জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৪৩






সম্পাদকীয়, 

ছোট্টোবন্ধুরা,একটা খুশীর খবর মেঘেরা নিয়ে আসছে হাওয়ার সঙ্গে। কী? উঁহু,বলব না। ভাব। ভাবা অভ্যাস করো। প্রচ্ছদের দাদাটা তার ভাইকে কোলে নিয়ে কানে কানে সেই খবরটাই দিচ্ছে। তোমরা কান পেতে থাকো। শুনতে পাবে। ভাগ্যিস প্রচ্ছদের ছবিটা তুলে প্রিয় গল্পকার হামিরউদ্দিন মিদ্যা আমাদের উপহার দিলেন, তাই তো মেঘেদের বয়ে আনা খবরটা আমি পেয়ে গেলাম। আর তোমাদেরও জানাতে পারলাম। মুক্তি জেঠু আর তোমাদের বন্ধু সমাদৃতা যতই আমাদের বর্ষার ছড়া শোনাক আমরা আজ খুশির খবরটা শুনে আনন্দে খুশির ছড়া বলে উঠব। আর দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার দিন শেষ। দীপক জেঠুর গল্পে মোরগটা সকাল থেকে কেন ডাকছে জেনে নাও। আর জানো তোমাদের খুশীর খবর শুনে শুধু মোরগ নয় মশা মাছি মাকড়সা আরশোলা পিঁপড়ে সবাই ছড়া বলতে শুরু করে দিয়েছে। সেটা লিখে পাঠিয়েছেন পীযূষ আঙ্কেল।পতঙ্গদের নাম শুনেই 'ও মা গো' বলে যে চেঁচালে সে তবে  শঙখশুভ্র আঙ্কেলের লেখা নাসিক বাবুর ছড়া পড়ে নাও।  ওদিকে তো ফুলকুসুমপুরের ত্রিপাঠী বাড়ির নাম কেন গিনেস বুকে উঠবে না জানতে আমরা প্রতি সপ্তাহে গোগ্রাসে পড়ে ফেলছি রতনতনু জেঠুর উপন্যাসটি। কি ভেবে বার করতে পেরেছো খুশির খবরটা? আরে গৌর জেঠুর গল্পে দাদুবাবা ডাবলুকে নিয়ে রোজ কোথায় যায়? দেবাশীষ আঙ্কেলের গল্পে মামা ভাগ্নেকে কোথায় যাবার জন্য বোঝাচ্ছেন? তোমাদের বন্ধু শতভিষা কোথায় না গিয়ে বার্বি নিয়ে খেলার কথা বলছে? ঠিক ধরেছো। স্কুলললললল। স্কুল খোলার খবর ভাসছে আকাশে বাতাসে।  ইয়েপ্পিইইইইইইই। সামনে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস তোমরা প্রচুর প্রচুর স্বাধীনতা দিবসের আঁকা পাঠাও। এসো সবাই মিলে এক আনন্দের দিনের দিকে এগিয়ে যাই।                  -     মৌসুমী ঘোষ।



বদলে গেল ডাবলু 
গৌর বৈরাগী

দাদুবাবা ডাবলুকে ইস্কুল দিয়ে আসেন। আবার নিয়েও আসতে হয় তাঁকেই। এটাই তাঁর ডিউটি।
একদিন এক কান্ড হল। 
সেদিন হয়েছে কী, ছেলেটাকে ইস্কুল থেকে বাবুর বাজারের বাড়িতে নামিয়ে দিতে গিয়ে দেখলেন, আরে এ ছেলেটা তো ডাবলু নয়। তাড়াতাড়িতে ভুল করে অন্য ছেলেকে আনা হয়ে গেছে।
দাদুবাবা অবাক হয়ে বললেন, এই তুই কে র‍্যা?
ছেলেটা বলল, আমিই ডাবলু।
কভি নেহি, আমাদের ডাবলুকেএমন বিচ্ছিরি দেখতে নয়। সে বেশ লম্বা, এক মাথা চুল, হাসলে পরে কী সুন্দর দেখায়। এদিকে তুই ছেলেটা কালো, থ্যাবড়া মুখ, ফাঁক ফাঁক দাঁত। নাঃ কিছুই মিলছে না। সত্যি করে বল? তুই কে? কী নাম তোর?
বলছি তো আমিই ডাবলু।
হতেই পারে না। দাদুবাবা রাগ রাগ মুখ করে বললেন, তোদের বীণা মিস ভুল করে অন্য ছেলেকে আজ দিয়ে দিয়েছে। চল, তোকে ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের ছেলেকে নিয়ে আসি।
দাদুবাবা ইস্কুলে গিয়ে বীণা মিসকে বললেন, মিস, আপনি ভুল করে অন্য ছেলেকে দিয়েছেন। আমাদের ছেলে গেল কোথায়?
মিস বললেন, ওই তো আপনার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
দাদুবাবা বললেন, এ অন্য ছেলে, এ ডাবলু নয়। 
বীণা মিস হেসে অস্থির।  বললেন, ও ডাবলু হতে যাবে কেন, ও হিমঘ্ন।
হিমঘ্ন!
ডাবলু বলল, তোমাকে সেই কখন থেকে বলছি, যে হিমঘ্ন সেই ডাবলু। হিমঘ্নর ডাকনাম ডাবলু।
দাদুবাবা এবার হো হো করে হাসলেন। ঠিক ঠিক,  আমার মনেই ছিল না। আর তাছাড়া... 
তাছাড়া কী দাদুবাবা?
হিমঘ্নর দিকে তাকিয়ে দাদুবাবা বললেন, আমাদের ছেলেটা কী সুন্দর কালো, থ্যাবড়া নাক,  ফাঁক ফাঁক দাঁত। হাসলে পরে কী বিচ্ছিরি সুন্দর দেখতে হয়।  এমন ছেলে ডাবলু না হয়েই যায় না।


বর্ষা-স্মৃতি
মুক্তি দাশ

মাঠঘাট সব জলে থই থই
খাল-বিল ভরা আষাঢ়ে,
আকাশের মুখ ভার হয়ে আছে,
মুখে নেই কোনো ভাষা রে!
দিনরাত শুধু কান ভরে যায়
জলের টাপুর-টুপুরে,
মনে হয় যেন সন্ধে বুঝি বা
ভুল করে এলো দুপুরে!
বীজধান হাতে জলভরা মাঠে
হাঁটু গেড়ে বসে চাষিরা,
খুশিতে তাদের টানটান যেন 
অণু-পরমাণু বা শিরা!
ঘরের জানলা বন্ধ? তাতে কী?
মনের জানলা দিস খুলে!
পড়াশুনো আজ বন্ধ সবার
‘রেনি-ডে’ দিয়েছে ইস্কুলে!
স্রোতে টলোমলো কাগুজে-নৌকো-
উঁকি মেরে দেখে রুবি
ছুটে এসে সেটা বাঁচালো, নইলে
নির্ঘাৎ ভরাডুবি!
ভিজে ভিজে ঝড়োকাক ও-বাড়ির
ছেলেটা।তবু সে ভিজছে…
শিবকে দেবে সে তিনটি কন্যে-
এরকমই তার ইচ্ছে!
হেঁসেলে ব্যস্ত মা ও কাকিমা-
আজ আমাদের খিচুড়ি,
ইলিশের ভাজা তার সাথে, আর
নেই প্রয়োজন কিছুরই!
বহু পুরাতন বর্ষা-স্মৃতিতে
ধীরে ধীরে হাত বুলাই।
কোথায় হারালো আষাঢ়? এখন
বর্ষার মাস জুলাই!




