জ্বলদর্চি

স্মৃতি সত্তায় পালিত হল সিমবায়োসিসের আলোকোজ্জ্বল ১০ বছর পূর্তি উৎসব

স্মৃতি সত্তায় পালিত হল  সিমবায়োসিসের আলোকোজ্জ্বল ১০ বছর পূর্তি উৎসব 

সিমবায়োসিস ফার্টিলিটি সেন্টার হলো প্রথম সেন্টার যেখানে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় প্রথম আইভিএফ শুরু করা হয় সফল ভাবে। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর শুভ সূচনা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ১০ বছর চলছে এই পরিষেবা। স্বনামধন্য দুই চিকিৎসক তথা ডাঃ কাঞ্চনকুমার ধাড়া ও ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডলের নিরলস প্রচেষ্টা ও সিমবায়োসিস ফার্টিলিটি সেন্টারের সমস্ত কর্মীদের সক্রিয়তায় এই বিশাল কর্মকাণ্ড সম্ভব হচ্ছে।
সূচনালগ্ন কিংবা এগিয়ে যাওয়ার দিনগুলো খুব সহজ, মসৃণ ছিল না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হয়েছে। নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য যেহেতু ছিল সৎ ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ তাই কোনও বাধাই শেষমেষ বাধা হয়ে দেখা দেয়নি।
স্মৃতি উজ্জ্বল দিনগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে ২২ ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার মেদিনীপুর শহরের জ্যাক পাল রেসিডেন্সিতে পালিত হল প্রতিষ্ঠানের ১০ বছর পূর্তি উৎসব।
আইভিএফ আসলে কী!
In Vitro Fertilisation (IVF) বা কৃত্রিম প্রজনন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী পদ্ধতি এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় অত্যন্ত ফলদায়ী। প্রকৃতপক্ষে আই ভি এফ হচ্ছে প্রজননে সহায়ক একটি প্রযুক্তি বা Assisted Reproductive Technology (এ আর টি)। উল্লেখ্য আই ভি এফ- এর ভেতরেও বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। টেস্ট টিউব বেবী এই পদ্ধতিগুলির অন্যতম। এই পদ্ধতিতে নারীর সুস্থ ডিম্বাণু পরীক্ষাগারে টেস্ট টিউবের মধ্যে পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করে একটি ভ্রূণ উৎপাদন করা হয়। প্রজনন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কড়া নজরদারিতে সেই ভ্রূণটিকে নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। যে সব দম্পতি সন্তান না পেয়ে হতাশায় ভোগেন তাঁদের সন্তান লাভের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে আইভিএফ।
আই ভি এফ পদ্ধতি কাদের কাজে আসে?
(১) যে সব মেয়ের ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ বা কোনো অসুবিধা থাকে এবং শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে না এই পদ্ধতি তাদের সন্তানলাভে সহায়ক
(২) যে সব মেয়ের জরায়ুর দেওয়ালে ফাইব্রয়েড আছে বা ওভ্যুলেশন (ডিম্বস্ফোটন) ঠিকমতো হয় না, তারা এই পদ্ধতিতে সন্তানলাভ করতে পারে।
(৩) শারীরিক অসুস্থতা, সার্জারি বা দুর্ঘটনার ফলে যে সব মেয়ের ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিতে হয়েছে তাদের জন্য আই ভি এফ ফলদায়ী।
(৪) পুুুুরুষদের ক্ষেত্রে স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর ঘনত্ব কম হলে এই পদ্ধতিতে সুফল মেলে।
(৫) এ ছাড়াও যদি কোনও মেয়ে জেনেটিক অর্থাৎ জিনবাহিত সমস্যার কারণে গর্ভে সন্তান ধারণ করতে না পারে তার ক্ষেত্রে আইভিএফ কাজে আসে।
(৬) অনেকে সময়ে টেস্ট করে দেখা যায় সন্তানকামী দম্পতির কারুরই কোনো সমস্যা নেই তবু অজ্ঞাত কারণে গর্ভে সন্তান আসছে না। সে ক্ষেত্রেও আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্যে  সন্তানলাভ সম্ভব।
উল্লেখ্য, মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে সিমবায়োসিস সেন্টারে একই ছাদের নীচে মা, শিশু ও বন্ধ্যাত্বের আধুনিক চিকিৎসা করা হয়। আইভিএফ মাধ্যমে ১২০০ কেসের মধ্যে ৪০০-র বেশি ক্ষেত্রে মা গর্ভধারণ সক্ষম হয়েছেন এবং ২০০-র বেশি মা সুস্থ সন্তান প্রসব করে বাড়ি ফিরেছেন। আই ইউ আই মাধ্যমে ১০০০০-এর বেশি চিকিৎসা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫০০-র বেশি মা সন্তান ধারণে সক্ষম হয়েছেন।
ডাঃ কাঞ্চন কুমার ধাড়ার বক্তব্যে উঠে এলো টেস্ট টিউব শিশু জন্ম দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস। তাঁর মতে, "এখনও অধিকাংশ মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই এই বিষয়টি প্রসঙ্গে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের সচেতনতার কাজটাও করে যেতে হয়। মেদিনীপুর শহরে বসে কাজটা  কিছুটা কঠিন। তবে আমরা আশাবাদী।  সকলের সহযোগিতা নিয়েই আমরা এগোবো। ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডল প্রজেক্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন টেস্ট টিউব শিশুর জন্মের ক্রমান্বয় প্রক্রিয়া।
প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের ডাঃ শ্রীমন্ত সাহা, বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ গৌর মন্ডল, কেশপুর কলেজের অধ্যাপক ড. শান্তনু পাণ্ডা, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকার সম্পাদক নিশীথ কুমার দাস, জ্বলদর্চি পত্রিকার সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী,  সমাজসেবী পারমিতা সাউ, শিক্ষক সুদীপকুমার খাঁড়া, সাংবাদিক মণিরাজ ঘোষ, উদ্যোগপতি উদয়রঞ্জন পাল, অনাদি সাঁতরা প্রমুখ। সুন্দর সঞ্চালনা করেন পায়েল অধিকারী।
--------
তথ্য ঋণ- শুভশ্রী রায়

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. Very good jurny God bless yours thankyou

    ReplyDelete