জ্বলদর্চি

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য

অ মি ত্র সূ দ ন  ভ ট্টা চা র্য

রবীন্দ্রনাথ এক আশ্চর্য আশ্রয় 


আমি এই সময়ে আরও বেশি করে রবীন্দ্রনাথ পড়ছি। পড়েই চলেছি। বস্তুতপক্ষে আমার সৌভাগ্য হয়েছে এই সময় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ-উপন্যাস লেখার। শব্দটি প্রবন্ধোপন‍্যাস। যদি কাব‍্যোপন‍্যাস থাকে, যদি তথ‍্যোপন‍্যাস থাকে, যদি ডকুমেন্টারি নভেল থাকে তাহলে প্রবন্ধোপন‍্যাস নয় কেন!  এটা মূলত ডকুমেন্টারি নভেল। আমি যার বাংলা দিতে চাইছি প্রবন্ধোপন‍্যাস। এটা মিত্র ঘোষ থেকে প্রকাশিত সেই সত্তর বছরের পুরোনো পত্রিকা 'কথাসাহিত্য মাসিক পত্রিকা' --তাতে ধারাবাহিক বেরুবে, এই বিজ্ঞাপন চৈত্র সংখ্যাতে ছাপা হয়েছে। তারাই এটাকে প্রবন্ধ-উপন‍্যাস বলে উল্লেখ করেছেন। এটা মূলত রবীন্দ্রনাথ ও রাণুর যে আট বছরের সম্পর্ক তার-ই ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে খোঁজা। দীর্ঘদিন ধরেই রবীন্দ্রচর্চা করে এসেছি। রবীন্দ্রনাথ একজায়গায় লিখে গেছেন যে  সত্যিকারের জীবনী যদি লিখতে হয় তাহলে সেটা গদ‍্যে লেখা যায় না। সেটা কাব‍্যে লিখতে হয়। কাব্য অর্থাৎ শুধু যে ছন্দোবদ্ধ রচনায় কাব্য তা নয় গদ‍্যও কাব্য হয়। উপন্যাসও কাব্য। সেই জন্য আমি এই উপন্যাস লেখার চেষ্টা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে আরও বেশি করে পড়ছি এবং তার চেয়েও বড়োকথা আমার এই সাতাত্তর বছরে রবীন্দ্রনাথ পড়েই চলেছি। আরও বেশি করে তাঁকে বোঝার চেষ্টা করছি। তিনি আমার কাছে প্রতিনিয়ত নতুন করে উন্মোচিত হচ্ছেন। তাঁকে যতটা জানার চেষ্টা করেছি মনে হয় তার চেয়েও অজানা থেকে গেছে অনেক বেশি। তাই আমি এই উপন্যাস লেখার সংকল্প নিয়েছিলাম এই কারণে যে আমি সত্যকে নির্ভর করে রবীন্দ্রনাথের একটি জীবনী লিখব। যে জীবনী তথাকথিত প্রভাতকুমার  বা প্রশান্ত পালের লেখা জীবনী নয়। রবীন্দ্রনাথের অন্তর্জীবনের ইতিহাস। যেটা রবীন্দ্রনাথ মূলত নিজেও চেয়েছিলেন। তিনি বলতেন আমার জীবনী লিখতে গেলে আমার অন্তর্জীবনের সেই কবিটিকে আবিষ্কার ক‍রতে হবে। আমার সৌভাগ্য এই যে এখন একটা গৃহবন্দি অবস্থা । সেটা আমার কাছে খুব অনুকূল হয়েছে। কিন্তু এটা একান্ত ব‍্যক্তিগত। আমি প্রতিনিয়তই বেদনা পাচ্ছি, যন্ত্রণা বোধ করছি পৃথিবীর এই মৃত্যুমিছিল দেখে। কিন্তু একান্ত ব‍্যক্তিগত ভাবে আমার লেখাপড়ার পক্ষে এই সময়টা অদ্ভুত রকম ভাবে অনুকূল হয়ে এসেছে আমার জীবনে এবং সেইজন্য বোধহয় একেবারে নির্জনে, নীরবে শুধু আমি আর রবীন্দ্রনাথ। পাশে আর কেউ নেই। তখন আমার মনে হচ্ছে শুধু রবীন্দ্রনাথ এই সময় নয় আমাদের জন্মকাল থেকে তিনি ছিলেন তিনি আছেন তিনি ভবিষ্যতেও থাকবেন। কারণ আমরা পৃথিবীতে অনেক সাহিত‍্যিক দেখেছি কিন্তু রবীন্দ্রনাথ একেবারেই ব‍্যতিক্রম। রবীন্দ্রনাথ একান্ত ভাবে দুর্লভ এবং পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি এক আশ্চর্য আবির্ভাব। আমি বলতে চাই যে এই যে সময় এই সময়ের নতুন প্রজন্ম, এখন যারা জন্মাচ্ছে বড় হচ্ছে তরুণ কিশোর যুবক তারা চোখের সামনে কী দেখছে পৃথিবীকে! দেখছে যে ধর্ম মিথ্যা, দেখছে মন্দির অনাবশ্যক, দেখছে মসজিদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে, দেখছে গির্জার দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেখছে পুরোহিতের কোনো শক্তি নেই, দেখছে জ‍্যোতিষের কোনো অর্থ নেই। সবকিছু মিথ্যা। মূল্যবোধ তছনছ হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পিতামাতাও তাদের কাছে দূরত্বের কারণ হয়ে উঠছে। এটা প্রকৃতির নিয়মে ঘটছে। প্রকৃতি এখন বাঁচার এই পথ করে দিচ্ছে এবং প্রকৃতিই আমাদের বিনাশ ঘটাচ্ছে। আজকের যে প্রজন্ম যাদের জন্য এই পত্রিকা আজ ঋত্বিক প্রস্তুত করছেন সেই প্রজন্মের কাছে আমাদের তথাকথিত যে প্রাচীন সংস্কার বিশ্বাস সবকিছু ভেঙে তছনছ এবং চুরমার হয়ে যাবে। এই অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ এক আশ্চর্য শান্তি, রবীন্দ্রনাথ এক আশ্চর্য বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ এক আশ্চর্য আশ্রয়।
  --------

Post a Comment

4 Comments

  1. খুব ভালো লাগল অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের লেখাটি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেখা কোথায়, এটাত
      একটা লেখার মুখপাত মাত্র ! স্যারের কাছে আস্ত লেখাটি চাই, খণ্ড নয়।

      Delete
  2. হৃদয় ভরিয়ে দিলেন শ্রী ভট্টাচার্য। আরো কতো মণিমুক্তো আছে আপনার ভাণ্ডারে, সব কি আর পাবো ?

    ReplyDelete
  3. অসাধারণ লেখনী ।jui saha.

    ReplyDelete