বোধোদয়
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

ছোটোবেলায় দিদির ছেলে পাপান ছিল আমার চ্যালা।ওর হাজারো প্রশ্নের উত্তর আমাকেই দিতে হতো। গল্প বলতে হতো। না বললে মামার সাথে আড়ি তখন।মামা নাকি 'পচা মামা'। এহেন পাপান একদিন এক কান্ড করে বসলো।

     পাপান নাকি স্কুলে যেতে চাইছে না। বাড়ির বাগানে আমতলায় বাঁধানো বেদিতে বসে পড়াশোনা করবে। কারণ, মামা নাকি বলেছে, রবিদাদু বাড়িতেই গাছতলায় বসে লেখাপড়া করে এতো বড়ো হয়েছে। বিশ্বকবি হয়েছে। তাই সেও বাড়িতেই লেখাপড়া করবে।ওকেও একদিন পৃথিবীর সব লোক চিনবে।

সামনে পরীক্ষা। তখন স্কুলে না গেলে কি হবে? পাপান কিছুতেই  কোন কথা শুনছে না। ফোনে দিদির শাশুড়ির ক্রুদ্ধ সংলাপ :"তুমিই পাপানকে ক্ষেপিয়েছ। যা করার তোমাকেই করতে হবে"। পড়লাম মহা বিপদে।

         মনে পড়লো, সেদিন ' প্রশ্ন' কবিতাটা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলাম পাপানকে। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা সম্বন্ধে দু'চার কথা বলতে গিয়ে বলেছি বোধহয়। তার যে এরকম প্রতিক্রিয়া হবে কে জানতো ! ভয়ে ভয়ে শণিবার সন্ধ্যায় দিদির শ্বশুর বাড়ি গেলাম। থমথমে পরিবেশ। ভালো করে কেউ কথা বলছে না। এমনকি দিদিও নয়। বুঝলাম সব।  বিকেলে পাপানকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম নদীর ধারে। পাপানকে নিয়ে গেলাম নদীর ধারের ইঁট ভাটায় ইট তৈরি দেখাতে। শ্রমিকরা সব ইঁট তৈরিতে ব্যস্ত। পাপান একমনে দেখতে লাগল।  বাচ্চাগুলোর খালি গা, কাদা মাখা।কোন বাচ্চার প্যান্টও নেই। নাক দিয়ে নোংরা গড়াচ্ছে। তারপর ওকে নিয়ে জুট মিলের শ্রমিকদের থাকার জায়গায়  গেলাম। ইঁট সাজিয়ে ঘর। মাথায় প্লাষ্টিকের ছাউনি। ঘরে একটা দরজা।জানালা নেই। অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ঘরে শোওয়া। ঘরের ভেতর প্রচন্ড একটা গন্ধ। পাপানকে নিয়ে ঘরে উঁকি দিয়ে দেখালাম সব। দেখলাম ওর সারা মুখ জুড়ে মন খারাপের আলপণা ওদের জন্য।

       ইঁটভাটা থেকে বেরিয়ে ও নদী দেখবে বললো। নদীর বুকে নৌকা বয়ে যাওয়া এক বিস্ময় ওর কাছে। নদীর পাড়ে চুপ করে জলের দিকে তাকিয়ে রইল ও গম্ভীর ভাবে। পাড়ে জোয়ারের জল আছড়ে পড়ছে ছলাৎ ছল।পাপানের মনেও ওর চিন্তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে বোঝা গেল। হঠাৎ বলে উঠল: " মামা, ওরা স্কুলে যায় না কেন? পড়াশোনা করে না? ওদের গায়ে জামা নেই কেন? ওরা এতো কষ্টে থাকে? " ওর একের পর এক প্রশ্ন আছড়ে পড়ছে। ওকে বোঝালাম তুমি লেখাপড়া করে বড়ো হয়ে চাকরি পেলে ওদের জামা কাপড় বই খাতা কিনে দিতে পারবে।  ও গম্ভীর ভাবে ঘাড় নাড়ল। বুঝলাম আমার কাজ হয়ে গেছে।

          বাড়ি ফিরেই চিৎকার করে বললো :" আমি কাল থেকে স্কুলে যাবো। লেখাপড়া না করলে চাকরি পাব কি করে?" সারা বাড়িতে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস সকলের। ছোট্ট পাপানের চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, সকলে যদি এভাবে ভাবতে পারতো !



নাসিকবাবুর ক্লাসিক ছড়া
শঙ্খশুভ্র পাত্র

নাসিকবাবু বহুভাষিক
লেখেন ক্লাসিক ছড়া,
মাটির নিচে পুঁতে রাখেন
মোহর ঘড়া-ঘড়া ৷

কালেভদ্রে নৌকো চাপেন
ইচ্ছে হলেই ট্রেনে,
উচ্ছে খেয়ে আবার কখন
চাপেন এরোপ্লেনে ৷

এই তো সেদিন স্পেনে গিয়ে
পেনে লেখেন চিঠি,
বলেন : 'আমার কারোর সাথে
নেইকো খিটিমিটি ৷'

কিন্তু তাঁহার এক বিষয়ে
আছে প্রবল গোসা,
ধবল কিছু দেখতে পেলেই
খেতে বসেন ধোসা ৷

ইডলি তিনি খান না, কারণ,
মান্নাবাবুর হুকুম,
কান্না পেলেই বলতে হবে :
'রান্নাঘরে ঢুকুম ৷'

খিদেয় যত উদর জ্বলুক
থাকতে হবে আড়ে,
কিন্তু উদোর পিণ্ডিটাকে
চাপিয়ে বুধোর ঘাড়ে

লুটবে মজা ? তাই কখনও
হয় না বাপু, হেথা !
ময়না শালিখ টিয়ের মতো
শিখতে হবে কেতা ৷

জেতা-হারার ব্যাপারটি তো
আছে সবার শেষে,
বোরিং হলেই ফড়িং ধরে
বাঁধতে হবে কেশে ৷

তারপরে ঠিক ইড়িংবিড়িং
থুতনিটাকে নেড়ে,
বলতে হবে জোর, মজাসে :
'হা রে রে রে রে রে !

