে নামল।সেই প্রথম লিফ্ট চড়া। সব মিলিয়ে   তার খুব আনন্দ হচ্ছিল। নিচে নেমে সবাই মিলে মারুতি করে রওনা দিল মামাবাড়ির দিকে। রাস্তায় যেতে যেতে মাইকে শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল " সকলকে জানাই আজ শারদীয়া উৎসবের প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ সন্ধ্যা সাত ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হতে........."। শুনে শুভেচ্ছা ভাইয়ের নাম অভিনন্দন রাখার জন্য বায়না করল মায়ের কাছে। মা বলল " ঠিক আছে তাই হবে।" বেশি কিছু বলতে পারল না মায়ের কষ্ট হচ্ছিল। তখন থেকেই ভাইকে অভিনন্দন বলে ডাকতে শুরু করে দিল।

   দেখতে দেখতে পুজোর ছুটি শেষ হয়ে গেল। শুভেচ্ছার স্কুলও খুলে গেল। আগে প্রতিদিন মা তাকে স্কুলে দিয়ে আসত এবং বাড়ি নিয়ে আসত। এখন ওর বাপি মায়ের কাজটি করে। কিন্তু মায়ের মতো বাপি প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতে পারত না ব‍্যাবসার কাজের জন্য। শুভেচ্ছা রোজ স্কুল যেতে ভালোবাসে।মামাবাড়ি থেকে স্কুল অনেকটাই কাছে। তা সত্ত্বেও সব দিন হয়ে ওঠত না। স্কুল মিস করলে বন্ধুরা ওকে নোট্স দিত না। সবাই বলত " তুই কেন স্কুল আসিস না তোর নোটস আমরা দিতে পারব না "। শুনে শুভেচ্ছার খুব দুঃখ হতো।

    বাবা বাড়ি থেকে আসত, শুভেচ্ছা ইউনিফর্ম পরে রেডি হয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকত। একদিন এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল, সেদিন ওর বাপি আর এল না, সময় চলে গেল। ঘরের ভিতর থেকে মা ডাকল " শুভা চলে আয়, ড্রেস চেঞ্জ কর। শুভেচ্ছা  কাঁদতে কাঁদতে এসে ফোন করল " বাপি তুমি কেন এলে না,আমি কখন থেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম "। " সরি কাল অবশ‍্যই যাব শুভা, কথা শোনো রাগ করো না "। শুভেচ্ছা তাড়াতাড়ি ফোন কেটে ফোনটাকে সজোরে ছুঁড়ে দিল। ছুঁড়ে পড়ল তার ছোট্টভাই অভিনন্দনের কচি মাথায়। সাথে সাথে অভিনন্দন কাঁদতে কাঁদতে এমনই আটকে গেল কোনো আওয়াজ হয় না, নিঃশ্বাস পড়ে না। মা- দিদা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল " এ তুই কি করলি? শুভেচ্ছারও সেই মুহূর্তে শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যতক্ষণ না অভিনন্দনের শ্বাস ফিরল। একমাসের বাচ্চা মাথায় সজোরে লেগেছে, দুষ্চিন্তা না করে মা শীঘ্রই শুভেচ্ছার বাপিকে ফোন করলো। ভয়ে কাঁপতে লাগল, ভাবল " কেন যে ফোনটাকে ছুঁড়লাম! গাড়ির হর্ণ শুনতেই শুভেচ্ছার পটি পেয়ে গেল। তখন সে টয়লেটে  ঢুকে আর বাইরে এল না। বাপি এসে আগে অভিনন্দনকে দেখল।তাঁর ভয় লাগল আবার রাগও ধরলো শুভেচ্ছার ওপর। মা ও দিদা বলল " কিছু বলবে না ছোটো মেয়ে ভুল করে ফেলেছে "। বাবা বলল " গেল কোথায় সে?" মা বলল " তোমার ভয়ে ওর পটি পেয়ে গেছে তাই টয়লেট গেছে "। এত রাগের মধ‍্যেও এই কথা শুনে একটু হেসে ফেলল।যাতে শুভেচ্ছা বুঝতে না পারে সেই জন্য গম্ভীর গলায় বলল " আচ্ছা বেরিয়ে আসুক তারপর দেখছি ওর কী করা যায়?

