জ্বলদর্চি

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া UGC র নতুন চার বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু - কিছু প্রশ্ন /সজল কুমার মাইতি

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া UGC র নতুন চার বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু - কিছু প্রশ্ন

সজল কুমার মাইতি

নূতন শিক্ষানীতি ( NEP 2020) অনুসারে আমাদের রাজ্যে প্রতিটি কলেজে তড়িঘড়ি UGC র নতুন চার বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু হয়ে গেল ২০২৩- ২০২৪ নতুন শিক্ষা বর্ষ থেকে। কলেজে কলেজে নতুন কোর্সে ভর্তির তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনে অনেক দায়িত্ব এসে গেছে নতুন কোর্সে ভর্তির আগে ছাত্রদের হাতে নতুন সিলেবাস পৌঁছে দিতে হবে। সময় অল্প চাপ অনেক। কিন্তু সব রেডি তো করতে হবে। war footing এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস তৈরির কাজ চলছে। 
চার বছরের নতুন ডিগ্রী কোর্স মোট আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। এই কোর্সের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল multiple entry  ও exit। বিভিন্ন পর্যায় ছাত্র তার অর্জিত ক্রেডিট পয়েন্ট নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে আবার প্রয়োজনে যে কোন পর্যায় প্রবেশ ও করতে পারবে। সেটা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে বা অন্য প্রতিষ্ঠান। কোন ছাত্র প্রথম দুটি সেমিস্টার কমপ্লিট করে এই কোর্স থেকে প্রস্থান করতে পারে। এই প্রস্থানের সময় সে একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য, তবে তাকে এই দুটি সেমিস্টার ক্লিয়ার করার পর চার ক্রেডিটের একটি দক্ষতাবর্ধক ভোকেশনাল কোর্স কমপ্লিট করতে হবে এবং মোট চল্লিশ ক্রেডিট পয়েন্ট অর্জন করতে হবে। এই সার্টিফিকেট এর নামকরণ হবে প্রধান বিষয় বা মেজর সাবজেক্ট অনুসারে। এইসব শর্ত পূরণ করলে ছাত্র একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য হবে। এবং তা নিয়ে কোর্স থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। পরে এই প্রতিষ্ঠান বা অন্য প্রতিষ্ঠানে পুনরায় কোর্সে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। তার অর্জিত ক্রেডিট পয়েন্ট পরবর্তীকালে অন্য উচ্চ সেমিস্টারে যুক্ত হতে পারবে।
প্রথম সেমিস্টারে মোট ছটি পেপার থাকবে। সেগুলো থেকে মোট কুড়ি ক্রেডিট পয়েন্ট পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মেজর পেপার, একটি মাইনর পেপার। মেজর পেপারটি মূল বিষয় সম্বন্ধীয়। আর মাইনর পেপারটি সাহায্যকারী বা সহযোগী। মাল্টিডিসিপ্লিনারী বা ইন্টিরডিসিপ্লিনারী পেপারটি অন্য ডিসিপ্লিনের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। কিন্তু প্রস্তুতের দায়িত্ব এই কোর্স প্রনেতাদের। এই পেপারটি দ্বাদশশ্রেনীর উপযোগী হবে। যাতে অন্য ডিসিপ্লিনের ছাত্রদের সহজবোধ্য হয়। এরপর চতুর্থ পত্রটি হল AEC অর্থাৎ সক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বিষয় এবং এটি ভারতীয় একটি আধুনিক ভাষা। তা, বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি যে কোনো অনুমোদিত ভাষা নেওয়া যেতে পারে। পঞ্চম পত্রটি হল একটি দক্ষতা বৃদ্ধিকারী বিষয় (SEC)। প্রথম সেমিস্টারের অন্তিম পত্রটি একটি ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স বা মূল্যযুক্ত বিষয়। ছাত্রের বৌদ্ধিক ও সর্বাঙ্গীন সাফল্যের কথা মাথায় রেখে এই বহুবিধ বিষয়ের সংযোজন। সাফল্য কেমন আসবে একমাত্র সময় ও ভবিষ্যতই তার উত্তর দেবে, সাক্ষী থাকবে। এই সকল পেপার থেকে ছাত্রকে প্রথম সেমিস্টারে মোট কুড়ি ক্রেডিট পয়েন্টের জন্য পরীক্ষা দিতে হবে অর্থাৎ এই সকল পেপারের মূল্যমান কুড়ি। 
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ও প্রথম সেমিস্টারের মতো ছটি বিষয় ছাত্রকে পড়তে হবে। প্রথম পেপারটি মেজর বা মূল বিষয়। দ্বিতীয়টি মাইনর বা সাহায্যকারী বা পারস্পরিক উপযোগী বিষয়। তৃতীয় বিষয় আগের মতো মাল্টিডিসিপ্লিনারী যা অন্য ডিসিপ্লিনের ছাত্রদের জন্য। চতুর্থ পেপারটি হল AEC বা সক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বিষয়। এটি অবশ্যই ইংরেজি হবে। পঞ্চম বিষয় প্রথম সেমিস্টারের মতো SEC বা দক্ষতা বর্ধনকারী বিষয়। এটির উদ্দেশ্য ছাত্রের সামগ্রিক উন্নয়ন। ষষ্ঠ বিষয়টি ও আগের সেমিস্টারের মতো VAC বা মূল্যযুক্ত বিষয়। এই সেমিস্টারে ও মোট পয়েন্ট কুড়ি। 
🍂