আসুক লেখা, ভাসুক রেখা,
হাসুক কেকাধ্বনি,
বেকাররা সব চেয়ে দেখুক—
আমি-ই একা ধনী ৷

ধিনতা ধিনা তাক ধিকিনা
চিন্তা রাশি রাশি
চিমটা দিয়ে চিমটি কেটে
পাচ্ছে শুধু হাসি ৷

ইমেল ফিমেল কী মেল বাছা
পাতার ফোকর গলে
সূয্যি-আলো ফুরিয়ে যেতেই
আঁধার কথা বলে ৷

ফিসফিসানি সেসব কথা
এক্কেবারে চাপা,
চাঁপার মতো গন্ধ ছড়ায়
হয় না কভু ছাপা ৷

ব্যাপারটি যে খুব ভৌতিক
হয়ত ভবিষ্যতে,
সেসব লেখার দেখা মিলবেই
বেভুল, অদৃশ্যতে ৷


মোরগ কেন ডাকে
দীপক কুমার মাইতি

সকালে কোন উঁচু জায়গায় উঠে মোরগকে ডাকতে দেখা যায়। এই নিয়ে ওড়িশার মুণ্ডা জনজাতির একটি লৌকিক কথা প্রচলিত আছে। 

  তখন আকাশে সাতটি সূর্য ছিল। পৃথিবী সবসময় আলো ঝলমল করত। রাত বলে কিছু ছিল না। সাতটি সূর্যের প্রখর তেজে পৃথিবীবাসী নাজেহাল। সকলে গিয়ে তাদের মহারাজকে বলল, “মহারাজ সূর্যের প্রখর তাপে আমরা নাজেহাল। আপনি আমাদের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা করার উপায় বের করুন।”
রাজার ছিল পাঁচ অসম সাহসী তিরন্দাজ। মহারাজ তাদের হুকুম করলেন, “তোমরা এখুনি সূর্যের সাথে যুদ্ধ কর। তির নিক্ষেপ করে সূর্যদের আকাশ থেকে ধ্বংস করে ফেল।”

  বীর তিরন্দাজেরা সূর্যদের পরাস্ত করে ছয়টি সূর্য ধ্বংস করে ফেলল। ভয়ে সপ্তম সূর্য একটি পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে পড়ল। আকাশ তখন সূর্যহীন। পৃথিবীতে নেমে এল গাঢ় অন্ধকার। সেই সুযোগে শীতবুড়ি শীতল হাওয়ার হাসি চারিদিকে ছড়িয়ে দিল। মানুষ হল গৃহবন্দী। অশেষ দুর্ভোগ নেমে এল জঙ্গলের পশুদের মধ্যে। গাঢ় অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে সিংহ ও বাঘ শিকার করতে না পেরে অনাহারে কাটাতে লাগল। হাতি জঙ্গলে চলাফেরা করতে গিয়ে বড়বড় গাছে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়ে পড়ল। ইঁদুর ভুলে বাঘ ও অন্য জন্তুর পিঠে চড়ে তাদের শিকার হতে লাগল। একদিন খরগোশ এসে পশুরাজ সিংহকে জানাল, “মহারাজ, সূর্য ভয়ে ঐ পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে আছে। আমাদের তাকে ডেকে আনতে হবে।”

  পশুদের সভা বসল। বাঘ বলল, “আমি যাব সূর্যকে ডাকতে। আমার ভয়ে সে ঠিক সুড়সুড় করে আকাশে উঠবে।”
পাহাড়ের নীচে গিয়ে বাঘ হুঙ্কার দিয়ে বলল, “ওহে সূর্য তাড়াতাড়ি আকাশে উঠ। নয়ত তোমার ঘাড় মটকে দেব।”

  সূর্য তো বাঘের হুঙ্কারে ভয়ে জড়সড় হয়ে পাহাড়ের আরো পিছনে লুকিয়ে পড়ল। বাঘ বিফল হয়ে ফিরে এল। একে একে সব প্রাণী নরমে গরমে সূর্যকে ডাকতে গেল। কিন্তু সবাই বিফল হয়ে ফিরে এল। ময়ূর তো তার পেখম তুলে নাচ দেখিয়েও ব্যর্থ হল। এক মোরগ পশুরাজ সভায় এসে বলল, “মহারাজের জয় হোক। আমি কী একবার চেষ্টা করে দেখব হুজুর!”
মোরগের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। কিন্তু পশুরাজ মাথা দুলিয়ে বলল, “ যাও মোরগ,তুমি একবার চেষ্টা করে দেখ।”

  গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় মোরগ। পাহাড়ে নীচে গিয়ে চারিদিক দেখে। সূর্যকে দেখতে না পেয়ে উড়ে পাহাড়ের মাথা চড়ে বসে। তারপর আস্তে করে ‘কোঁকর কোঁ’ রবে ডেকে ওঠে। সূর্য কোনদিন মোরগের ডাক শোনেনি। কৌতূহলে পাহাড়ের আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখে। সূর্যকে দেখে মোরগ একটু জোরে আবার ‘কোঁকর কোঁ’ রবে ডেকে ওঠে। মজা পায় সূর্য। পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। তাই দেখে মোরগ লেজ তুলে ও গলা ফুলিয়ে খুব জোরে ‘কোঁকর কোঁ’ রবে ডেকে ওঠে। সূর্যও আনন্দে লাফিয়ে আকাশে চড়ে বসে। পৃথিবী থেকে আন্ধকার দূর হয়। চারিদিক আলোয় ঝলমল করে ওঠে। 
 
  পশুরা দেশের রাজাকে অনুরোধ করে সূর্যকে ধ্বংস না করতে। সূর্য বলে, “আমার সঙ্গীরা কেউ নেই। আমি সারাদিন একা একা আকাশে থাকতে পারব না।”
সকলে সিদ্ধান্ত নেয়, দিনের কিছু সময় সূর্য আকাশে থেকে সকলকে আলো দেবে। পরে পাহাড়ের নীচে বিশ্রাম নেবে। সেই থেকে পৃথিবীতে শুরু হল রাত ও দিন। আরো ঠিক হয় প্রতিদিন সকালে মোরগ কোন উঁচু জায়গা থেকে ডেকে সূর্যকে আহ্বান জানাবে। সেই থেকে প্রতিদিন সকালে মোরগ সূর্যকে ডেকে আহ্বান জানিয়ে আসছে।


পাঁচটি ছড়া
পীযূষ প্রতিহার

আরশোলা

এই আরশোলা শোন
ফরফরিয়ে যখন তখন
মাথার উপর বাঁই-বনবন
উড়িস যদি ফের-
চীন দেশেতে পাঠাবো তোরে
পড়বি চীনেম্যানের দোরে
চিবিবে খাবে রান্না করে
বুঝবি তখন জের।


পিঁপড়ে

এই পিঁপড়ে দাঁড়া,
সার বেঁধে সব চললি কোথায়?
যখন তখন হেথায় হোথায়,
একসঙ্গে নিয়ে সারা পাড়া।
গুড়-চিনি তো রাখার উপায় নেই!
ফের যদি তোর নজর পড়ে
গুড়ে কিম্বা চিনির ভাঁড়ে,
দেখি আরেক দিন-
পুষব প্যাঙ্গোলিন।


মাছি

এই যে মাছি,
আনব নাকি কাছি?
ছ'পায়ে তোর লাগিয়ে ফাঁসি
কানের গোড়ায় বাজিয়ে কাঁসি
নাচব তা ধিন্ ধিন্।
বুঝবি তখন কেমন লাগে
ভাতের উপর বসার আগে,
ভাবিস আরেক দিন।
তবু যদি ভাতের পরে রাখিস রে তোর ঠ্যাং
জব্দ তোরে করার তরে পুষব কোলাব্যাঙ।


মশা

এই যে ভাই মশা,
তোর কিসের গোঁসা?
যখন তখন হুল ফুটিয়ে
আমার গায়ের রক্ত নিয়ে
মেটাস কিসের জ্বালা?
শেষ বার এই বলছি শোন্
এবার তো ভাই প্রমাদ গোন্
কাছ ছেড়ে তুই পালা।
দিনরাত্তির জ্বালিয়ে দেব মশা মারা ধূপ,
ছ'পা তুলে মেঝের পরে পড়বি জোরে ঝুপ্।