   অভিনন্দনের মাথায় জল দেওয়া হল। আঘাত অত গুরুতর ছিল না বলে অভিনন্দনের তেমন কিছু হল না। কিন্তু তারপর থেকে শুভেচ্ছা ভাইএর যাতে কোনো আঘাত না লাগে সেদিকে নজর রাখতো। এমনকি অভিনন্দনকে দিদি কখনো মনেও কোনো আঘাত লাগতে দিত না।

সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন

গৌতম বাড়ই

সকাল ঠিক না, তার অনেকটা পরে যখন এগারোটার সময় স্কুল শুরু হবে, ঠিক তখন, খুব হৈ- চৈ আমাদের স্কুলের প্রায় সব ক্লাসের ব্লাকবোর্ডে কারা যেন সাদা চক দিয়ে কী সব সাঙ্কেতিক ভাষায় আঁকিবুকি করে গিয়েছে। কোন ক্লাসের বোর্ডে মনে হচ্ছে তীর- ধনুক নিয়ে মানুষ আর তার পাশে হিজি- বিজি দাগ, কোথাও শুধু দাগ আর নানারকম জ্যামিতিক নকশা কাঁটা এইসব। আমাদের হেডস্যার রাতের পাহারাদার জনার্দন- কে ডেকে এনে খুব ধমকালো। সারারাত কী করছিলি? কারা ঢুকেছিল এই স্কুলঘরে? 
জনার্দন শুধু বলে যায়-- আমি তো ঠিকমতন পাহারা দিয়েছি। কেউ তো আসে নি। 
হেডস্যার বলে-- তাহলে যা হয়েছে সে কী ভূতের কাণ্ড? 

  বেলা একটু গড়াতেই যা খবর এসে পৌছুলো তাতে সবার এবার চক্ষু চড়কগাছ হল। ফালাকাটা অঞ্চলের আরও অনেক স্কুলে একই রকম কান্ড ঘটেছে আজ। পুরো গঞ্জ- শহর আর আশপাশের গ্রামে এই নিয়ে চলল সারাদিন কত গল্প- কথার আসর, জটলা। সবাই মেতে থাকল।

  আমি তো সব বুঝতেই পেরেছিলাম। তিলু- বিলু- ইলু হয়ত এখন তাদের মহাকাশ যানে ভেসে কত আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে শুধু সাঁতরাইচেঙ্গা নয়, আশপাশের গ্রামে এরকম বিভিন্ন রহস্যময়  ঘটনার বর্ণনা শুনে স্কুল, খেলাধূলা, মানুষের স্বাভাবিক জীবনে তার প্রভাব পড়েছে। আজও তাই এই নতুন ঘটনায় এলাকার লোকজন নতুন রহস্যের সন্ধান পেলেন। এইভাবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হতে চলল। আজ স্কুল থেকে ফিরে আর খেলার মাঠে যাইনি, গিয়ে কী লাভ? সবাই নিজের ঘরের সামনেই আছে। বাড়ির বড়রা নিষেধ করেছে বাইরে না যেতে। দেওয়ানিকাকা আজও বিকেলে এসেছিল বাবার সাথে দেখা করতে। 

  দেওয়ানি কাকা চলে যেতেই বাবা ঘরের ভেতর এলেন আর বললেন-- দেওয়ানি দেখছি আমূল বদলে গিয়েছে। শুধু চুপটি করে বসে থাকে আর মাঝে- মধ্যে ফিক করে হেসে ফেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন-- ওর মাথায় গন্ডগোল হয়নি তো?

