তুলসীদাস মাইতি
তু ল সী দা স মা ই তি
তবু অনন্ত জাগে
এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ। প্রসঙ্গটি এক গভীর তাৎপর্য বহন করে।
মহা দুঃসময় এখন । পৃথিবী যেন একটা যুদ্ধের ছাউনি। রণাঙ্গনে সময় যখন সংশয়তিমিরে হোঁচট খাচ্ছে তখন একটা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যেই আমরা এগোতে চাইছি। শোক- দুঃখ- যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে শান্তির খোঁজে আমরা রবীন্দ্রনাথ-এ এসে পড়েছি। তাঁরই আনন্দময় আশ্রয়ে।
রবীন্দ্রনাথ অনেক বড় আধার। যদি সেই আধারে আমাদের বোধকে সমর্পণ করতে না পারি তাহলে এ আলোচনার কোনো অর্থ থাকে না।
আর যদি পারি তাহলে আমরা এই ক্ষয়জর্জর অভিঘাতেও একটা উৎসাহী শক্তি হতে পারি। প্রকৃত অর্থে ,এ যাবৎ রবীন্দ্রনাথের দুঃখ ও মৃত্যুদর্শন নিয়ে অনেক অনেক কথা হয়েছে। তাতে আমরা জেনেছি বিশ্বকবি দর্শনশাস্ত্রের চোখ দিয়ে দুঃখ কে দেখেননি। দেখেছেন উপনিষদের ঋষির দৃষ্টিতে। তাই জীবনভর তিনি দুঃখনাশের তপস্যায় ডুবে না থেকে দুঃখকেই জীবনের সাধনা করেছেন। তাতে দুঃখভোগ হয়ে উঠেছে আনন্দের এক অগাধ সুখভূমি। এই বোধ থেকেই কবি মানুষকে এক নিবিড় প্রেমে উত্তীর্ণ করে তুলেছেন।
'পৃথিবীতে ভয়কে যদি কেহ সম্পূর্ণ অতিক্রম করিতে পারে, বিপদকে তুচ্ছ করিতে পারে, ক্ষতিকে অগ্রাহ্য করিতে পারে, মৃত্যুকে উপেক্ষা করিতে পারে, তবে তা প্রেম।" ( ধর্ম। উৎসব, রবীন্দ্রনাথ)
স্বার্থহীন দ্বন্দ্বহীন মানবপ্রেমই মানুষের আনন্দের প্রধান উপকরণ।
কবি এই আনন্দকেই প্রকাশ করেছেন কবিতায় গানে চিঠিপত্রসহ নানান সৃষ্টির মধ্যে।মরণকে সখা হিসেবে গ্রহণ করে তিনি যেমন মরণজয়ী মন্ত্র শিখিয়েছেন তেমনি বিপদে ভয় না পেয়ে লড়াই করার শক্তি অর্জনের প্রার্থনা করেছেন। "দুঃখ তাপে ব্যাথিত চিতে নাই বা দিলে সান্ত্বনা,/দুঃখে যেন করিতে পারি জয় ।।'--এই উচ্চারণ বিপদকে জয় করারই ধ্বনি। তিনি সর্বদা মনে করতেন বিপদ শোক মৃত্যুতেও অনন্ত আনন্দ জেগে থাকে। দুঃখকে সবাই ভয় করে কিন্তু কবি বলতে পেরেছেন 'দুখের বেশে এসেছ বলে তোমারে নাহি ডরিব হে' বা দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল- আলোক তবে তাই হোক ,'
'অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে' কবি আনন্দে ভাসতে চান।
আমাদের ও ভাসাতে চান। কিন্তু কর্তব্যের কথা মনে রেখেই। এই দেশকেও কবি মনে রাখেন বার বার "এ দুর্ভাগ্য দেশ হতে হে মঙ্গলময়/
দূর করে দাও, তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয়/ লোকভয়,রাজভয়,মৃত্যুভয় আর"।
সময়ের অভিঘাতকে কবি এই ভাবেই দেখেছেন বার বার! আমাদের ও টেনে নিয়ে গেছেন এক আনন্দজীবনের উঠোনে।কঠিন সময় আসে। প্রকৃতির এই খেলায় কবি অনুভব করেন 'তোমার প্রেমে আঘাত আছে নাইকো অবহেলা"।
এই অস্বস্তিকর যন্ত্রনাপীড়িত সময়ে রবীন্দ্রবোধে সমর্পিত হয়ে আমরা এক মহান মানবপ্রেম দিয়ে দুঃখ কে অতিক্রম করতে পারি। দুঃখ ও ভয়কে আত্মসাৎ করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন তাতেই আমরা বেঁচে থাকতে পারি অনন্তকাল। তাঁর সাথে হাঁটতে হাঁটতে আমরাও বলি।
"দুঃখের দিন যদি আসে তখন তাকে দায়ে পড়ে মেনে নেওয়ার চেয়ে এগিয়ে গিয়ে মেনে নেওয়া ভালো-তাতে দুঃখের ভার কমে যায়।" (চিঠিপত্র।ছেলে রথীন্দ্রনাথকে লেখা)
--------
Comments
Post a Comment