মাকড়সা

এই মাকড়সা ভাই,
তোর আবার কি চাই?
বেশ তো থাকিস ঘরের কোনে
থাক না তুই আপন মনে,
সিলিং থেকে নীচে এসে
কেন ভয় দেখাস?
আট পায়ে বেশ থাকিস ঝুলে
দিনরাত্তির সময় ভুলে
এটা ওটা ধরিস জালে,
যেদিন যেটা রয় কপালে-
শুধু কাছের থেকে ভাগ
বাড়াসনে আর রাগ।
নইলে চড়ুই পুষব ঘরে
খাবেরে তোর মুন্ডু ধরে
দেখব মজা চুপটি করে
ফের ভয় দেখানোর আগে একটুখানি ভাব,
উপর থেকে নামার আগে একটু কর হিসাব।





ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ১৬

রতনতনু ঘাটী

ইচ্ছেদাদু আজ সকালের চায়ের টেবিলে ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের যার-যার পেট অ্যানিম্যাল বাড়িতে এনেছ, তাদের সকলকে নিজের নিজের দায়িত্বে পাখি-প্রাণীদের দেখাশোনা করতে হবে। কেননা, কুয়াশামাসির হাতে অত সময় নেই যে, সে তোমাদের প্রাণীদের খাঁচা পরিষ্কার করে দেবে বা সকালবেলার খাবারটা দিয়ে দেবে। তিনি সকালে আমাদের বড়িতে আসেন রাজকন্যের মতো। আবার বেলায় যখন আসেন, তখন তিনি রাজরানি। মাধুরী, করবী আর বকুল রান্নাবাড়ার সব কাজই তো করে।’ তিন্নিরবাবা, গল্পকাকা আর শুধুকাকা চুপ করে দাদুর কথা শুনছিলেন আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন।
   ইচ্ছেঠাকুরমা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় দাদু তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘না না অনিচ্ছে, একটা কথা ভেবে দেখতে হবে। বলো তো, এ গ্রামে ক’টা বাড়ির বউমারা এমন করে খাটে, তুমিই বলো?’
   ঠাকুরমা বললেন, ‘এখন দু’বেলা আমাদের বাড়িতে গোনাগুনতি বাইশজনের আয়োজন লাগে। তার সঙ্গে চার-চারটে হযবরল চিড়িয়াখানার পোষ্য। মানে দু’বেলা মিলিয়ে মোট আটটি। এ কি কম ঝক্কির কাজ নাকি?’
   মাধুরীজেম্মা রান্নাঘর থেকে বললেন, ‘মিঁউ, বিংগো আর কুমিরা যখন এ বাড়িতে ঢুকেই পড়েছে, ওদের তো ফেলে দেওয়ার জন্যে আর এ বাড়িতে আনা হয়নি? আর রাধাগোবিন্দকে তো বলতে গেলে মা, আপনি একাই দেখেন! ও যেমন করে হোক চলে যাবে। এ বাড়ি থেকে কবেই বা কাকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলুন?’
   বড়বাবু বললেন, ‘আমার মিঁউয়ের সব দায়িত্ব না হয় আমিই নিচ্ছি?’
   ইচ্ছেদাদু গলা ভারী করে বললেন, ‘তোমার যখন এ শহর আর ও শহর থেকে পশু-পাখির নির্যাতন-প্রতিরোধ সমিতিতে বক্তৃতা করার ডাক আসবে, তখন কী হবে? তোমার তো ফিরতে কখনও দিন দুয়েকও লেগে যায়?’
   ‘হ্যাঁ, তা বাইরে যেতে হয় বটে!  এই তো আগামী শনিবার আমাকে যেতে হবে শিলিগুড়িতে। কোভিডের কারণে বন্যপ্রাণীরা এখন জঙ্গল থেকে ফিরে আসছে, হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রাণীরও দেখা মিলতে শুরু করেছে আবার। এসব খবর স্বভাবতই এই বন্দি সময়ে আমাদের মন ভালো করে দেওয়ার মতোই। এই নিয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’ বললেন বড়বাবু।
   শুধুকাকা বললেন, ‘দাদা, তোকে এসব নিয়ে নানা জায়গায় বলতে যেতে হয়। মেজদাও তো পথকুকুরদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাকেও তো এদিকে ওদিকে যেতে হয়। তখন বিংগোর দেখাশুনো কে করবে?’
   ইচ্ছেঠাকুরমা বিজ্ঞের মতো গলায় বললেন, ‘আমার রাধাগোবিন্দকে আমিই দেখব। কুয়াশামাসি শুধু খাঁচাটা পরিষ্কার করে দিলেই হবে। ও কাজটা আমি ওকে দিয়ে করিয়ে নেব।’
   ইচ্ছেদাদু বললেন, ‘আমি তো ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়াশোনা করে জানলাম, কুকুর এবং বিড়ালকে বছরে অন্তত একবার জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়া দরকার। বাড়িতে ছোটরা আছে, কখন কী রোগ ছড়ায়, তার ঠিক কী?’
   ‘ও আমি মনে করে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করব। খাতায় ডেট লিখে রাখব।’ বড়বাবু বললেন।
   দাদু বললেন, ‘তোমার মিঁউকে ডিপথেরিয়ার ওষুধও দিতে হবে তো মনে করে?’
   বড়বাবু বললেন, ‘না, বাবা! এটা অনেকে মনে করেন। কিন্তু কথাটা ঠিক নয়। বিড়ালের থেকে ডিপথেরিয়া অসুখ হয় না।’
   দাদু বললেন, ‘তা ছাড়া মিঁউর আর বিংগোর মাসে একবার করে নখ কাটতেও হবে। এসব কে করবে? বউমারা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তোরা তোদের চাকরি আর সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে বিজি থাকবি। আমি ভাবছিলাম, আমরা একজন লোক রাখি না কেন, যে প্রতিদিন পাখি-প্রাণীদের দেখভাল করবে, খাঁচা পরিষ্কার করবে, খেতে দেবে। বাজার থেকে এদের যার যেমন খাবার লাগবে সে এনে রাখবে। তার এসব বিষয়ে যেন অভিজ্ঞতা থাকে, সেটাও দেখে নিতে হবে।’
   ‘সে যদি বলো বাবা, আমি কলকাতার পাখিবাজার থেকে যে লোকটার কাছ থেকে আমার কুমিকে কিনেছি, সে বলেছিল, ‘দাদা, মনে হয় আপনাদের বাড়িতে অনেক গৃহপালিত প্রাণী পোষার চল আছে? যদি প্রাণীদের দেখাশোনা করার সারাক্ষণের লোক দরকার হয়, বলবেন। আমার হাতে একজন ভাল লোক আছে। সে আপনাদের ফুলকুসুমপুরের ওদিকেই থাকে। দরকার হলে আমার মোবাইলে খবর দেবেন!’ আমি কি তাকে খবর দেব?’ বলে থামলেন শুধুকাকা।
   ইচ্ছেদাদু বললেন, ‘তা হলে লোকটাকে খবর দে!’
   এ কথা শুনে বুম্বা ঠাকুরমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘সে লোক কি তোমার রাধাগোবিন্দকে কথা বলাও শেখাবে নাকি?’
   ঠাকুরমা বললেন, ‘আগে লোকটাকে আসতে দে! ততদিন তুই যেমন আমার রাধাগোবিন্দকে কথা বলা শেখাচ্ছিস, অমনই শিখিয়ে যা!’
   ছোটরা গিয়ে ঢুকে গেল তাদের পড়ার ঘরে। আজ আবার স্কুলে ক্লাস-টেস্ট আছে। 
   বুম্বা তিন্নিকে জিজ্ঞেস করল, ‘তিন্নিদি, ছড়াপিসিরা কবে আসবে রে আমাদের বাড়িতে?’
   অঙ্ক কষতে-কষতে তিন্নি মুখ তুলে বলল, ‘শনিবার। কেন?’
   ‘আমাদেরও স্কুলে এক সপ্তাহের ছুটি পড়ে যাবে তো? দারুণ মজা হবে রে!’ বুম্বা চেয়ার থেকে উঠে তিন পাক নেচে নিল।
   তিন্নি কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘তোর হোমওয়ার্ক ফিনিশ তো?’
   বুম্বা হোমওয়ার্কে মন দিতে-দিতে বলল, ‘এক্ষুনি হয়ে যাবে রে তিন্নিদি!’