  তারপর বেশকিছু দিন আর কোন উৎপাত আর কোন রহস্যময় ঘটনা ঘটেনি। আমি তো জানি, ঐ ভিনগ্রহী বন্ধুরা ফিরে গিয়েছে তাদের নিজের মুলুকে, তাদের গ্রহে। ওদের জন্য মন- খারাপ হয় সত্যি। সে কথা আর কাউকে বলা যাবে না। পুজো এগিয়ে আসছে, এই লোকজন গ্রামের মানুষ ক্রমে স্বাভাবিক হয়েছে বেশ কিছুদিন সব স্বাভাবিক আছে। নতুন কোন রহস্যময় ঘটনা ঘটেনি। তবে রাত- পাহারা চলছে। স্কুলও পুরোদমে চলছে। সামনেই অনেকদিনের পুজোর ছুটি। তার আগে স্যাররা বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস তেড়েফুঁড়ে শেষ করছেন। কারণ পুজোর ছুটির পর স্কুল খুললেই বার্ষিক পরীক্ষা। ঘটনায় মোড়া মানুষের জীবন, তাই দেখবে মানুষ পুরানো ঘটনা কত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় নতুন ঘটনার আগমনে। 

  আজ ভাবতে বসেছিলাম সেই পুরানো ফেলে আসা জীবনের ঘটনা। যা একদিন সত্যি আমার জীবনে ঘটেছিল। তাই এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে ভাবি এখনকার জীব-বিজ্ঞানীদের কথা নিয়ে----

  সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বলেছেন জীবের উৎপত্তি সমুদ্রের জলে নয়  মহাকাশে! শেফিল্ড ইউনিভারসিটির একদল বিজ্ঞানী ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৭ কিমি ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে কতগুলি বেলুন পাঠান। বেলুনগুলি ফিরে আসার পর স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁরা। বেলুনের গায়ে লেগে ছিল কিছু আণুবীক্ষণিক জীব। পৃথিবীতে যাদের অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই জীবগুলির উৎপত্তি মহাকাশে।

  পরীক্ষাটির শেষে শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ওয়েনরাইট বলেছেন, কোনো পদ্ধতিতেই পৃথিবী থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতায় এই জীবগুলির যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি এগুলি মহাকাশের জীব এবং মহাকাশেই জীবের সৃষ্টি হয়েছিল। মহাকাশ থেকে এখনও প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে জীব আসছে। আমাদের চারপাশে অনেক জীবই আছে যারা এসেছে মহাকাশ থেকে।

  আর একদল বিজ্ঞানীও পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, মহাকাশ থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড পৃথিবীতে আসতে পারে ধূমকেতুর আঘাতের সঙ্গে। এই মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন জীবন সৌরজগতে ছড়িয়ে আছে। 
আমার ঐ তিনবন্ধু তারাও তো ঐ মহাকাশের অসীম থেকেই একদিন আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। মানুষ- ও নাকি এলিয়েন? এই তত্ত্ব অনেক বিজ্ঞানী খাড়া করেছেন। জীবন তাহলে জল থেকে উঠে আসেনি? 
(এরপর আগামী পর্বে)
পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(জ্বলদর্চির ২৪ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী হুগলির নীলাঞ্জনা শীল যা লিখল🖋️)

