মা ন ব কু মা র প্রা মা ণি ক
বর্তমান সংশয়-জীবনে অখণ্ড রবীন্দ্রনাথ
ঠিক এই সময় অর্থাৎ বৈশাখ মাস, খর উত্তাপ দিয়ে সৃষ্টির আলোকে দারুণ অগ্নিবাণ নিক্ষেপে ব্যস্ত থাকতো, সে কারণে কবি রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠতেন বাঙালি জীবনের প্রাত্যহিক রোজনামচা। শুরু সেই পয়লা বৈশাখ-নববর্ষ। এ বছর এই নববর্ষ পালিত হয়েছে একলা বৈশাখে।তাই বার বার গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে
"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।" 'করোনা' ভাইরাস
একলা করে দিয়েছে। তপ্ত দহন দিনের গম্ভীরের গুরু আওয়াজ 'করোনা' কেড়ে
নিয়েছে । সাহিত্য মানুষকে মন্ত্র যোগায়- 'জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায়
এসো।' করোনা কবে করুণা করবে? পঁচিশে বৈশাখ এখনো বাকি যে !
'করোনা' ভাইরাস বিশ্ববাসীকে অবনত করে দিয়েছে মৃত্যু মিছিলে।
ভারত-পশ্চিমবঙ্গ মস্তক নত করতে চলেছে।সুতরাং গেয়ে উঠতে ইচ্ছা করছে
"আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে। সকল অহংকার হে
আমার ডুবাও চোখের জলে"। দাম্ভিক আমেরিকার মৃত্যু মিছিল সকল অহংকার
ছাপিয়ে গেছে।
নত মস্তকে আমরা আরও এগিয়ে যাই কবির দিকে--লকডাউন অর্থাৎ
"এখন বিজন পথে করে না কেউ আসা যাওয়া" আবার কবিকে ভাবি "জানিনে আর ফিরবো কিনা" এবং "চলরে ঘাটে কলসখানি ভরে নিতে।"
লকডাউনে অখণ্ড অবসরে কবির গানে প্রার্থনা করি "এই করেছ ভালো, নিঠুর হে, এই করেছ ভালো। এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দহন জ্বালো।"
কামনা বাসনার অন্তরালে "দেবতার গ্রাস" ভেসে ওঠে। দেবতার গ্রাসের শেষ অংশ যে বিরহের করুণ সুর শোনা গেল তা করোনার ভয়াবহতার করুণ রসের থেকে কম কি? দণ্ডিতের সাথে কাঁদে দণ্ডদাতা - "ফিরায়ে আনিব তোরে" কহি ঊর্ধ্ব শ্বাসে ব্রাহ্মণ মুহূর্ত-মাঝে ঝাঁপ দিল জলে। আর উঠিল না। সূর্য গেল অস্তাচলে।।
ভাবি কোন দেবতা সারা বিশ্বকে গ্রাস করল? চেতনা জাগানো ও স্বার্থপর না হওয়ার দেবতার অনুসন্ধান প্রয়োজন বড়।
তাই, তোমার আনন্দ আমার 'পর তুমি তাই এসেছ নীচে--আমায় নইলে, ত্রিভুবনেশ্বর, তোমার প্রেম হত যে মিছে।
করোনার অজানা সংকেত ম্লান করে দেয় পরিচিত সবকিছু। ঝাপসা পথ তখন "মধুমাঝির ঐ যে নৌকাখানা বাঁধা আছে রাজগঞ্জের ঘাটে" -- তাতেই উঠে
পড়তে হবে বেহুলা-লখিন্দরের মত।
------
0 Comments