বন্ধু, আছি তো 

শতভিষা ঘোষ
শ্রেণী -- অষ্টম
মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর

সেদিন দুপুরেও যথারীতি মা জোর করে ঘুমোতে পাঠালো। বুকসেলফ থেকে "টেনিদা সমগ্র" নিয়ে বিছানায় ধপাস! আজ কোন গল্পটা পড়বো ভাবতে ভাবতে, কখন চোখ লেগে গেছে টের পাইনি।এমন সময় হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো,“ আর কত ঘুমোবে ? উঠে পড়ো।" আমি তো একেবারে ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে গেলাম। তারপর লক্ষ করলাম যে , টেবিলে রাখা বার্বি-ডলটা কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,তুমিও কথা বলতে পারো? ওদিক থেকে একটি মিষ্টি গলা ভেসে এলো,“আমি সব পারি।" এতক্ষণে আমার বিস্ময় অনেকটা  কেটেছে। বললাম,আমার তো দুপুরে ঘুমোতে একটুও ইচ্ছা করেনা। মা-ই তো জোর করে ঘুমোতে বলে।তাহলে আমি কি করবো বলো ?  আমি দুপুরে জেগে থাকলে কখনও ছবি আঁকি, গল্পবই পড়ি কিংবা লেখালেখি করি।বার্বি বলল,“জানো তো, আমারও না খুউব ইচ্ছে করে -- তোমাদের মতো ছবি আঁকবো, গান করবো, বাইরের প্রকৃতি দেখবো, বৃষ্টিতে ভিজবো ।তুমি যখন ক্লাস থ্রি-তে পড়তে , তখন বাবার কাছে অনেক বায়না করে বিগ বাজার থেকে আমায় কিনে এনেছিলে।তখন তুমি আমার সাথে কত্তো খেলা করতে ,আমাকে আগলে রাখতে;আর এখন আমার সাথে খেলাও করো না,কথাও বলো না।সারাদিন শুধু মোবাইলে মুখ গুঁজে দিদিমণিদের কথা শুনতে থাকো মন দিয়ে। 

        এখন স্কুল নেই, লকডাউন চলছে , তাই কেউ এখন বাইরে বেরোতে পারছো না। তাতেই তোমাদের কত্তো কষ্ট! তাহলে আমার কথাটা ভাবো--সেই কবে থেকে আমি এই একটা তাকের মধ‍্যেই বন্দী হয়ে আছি। কতদিন আমি বাইরের জগৎ দেখিনি ! " 
কথাগুলো শুনে আমার খুব কষ্ট হলো। সত‍্যিই তো! আগে এই বার্বি-ডলটাকে নিয়ে কত খেলা করতাম, গল্প করতাম। আর এখন তো ওকে ভুলেই গেছি।ওর তো নামও দিয়েছিলাম--নিকি। খুব দুঃখিত হয়ে বললাম,“ সরি বন্ধু , আমি তোমার দুঃখটা বুঝতে পেরেছি। এবার থেকে রোজ তোমার সাথে কথা বলবো ,খেলা করবো,এখন থেকে  আমরা ফ্রেন্ডস্।" এই বলে বার্বির সাথে হ‍্যন্ডসেক করতে যাবো, এমন সময়  হঠাৎ আরেকটা গলা,“আরে টুপুর! মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি! আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রয়েছিস কেন ? আর কত ঘুমাবি ?  সাড়ে ছ'টা থেকে তো অনলাইন ক্লাস‌। তাড়াতাড়ি ওঠ।" মায়ের গলা ! আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। আরে ! বার্বি তো টেবিলে নেই! আমি বিছানা থেকে উঠে তাক থেকে বার্বিটাকে (নিকি) নিয়ে , না হওয়া হ‍্যান্ডসেকটা আগে সেরে ফেললাম।তারপর আদর করে ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম। মনে হল,  নিকিও যেন মুচকি হেসে বলছে,"উই আর অলওয়েজ ফ্রেন্ডস।"






মেঘলা আকাশ
সমাদৃতা হালদার
অষ্টম শ্রেণী, পাঠভবনকোলকাতা

সকাল থেকে মেঘ আকাশে,
রোদের দেখা কোথাও নাই। 
গুর গুর করে মেঘগুলো
আহা, এমনটাই তো চাই। 

বিদ্যুত চমকায় সজোরে
দেখে তো মনে ভয় হয়।
হঠাৎ করে ঝমঝমিয়ে
এবার বরষা যেন হয়।

বৃষ্টি হলো, জলও জমলো।
মন বলছে, নৌকা ভাসাই।
ছপছপিয়ে দৌড়াবো জলে,
ভাবি, জ্বর যেন না বাঁধাই।

বানাবো রাতে আজ খিচুড়ি
তার সাথে থাকবে পাঁপড়।
চাইলে তোমরা চলে এসো
পাবে না খুঁজে কোন কাঁকড়।



গল্পে গল্পে ক্যুইজ

রাজীব কুমার ঘোষ
পর্ব ৫

“ও শ্যামাদাস! পালাস কেন? রাগ করিনি, শুনে যা”

আমাদের ছোটোবেলায় রাগ দেখানোর সুযোগ বড় কম ছিল। রাগ কি আর হত না? অবশ্যই হতো, মানুষ মাত্রেই আনন্দ, দুঃখ, রাগ হয়েই থাকে। বড়দের যেমন রাগ হয়, ছোটোদেরও হয় বই কী। রাগের কারণগুলো আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে তোমরা এখন যত সহজে তোমাদের রাগকে প্রকাশ করতে পারো তত সহজে আমরা আমাদের ছোটোবেলায় রাগ প্রকাশ করতে পারতাম না। বড়দের রাগ দেখানো তো নৈব নৈব চ। শিক্ষকদেরকে রাগ দেখানো তো ভাবাই যায় না। বাকি থাকত বন্ধু বান্ধব, হ্যাঁ সেখানে রাগ দেখানো চলত অবশ্যই। 