রতনতনু ঘাটীর লেখা, 'বাড়ি ফিরছে টিটি', প্রথম গল্পটিতে, ছোট্ট শালিক পাখি টিটি একটি প্রতিকী। লেখক এখানে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ছোটবেলাতে যখন আমরা কোনো কিছুই করতে পারিনা, তখন আমাদের মা ও বাবারা আমাদের পাশে থাকেন। আমাদের যত্নকরে বড় করে তোলেন। আমরা আমাদের অজান্তেই কখন বড় হয়ে উঠি। তাই, বিপদের সময়, আমাদেরও উচিত আমাদের অক্ষম মা ও বাবাদের পাশে দাঁড়ানো। যখন ছোট্ট টিটির জীবনে দুঃসময় আসে, যখন তার মায়ের পা ভেঙে যায়,যখন তার বাবাও বার্ধক্যজনিত সমস্যার জন্যে খাবার সংগ্রহ করতে অক্ষম,তখন টিটি বুঝতে পারে, আর তার ছোট হয়ে থাকলে চলবেনা। বড় হতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে। সে এসে দাঁড়ায় তাদের পাশে।আমাদের প্রত্যেকের মতো সেও, সেই সময় পাশে পায় তার বন্ধু, বাবুই পাখি টুকুইকে। সে খেলায় ব্যস্ত থাকলেও, সন্ধ্যার সময় ঠিক তার মায়ের কথা মনে পড়ে। অসুস্থ মায়ের জন্য খাবার নিয়ে বাসায় ফেরার কথা মনে পড়ে। সত্যিসত্যিই তার মা তার পথের দিকে তাকিয়ে বসে আছে, বাড়ি ফিরে সে দেখতে পায়। এরপরে অদিতি ঘোষদস্তিদারের গল্প, 'বরফ বিলাস' গল্পটি পড়ে বুঝতে পারলাম যে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত অন্যরকম প্রকৃতিতেও নিজেদের অভ্যস্ত করে তোলা। বিরুদ্ধ প্রকৃতিকে ভয় না পেয়ে, তাকে ভালোবাসতে হবে। তার মতো করে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। তারই মধ্যে সুন্দরকে খুঁজে বার করতে হবে।নিজেদেরকে সেই প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। এখানে একটি বাচ্ছা মেয়ে নিজেকে অন্য দেশের হার হীম করা বরফে ঢাকা প্রকৃতি আর বন্ধুদের সঙ্গে মেলাতে চায়। সে খেলতে চায় সেই বরফে অন্যদের মতো। প্রথম প্রথম তার মা, মেয়ের শরীরের কথা ভেবে ভয় পেতেন তিনি, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে তার মেয়ে নিজেকে সেই প্রকৃতিতে মানিয়ে নিতে চেয়েছে। তখন তার মনে পড়তে থাকে তার নিজের ছোটোবেলা। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার ছোটোবেলা আর এই ছোটোবেলার পার্থক্য শুধু প্রকৃতির, অন্য কিছুর নয়।যখন তার মেয়ে বড় হয়, তখন সে বুঝতে পারে যে শিশুদের হইহুল্লোর তখনও থাকলেও তার বাড়ির দালানে আর কেউ বরফ দিয়ে পুতুল বানায় না।সুশ্রী দিদির 'উপলব্ধি' গল্পটি পড়ে, আমিও উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,সব খারাপেই কিছু ভালো থাকে, যা অনেক সময়ই আমরা মানুষরা উপলব্ধি করতে পারিনা। অনেক কিছুই আমরা বুঝতে পারিনা। আমরা ভুলে যাই যে আমাদের হাজার দায়িত্বের মধ্যেও সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো প্রকৃতিকে সুন্দর রাখা। আর তাই অনেক সময়ে আমরা আমাদের নিজেদের দোষের জন্য সমস্যায় পরি। এই গল্পেও, দিদি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, এই ঘরবন্দি দশা এবং একাকিত্বের মধ্যেও আনন্দ এবং ভাললাগা আছে। সে দেখতে পাচ্ছে যে, যে আকাশ এতদিনেও এতটা পরিষ্কার এবং সুন্দর হয়নি, সে নিজে আজ নতুন সাজে সেজে উঠেছে। প্রকৃতিও নতুনভাবে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া ২
(২৪ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে নদীয়ার নন্দিতা বিশ্বাস রায় যা লিখলেন 🖋️)