দুই সেমিস্টার মিলিয়ে মোট ক্রেডিট পয়েন্ট হল চল্লিশ। এই চল্লিশ পয়েন্ট ছাড়াও একজন ছাত্রকে একটি দক্ষতা ভিত্তিক বৃত্তিমূলক বিষয় ও সম্পূর্ণ করতে হবে। এটির পয়েন্ট হল চার। এই সকল বিষয় সফলভাবে সম্পূর্ণ হলে একটি ছাত্র এক বছরের একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য হবে। এই সার্টিফিকেট নিয়ে ছাত্র এই প্রোগ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। আবার প্রয়োজন মনে করলে এই প্রোগ্রামে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে। এবং প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ করতে পারে। নতুন শিক্ষানীতির (NEP 2020) উদ্দেশ্যই হল ছাত্রের বৌদ্ধিক ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ। সেই উদ্দেশ্য পূরনের জন্য বহুমূখী বিষয়ের অবতারনা।
আমাদের রাজ্য সরকার এতদিন অব্দি বলে বেড়ালো যে নতুন শিক্ষানীতি এখানে চালু করা হবে না। এই শিক্ষানীতি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু ২০২৪- ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্তের আমূল পরিবর্তন। এই শিক্ষাবর্ষ থেকে আমাদের রাজ্যে নতুন শিক্ষানীতি (NEP 2020) চালু করার নির্দেশ এসে গেছে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ও পড়ি কি মরি করে সিলেবাস ও আনুষঙ্গিক নিয়মকানুন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্যের তরফে যুক্তি দেশের সব রাজ্যে এই নতুন শিক্ষানীতি চালু হয়ে গেলে আমরা যদি চালু না করি তবে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে অসুবিধেয় পড়বে। বিশেষকরে অন্য রাজ্যে পড়াশোনা করতে গেলে। তাছাড়াও All India পড়াশোনা, গবেষণা ও চাকরির ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা। এইসব কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি নতুন শিক্ষানীতি চালুর এই সিদ্ধান্ত। এটা যেন অনেকটা ঘোলা করে জল খাওয়া।
প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে কটি কলেজে এই সিলেবাস চালু করার উপযুক্ত পরিকাঠামো আছে? ক্লাসরুম, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, চক ডাস্টার আছে? উপযুক্ত সংখ্যায় যোগ্য শিক্ষক আছে? উপযুক্ত ও যথেষ্ট সংখ্যক ল্যাবরেটরি আছে? যথেষ্ট সংখ্যক প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক আছে? যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষাকর্মী ও অন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারি আছে? যথেষ্ট সংখ্যক কম্পিউটার আছ? এর ওপর যে সকল কলেজে একটিমাত্র স্ট্রিম আছে, সেখানে ছেলেমেয়েরা মাল্টিডিসিপ্লিনারী পেপার কিভাবে সিলেক্ট করবে? কোথায় তা পড়তে যাবে? সবাই কি SAYAM নির্ভর হয়ে উঠবে? তার ওপর মূল্যযুক্ত পেপার কিভাবে কোথায় পড়ানো যাবে তার ও উত্তর জানা নেই। এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তড়িঘড়ি পুরোন কিছু নতুন মিশিয়ে সেম ওয়ান ও টুর সিলেবাস তৈরি করে কলেজে কলেজে পাঠাতে শুরু করেছে। কারন নতুন ছাত্রভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। কলেজগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। তারা প্রকৃতই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
( ক্রমশ..)
🍁
বাড়িতে বসেই রেজি.ডাক মাধ্যমে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। যোগাযোগ  হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪

Post a Comment

1 Comments

  1. AnonymousJuly 30, 2023

    ক্রমশ আছে মানে কাঠামো ও প্রয়োগের সমস্যাগুলি সম্পর্কে জানতে পারবো।সেই সঙ্গে ভালো মন্দ দিকগুলিও আলোচনার অনুরোধ রইলো।

    ReplyDelete