মোটামুটি তিন দশক ধরে ধীরে ধীরে একটা পরিবর্তন দেখছি। তোমরা এখন রাগ প্রকাশে রাখ ঢাক করো না, এমনকি অনেক সময় কোথায় রাগটা প্রকাশ করা হচ্ছে, ঘরে না বাইরে, সেটাও খেয়াল রাখো না। অবশ্যই রেগে যাওয়াটা অন্যায় নয় কিন্তু সেই রাগকে যদি ঠিকঠাক ম্যানেজ না করা যায় তাহলে তা বহু সমস্যার জন্ম দেয়। আমরা এমন কথা বলে ফেলি বা এমন কাজ করে ফেলি যা আসলে আমাদের ক্ষতিই করে। পরে আমাদের অনুতাপ হলেও বলে ফেলা কথা আর করে ফেলা কাজ ফেরানো যায় না। 

রাগ দু’রকম হয়, ‘ভালো রাগ’ আর ‘খারাপ রাগ’। যখন তুমি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে দিয়ে ভালো কাজ করাতে পারো তখনে সেই রাগ ভালো রাগ। এটা সহজে হয় না, অভ্যেস করতে হয়। সমস্যা ‘খারাপ রাগ’ নিয়ে। অর্থাৎ যে রাগকে আমরা ম্যানেজ করতে পারি না। এই খারাপ রাগের একটা গোটা পরিবার আছে। সে যখন আসে পরিবারকে নিয়ে আসে।

খারাপ রাগের বাবা হল ‘ভয়’। খারাপ রাগ কিন্তু ভয়ের ধারে কাছেও যায় না। 

রাগের মা হল, উপেক্ষা, যে রাগকে জন্ম দেয়। যখন আমরা নিজে থেকেই কোনো কিছু প্রত্যাশা করি আর সেই প্রত্যাশা পূরণ হয় না তখন মনে হয় যে উপেক্ষা করা হয়েছে, আর তখন কিন্তু রাগ হয়। 

রাগের স্ত্রীর নাম ‘হিংসা’। হিংসা রাগকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

জেদ আর অহংকার হল খারাপ রাগের ভাই আর বোন। এরা রাগকে বাহবা দিয়ে আরো বাড়িয়ে তোলে। 

খারাপ রাগের ছেলের নাম ‘বিদ্বেষ’। রাগ মরে গেলেও কিন্তু বিদ্বেষ থেকেই যায়। 

খারাপ রাগের চার মেয়ে আছে। ‘নিন্দা’, ‘ঘৃণা’, ‘চুকলি করা’ (অর্থাৎ কারো নামে মিথ্যে বলা), এবং ‘ঈর্ষা’। এই চার বোন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে, বড় হয়ে যায়। তারপর তারা আমাদের দিয়ে নানা রকম অন্যায় কাজ করাতে থাকে। 

রেগে গেলে, রাগের সঙ্গে তার পুরো পরিবার চলে আসে। তারপর কিন্তু পুরো পরিবারকে সামলানো বেশ মুশকিল। রাগকে আসতে না দেওয়াই সবচেয়ে ভাল। কিন্তু সময়ে সময়ে আমরা রাগকে ডেকে আনি। তখন কী উপায়? 

আমরা রাগের বাবা ভয়ের স্মরণ নেব। রাগের ফলে যে বিপদ হতে পারে বা সমস্যা হতে পারে আমরা তার ভয় পাব। এর জন্য পরিবারের সবাইকেই বিপদে পড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে যদি রাগের মায়ের কাছ থেকে আমরা দূরত্ব রাখি, অহেতুক প্রত্যাশাকে কমিয়ে ফেলি তাহলে রাগের পরিবারের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব। 
সবাই তোমার মতোই ভাববে এটা কখনো সম্ভব নয়। প্রত্যেকের নিজস্ব ভাবনা চিন্তা আছে। ভাবনার পার্থক্যকে আমরা যদি সম্মান করতে পারি তাহলে আমরা অহেতুক প্রত্যাশার ভারটাও কমিয়ে ফেলব। মতের বিরোধ স্বাস্থ্যকর কিন্তু তার জন্য রেগে যাওয়া ঠিক নয়।

এর পরেও রেগে গেলে কী করা যায়? অনেক কিছুই করা যায়। একটা সহজ কাজ হল রেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেওয়া, অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে জবাব না দেওয়া বা অন্য কিছু করা। এইজন্য অনেকে বলেন রেগে গেলে এক থেকে কুড়ি গুনতে। রেগে গেলে আমাদের যুক্তি-বুদ্ধি গুলিয়ে যায়। একটু সময় পেলে আবার তা কাজ করতে থাকে। রাগকে সামলানো সহজ হয়। এছাড়াও তোমরা মনে মনে রাগের ইংরাজি শব্দটা লিখে তারপর সামনে একটা D যোগ করে দিতে পারো। 

অবশ্য সবসময় রাগ চেপে রাখাটাও কাজের কথা নয়, মাঝে মাঝে তাই আমরা আপনজনদের ওপর, বন্ধু-বান্ধবদের ওপর রাগারাগি করে মনটা একটু হাল্কা করে নিই। এখনকার মনোবিদরা তাই বলেন, একটু-আধটু রাগা স্বাস্থ্যের পক্ষে আসলে ভালোই। তবে মনে রাখবে একটু-আধটু, অনেকটা নয় কিন্তু।

এবার আজকের ক্যুইজের পালা।
১।। “রাগে যার শুরু লজ্জায় তার শেষ।” এক বিখ্যাত রাষ্ট্রপ্রধান এই কথা বলেছিলেন। তিনি শুধুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা আন্দোলনকারী নেতা ছিলেন না এর সঙ্গেই তিনি ছিলেন লেখক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক। পদার্থবিদ্যায় তার মৌলিক কিছু কাজ আছে। কে তিনি?

২।। “মনে রাগ পুষে রাখা অনেকটা এইরকম, নিজে বিষ খাওয়া আর আশা করা যার ওপর রেগে আছি সে মারা যাবে। আমার কাছে রাগের একটা ভালো ওষুধ আছে, তা হল বালিশে ঘুঁসি মারা।” ব্রাজিলের এক বিখ্যাত লেখকের এই উক্তি। যে বছর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই বছরেই তার জন্ম। তার এই উক্তির প্রথম অংশটি আসলে কিন্তু ভারতেরই এক মহাপুরুষের। তিনিই বা কে?

৩।। কোন মহাপুরুষের বিখ্যাত উক্তি, “তোমার ক্রোধের জন্য তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে না, তোমার ক্রোধের দ্বারা তুমি শাস্তি পাবে।”

৪।। “রাগতে যে কেউ পারে, এ আর এমন কী ব্যাপার। কিন্তু সঠিক লোকের ওপর, সঠিক পরিমানে, সঠিক সময়ে, সঠিক উদ্দেশ্যে, সঠিকভাবে রাগা — এটা সবাইকার ক্ষমতায় কুলোয় না আর ব্যাপারটা খুব একটা সোজাও নয়।” প্রাচীনযুগের এক পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক এই কথা বলেছিলেন। কে তিনি? 

৫।। “তেলের শিশি ভাঙল বলে/খুকুর পরে রাগ করো/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো।/তার বেলা?” কার লেখা এই বিখ্যাত ছড়া? 