জ্বলদর্চি পত্রিকার বিশেষ ছোটবেলা সংখ্যার সম্পাদিকা মৌসুমী ঘোষ এবং তার সহকারীর সহযোগিতার কর্মকাণ্ড দেখে আমি মুগ্ধ। মুগ্ধ হয়েছি এটা দেখে ছোট বড় সবাই এখানে সমানতালে লিখে চলেছে নিরন্তর। লেখক রতনতনু ঘাটী থেকে শুরু করে অদিতি ঘোষ দস্তিদার এর বরফবিলাস উপলব্ধি এবং কবিতা ও ছবি সবই আমার হৃদয় কে স্পর্শ করেছে। এই অনুপ্রেরণামূলক জ্বলদর্চি পত্রিকা প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ সকলকে নতুন লেখোকের সুযোগ করে দেবার জন্য যে অভিনব প্রচেষ্টা সার্থক এর পথে এগিয়েছে এটা আমার মনকে আকৃষ্ট করেছে। ছোটবেলা সংখ্যাটি পড়ে আমার জীবনের ক্ষুদ্র উপলব্ধি এই লেখাংশে তুলে ধরবার ইচ্ছে প্রকাশ করছি মাত্র। আমার বয়স তখন কুড়ি বাবার ভীষণ শরীর খারাপ। বাবার ইচ্ছা ও  পরিবারের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে তাদেরই পছন্দমত পাত্রকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণকরি। বিয়ের পর আমার একজন সন্তান হয়। একদিন দুপুরে আমি একটা বাড়ি গিয়েছি আমার সন্তানের জন্য দুধ সংগ্রহ করতে আমি অপেক্ষা করছি দুধের জন্য সেই সময় একটা ছোট্ট পাখি দেখতে পেলাম,  বুঝলাম উড়তে পারেনা সে। খুবই ভালো লাগছিল আমার। আমার সন্তানের ন্যায়  তাকে অনেক আদর করলাম। তার গায়ের রং আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করল।কিন্তু কিছুটা সময় অতিক্রম হওয়ার পর মা পাখি বাবা পাখি এসে হাজির। তাদের বাচ্চার জন্য সেকি করুন প্রার্থনা, আমার হৃদয় কে খুব ব্যথিত করল আমিও তাদের বাচ্চাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে একটা সুখ অনুভব করলাম। এবং এক মুহুর্তের জন্য আমার ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। দুটো হাত প্রসারিত করে বন্ধুদের সাথে পাখির মতো ছন্দে দুলে দুলে দিক দিগন্ত ঘুরে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা আর সেই ক্লান্তি নিয়ে মায়ের কোলে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম। সেই স্মৃতি মনে করে যেমন সুখ অনুভব হয় তেমনি দুঃখ হয় আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য। প্রতিযোগিতা আর প্রগতির উন্নতির যন্ত্রটা যেন ক্রমে গ্রাস করে ফেলছে আমাদের সন্তানদের শৈশব।উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যস্ততায় ধ্বংস করে ফেলছি তাদের ছোটবেলার মুক্তির স্বাদ। তাদের জীবনটা চার দেওয়ালে ফ্রেমে বন্দী করে ফেলছি, তৈরি করে ফেলছি মানুষ নামক যন্ত্র ধ্বংস করে ফেলছি মানবতা। শহরতলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামগুলো খেলার মাঠগুলোকে অট্টালিকায় দমবন্ধ পরিবেশ করছে, শ্যামল যেন তার সবুজতা হারিয়ে ফেলছে। ডিজে নামক যন্ত্রণা ও কম যায়না শিশুর ছোটবেলা ধ্বংসের জন্য একটা উশৃংখল পরিবেশ গড়ে উঠছে। আমার ইচ্ছে করে আমার ছোটবেলাটা তাকে উপহার দিতে যেখানে থাকবে একটা নীল আকাশ, একরাশ মুক্ত বাতাস, একরাশ বনফুল ও অনন্ত হাসি। সেই ছোটবেলা থেকে পাবে জীবনের বাকিটা পথ চলার রসদ। শেষাংশে আমি এটাই বলতে চাই যে জ্বলদর্চি পত্রিকার খুদে পাঠক পাঠিকার মন আরো আরো বিকশিত হোক এবং যারা সাহিত্যপ্রেমী তাদের যেন খোরাক মেটাতে পারে এই পত্রিকা। তাই একজন পাঠিকা হিসেবে দীর্ঘায়ু কামনা করছি পত্রিকাটির।

প্রকাশিত। ক্লিক করে পড়ুন। 
পাঠ প্রতিক্রিয়া ৩
(জ্বলদর্চির ২৪ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে সুদূর ক্যালগেরি থেকে সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য যা লিখলেন🖋️)

