স ন্দী প কা ঞ্জি লা ল
সংকটকাল ও রবীন্দ্রনাথ
বর্তমান বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট। চলছে মৃত্যুর মিছিল। ভারত তার ব্যতিক্রম নয়। এই সংকটকালকে মোকাবিলা করতে ভরসা জোগায় রবীন্দ্রনাথ। এই যে দুঃখ কষ্ট,সে তো হেলাফেলার বস্তু নয়। এই দুঃখ কষ্ট আছে বলেই আমরা আমাদের স্বরূপ জানতে পারি। রবীন্দ্রনাথ বলেন,"অপূর্ণতার গৌরবই দুঃখ,দুঃখই এই অপূর্ণতার সম্পদ"। দুঃখই আমাদের ক্ষমতার মাপকাঠি। 'আপন শক্তিকে যত কম করিয়া জানি আত্মার গৌরবও তত কম করিয়া বুঝি '। সুখের দ্বারা বা আনন্দের দ্বারা তা বোঝা যায় না। তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন দুঃখ যখন উপস্থিত হয়,তাকে যেন আনন্দ মনে গ্রহণ করি।' সেদিন যেন দুঃখ দ্বার ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া ঘরে প্রবেশ না করে,....সম্পূর্ণ জাগ্রত হইয়া সিংহদ্বার খুলিয়া বলিতে পারি,হে দারুণ তুমি আমার প্রিয়, একাধারে তুমিই আকাশ তুমিই নীড়'। তিনি তো দিয়েছেন স্বর্গের ঠিকানা -যেখানে -"চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির,জ্ঞান যেথা মুক্ত "। প্লেগ মহামারির দিনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বলেন," ম্যালেরিয়া প্লেগ দুর্ভিক্ষ কেবল উপলক্ষ মাত্র, তাহারা বাহ্য লক্ষ্মণ মাত্র, মূলব্যাধি দেশের মজ্জার ভিতর প্রবেশ করিয়াছে।"
এই যে লকডাউনের মধ্য থেকে মুক্তি চাইছি নিজের বাঁচার জন্য নয়,আরও অধীন হওয়ার জন্য ছটফট করছি। 'যদি বলি মানুষ মুক্তি চায়,তবে মিথ্যা কথা বলা হয়,মানুষ মুক্তির চেয়ে ঢের বেশি চায় অধীন হতে। যার অধীন হলে তার অধীনতার অন্ত থাকে না।' এই আতঙ্কের দিনে মন্দির মসজিদ গীর্জা নয়, মানুষের সেবা করতে হবে, মানুষই দেবতা। মালিনী নাটকে শুনি ' এতদিন পরে/ এ মর্ত্যধরণী মাঝে মানবের ঘরে, / পেয়েছি দেবতা মোর"।
জীবন বিচ্ছিন্নতার মধ্যে আটকে থাকা মানুষকে কেমন করে মুক্ত করা যায়,তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন। 'রক্তকরবী'-র নন্দিনী চরিত্র থেকে। মানবধর্মে ভালোবাসার প্রতীক রবীন্দ্রনাথ। ভালোবাসার অর্থ আত্মসমর্পণ নয়।" ভালোবাসা অর্থে "নিজের যা কিছু ভালো তাই দান করা।" আমি তারেই জানি তারেই জানি আমায় যে জন আপন জানে"। যে লক্ষ্মণরেখা দিয়ে আমরা জীবন ঘিরে রাখছি,তার মধ্যে আমি বেঁচে আছি,আমার কি কিছুই মরছে না? "কত প্রেম কত বন্ধুত্ব, কত ইচ্ছে আশা মরছে,এই পর পর মৃত্যুর আঘাতে কি জীবন ব্যাথিত হয়নি?"। তাই তো তিনি বলেন "মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান"। তাই আমাদের কোনো অবস্থাতেই দুঃখ পাওয়া উচিত নয়।" আমি চাই সেইখানে মিলাইতে প্রাণ, যে সমুদ্রে " আছে" " নাই" পূর্ণ হয়ে রয়েছে সমান।"
সংকটকালে আতঙ্ক বিকার হয়ে দাঁড়ায়। "চিনি বা গুড়ের যখন বিকার হয় তখন সে গাঁজিয়ে ওঠে, তখন সে মোদো হয়ে ওঠে তখন সে আপন পাত্রকে ফাটিয়ে দেয়।"এই বিপদের আশঙ্কা আজ আমাদের সবার মধ্যে অপরিস্ফুটতার ছায়ামূর্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথও কম বিব্রত ছিলেন না এই নিয়ে। দুঃখ আশঙ্কা মৃত্যুর ছায়ামূর্তি আজীবন তাকে তাড়া করেছে,তাই তিনি লিখলেন," মানবের প্রাণ ডাকে যেন মোরে /সেই লোকালয় হতে "।
" ভবন্তি নম্রাস্তরবঃ ফলাগমৈঃ" বৃক্ষ ফলাগমে নতমুখী হয়। আমরাও আজ তোমার কাছে নতমুখী। তাই সেই প্রাতঃস্মরণীয় রবীন্দ্রনাথকে প্রণাম জানিয়ে বলি, "আমার মাথা নত করে দাও হে/তোমার চরণ ধুলির পরে...।"
---------
0 Comments