৬।। “রাগ কোরো না রাগুনি/মুখ কোরো না বেগুনি/বাস আসবে এখুনি/ছুটতে হবে তখুনি” কোন কবির লেখা এই ছড়া? খুব সম্প্রতি তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

৭।। “লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না/চাই তার লাল ফিতে চিরুনি আর আয়না।।/জেদ বড়ো লালপেড়ে টিয়ারঙ শাড়ি চাই,/মনভরা রাগ নিয়ে হলো মুখ ভারী তাই/বাটাভরা পান দেবো, মান কেন যায় না।।” একসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। এই গানটি কার লেখা? 
৮।। ওপরের গানটিতে মোট ক’টি প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো কী কী?

৯।। অতিরিক্ত রাগের জন্য আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতি হয়। এইরকম অন্তত দুটো ক্ষতি খুঁজে বার করো। দরকার হলে বড়দের সাহায্য নাও।

১০।। তোমার কাছে থেকে অভিভাবকরা যদি কোনো কারণে মোবাইল নিয়ে সেটি সরিয়ে রাখেন বা তোমাদের মোবাইল নিয়ে ঘাঁটতে না দেন, তখন কি তোমাদের খুব রাগ হয়? সেটা কোন ধরণের রাগ, ভালো রাগ না খারাপ রাগ? সেই রাগ কি তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারো? ভেবে বলো তো কেন রাগটা হয়। 

পরের রবিবার মিলিয়ে নিও তোমাদের উত্তর। সেদিন এই উত্তরগুলো নিয়েই হবে কিছু গল্প। উত্তর মানে তো জানার শেষ নয়, আরো জানার শুরু। প্রতিটা উত্তর আরো আরো গল্প নিয়ে আসে।


পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
( জ্বলদর্চির ৪১ তম সংখ্যা পড়ে কবি ও গল্পকার মৌসুমী রায় যা লিখলেন)

জ্বলদর্চি পত্রিকার সঙ্গে এক নিবিড় যোগসূত্রে বাঁধা পড়েছি। এর সম্পাদিকা মৌসুমী , আমার ছেলেবেলার না হলেও কলেজ বেলার বন্ধু। তাই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকার প্রতি আমার ভালবাসা থাকবে বৈকি। এত আন্তরিকতা আর নিষ্ঠার সাথে মৌসুমী পত্রিকাটিকে সাজিয়ে তুলছে,
সম্বৃদ্ধ করছে দিনে দিনে ,যে কোন প্রশংসাই ওঁর জন্য যথেষ্ট নয়। এবার পত্রিকাটির প্রকাশকাল আষাঢ় এবং রথযাত্রা। দুইই শিশুদের মনের বড় কাছাকাছি।
কিন্তু বর্তমান সময় এতটাই প্রতিকূল যে তারা না পারছে বৃষ্টিতে মনখুলে ভিজতে আর না পারছে রথের মেলায় যেতে। এখন তাদের শুধুই সুদিনের অপেক্ষা। সম্পাদকীয় তে মৌসুমী যথার্থ ই বলেছেন,

"ছোট্টোবন্ধুরা, জানতো কোনো প্রিয় জিনিষ পেতে গেলে বড়ো ছোটো প্রত্যেককেই অপেক্ষা করতে হয়।  এই যেমন কোভিডকালে তোমরা অপেক্ষা করে আছো স্কুল খোলার জন্য। "

তেমন ই আগের মত রথের মেলার জিলিপি পাঁপড়ভাজা আর মাটির পুতুলের জন্য আর একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে আমার সোনামণিরা।
তবে পুতুলের আক্ষেপ মিটিয়ে দিয়েছেন কল্যান সাহা, তাঁর অনবদ্য প্রচ্ছদে।

         মুগ্ধ হয়েছি বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুকুমার রুজের গল্পে। তাঁর সুলেখনীতে আবার একবার আমাদের মনে করিয়ে দিলেন, বন্ধু চিরনতুন ,চিরন্তন।
বন্ধুতার কোন বয়স হয়না । হয়না কোন শর্তের প্রয়োজন।
         অন লাইন ক্লাস, বন্ধুহীন মাঠ, খেলা নেই, টিফিন ভাগ করে খাওয়া নেই , এই দুঃখ ভোলার জন্য
ঘরে দাদু - দিদার সঙ্গে খেলা নিয়ে হাসি খুশিতে দিন কাটাতে পারলে মনের রোগ হবে না। নন্দিনী সেনগুপ্তের কবিতা হাসি তে সৃজনী আর তাঁর দিদার নাচ ছোটদের সেই কষ্ট ই ভুলিয়ে দেয়।
         অভিজিৎ চৌধুরীর গল্পে   ভোলানাথ যে ভালোমানুষ সেটা বুঝলো কাল কেউটে, কুকুরের পাল আর বুলবুলি । বিপ্লব চক্রবর্তীর বৃষ্টিছড়ায়  ছোট্ট দোদোন ঠিক তোমাদের ই মত আছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়। আবার মহুয়া ব্যানার্জীর ব্যাঙের ছাতা বর্ষার আদর্শ এক কবিতা । সত্যিই তো , এত ভিজলে ,ব্যাঙের ও তো ঠান্ডা লাগে।
          
        আজকালকার শিশুরা জানেনা গাছ থেকে আম পাড়া। গাছগুলোতে নিশ্চিন্তে পাখিরা নীড় বাঁধছে, ডিম পারছে, ডিমে তা বাঁধছে। বছর দশেকের ছেলেটা আম পাড়তে গিয়ে নিয়ে গেল শালিক ছানা ।চমৎকার গল্প আম নয় শালিখ ছানা উপহার পেলাম শ্রদ্ধেয় সূধাংশু চক্রবর্তীর কাছে।
       ছোটোদের পত্রিকায় আমাকে সবচেয়ে বেশী টানে ছোটোদের লেখা। সেই বিভাগে অনন্যা মৈত্রের কলমে মেঘকুমারী , খুব ভাল লাগলো।
         দুষ্টু হাঁস জব্দ হল, আহিতাগ্নি মন্ডলের গল্পে ভালো হাঁস রিচার্ড ও তার বন্ধু ব্র্যান্টি দ্য ফক্স কিছুতেই পেরে উঠছিল না মন্দ ভাই জ্যাকের সঙ্গে। অবশেষে বন্ধুর পরামর্শমতো ভূত সেজে ভীতু ভাই জ্যাককে শায়েস্তা করে।
         
       " ফুলকুসুমপুর খুব কাছে " যদিও ছোটোদের জন্য লেখা আমরা বড়রাও কখন যে একাত্ম হয়ে গেছি ঘটনাপ্রবাহের সাথে রতনতনু ঘাটির কলমের জাদুতে তা টের ও পাইনি। গল্পকাকু, ইচ্ছেদাদু, অনিচ্ছেঠাকুমা ,তিন্নি ,বিঙ্গো কখন আমাদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে! গল্পের ভাঁজে ভাঁজে ছোটরা কতকি শিখছে অবলীলায়! মহাভারতের  মহাপ্রস্থানের কথা ও ছোটরা কেমন সহজে শিখে নিল! শুধু একটাই আক্ষেপ ,এখনো রাধাগোবিন্দ কথা শিখলো না!
            রাজীব কুমার ঘোষের " গল্পে গল্পে কুইজে " জ্বলদর্চির সম্পদ বিশেষ। কত জানা অজানা প্রশ্নের উত্তর আমরা জানতে পারি।
                জ্বলদর্চিকে যারা রঙে রঙে সাজিয়েছে সেই অংশিকা, শ্রুজন, অনুভব, মোহনা, সান্ধ্যদীপ, অনুরাগ প্রত্যেককে আমার কুর্ণিশ জানাই।অপূর্ব বললে কম বলা হয়!
            নীলাঞ্জনা শীল ও পীযুষ প্রতিহার এর চল্লিশতম পর্বের পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়ে খুব ই ভাল লাগল।
            সম্পাদিকা মৌসুমী ঘোষকে অভিনন্দন জানাই তাঁর এই উদ্যোগের জন্য। বর্তমান প্রজন্মের কাছে নানাবিধ কারনে বাংলা ভাষা খানিকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। এই বিষন্ন 
সময়ে জ্বলদর্চির এই উদ্যোগ আমাদের সম্বৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।


পাঠ প্রতিক্রিয়া ২
( মা লেখিকা স্নিগ্ধা কুন্ডু ও মেয়ে খুদে গল্পকার সাঁঝবাতির  জ্বলদর্চির ৪২ তম ছোটোবেলা সংখ্যা নিয়ে অপূর্ব কথোপকথন) 

সাঁঝবাতি  -  মা আজকে তো রবিবার।
মা - হ্যাঁ, কেন রে!
সাঁঝবাতি - আজকে মৌসুমী মাসির জ্বলদর্চি পত্রিকা প্রকাশ হয়েছে না?
মা - হ্যাঁ তাই তো, আমার what's app এ লিঙ্ক দিয়েছে।
 দুপুরে খাওয়া দাওয়া পর দুজনে মিলে পড়ব।
সাঁঝবাতি - কি মজা হবে গো মা।
মা - তবে একটা শর্ত আছে। তোর পড়ে কেমন লাগল আমাকে জানাতে হবে কিন্তু ..
সাঁঝবাতি - ওকে।

দুপুরে পত্রিকা পড়ার পর
প্রথম কবিতা "বাড়ির মশা"-তৃষ্ণা বসাক

সাঁঝবাতি - খুব মজার কবিতা। আমার মামাবাড়িতেও মনে হয় মশার চাষ হয়। এক মিনিটও শান্তিতে বসতে পারি না।
সৌতি দিদির আঁকাটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মশারা সব রেডি আমাদের রক্ত চোশার জন্য। মশার রঙটা আমার বেশি ভাল লেগেছে।একটুও বের হয়নি মনে হচ্ছে যেন ছাপা।

"দুই বিল্লি আর একটা টমটম"- সুস্মিতা কুন্ডু 

মা - এরপরের গল্পটা ভারি মজার। বিড়াল আবার পাইরেটস তাও কিনা কুকুরের বকলেস চুরি করবে কিন্তু টমটম কুকুর ওদের নতুন বকলেস কিনে দেয় দোকান থেকে। শেষে বিড়ালের সাথে কুকুরের ভাব হয় এটা খুব ভাল লেগেছে আমার।
সাঝবাতি - আর ক্যাপ্টেন নিমোর আঁকা দুটো ভীষণ ভীষণ কিউট।

"উপাসনা সরকারের কবিতা"

সাঁঝবাতি - আচ্ছা মা এই জারণ-বিজারণ মানে কি?
এই কবিতাটা ভীষন কঠিন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না গো।
মা - লোভ -পাপ অহংকার বা হিংসে এই সব থেকে দূরে থেকে শান্ত হতে বলছে। ত্যাগ করতে বলছে।- কবিতাটি ভীষন সুন্দর কিন্তু তুই এখন বুঝতে পারবি না।
মা - বুদ্ধর আঁকাটা বেশ শান্ত ও স্নিগ্ধ ।

"টিটো আর বাঘ" - বিশ্বদীপ দে।

মা - যাক টিটো ও বাঘ কেমন লাগল বল?
সাঁঝবাতি - না এবার আমি না তুমি বল।
মা - আমার তো খুব ভাল লেগেছে। 
সাঁঝবাতি - মা,পরের বার আমরা যখন চিড়িয়াখানায় যাব তখন কিন্তু খেয়াল করব কোনো পশুপাখি আমাদের সাথে কথা বলে কিনা। 
মা - হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিস। তবে আমি বুঝতে পারলাম না হঠাৎ টিটোর চোখ ছল ছল কেন করে উঠল কেন?
সাঁঝবাতি - বাঘের আঁকাটা দেখে মনে হচ্ছে যেন এখুনি গর্জন করে উঠবে।

"ডোডোরApp"- ইন্দ্রনীল বক্সী 

সাঁঝবাতি - আমিও তো ডোডোর মত যেখানে সেখানে চলে যেতে চাই। আমার আর ঘরে থাকতে ভাল লাগছে না। ডোডোর কত বুদ্ধি বলো ও একটা গোটা  App বানিয়ে ফেলল। আমি ওর App এর নাম দিয়েছি 'যেখানে-সেখানে' ভাল হয়েছে না?
-হুম ভাল 
মা - হিয়া দিদির আঁকায় কত রঙ আর কি পরিস্কার আঁকা। 

ছোট্ট মেয়েটা আর একটা দুপুর - মৌসুমী দাস

সাঁঝবাতি - আমারও দুপুরে ঘুমোতে একদম ভাল লাগে না কিন্তু তুমি তো জোর করে ঘুম পারাবে না হলে আমিও এইরকম পাখিদের সাথে কথা বলতে পারতাম, প্রজাপতির নাচ দেখতে পারতাম। 
সাঁঝবাতি - প্রবাহনীল দাদার আঁকাটা খুব সুন্দর কিন্তু গল্পের সবাই আছে শুধু বিড়ালটা বাদ গেছে।

ফুলকুসুমপুর খুব কাছে - রতনতনু ঘাটী

মা - 'ফুলকুসুমপুর খুব কাছে' ছড়াপিসি আসছে তার দুই মেয়ে নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক ছড়া শুনতে পাব আমরা।
সাঁঝবাতি- হাইকু আর লিমেরিক কাকে বলে সেটাও তো জানতে পারলাম।
মা - ছড়াপিসি আসা পর্যন্ত 'রাধাগোবিন্দ' নমস্কার বলা শেখে নাকি দেখা যাক।
সাঁঝবাতি - শ্রীপর্ণা দিদি বুম্বা কে এঁকেছে। দেখছো কি সুন্দর হাত দুটো এঁকেছে।  

লকডাউন - সমাদৃতা

সাঁঝবাতি - সমাদৃতা দিদির 'লকডাউন' কবিতার মত আমিও আবার স্কুলে যেতে চাই।
মা - সত্যি তোরা যে আবার কবে স্কুল যাবি?

কম্পিউটার মেকানিক - অনুষ্কা

সাঁঝবাতি - 'কম্পিউটার মেকনিক' গল্পটা তো ভূতের গল্প। তুমি জানতো আমি ভূতে ভয় পাই যদিও এই গল্পটা বেশি ভয়ের ছিল না।
সাঁঝবাতি - রাজীব মামার কুইজটা ভাল লাগল কত কথা জানতে পারলাম কিন্তু আরো একটু সহজ হলে ভাল হয়।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 



Post a Comment

0 Comments