প্রথমত এই ছবিটা।এক ছুট্টে মাঠ পেরোনোর ছবিটা।কি যে ভালো।যে ছবি ছোটবেলা ফিরিয়ে দেয় তা একটু বেশীই ভালো।একটা গায়ের ছাল ওঠা মাঠ পেরিয়ে আমাদের ছিল স্কুল যাওয়া।মাঠটা শুধু ছুটে পেরোতাম না।মাঠের কোণায় একটা ভয়ের বাড়ি ছিল।সেই বাড়িটা পেরিয়ে তবে থামত পাখির উড়ান।সেই ভয়ের বাড়ির গল্পটা একদিন শোনাবো সুযোগ পেলে।
“বাড়ি ফিরছে টিটি” এই গল্পটা’ত আমি সবার সাথে একবার করে পড়ব।ছেলে মেয়ে বাবা মা বন্ধুরা তাদের ছেলে মেয়েরা।যারা আমার মত ছোটবেলায় জয় আর টুটু পড়েছে তাদের একবার করে মনে পড়ে যাবে জয় আর টুটুর কথা।

  অনন্তদেব মুখপাধ্যায়ের অনর্থক ছড়া পড়ে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।অনর্থক কথার একটা জাদু আছে।এক মুহুর্তে গোমড়ামুখ হাসি হাসি হয়ে যেতে পারে।এই ছাড়টাও তেমন।

ছুটুক কথার ফুল্কি
খাচ্ছি খাস্তা নিমকি ?

  “করেনা কাল”, “উপলব্ধি” দুটো লেখা পড়েই চমৎকার লাগল।এত সুন্দর করে ভাবছে সব ছোটরা,মনের অনুভূতি এভাবে তুলে ধরছে এটা সত্যি প্রশংসনীয়।

  ছোটোদের আঁকাগুলো দেখে আমি মুগ্ধ হলাম।এত সুন্দর সহজ সরল তুলির টান,তার সাথে শিশু মনের ভাবনা, সে রধা কৃষ্ণ হোক্ বা গ্রামের দৃশ্য সবেতেই শিশু মনের সুন্দর প্রতিফলন।যেমন অনুরাগ রায়ের ছবি দেখে সত্যি সত্যি যেন ভেলায় চড়ে ভেসে গেলাম সেইখানে যেখানে সূর্য্যমামা ভরপুর রঙ মাখিয়েছে আকাশে।

  সবচেয়ে শেষে বলি সম্পাদিকা দিদিমনির কথা ।এত সুন্দর করে পত্রিকাটিকে সাজানোর জন্য এবং পরিবেশন করার জন্য। এত সুন্দর করে চোখের সামনে তুলে ধরলে আমার মত কম পড়াশোনা করা ছাত্রীরাও একটু পড়াশোনা করে বৈকি !!


আজকের বিষয় : ভারতের কিছু প্রসিদ্ধ সংবাদপত্র।

১. দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া কোন ভাষার প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা?
২. হিন্দুস্থান টাইম কোন ভাষায় প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা?
৩. আনন্দবাজার পত্রিকা কোন ভাষার পত্রিকা?
৪. সংবাদ প্রতিদিন। কোন ভাষায় খবর ছাপা থাকে এই পত্রিকায়?
৫. দৈনিক জাগরণ পত্রিকাতে কোন ভাষায় খবর ছাপা থাকে?
৬. দ্যা হিন্দু পত্রিকায় কোন ভাষায় খবর ছাপা হয়?
৭. দৈনিক ভাস্কর পত্রিকায় কোন ভাষায় খবর ছাপা হয়?
৮. বর্তমান পত্রিকায় কোন ভাষায় খবর মুদ্রিত হয়?
৯. বিখ্যাত পত্রিকা সন্দেশ। এই পত্রিকায় কোন ভাষায় খবর ছাপা হয়?
১০. নবভারত পত্রিকায় কোন ভাষায় খবর ছাপা হয়?

গত সপ্তাহের উত্তর:
১. অল ইন্ডিয়া ফুটবল এসোসিয়েশন। ২.বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া। ৩. ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্টান্ডার। ৪.ভারতীয় কিষান উনিয়ান।৫.সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। ৬. ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপারমেন্ট। ৭.ক্যাবিনেট কমিটি অন প্রাইসেস। ৮.সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি। ৯.কম্প্যাক্ট ন্যাচারাল গ্যাস। ১০.ককপিট ভয়েস রেকর্ডার।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments